বর্ষশেষের কলকাতা : কলকাতার ক্রিকেট (পর্ব ৩) – সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়

বর্ষশেষের কলকাতা : কলকাতার ক্রিকেট (পর্ব ৩) – সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়

শেয়ার করুন

যদিও ঠিক বর্ষশেষের ম্যাচ নয়, কিন্তু একটা ম্যাচের বর্ণনা না দেওয়াটা অপরাধ হয়ে যাবে। ১২ই জানুয়ারি, ১৮৯৭। ইডেনে খেলা হয়েছিলো ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব বনাম ক্যালকাটা টাউন ক্লাবের ম্যাচ।

ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাবের অন্তত: দুজন খেলোয়াড়কে ভালোভাবেই চেনা যায়। উনিশ শতকের প্রত্নতত্ব চর্চায় মোটামুটি পরিচিত নাম রবার্ট টমাস এবং পরবর্তী কালে রয়্যাল এয়ারফোর্সের অফিসার আলেক্সান্ডার কক্স প্যাটার্সন।

আর টাউন ক্লাবের হয়ে নামেন সুধন্য কুমার বসু, প্রমোদারঞ্জন রায় (শিশু সাহিত্যিক লীলা মজুমদারের পিতা), কুলোদারঞ্জন রায় (বাংলার অফসেট ছাপার অন্যতম প্রধান ব্যক্তি, হোমসের বাংলা অনুবাদ করেন, রবিন হুডের অনুবাদ করেন, সত্যজিতের ‘যখন ছোট ছিলাম’ – এ বর্ণিত ধনদাদু), সারদারঞ্জন রায় (পরিচয় নিষ্প্রয়োজন), মুক্তিদারঞ্জন রায় (এঁদেরই আরেক ভাই), বিধু মুখার্জী (উনিশ শতকের শেষের ও বিশ শতকের প্রথমের কলকাতার অকালপ্রয়াত ব্যাটার যিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে ইডেনে শতরান করেন)।

ক্যালকাটা প্রথমে ব্যাট করে ১৩৩ করে। টি সি রোপার ৪৭ ও এইচ স্নাগ ৩০ না করলে এটাও উঠতো না। ৪৫ রান ওঠার আগেই ৬ উইকেট পরে গিয়েছিল।

জবাবে টাউন ক্লাব স্টুয়ার্ট (৫ উইকেট), পেইন ও টমাস (দু’জনেই ২ উইকেট)- এর জন্য মাত্র ১০৯ রানে অল আউট হয়ে যায়। এস গুহ ওপেন করতে নেমে ১৫ করলেও, ৩২ রান ওঠার আগেই ৬ উইকেট পড়ে যায়। মুক্তিদা (১০)ও সারদা (৩১) সপ্তম উইকেটে ৭০ এর ঘরে টেনে নিয়ে গেলেও কোনোও লাভ হয়নি। বিধু মুখার্জী শেষে নেমে ১৬ করে অপরাজিত ছিলেন।

তবে কলকাতার শীতের কার্নিভালের সবথেকে বড় আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ১৮৯৮ সালের শীত। কলকাতা তখন নতুন শতকের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। উনিশ শতকের কলকাতা তার পাততাড়ি গোটাচ্ছে। দেখতে দেখতে শেষ হচ্ছে এক ঝঞ্ঝাবহুল অস্বাভাবিক পরিবর্তন ও চেতনার শতকের; একটা গোটা পরিবর্তনের শতকের। আধা গ্রাম চেহারা থেকে পূর্ণ শহর হয়ে উঠেছে কলকাতা। বিদায় নিয়েছে তার প্রাক ব্রিটিশ গ্রাম্য চেহারা। সে দেখে ফেলেছে বাবুয়ানী থেকে সাংস্কৃতিক বিবর্তন। রেল এসেছে, টেলিগ্রাফ এসেছে, বিজলি বাতি আসবো আসবো করছে, সঙ্গে আসছে টেলিফোন। রাস্তায় তখনও ঘোড়ার গাড়ি, জুড়ি গাড়ি, পালকি রয়ে গেছে, মোটর এলেও বেশি লোকের জন্য আসেনি।

একদিকে রবীন্দ্রনাথ তখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন, অন্যদিকে কংগ্রেস। বঙ্কিমচন্দ্র বিদায় নিয়েছেন, বাবুয়ানী শেষ যাত্রার পথিক। বিসর্জনের পরে পড়ে থাকা রাংতা পাতা। সেই সময়ে বিবেকানন্দ তখন বেশ বিখ্যাত, সঙ্গে গিরিশ ঘোষ। তাঁদের গুরুদেব তো আরও বেশী।

তখনও কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু বিভাগ তৈরী হয়নি। তবে রেঙ্গুন থেকে পেশোয়ার, এক বৃহৎ অঞ্চল তার অন্তর্ভূক্ত। তখনও লর্ড কার্জন আসেননি, তবে তিনি জাহাজে হয়তো উঠে পড়েছেন। লর্ড এলগিনের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে।

দক্ষিণ কলকাতা সবে কলকাতার জিপিও এলাকায় স্থান করে নিয়েছে দক্ষিণ শহরতলী হিসেবে। ভবানীপুরের মিত্র স্কুল তৈরী না হলেও শিয়ালদহের মেন স্কুল তৈরী হয়েছে এক বছর হলো। তবে সাউথ সাবার্বান তৈরী হয়েছে ২৫ বছর। কলেজটা তৈরী হয়নি। রাসবিহারী মোড়ের অস্তিত্ব নেই, আজকের দেবপ্রিয় পার্কের পর চাষাবাদ হয়। টালিগঞ্জে টিপু সুলতানের বংশধরদের বাস। এই সময় কে বুঝতে হলে বিমল মিত্রের উপন্যাস ‘সাহেব বিবি গোলাম’ পড়া উচিৎ।

কলকাতায় তখন বড় ক্রিকেট মাঠ তিনটে। আজকের বালিগঞ্জের ccfc যেটা বালিগঞ্জ cc র মাঠ, আজকের উডল্যান্ড হসপিটালের মাঠ, যেটা তখন কোচবিহার মহারাজার মাঠ আর ইডেন গার্ডেন। কলকাতায় ccc, bcc, মেরিনার্স, রেঞ্জার্স প্রভৃতি ব্রিটিশ আর এরিয়ান্স, টাউন, মোহনবাগান প্রভৃতি দেশীয় ক্লাব গুলো ফুটবল – ক্রিকেট খেলে।

এই অবস্থায় কলকাতায় ক্রিকেট খেলতে এলেন ছোট্ট রাজ্যের রাজপুত্র (তখনো রাজা নন) ও মহান খেলার মহারাজা, রঞ্জি। প্রিন্স রঞ্জি।
পাতিয়ালার মহারাজা রাজেন্দ্র সিং উনিশ শতকের শেষভাগে জে টি হের্ন, ফ্রাঙ্ক ট্যারেন্ট এমনকি বিল ব্রকওয়েলের মতো টেস্ট ক্রিকেটার কে এনে (ট্যারেন্ট বাদে বাকিরা টেস্ট খেলেন) পাতিয়ালায় ক্রিকেট কোচিং করাতেন ও দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ম্যাচ খেলতেন। বোম্বের এলফিনস্টোন কলেজের বিরুদ্ধেও খেলেছিল পাতিয়ালা। এমতাবস্থায় ১৮৯৮/৯৯ সালে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে পাতিয়ালা সফর শুরু করলো। বোম্বে শহরে পার্শী দলের বিরুদ্ধে খেলে তাঁরা উত্তর ভারত রওয়ানা দিল। সেখান থেকেই পূর্ব ভারতের দিকে যাত্রা করে দলটি। প্রথমে এলাহাবাদ, তারপর লখনৌ, তারপর তাঁরা কলকাতায় এসে পৌঁছান। এই দলটি কলকাতায় একাধিক ম্যাচ খেলে।

ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব ও রেঞ্জার্স এর বিরুদ্ধে যথাক্রমে ইডেনে এবং রেঞ্জার্স মাঠে দুটি ম্যাচ তাঁরা খেলেন। উল্লেখ করা যায় সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী দলটি রেঙ্গুনেও যাত্রা করে এবং রঞ্জি সেখানেও খেলেন। কলকাতায় রঞ্জি সে’বার দুটি ম্যাচ খেলেছিলেন। এবার আসুন আমরা কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করি। এইএকবার দেখে নেওয়া যাক এই দলে কারা কারা ছিলেন ও তাঁদের ক্রিকেট রেকর্ড কি ছিলো।

বিল ব্রকওয়েল, মিস্ত্রি, রঞ্জি, পাতিয়ালার মহারাজা, বিলিমরিয়া, বিদেশী রাম, প্রিস্টলি, হের্ন, মেহতা, মনজুর মেহমুদ, উইলিয়ামস।

এদের মধ্যে উইলিয়ামস সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। খুবই কম ম্যাচে তাঁকে পাওয়া গেছে। বলা মুশকিল তিনি ব্রিটিশ না anglo-indian.

মনজুর মেহমুদেরও এই ব্যাপার।

মেহতা করাচীর পার্শী ক্রিকেটার।

বিদেশি বা বদেশী রাম ওপেনার। তাঁর মাত্র গোটা পাঁচেক ম্যাচের খবর আছে।

বিলিমরিয়া মূলতঃ বোলার। পার্শী দলের হয়ে কিছু প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেন।

পাতিয়ালার মহারাজা রাজেন্দ্র সিং মহেন্দ্র বাহাদুর কোনও প্রথম শ্রেণির ম্যাচ না খেললেও তাঁর খেলা বেশ কিছু ম্যাচ পাওয়া গেছে, এবং তিনি মোটেই খারাপ খেলতেন না। তাঁর পুত্র ভুপিন্দর সিং ১৯১১ সালের ভারতের প্রথম ইংল্যান্ড সফরে অধিনায়ক, ভালো ক্রিকেটার না হলেও ক্রিকেটের জন্য বহু খরচ করেছেন, ভুপিন্দর এর পুত্র যাদবেন্দ্র অনবদ্য ব্যাটসম্যান ছিলেন, টেস্ট খেলেছেন, হাফ সেঞ্চুরি করেছেন, যাদবেন্দ্র পুত্র অমরেন্দ্র পরে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন।

মিস্ত্রি প্রথম যুগের সেরা অলরাউন্ডার। ১৮৯৩/৯৪ থেকে ১৯২৬/২৭ অবধি ৩৯টি প্রথম শ্রেণির খেলায় ১৬০০ রান করেন এবং ১০৪ টি উইকেট নেন। পাতিয়ালার মহারাজার এডিসি কেখাশ্রু মানেকশা মিস্ত্রি ১৯১১ সালে বিলেত সফর করেন, প্রথম শ্রেণির খেলায় সর্বোচ্চ ৯৫ রান করা এই ক্রিকেটার রঞ্জির খুব পছন্দের ছিলেন। ‘ভারতের ক্লেম হিল’ খ্যাত মিস্ত্রি কাঙ্গা/রঞ্জির যুগ থেকে নাইডু যুগের সেতু, পরে টেস্ট দলের নির্বাচক এই পার্শী যে বছর মারা যান (১৯৫৮) তার কিছুদিন পর থেকে বোম্বে টানা ১৫ বছর রঞ্জি জয় করে। এই ১৮৯৮/৯৯ সফরে এলাহাবাদের ম্যাচে রঞ্জির সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৩৭৬ রানের জুটি গড়েন, রঞ্জি ২৫৭ ও মিস্ত্রি ২৫৫ করেন।

রঞ্জি ততদিনে ৭ টি টেস্টে দুটি শতরান করে ফেলেছেন। প্রথম শ্রেণির খেলায় প্রায় ৮৫০০ রান ১৭ টি সেঞ্চুরি সহ হয়ে গেছে তাঁর। ব্রকওয়েলও ৮৫০০ রান (গোটা ১৫ শতরান সহ) ও ২২৫ উইকেট পেয়ে গেছে। তারও ৬ টা টেস্ট খেলা। হের্ন ১০ টা টেস্টে ৩০ উইকেট তুলে নিয়েছেন, প্রথম শ্রেণির খেলায় প্রায় ততদিনে ১৫০০ উইকেট সংগ্রহ করেছেন, ৩০০০ এর কাছাকাছি রানও আছে যদিও সেঞ্চুরি নেই। উল্লেখ করা যায় রঞ্জি ১৫ টি টেস্ট খেলেন, ২৪০০০ এর বেশি প্রথম শ্রেণির রান করেন (৭২টি শতরান সহ)।

ব্রকওয়েল ও ৭ টি এবং হের্ন ১২ টি টেস্ট খেলেন(৪৯ উইকেট)।

ব্রকওয়েলের ১৩০০০ রান ছিল ; ৫৫৩ টি উইকেট।
আর হের্নের ৩০০০ এর বেশি উইকেট; ৭০০০ এর বেশি রান- যদিও ব্যাট একেবারেই পারতেন না।

২২শে ডিসেম্বর, ১৮৯৮ সালে রেঞ্জার্স মাঠে শুরু হলো (এই রেঞ্জার্স আজকের রেঞ্জার্স মাঠ হতেও পারে, না ও হতে পারে; যদি না হয়, তাহলে নিশ্চিত ভাবে এই মাঠ বালিগঞ্জে ছিল)।

পাতিয়ালার অধিনায়ক ছিলেন হিজ হাইনেস মহারাজা রাজেন্দ্র সিং মহেন্দ্র বাহাদুর। অন্যদিকে রেঞ্জার্স দলের অধিনায়ক ছিলেন ই সি কাউড্রে। ইনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। এর আর এক ভাই এ এস কাউড্রে; দুই ভাই একসঙ্গে বালিগঞ্জ ক্রিকেট ক্লাব দলে খেলতেন। ই সি হলেন কিংবদন্তি ব্রিটিশ ব্যাটসম্যান মাইকেল কলিন কাউড্রের ঠাকুর্দা।

এই ম্যাচে ব্রকওয়েল (২৩) ও মিস্ত্রী (১২) ওপেন করেন। যদিও বিলিমরিয়া (অপরাজিত ৩৪) ছাড়া কেউই বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রঞ্জি কিছু অনবদ্য শট মারেন। যদিও মাত্র ১৬ রান করে আউট হয়ে যান। প্রেস্টন রেঞ্জার্সের হয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন। ফোর্বেস ৪ উইকেট পান। এরপর মেহতা আর হের্ন মিলে রেঞ্জার্সের রান ১২৮/৭ এ আটকে দেয় প্রথম দিনের শেষে। পরের দিন ২৩ তারিখে মহারাজা আর নামলেন না, কারণ বলা মুশকিল, তার জায়গায় ফিল্ডিং এর সময় অধিনায়ক রঞ্জি। রেঞ্জার্স বেশিক্ষণ পারলো না। ১৫৭ রানে অল আউট। ফোর্বেস ৩৬, সি ভি ওয়ার্ডেন অপরাজিত ৩৫, এস এন পাওয়েল ২৩ করেন। হের্ন ৬ উইকেট পান। ব্রকওয়েল ২ উইকেট পান।

এরপরে পাতিয়ালা ব্যাট করতে নামলে ঘটে সেই ঐতিহাসিক ঘটনা। রঞ্জি কলকাতায় প্রথম অর্ধ শতাধিক রান করেন। ৫৬ করে তিনি আউট হন। বিলিমরিয়া ৩৮ ও বাদেশী রাম ৩১ রান করেন। হিল একাই ৬ উইকেট পান, পিয়ার্সন ৩ উইকেট পান।

অল্পই সময় বাকি ছিল । তাতেই ব্রকওয়েল ৫ উইকেট , মেহতা ২ উইকেট, হের্ন ২ উইকেট নিয়ে রেঞ্জার্সের ৯ উইকেট ৮৬ রানেই তুলে নেয়। শুধু সময়ের অভাবে ম্যাচটি ড্র হয়ে যায়।

৩১ শে ডিসেম্বর ইডেনে পরস্পরের মুখোমুখি হয় ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব ও পাতিয়ালা।

পাতিয়ালার অধিনায়ক ছিলেন মহারাজা, যথারীতি। ক্যালকাটার ক্যাপ্টেন এইচ টি পেন। ক্যালকাটা দলে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটার একজন মাত্র। কলকাতায় জন্মানো ক্রিকেটার জে ডি গাইজ। ইনি জেন্টলম্যান অফ ইন্ডিয়ার হয়ে ১৯০২ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি অথেন্টিকের বিরুদ্ধেও খেলেন। এর ছেলে কুড়ির দশকের কলকাতার বিখ্যাত ক্রিকেটার জে গাইজ।

যাই হোক, ক্যালকাটা ব্যাট করতে নামলে ৬৭.৪ ওভারে ১৮২ রানে সবাই আউট হয়ে যায়। জনৈক বুশ একাই ৫৬ করেন, মোরান ৩০ ও গাইজ শেষের দিকে চালিয়ে খেলে ২০ রান করেন। হের্ন এই ম্যাচে অনবদ্য বল করেন। ৬৯ রানে প্রথম ইনিংসে ৭-উইকেট দখল করেন। জবাবে পাতিয়ালা প্রথম ইনিংসে মাত্র ১১২ করেন। রঞ্জি অসুস্থতার জন্য ব্যাট করেননি। ইডেনে অনেক দর্শক হয়েছিল। তাঁরা নিরাশ হন। এরপরে মাঝে ১ লা জানুয়ারি খেলা হয়নি। ক্যালকাটা দ্বিতীয় ইনিংসে একেবারে ব্যাট করতে পারেনি। ১২০ রানে সকলে আউট হয়ে যায়। মোরান শেষ অবধি ৪২ করে অপরাজিত থাকে। হের্ন ৫৫ রানে ৯ উইকেট নেন। এরমধ্যে পেন, স্মলউড,গাইজ,নিয়াল কে এক ওভারে আউট করেন।

পাতিয়ালার দরকার ছিল ১৯১ রান, জেতার জন্য। মিস্ত্রি ৪৫ ছাড়া বলার মতো কেউ কিছু করতে পারেনি। রঞ্জি কিছু অনবদ্য স্ট্রোক খেলেন ও ১৬-রান করেন। মোরান ৬ উইকেট নেন। ক্যালকাটা ৫৮ রানে জয়ী হয়, মোরান ম্যান অফ দ্য ম্যাচ, একবার আউট হয়ে ৭২ রান করার জন্য ও বল হাতে ৮ উইকেট পাওয়ার জন্য।

এই ম্যাচের অতি সামান্য বিবরণ পাওয়া যায় বাংলা ভাষায়,অতি পরিচিত সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা ‘রণজিৎ সিংহজী’ নামক প্রবন্ধে, যা প্রদীপ পত্রিকায় মাঘ, ১৩৫৩ সালে প্রকাশ পায়। তিনি লিখেছেন ‘রণজিতের কলিকাতায় আগমনের কথা শুনিয়া সকলেই ভারি উৎসাহিত হইয়াছিলেন। সেই ভোর বেলার শীতে হাবড়া ষ্টেশনে উপস্থিত হওয়াতে অনেকেরই উৎসাহের আংশিক চরিতার্থতাও হইয়াছে। কিন্তু আমরা মনে করিয়াছিলাম যে রঞ্জী আসিয়া একবার ব্যাট ধরিয়া দাঁড়াইলে আর কেহ তাহাকে আউটই করিতে পারিবে না; সুতরাং ফল দেখিয়া অনেকেই একটু নিরাশ হইয়াছি।’

লেখা থেকে জানা যায়, একদিন তাঁকে ভুলক্রমে আউট দেওয়া হয় (রেঞ্জার্স ম্যাচে ), একদিন মুখে গুরুতর আঘাত পান (রেঞ্জার্স ম্যাচে), একদিন জ্বর হওয়াতে খেলতে পারেননি (ক্যালকাটা ম্যাচে প্রথম ইনিংসে)। একদিন ভালো খেলতে পারেননি জ্বরের জন্য, একদিন বল সুট করাতে আউট হয়ে যান। এছাড়া এই ম্যাচগুলির বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাবে ২৮ সে ডিসেম্বর ১৮৯৮ তারিখের ও ৫ জানুয়ারি ১৮৯৯ সালের ইংলিসম্যান পত্রিকার ওভারল্যান্ড সংস্করণে।

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২