বিলোনীয়া বাজারের লেনিন – তাপস দাস

বিলোনীয়া বাজারের লেনিন – তাপস দাস

শেয়ার করুন

লেনিনের মা মারিয়া আলেকসান্দ্রোভনা। বাবা উলিয়ানফ। ১৮৮৭ সালের ৮ই মে স্লুসেনবুর্গ দুর্গের উঠোনে আলেকসান্দরকে ফাঁসি দেয় জারের পুলিশ। আলেকসান্দর লেনিনের দাদা।

লেনিন বলেছিলেন রুটির জন্য সংগ্রাম। সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম। ২৫শে অক্টোবর সন্ধেবেলা অরোরা জাহাজ থেকে জারের শীত প্রাসাদে গোলা বর্ষণ শুরু হয়। দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন পরে লেনিন বলেছিলেন- সর্বপ্রকার দাসত্ব থেকে সর্বপ্রথম শোষণ থেকে মেহনতি ও শোষিত জনগণের মুক্তির আদর্শকে সাফল্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ করতে এই শ্রমিকরা আমাদের সাহায্য করবেন। লেনিন বলেছিলেন- জমির ওপর জমিদারের মালিকানা উচ্ছেদ করা হবে। লেনিন বলেছিলেন রাজ পরিবার, মঠ ও গির্জার যাবতীয় জমি, কৃষি উপকরণ, দালান কোঠা বাজেয়াপ্ত করা হবে। সোভিয়েতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। লেনিন বলেছিলেন বাজেয়াপ্ত সম্পত্তিকে জনগণের সম্পত্তি করে তোলা হবে। লেনিন আরোও বলেছিলেন সাধারণ কৃষক ও কৃষকদের জমি বাজেয়াপ্ত করা হবে না।

২০১৪- ২০১৮
জারের পুলিশ, বংশবদ বলদ, সামন্ত প্রভু প্রতিবিপ্লবী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী, তথাগত রায়, রামমাধম, হেমন্ত বিশেশ্বর শর্মা, এন সি দেববর্মা। দীর্ঘকাল পৃথিবী ব্যাপী যুদ্ধে লেনিনের কাছে পরাজিত হয়েছে। পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে আনাচে কানাচে অপেক্ষা করেছে গুপ্ত হত্যার। গুপ্তচর মারফত খবর পেয়েছে ত্রিপুরার বিলোনীয়া বাজারে সীমান্তের কাছে শ্রমিক মহল্লার পাশে লেনিন চায়ের দোকানের পাশে একা দাঁড়িয়ে আছেন। তার সাথে কোন কমরেড নেই।

একটা নিখুঁত পরিকল্পনা। নীল নকশা তৈরি করা হয়েছে আগেই। পঞ্চাশ হাজার আর এস এস বি জে পি কর্মী। হ্যান্ড টু হ্যান্ড। বিস্তারক। মণ্ডল। বাইরে থেকে আমদানি ভাড়াটে গুণ্ডা । এক একজন পান্না প্রমুখের হাতে মাত্র ষাটজন ভোটারের দায়িত্ব। পাঁচটি বুথের দায়িত্বে শক্তি কেন্দ্র বিস্তারক। অন লাইন রেজিস্ট্রেশনে দু লক্ষ ভোটার তাদের শেখানো হয়েছে দুষমন কৌন হ্যাঁয়। দুশমন হ্যাঁয় লেনিন। কমিউনিস্ট মুক্ত ভারত। নীরব মোদীর মালিক নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীর ছবি ল্যাপ্টানো ট্রেন বিস্তারক। জরুর বোট ডালিয়ে গা । মাইজি আপুনার ফোন নাম্বার দিজিয়ে। পাতা হ্যাঁয় ম্যায় কৌন হু? মে হু মোদী। ২৬৫ সংঘ শাখা। ঠিকাদার সুনীল দেওধর। হেমন্ত বিশ্বেশর শর্মা। রাম মাধব। বিপ্লব দেব। টেণ্ডার খোয়াই বিশালগড়, বিলোনিয়া সিপাইজোলা সীমান্ত, মনু ধর্মনগর পুড়িয়ে খাক করতে হবে। লেনিন কে হত্যা করতে হবে। প্রজেক্ট কস্ট কয়েকশ কোটি টাকা।

বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলার পর পাথুরে লোকটা রাতের দিকে আবার উঠে দাঁড়ালেন। একা একা। গৃহবধূ জানতে চাইলেন-“আপনি কে? আপনার সাথে আমার পরিচয় হয়নি কেন?”

বিলোনিয়া বাজারের চায়ের দোকানের ছেলে অন্ধকারে লেনিনের সামনে এসে জানতে চাইল “আপনি কে? কেন আপনাকে এই মত্ত জনতা উপরে ফেলছিল?”

রং মিস্ত্রি জানতে চাইলো আপনি কে? কেন আপনার সাথে আমার পরিচয় হয়নি।?”

লেনিন হাসতে হাসতে বললেন- “আমার কমরেডরা তোমাদের কাছে আমাকে নিয়ে যায়নি। আমি একবার একটা যুদ্ধ করেছিলাম। গরিব মানুষের ভাতের যুদ্ধ। আমি ওদের পরাজিত করেছিলাম। তারপর থেকে ওরা হাজার বার আমাকে মারার চেষ্টা করেছে। পারেনি। প্রতিবার আমি জিতেছি।

দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক জানতে চাইলে ” আপনি একা কেন কমরেড লেনিন? আপনার কমরেডরা কোথায়?”

লেনিন বললেন- ওরা আক্রান্ত হয়েছে। ওদের ঘর পুড়েছে। আমাকে রেখে চলে গেছে।”

গৃহবধূ, চায়ের দোকানের শ্রমিক, রং মিস্ত্রি, বেকার যুবক লেনিন কে বলনেন “আমাদের ভাত নেই। আপনাকে আমাদের জন্য আর একটা যুদ্ধ করতে হবে। ভাতের যুদ্ধ।”

লেনিন বললেন- ‘আমার কমরেডের সংখ্যা এইভাবে প্রতিদিন বাড়তে থাকে, তাই ওরা আমাকে মারতে পারে না। আমি জিতে যাই বারবার।”

ছবি: তৌসিফ হক

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২