জামিলা – রুখসানা কাজল

শেয়ার করুন

 

দুই দোকানের মাঝখানে একফালি খালি জায়গা। আশেপাশের দোকান মালিক-কর্মচারী, ক্রেতা পথচারীরা সকাল বিকাল খাল্লাস হয় সেখানে। একদিন ভোরে দেখা  গেল সেখানে একটি হোগলাঘর।

রাতারাতি হোগলাঘর এলো কোত্থেকে?

রেরে করে ছুটে আসে নুরুমিয়া আর ঠান্ডুকাজি, কে কে এই কে আছিসএখানে। দেখি তোর বদনখান বার কর তো একবার!

হোগলা ঘরের কানি তুলে বেরিয়ে আসে জমিলা। পেছনে কিশোর দেওর, লিকলিকে  জব্বার। চাটাই বিছানায় ছেঁড়া কাঁথার টুকরোয় ঘুমুচ্ছে পাঁচ বছরের ছেলে জুম্মন। হাঘরে, অভাবী, স্বামীহীন তরুণী বিধবা। ছেঁড়াফাটা আঁচলমাথায়। টনটনে গলায় বলে দিলো, বড়কাজী থাকতি দিসে এহেনে! কি কবেন কন!

ভেটকে যায় ঠান্ডুকাজী। পেছনহটেনুরুমিয়া।

টুপির গর্তে ফু দিয়ে ঠান্ডুকাজী ভাবে, খচ্চরের খচ্চর হারামখোর বড়ভাই কেমনে দখল করে নিল জায়গাটুকু! কিন্তু ঘর তুল্ল কখন ? মাগীর চিত্তির দেখো, কেমন ধনুকের মত বেঁকিয়ে আছে শরীর !

নুরুমিয়ার শ্লথ শরীর অনেকদিন পর টানটান হয়ে যায়। কি ফিগার মাইরি! বুকদুটো দেখো! যেন জোড়া কালনাগিনী ! ফণা তুলে দুলছে। আহহহা কি গড়ন! যেন ডাকছে  ওরে আয় আয়, আমারে চরে খা—

ঠান্ডুটা গাড়ল! বরাবরের ভোন্দাচোন্দা। জমিজিরেতের ধান্দাবাজী ছাড়া আর কিছু বোঝেনা! মেয়েমানুষ বোঝে ছাই । শরীরে হাত দিয়েও জমি জিরেতের মাপজোক করে। জল ছানে, মাটি ভাঙে, ফসলের দানা টিপে লাভক্ষতির হিসাব মেলায়। ঠান্ডুর বউ উড়োধরা মনে দুপুর দুপুর বেলায় ঝুল বারান্দায় বসে থাকে। নুরুমিয়ার বুক ফেটে যায়!

জমিলা আর জব্বারকে কাজ জুটিয়ে দেয় নুরুমিয়া।নিজেরসহকয়েকটা দোকানের ঝাড়পোঁছ,জলটানা, চা দেওয়ার কাজ।জব্বার তো রাতদিন নুরুমিয়ার দোকানেই পড়ে থাকে। সারাক্ষণ টিভি চলে দোকানে। ড্যাবডেবিয়ে টিভি দেখে আর ফাইফরমাস খাটে! জুম্মানও টিভিপোকা। চাচার সাথে দোকানেই ঘুমোয়।

কোনো কোন রাতে হোগলাঘরে নুরুমিয়াকে হিসহিসিয়ে পেচিয়ে ধরে জমিলা। স্বামী হারানো, ভিটেমাটি জমি হারানো জমিলা বুঝে গেছে, তার শরীর বড় অমূল্য জমিন।  কড়ায়গণ্ডায় আদায় করে নেয় শরীরজমির খাজনা। যার কিছু নেই তার আবার লজ্জা, ভয়, ইজ্জতের বালাই! বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে যে!

নুরুমিয়া গাল দেয়, রেন্ডিমাগী! পেটে নাই ভাত, দেহ যেন আগুনের খামার !

অন্ধকারে হাসে জমিলা,আর তুই? তোর বাপ ভাইবন্ধু? তারাও যে আগুন তাপাতে আসে রাতের বেলা ! তারবেলা? পাই পয়সা কম দিছ তো ভালো হবে না কিন্তুক রেন্ডিচাটা নুরু!

 

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • আঁধার-প্রবাসী – সাগর সূত্রধর

    হেথা হতে যাও, পুরাতন। হেথায় নূতন খেলা আরম্ভ হয়েছে। আবার বাজিছে বাঁশি, আবার উঠিছে হাসি, বসন্তের বাতাস বয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চলে গেছি আমি, দূরে, বহুদূরে, শত-অভিমান ভরে ফিরবো না জেনো কোনোদিন, বিদায় চিরোতরে। শুভ্র মেঘ য্যামন অস্পৃর্ষনীয় সুন্দর সুদূর আকাশে তারা-ফুল শুধুই দেখা যায় নক্ষত্র প্রকাশে। শ্রান্ত দিঘিতে ফোটে যেমন ক্ষণিকের আলো-ছায়ার খেলা তোমার জীবনে…

  • |

    ড্রোন – অরিজিৎ সেন

    আব্রাহাম জিজ্ঞেস করলেন, “প্রভু ঐ শহরে যদি পঞ্চাশ জনও নিরাপরাধ মানুষ থেকে থাকেন তাও কি আপনি পুরো শহরটাকে ধ্বংস করে ফেলবেন?” প্রভু বললেন, “পঞ্চাশজন নিরাপরাধ মানুষ থাকলে আমি সবাইকে ছেড়ে দেব।“ খানিকপরে আব্রাহাম বললেন, “অপরাধ নেবেন না যদি পঁয়তাল্লিশ থাকেন?” “তাহলেও শহর বেঁচে যাবে।“ প্রভু উত্তর দিলেন। “চল্লিশ” “তাহলেও কিছু করব না।’ “তিরিশ?….কুড়ি….দশ।” স্মিতহেসে প্রভু…

  • গর্বিত বাঙালি – অলোকা

    বাড়িতে ফিরেই একটা দ্বন্দ্ব যুদ্ধ বেঁধে গেল। পরমা এমনিতে খুব একটা কথা বলে না। শান্তিতে থাকতেই ভালোবাসে। কিন্তু, অহেতুক অশান্তি একদম ভালো লাগে না। রান্নার লোককে ঝাল ছাড়া তরকারীটা করতে বলা হয়েছিল। ছেলেটা খেতেই পারছে না। আর শাশুড়ি মা, যত বয়স হচ্ছে কথাবার্তা খারাপ থেকে খারাপতর হয়ে যাচ্ছে। সারাজীবন ঝাল ঝোল খেয়ে এখন উনি নিজে…

  • ইতি কাদম্বরী – দেবব্রত মাইতি

    আমার আকাশে উঠবেনা আর রবি সেতো আলোয় ভরিয়ে দিচ্ছে অন্য পৃথিবী বন্ধ হচ্ছে শব্দ গান সুর মিলিয়ে যাচ্ছে পরিচিত ডাক এক এক করে নিভিয়ে চলেছি দীপ নিমজ্জিত আমি অন্ধকারে আমি এগিয়ে চলেছি অজানার পথে একা সখা ভালো থেকো তুমি শুধু একটু মনে রেখো আমায় কবিতা গানে গানে ইতি কাদম্বরী

  • দাগ – পার্থ রায়

    টুবলুর অ্যাপেয়ন্টমেন্ট লেটারটা একটা মুক্তির পরোয়ানা হয়ে এল মানসীর কাছে। মনের আনাচে কানাচে আজ পালক ধোয়া ঝরণা ধারা। এক ঝাঁক পায়রা যেন ডানা মেলে বকবকম করে বলে চলেছে “মুক্তি, মুক্তি, মুক্তি”। এক মুহূর্ত দেরী করেনি মানসী। ফোনে কাজ ছেড়ে দেবার কথা জানিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে কয়েক বছর আগে ছেলেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করল। দেবোত্তম অকালে…

  • সম্পাদকীয়

    বাইবেলে কথিত আছে একসময় সারা পৃথিবী জুড়েই একটি মাত্র ভাষাই ছিল। মানুষ একে অপরের মনের ভাব বুঝতে পারতো সহজেই। ফলে তারা ঠিক করে বৃহত্তর মানব সমাজ তৈরী করবে। একটি নগরের পরিকল্পনা করে যেখানে একসাথে থাকতে পারবে তারা। এই ইচ্ছেতে ভিৎ গাঁথলো। ছড়িয়েছিটিয়ে না থেকে সমবেত বাসস্হানের জন্য নগর আর দূর্গ বানাতে শুরু করলো। কিন্তু ঈশ্বরের…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *