হিন্দি বলয়ের উপেক্ষিত এক উত্তমপুরুষ – প্রবীর মিত্র

শেয়ার করুন

[কিছুদিন আগে আমরা পেরিয়ে এলাম উত্তমকুমারের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী (২৪শে জুলাই, ১৯৮০)। আজ এত বছর পরেও আপামর বাঙালির হৃদয়ে উত্তমকুমার এক ম্যাটিনি আইডল। আজ এই লেখার মাধ্যমে বাঙালির এই উত্তম আবেগকে একটু অন্যভাবে তুলে ধরার চেষ্টায় রইলাম।]

ছোটো থেকেই অরুণের মাথায় ছিল থিয়েটার-এর পোকা, স্বপ্ন দেখতেন বাংলা ছবির নায়ক হবার, সিনেমার প্রমথেশ বড়ুয়া, কে.এল. সায়গল ও থিয়েটারের শিশির ভাদুড়ী ছিলেন তাঁর স্বপ্নের হিরো, কিন্তু বাবা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় ছিলেন সামান্য মাইনের মেট্রো সিনেমা হলের প্রোজেক্টর অপারেটর, সংসারের চাপ তিনি আর নিতে পারছিলেন না। সেটা উপলব্ধি করেই ১৯৪৫ সালে বি.কম. পাশ করেই বাড়ির বড়ো ছেলে হিসাবে অরুণ আঁতিপাঁতি করে একটা চাকরি খুঁজছিলেন। অবশেষে মেজোমামার সুপারিশে মাসিক দুশো পঁচাত্তর টাকায় পোর্ট ট্রাস্টের একটা সাধারণ কেরানির চাকরি জুটল। কিন্তু মনটা যে পড়ে রয়েছে রুপোলি পর্দায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করায়। সারাদিন অফিসের পর সন্ধেবেলায় এসে জুটতেন পাড়ার ক্লাবে শখের থিয়েটারের রিহার্সালে অথবা বাড়িতে হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে গাইতেন সায়গল সাহেবের সিনেমার গান। পাড়ার দুর্গাপুজো থেকে সরস্বতী পুজোর জলসায় গানে ও নাটকে অরুণ ছিল নিয়মিত অংশগ্রহণকারী। একদিন ক্লাবে একটি নাটকের রিহার্সাল চলাকালীন ঘটনাচক্রে আলাপ হয় গনেশদা নামে এক শখের অভিনেতার সাথে আর তার হাত ধরেই অরুণ প্রথম পা রাখলেন ভারতলক্ষী স্টুডিয়োর অন্দরে অফিস কামাই করে। ‘মায়াডোর’ নামে একটি হিন্দি ছবির শুটিং চলছিল তখন, খুব ছোট্ট একটা রোল, প্রবল উৎসাহে টগবগ করে ফুটতে ফুটতে শট দিলেন অরুণ। তারপর চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতে লাগলেন ছবি রিলিজের জন্য, ছোট্ট একটা রোল, তাতে কি, তাঁর জীবনের প্রথম রুপোলি পর্দায় মুখ দেখানো বলে কথা। কিন্তু বিধি বাম, কয়েকদিন পর জানতে পারলেন ছবির কাজ আটকে গেছে, প্রযোজক হাত গুটিয়ে নিয়েছেন ছবি থেকে, কারণ তখন ১৯৪৭ সালের মাঝামাঝি, ভারত তখন স্বাধীন হবার পথে, উত্তল সময়, তাই পোর্ট ট্রাস্টের একটা সাধারণ কেরানির স্বপ্ন অধুরাই থেকে গেল। অরুণের জীবনের প্রথম ছবি (হিন্দি) ‘মায়াডোর’ কালের গর্ভে চলে গেল।

উত্তম যখন গায়ক

কয়েক মাস পর ধীরেনবাবুর সাথে দেখা হল অরুণের, এই ধীরেনবাবুর সাথে তাঁর আলাপ হয়েছিল ‘মায়াডোর’-এর শুটিং চলাকালীন। সেইসময় ধীরেনবাবু সিনেমা, থিয়েটার ও যাত্রার জন্য ড্রেস সাপ্লাই করতেন। ‘মায়াডোর’-এ ছোট্ট রোল করলেও ধীরেনবাবু অরুণকে ঠিক মনে রেখেছিলেন, একথা সেকথার পর তিনি জানালেন এম.পি. প্রোডাকশন কোম্পানি, রবি ঠাকুরের ‘দৃষ্টিদান’ ছবিটি করছেন, একটা ছোট্ট পার্ট আছে উত্তম রাজি হলে তিনি কথা বলতে পারেন ওদের সাথে। মনের মধ্যে আবার আশার আলো দেখলেন অরুণ। আবার অফিস ছুটি নিয়ে শুটিং করলেন ‘দৃষ্টিদান’ (১৯৪৮)-এ। ছবির নায়ক অসিতবরণের অল্পবয়েসের চরিত্র, পরিচালক নীতিন বসু। ছবি রিলিজের সাথে সাথে অরুণের প্রথম নিজেকে রুপোলি পর্দায় দেখার ইচ্ছে পূরণ হল।

এর পরবর্তী বছরগুলোতে সুযোগ আসতে লাগল ‘কামনা’, ‘মর্যাদা’, ‘ওরে যাত্রী’, ‘সহযাত্রী’, ‘নষ্টনীড়’, ‘সঞ্জীবনী’ ইত্যাদি ছবিতে অভিনয় করার, এবার একটু চোখে পড়ার মতো চরিত্র কিন্তু সবকটাই ফ্লপ। বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক বিমল ঘোষ (যিনি ‘মৌমাছি’ ছদ্মনামে লিখতেন ও ‘আনন্দমেলা’ পত্রিকার জনক) উঠতি অভিনেতা অরুণকে মনে মনে খুব পছন্দ করতেন। একদিন তিনিই ‘সহযাত্রী’ ছবির কাজ চলাকালীন পরিচালককে পরামর্শ দেন সিনেমায় নিজের নাম ‘অরুণ’ না দিয়ে সেটা ‘উত্তম’ করতে। আর সেই থেকেই অরুণ হয়ে গেলেন উত্তমকুমার। বিখ্যাত ফিল্ম কোম্পানি, এম.বি. প্রোডাকশন উত্তমকে তিন বছরের চুক্তিতে একজন পার্ট টাইম অভিনেতা হিসেবে নিযুক্ত করল, অর্থাৎ এই ব্যানারে কোনো ছবি হলেই উত্তম অভিনয় করবেন এবং পারিশ্রমিক পাবেন। ইতিমধ্যে উত্তম, গৌরীরানী গাঙ্গুলিকে বিয়ে করে সংসারও পেতে ফেলেছেন। উত্তম তাঁর স্মৃতিকথায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গেছেন পোর্ট কমিশনের সমস্ত কর্মীবৃন্দের উপর, তাঁরা পাশে না থাকলে তিনি দুমদাম অফিস ছুটি নিয়ে শুটিং করতে পারতেন না। কিন্তু গোটা সাতেক ছবি করেও সেগুলো তেমন ব্যবসায়িক সাফল্য পেল না। উত্তমকুমারকে সবাই আড়ালে ডাকতে থাকলেন, ফ্লপ মাস্টার জেনারেল। এক সময় বুঝলেন এই লাইন তাঁর জন্য নয়, মন দিলেন সংসার ও চাকরিতে।

আবার ডাক পড়ল এম.পি. প্রোডাকশন কোম্পানি-এর কর্ণধার মুরলীবাবুর কাছ থেকে। ইতিমধ্যে বলে রাখা ভালো ১৯৫১ সালের ১৫ই জানুয়ারি, ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটা উল্লেখযোগ্য দিন। ‘কেন্দ্রীয় সেন্সার বোর্ড’-এর সূচনা ওই দিন থেকেই, তাই বেশ কিছু বাধানিষেধের মধ্যে পড়ে গেল ভারতীয় চলচ্চিত্র। একটি জাপানি ছোটোগল্পের উপর ভিত্তি করে মুরলীবাবু একটি ছবি করতে চলেছেন। ছবির নাম স্থির হয়েছে ‘বসু পরিবার’। পরিচালনার ভার নির্মল দে নামক এক একজন স্ট্রাগলিং ডিরেক্টরের। মুরলীবাবু এই চ্যালেঞ্জগুলো নিতে খুব আগ্রহী ছিলেন। নতুনদের খুব সুযোগ করে দিতেন।
১৯৫২ সালে রিলিজ হল ‘বসু পরিবার’। এখানে উত্তমকুমার হলেন পরিবারের বড়ো ছেলে, সুখেন। বেশ বড়ো এবং উল্লেখযোগ্য চরিত্র। দাঁতে দাঁত চেপে মনপ্রাণ ঢেলে অভিনয় করলেন উত্তম। পাশাপাশি এই ছবিতে পেলেন পাহাড়ি সান্যাল, জীবেন বসু, জহর রায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, নবাগতা সুপ্রিয়াকে (তখন বন্দোপাধ্যায়)। এই নবাগতা সুপ্রিয়া উত্তমের ছোটোবোনের চরিত্রে অভিনয় করলেন, আর বলা বাহুল্য, ইনিই হলেন পরবর্তীকালের সুপ্রিয়া দেবী বা আমাদের সকলের আদরের বেণুদি। নির্মল দে-এর এই প্রথম ছবিটি সুপারহিট হল সেই সময়। যে বাংলা ছবির দর্শক একসময় ফ্লপমাস্টার উত্তমকে ফিরিয়ে দিয়েছিল তাঁরাই আবার সাদরে গ্রহণ করল উত্তমকুমারের এই নয় নম্বর ছবিটি এবং তার সাথে বাংলা ছবি পেল আর এক প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীকে, সুপ্রিয়া দেবী।

কিন্তু এদিকে আর যে পেরে উঠছিলেন না উত্তম দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে। পোর্ট কমিশনের চাকরির প্রতি তিনি যথেষ্ট বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, ছবির শুটিং-এর জন্য তিনি কারণে অকারণে বহু সবেতন ছুটি নিয়েছেন, আর চলে না, তাই একদিন পদত্যাগপত্র নিজে গিয়ে জমা দিয়ে এলেন উত্তম। ‘বসু পরিবার’ হিট হবার পরপরই পরিচালক নির্মল দে হাত দিলেন দমফাটা হাসির ছবি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এ। আর এই বছরই অর্থাৎ ১৯৫৩-তে ভারত সরকার গর্বের সাথে ঘোষণা করে বসলেন, এবার থেকে শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ছবির জন্য রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেওয়া হবে। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এ উত্তম নায়ক ও বিপরীতে রমা (সুচিত্রা) সেন, যাকে বাংলার গ্রেটা গার্বো বলা হত একসময়। এই ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর তুমুল জনপ্রিয়তার মাধ্যমে বাংলা সিনেমা পেল উত্তম-সুচিত্রা জুটিকে। এই ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিটি আমার ব্যক্তিগতভাবে এতটাই প্রিয় যে এই ছবি নিয়েই একটা গোটা লেখা হয়ে যায়। ইচ্ছে রইল ভবিষ্যতে এই ছবির মজার কিছু ঘটনা নিয়ে লেখার।

উত্তম ও সুপ্রিয়া

সাড়ে চুয়াত্তর-এর পর বাংলা ছবির দর্শকরা পেয়েছে এই জুটির কিছু দারুণ ছবি যেমন, ‘ওরা থাকে ওধারে’, ‘মরণের পরে’, ‘সদানন্দের মেলা’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘শাপমোচন’, ‘হারানো সুর’ ইত্যাদি আরও হিট ছবি। ১৯৫৪ সালে সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর কাহিনি অবলম্বনে অগ্রদূত (বিভূতি লাহা) বানালেন, ‘অগ্নিপরীক্ষা’। ছবির গল্প ও গান দুটোই হিট। উত্তম-সুচিত্রা জুটি তখন আপামর বাঙালির একটা আবেগের বিষয়। এটা মাথায় রেখেই উত্তমকুমার চিন্তা করলেন এই ছবিটি তিনি নিজে একসময় নিজের মতো করে বানাবেন এবং সর্বভারতীয় দর্শকের কাছে এটি একটি ল্যান্ডমার্ক ছবি হবে।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ডাক এল সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয়ের জন্য। উত্তম তখন সমস্ত পরিচালকদের কাছে শেষ আশা-ভরসা। তাঁর ছবি মানেই একেবারে সুপার হিট। বাঙালি যুবতী কুমারী মেয়ে থেকে বয়স্কা মহিলাকুলের হার্টবিট তখন উত্তমকুমার। কিন্তু সত্যজিৎ রায় উত্তমকে তাঁর ছবিতে একটু অন্যভাবে রিপ্রেসেন্ট করার কথা ভেবে তৈরি করলেন একটি সম্পূর্ণ অন্য ধরনের গল্প। খুব ভালো লাগল মানিকবাবুর এই চিন্তা ভাবনা উত্তমের। সই করলেন সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবিতে অভিনয় করার জন্য। ছবির একটি সিনে টাকার মধ্যে ডুবে যাচ্ছেন উত্তমকুমার। সিনটা করার সময় উত্তম জানলেন এই দৃশ্যটি ১৯৪১ সালের একটি বিখ্যাত আমেরিকান ছবি ‘সিটিজেন কেন’ থেকে কিছুটা ভাবনা নেওয়া হয়েছে, ছবিতে উত্তমের জায়গায় ছিলেন অরসন ওয়েলস। গল্পটি তো আগেই ভালো লেগেছিল কিন্তু সত্যজিতের এই সরল স্বীকারোক্তিতে উত্তমকুমার একেবারে অভিভূত। তাছাড়া শুধুমাত্র উত্তমকে ভেবেই তিনি এই ছবির গল্প লিখেছিলেন, তাই উত্তম শত ব্যস্তততা সত্ত্বেও সত্যজিৎকে ফেরাননি, তাছাড়া সত্যজিৎ উত্তমকে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি যদি এই ছবিতে অভিনয় না করেন তাহলে সত্যজিৎ এই ছবি একেবারেই করবেন না, যেটা মুগ্ধ করেছিল উত্তমকে। সত্যজিৎ রায়ের কাজ দেখেই হয়তো উত্তম তাঁর সদ্য পরিচালিত ছবি ‘শুধু একটি বছর’ ছবিতে কয়েকটি নতুন টেকনিক প্রয়োগ করেছিলেন। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পেল সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ আর এর পাশাপাশি মুক্তি পেল উত্তমের প্রথম পরিচালিত ছবি ‘শুধু একটি বছর’ ও নিজের প্রথম সঙ্গীত পরিচালিত ছবি ‘কাল তুমি আলেয়া’, এছাড়া আরও একটি ছবি নাম উল্লেখ না করলেই নয়, অগ্রগামী (পরিচালক সরোজ দে) পরিচালিত ‘শঙ্খবেলা’, যেখানে উত্তমকুমার সর্বপ্রথম মান্না দে-র কণ্ঠে লিপ দেন, ‘আমি আগুন্তুক আমি বার্তা দিলাম, কঠিন অঙ্ক এক কষতে দিলাম’ সুধীন দাশগুপ্তের সুরে। এই ছবি থেকেই উত্তম কুমারের ছবিতে হেমন্তবাবুর গান এই মিথটা ভেঙে গেল।

সত্যজিৎ রায়ের সাথে নায়ক ছবির সেটে


‘নায়ক’ উত্তমকুমারকে একটা অন্যরকম জায়গা করে দিল রুপোলি পর্দায়। ছবিতে একটা সংলাপ ছিল উত্তমরূপী অরিন্দমের মুখে, ‘আই উইল গো টু দি টপ, অ্যান্ড দি টপ, অ্যান্ড দি টপ’। সংলাপটা উত্তমকে বেশ আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। তিনি স্থির করলেন, এবার তিনি তাঁর ড্রিম প্রোজেক্ট-এর উপর মনোনিবেশ করবেন, অর্থাৎ ‘অগ্নিপরীক্ষা’র হিন্দি রিমেক বানানোর কাজ। ইতিমধ্যেই সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অন্যান্য ছবির মতো ‘নায়ক’-ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি পেয়েছে, স্পেশাল জুরি পুরস্কার নিতে সত্যজিৎ রায়ের সাথে বার্লিন ঘুরে এসেছেন উত্তম এবং তার সাথে অকাতরে বিদেশি ভক্তদের অটোগ্রাফ বিলিয়েছেন। হাতে অনেকগুলো বাংলা ছবির কাজ তা-ও একরাশ উৎসাহ নিয়ে তিনি বোম্বাই-এর মাটিতে নামলেন ছবি প্রযোজনা করবেন বলে। ইতিমধ্যে বলে রাখা ভালো বছর দুয়েক আগে পরিচালক মোহন সায়গলের হিন্দি ‘দেবর’-এ অভিনয় করার জন্য প্রস্তাব এলেও উত্তমকুমার তা সবিনয়ে প্রত্যাখান করেছিলেন এবং তাঁর বদলে ‘দেবর’ ছবিতে সেই চরিত্রে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র, তার পাশাপাশি উত্তম হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কেও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ‘শরম্মিলি’ ছবিতে অভিনয় করার অফার, যদিও হেমন্তবাবু এই হিন্দি ছবিটি শেষ পর্যন্ত করে উঠতে পারেননি। এমনকি ১৯৬৪-এ রিলিজ হওয়া রাজ কাপুরের বিখ্যাত ছবি ‘সঙ্গম’-এ অভিনয় করার জন্য ডাক পেয়েছিলেন উত্তম কিন্তু এবারও তিনি অন্যান্যদের মতো রাজ কাপুরকে একেবারে খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, যার ফলস্বরূপ উত্তমের রোলটি যায় রাজেন্দ্র কুমারের কাছে। শোনা যায়, খুব বিরক্ত হয়েছিলেন রাজ কাপুর। এটা ভাবলে চলবে না যে সেই সময় উত্তমকুমারের হিন্দি ছবিতে কাজ করতে কেন অনীহা ছিল, আসলে তিনি হয়তো এটাই চেয়েছিলেন যদি হিন্দি ছবির জগতে আসতেই হয় তাহলে একটা ধামাকার প্রয়োজন যেটা তিনি নিজের প্রযোজিত ছবির মাধ্যমেই সেটা করবেন, আর এই আত্মবিশ্বাসকে সম্বল করে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে উত্তমকুমার প্রযোজনা করলেন তাঁর স্বপ্নের ছবি ‘ছোটি সি মুলাকাত’ (বাংলায় অগ্নিপরীক্ষা)। ছবিতে নায়ক তিনি নিজে, নায়িকা বৈজয়ন্তীমালা এবং অন্যান্য চরিত্রে শশীকলা, কমেডিয়ান রাজেন্দ্রনাথ প্রমুখ বলিউডের তৎকালীন তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ছবিতে গান-নাচ কী না নেই! উত্তমকুমার এই ছবিতে একটি দৃশ্যের একটি গানে বৈজয়ন্তীমালার সাথে টুইস্টও নেচে ছেড়েছিলেন। ছবিতে প্লে-ব্যাক করেছিলেন মহম্মদ রফি, সুমন কল্যাণপুর, লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলে প্রমুখ শিল্পীগণ। সঙ্গীত পরিচালনার জন্য উত্তম প্রথমে ভেবেছিলেন হেমন্তকুমারকে কিন্তু তা পরে নাকচ করে সঙ্গীত পরিচালনার ভার দেন শঙ্কর জয়কিশেন-কে। সবই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু আলো সরকার নামক একজন আনকোরা লোককে এই ছবির পরিচালনার ভার দিয়ে বসলেন উত্তম। ছবির কাজ চলাকালীন তিনি বোম্বাই থেকে কলকাতা আসতেন হাতে থাকা বেশ কিছু অসমাপ্ত ছবির কাজ শেষ করার জন্য। আর নিঃসন্দেহে এটা তাঁর উপর একটা সাংঘাতিক মানসিক ও শারীরিক চাপ ফেলত। তাছাড়া ‘ছোটি সি মুলাকাত’ ছবির চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে, ছবির কাস্টিং, গান, সংলাপ, সেট তৈরি, কস্টিউমস, এডিটিং সব ব্যপারেই উত্তম অন্যের উপর ভরসা না করে নিজেই মাথা গলাতেন। এতকিছু ঝামেলার মধ্যেও মানিকবাবু (সত্যজিৎ রায়) আবার উত্তমের কাছে এলেন তাঁর পরবর্তী নতুন ছবিতে অভিনয় করার জন্য, অন্য পরিচালক হলে হয়তো ফিরিয়ে দিতেন কিন্তু তিনি যে বাংলার মানিক, তাই না করেন কী করে, চুক্তিপত্রতে সই করে দিলেন উত্তম। ছবিতে সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর চরিত্রে উত্তমকুমার। মানিকবাবু উত্তমের এই ড্রিম প্রোজেক্ট-কে সন্মান করতেন তাই উত্তমকুমারকে তার নিজের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য খুব উৎসাহ ও সময় দিলেন।

‘ছোটি সি মুলাকাত’ ছবির শুটিং শেষ করে বোম্বাই থেকে কলকাতায় ফেরার পথে বিমানে উত্তমকুমারের প্রথম হার্ট এট্যাক হয়, হয়তো এর একটা কারণ ছিল এই ছবির জন্য কয়েকটা মাস তিনি টানা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। ছবির সমস্ত কাজ শেষ হতে নির্ধারিত সময়ের পরিবর্তে অনেক বেশি সময়ও লেগেছিল, যার জন্য ছেড়ে দিতে হয়েছিল অনেক নতুন বাংলা ছবির অফার। ছবিটি রিলিজ হবার আগে পর্যন্ত ছবিটি সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো কথাও বলা হয়েছিল উত্তমকে এবং সমস্ত সার্কিট পরিবেশকদের কাছে ছবিটি চড়া দামে বিক্রি করা হয়েছিল। আলো সরকারের মতো একজন আনকোরা অনভিজ্ঞ পরিচালকের হাতে পড়ে এই ছবির বাজেট হয়ে গিয়েছিল একেবারে বেহিসেবি, যার ফলস্বরূপ উত্তম ছবির কাজ শেষ হবার সময় দেখলেন তাঁর মাথায় বিশাল টাকার দেনা হয়ে গিয়েছে। এইসব চিন্তাই তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। তখন তাঁর একমাত্র আশা ভরসা ‘ছোটি সি মুলাকাত’-এর সাফল্যের উপর নির্ভর করছিল। ১৯৬৭-এর এপ্রিলে কলকাতায় ছবিটি যখন মুক্তি পেল তখন তিনি বিছানায় শুয়ে হৃদরোগের ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন।

‘ছোটি সি মুলাকাত’ ছবির সেটে

বোম্বাইতে ‘ছোটি সি মুলাকাত’ ছবির কাজ চলাকালীন উত্তমকুমার বিখ্যাত প্রযোজক এন সি সিপ্পির একটি ছবিসহ মোট চারটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার জন্য সই করেছিলেন। কিন্তু হায়, এত কঠোর পরিশ্রম করা সত্ত্বেও উত্তমের ড্রিম প্রোজেক্ট মুখ থুবড়ে পড়ল বলিউডে। সুপার ডুপার ফ্লপ ছবির আখ্যা পেল ‘অগ্নিপরীক্ষা’র হিন্দি ভার্সন। যার ফলস্বরূপ ইতিমধ্যে যে সব হিন্দি প্রযোজকরা উত্তমকুমারকে দিয়ে নিজেদের ছবিতে অভিনয় করাবেন বলে সই করিয়েছিলেন তারাও একসময় একে একে কেটে পড়লেন। পশ্চিমবঙ্গে কিছু উত্তম-ভক্তের জন্য ছবিটি কিছুদিন চললেও বোম্বাই ও ভারতের অন্যান্য শহর কোনোমতেই মেনে নিতে পারল না বাঙালি উত্তমকুমারকে, আর সেইদিনই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন রাজ কাপুরকে ফিরিয়ে দিয়ে তিনি কি সাংঘাতিক ভুলই না করেছিলেন। অনেকেই তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন আলো সরকারের মতো অনভিজ্ঞ লোকের হাতে পরিচালনার ভার না দিয়ে হৃষীকেশ মুখার্জীকে দিতে ও সঙ্গীত পরিচালনার ভার হেমন্ত বা সলিল চৌধুরীকে দিতে, তাতে অন্তত ছবি তৈরির খরচটা নিয়ন্ত্রণে থাকত। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী উত্তম সেদিন কারও কথায় কর্ণপাত করেননি। নিজের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য চরম হতাশায় ডুবে গেলেন ঋণগ্রস্থ উত্তমকুমার। সিদ্ধান্ত নিলেন আর নয় যথেষ্ট হয়েছে, বোম্বাইতে আর কোনো ছবিতে কাজ করবেন না। সেদিন হয়তো উত্তমকুমারের হতাশাগ্রস্থ চেহারা দেখে মনে মনে উল্লসিত হয়েছিলেন রাজকাপুর সহ আরও অনেক অবাঙালি পরিচালক। ১৯৬৭ সাল উত্তমকুমারের কাছে অভিশপ্ত হলেও এই বছরই মুক্তি পেয়েছিল ‘নায়িকা সংবাদ’, ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’, ‘জীবন মৃত্যু’, ‘গৃহদাহ’ ও সত্যজিৎ রায়ের ‘চিড়িয়াখানা’, যেটি অত্যন্ত অসুস্থতার মধ্যে ও ভগ্নহৃদয়ে উত্তমকুমার শুটিং-এর কাজ সেরেছিলেন।

এরপর দীর্ঘ আট বছর আর কোনো হিন্দি ছবিতে উত্তমকে দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে তিনি সম্পূর্ণভাবে বাংলা ছবিতে মন দিয়েছেন। কিন্তু বোম্বাই-এর এক বাঙালি পরিচালক, বাসু ভট্টাচার্য মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন বোম্বাইতে উত্তমকুমারের অভিনয়কে প্রতিষ্ঠা করতে। ‘শমশান’ নামে একটি হিন্দি ছবির অফার তিনি উত্তমকুমারকে অফার করেন কিন্তু গল্প পছন্দ না হবার অজুহাতে বাসুকে ফিরিয়ে দেন উত্তম। এর কিছুদিন পর বাসু আবার উত্তমের কাছে আসেন ‘অনুভব’ ছবির অফার নিয়ে কিন্তু এবারও হতাশাগ্রস্থ উত্তম ফিরিয়ে দেন বাসুকে। অগত্যা বাসু ‘অনুভব’ ছবির জন্য কাস্ট করেন সঞ্জীবকুমারকে এবং ছবি যথারীতি হিট।

১৯৭৪ সালের শেষের দিকে বোম্বাই থেকে এলেন পরিচালক শক্তি সামন্ত। তিনি সাহিত্যিক শক্তিপদ রাজগুরুর একটি জনপ্রিয় উপন্যাস ‘নয়া বসত’ অবলম্বনে একটি বাংলা ও হিন্দি দ্বিভাষিক ছবি করতে চান এবং সেখানে উত্তম থাকবেন তাঁর ছবির হিরো। বলা বাহুল্য, এটি শক্তি সামন্ত-এর প্রথম বাংলা ছবি। কিন্তু ‘ছোটি সি মুলাকাত’-এর ক্ষত উত্তম তখনও ভোলেননি। প্রথমে রাজি হলেন না অভিনয় করতে, তারপর শক্তি সামন্ত অনেক বুঝিয়ে ডেট নিলেন উত্তমের থেকে। ১৯৭৫ সালে রিলিজ করল শক্তি সামন্ত পরিচালিত দ্বিভাষিক বাংলা ছবি ‘অমানুষ’। ছবি মুক্তির পর দেখা গেল বাংলা ও হিন্দি দুটো ভাষাতেই ‘অমানুষ’ একেবারে সুপার হিট। শক্তি সামন্তের এই ছবির দৌলতে উত্তমকুমারের কাছে আবার বলিউডের দরজা খুলে গেল।

কিন্তু দেখা গেল, ‘অমানুষ’ যেমন হিট করেছিল সেই রকম হিট ছবি উত্তমকুমার তেমন দর্শকদের দিতে পারলেন না। শক্তি সামন্তের পরবর্তী ডবল ভার্সন ছবি ‘আনন্দ আশ্রম’ (১৯৭৭)-ও মোটামুটি একটা ব্যবসায়িক সাফল্য পেল। কিন্তু এফ. সি. মেহরা প্রযোজিত ‘বন্দী’ দ্বিভাষিক ছবিও তেমন সাফল্যের মুখ দেখল না। ১৯৭৭ সালে গুলজার উত্তমকুমারকে নিয়ে করলেন ‘কিতাব’। সাহিত্যিক সমরেশ বসুর ‘পথিক’ গল্প অবলম্বনে। ছবিতে একটি বাচ্চা ছেলে (মাস্টার রাজু) প্রধান চরিত্রে। গুলজারের স্মৃতিকথায় জানা যায়, “উনি আমার কোনো ছবি আগে দেখেননি, কিছু প্রায় না জেনেই উনি রাজি হলেন আমার ছবিতে কাজ করার জন্য। শুটিং-এর সময় দেখেছি উত্তমবাবু খুব পাংচুয়াল, সারাক্ষণ নিজের রোল রিহার্স করছেন। অবসরে চুটিয়ে আড্ডা মারছেন। একদিন গল্প করতে করতে পরিচালক অসিত সেন-এর কথা উঠল, আমি বললাম, উত্তমবাবু, ‘দীপ জ্বেলে যাই’ ছবিতে ‘এই রাত তোমার আমার’ গানটিতে আপনাকে একবারও দেখানো হল না, অথচ আপনি গানটার সাথে কি অসাধারণ অভিনয় করলেন, তাও অসিতবাবু আপনাকে ক্যামেরায় ব্যাকসাইড থেকে দেখালেন। এটা আমার ভালো লাগেনি। আমার কথা শুনে উত্তমবাবু মৃদু হেসে বললেন, গুলজার ভাই, আমি তো ওই সিনেমায় অভিনয়ই করিনি, ওতে ছিলেন বসন্ত চৌধুরী, আর যে সিনের কথা আপনি বলছেন ওটি পরিচালক অসিত সেন নিজেই ব্যাকসাইড করে পোজ দিয়েছিলেন আর এটাই ছিল পরিচালক অসিত সেনের প্রথম ক্যামিও।” গুলজার বলছেন, “আমি স্তম্ভিত উত্তমবাবুর কথা শুনে, খুব লজ্জিত হয়েছিলাম, ‘দীপ জ্বেলে যাই’ ছবিটি খুঁটিয়ে না দেখার জন্য।”

‘কিতাব’ মোটামুটি বেশ ভালোই চলেছিল বিভিন্ন সিনেমাহলগুলোতে, রাহুল দেববর্মন সুরারোপিত গানগুলি এই ছবির সম্পদ। ছবিতে রাহুলদেব-এর গাওয়া ‘ধান্য কি আঁখ মে প্যার ক্যা সুরমা’ গানটি তো আজও সমান জনপ্রিয়। এরপর উত্তমের হাতে আসতে থাকে ‘দুরিয়া’, ‘নিশান’, ‘দাবেদার’, ‘প্লট নম্বর ফাইভ’ এবং ‘দেশপ্রেমী’ ইত্যাদি হিন্দি ছবির অফার। এই ‘দেশপ্রেমী’ ছবিটি দেখে আমার ব্যক্তিগতভাবে খুব খারাপ লেগেছিল, পরিচালক মনমোহন দেশাই খুব ব্যাড ইউটিলাইজ করিয়েছিলেন উত্তমকে এই ছবিতে, গোটা ছবি যেন অমিতাভময়, সেখানে উত্তমবাবুকে দিয়ে পরিচালক কোনো কাজই করাতে পারেননি।

উত্তমের কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্ত কিংবা ভুল চরিত্র নির্বাচন হিন্দি বলয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠা লাভের পথে বাধা হয়ে থাকতে পারে। বোম্বাই-এর পরিচালকরা হয়তো উত্তমকুমারের অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার কথা চিন্তা করে ভয় পেয়েছিলেন। তাঁরা হয়তো চেয়েছিলেন ‘গ্রেট উত্তমকুমার অফ বেঙ্গল’ একমাত্র বেঙ্গলেই রাজ করুক। এটা হয়তো এক ধরনের বোম্বাই রাজনীতি। বোম্বাই-তে অনেক নায়কের ছবিই তো পর পর ফ্লপ করে কিন্তু তার পরেও তাঁরা অভিনয় করার ডাক পেয়ে থাকেন। আসলে উত্তমকে বোম্বাই কোনোদিন মনেপ্রাণে চায়নি, তাঁর গুনের কোনো স্বীকৃতি দেয়নি গুটিকয় পরিচালক ছাড়া, তাঁদের মধ্যে শক্তি সামন্ত ও গুলজারের কথা বার বার উল্লেখ করে গেছেন উত্তম। শুধু তাই নয়, উত্তমকুমার যেদিন মারা যান তার সংবাদও বোম্বাইয়ের কোনো সংবাদপত্রে বেরোয়নি, বরঞ্চ সেইদিন উক্ত কাগজগুলোতে বড়ো বড়ো করে স্থান পেয়েছিল হলিউডের বিখ্যাত ‘দি পিঙ্ক প্যান্থার’-খ্যাত কমেডিয়ান পিটার সেলারস-এর মৃত্যু সংবাদ। উত্তমকুমারের প্রতি বোম্বাই-এর এই ঔদাসিন্য বড্ড বেদনাদায়ক ছিল সেদিন। তবে পশ্চিমবঙ্গে সেদিন শোকের ঝড় আছড়ে পড়েছিল। বাংলার প্রত্যেকটি বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি খবরের কাগজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা উত্তমের প্রতি তাঁদের শোকজ্ঞাপন করেছিলেন। তাই বোম্বাই একটুও জায়গা না দিলেও উত্তমকুমার বাঙালির হৃদয়ে চিরদিন একটা নক্ষত্র হয়ে থাকবেন।

পিটার সেলারস
অন্তিম যাত্রায় উত্তম

শেষ কথাঃ – সম্প্রতি একটি খবরের কাগজে পড়লাম উত্তমকুমারের শেষ ছবি নাকি একটি হিন্দি ছবি, ‘প্লট নম্বর ফাইভ’, যাতে উত্তমকুমারের সাথে অভিনয় করেছিলেন অমল পালেকর, প্রদীপকুমার, আমজাদ খান, ড. শ্রীরাম লাগু প্রমুখ শিল্পীগণ। এটা পড়ে আমিও একটু দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম কিন্তু কিছুদিন পর উক্ত সংবাদপত্রে একজন উত্তমভক্ত ইমেল করে সেই ভুল ভেঙে দেন। ২৩শে জুলাই ১৯৮০ অর্থাৎ মৃত্যুর ঠিক আগের দিন উত্তমকুমার সলিল দত্ত পরিচালিত ‘ওগো বধূ সুন্দরী’-তে শেষ শট দিয়েছিলেন। এটা যদি কেউ বলেন যে এটাই তাঁর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হিসাবে ধরা হবে, তা হলে তাঁর মৃত্যুর পরে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর তালিকা ও রিলিজ ডেটগুলো একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক—

১. রাজাসাহেব (২৯/০৮/১৯৮০)
২. প্লট নম্বর ফাইভ (২৩/০১/১৯৮১)
৩. ওগো বধূ সুন্দরী ( ০৬/০২/১৯৮১)
৪. খনা বরাহ (২৯/০৫/১৯৮১)
৫. প্রতিশোধ (৩১/০৭/১৯৮১)
৬. সূর্যসাক্ষী (৩১/০৭/১৯৮১)
৭. কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (০৭/০৮/১৯৮১)
৮. দেশপ্রেমী (২৩/০৪/১৯৮২)
৯. ইমনকল্যাণ (২১/০৫/১৯৮২)
১০. মেরা করম মেরা ধরম (যেটি শুটিং হয়েছিল ‘দাবেদার’ নামে) (১০/০৭/১৯৮৭)

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এই ১০ নম্বর ছবিটিই উত্তমকুমারের রিলিজ হওয়া শেষ ছবি। ছবিতে উত্তমকুমারের সাথে অভিনয় করেছিলেন মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়, ধর্মেন্দ্র, ড. শ্রীরাম লাগু, প্রেমনাথ, জনি ওয়াকার প্রমুখ শিল্পীবর্গ। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন দুলাল গুহ। উপরোক্ত বেশ কিছু ছবিতে তিনি নিজের ভয়েস ডাবিংও করে যেতে পারেননি। সেই অসম্পূর্ণ কাজটি করেছিলেন তাঁর ছোটোভাই তরুণ কুমার ও বিবিধভারতীর বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব স্বরাজ বসু।

ঋণস্বীকার:—

১. আমার আমি (উত্তম কুমারের আত্মকথন–অনুলেখক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ)
২. পান্তাভাতে–গুলজার
৩. সাতরং (প্রথম পর্ব)–রবি বসু
৪. আনন্দলোকের কিছু বিশেষ সংখ্যা
৫. প্রসাদ–বিশেষ উত্তমকুমার সংখ্যা
৬. এই সময়–রবিবাসরীয় ও চিঠিপত্র বিভাগ
৭. সমস্ত ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *