গল্পকথা – আত্রেয়ী দাস

গল্পকথা – আত্রেয়ী দাস

শেয়ার করুন
এটা একসময়ের গল্পকথা। আমাদের চলমান জীবন থেকে সরে যাওয়া অনেক ঘটনাই আজ গল্পকথা হয়েই থেকে যাবে। তবে পক্ষে বিপক্ষের নানান তর্ক মূলত বাঙালির আড্ডায় থাকাটা এক পরম্পরা। গল্পগুলো শুধুই গল্প নয়। এই গল্পকথার হাত ধরেই সময়ের স্রোতে আধুনিকতার চাপে উবে যায় নানা জীবন-সংস্কৃতির গল্পকথা। আমরা যে মফস্বলের জীবনের ছোঁয়ায় নিজেদের বড় করে টিকিয়ে রেখেছি, সেখানে নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় জীবনযাত্রা। সকালের ঘুম থেকে ওঠা, ব্রাশ করে সুপ্রভাত কম, গুডমর্নিং বেশি ছবিসহ শুভেচ্ছার ঝুড়ি দর্শন ও চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার ফাঁকে বর্তমান নগর সংকীর্তণে বেরিয়ে পড়া কেষ্টঠাকুরের আগমন। এখানে রাই-এর গান নয়, ওগুলো যারা গাইতেন তাঁরা আর তাঁদের গান এখন গল্পকথা। কেষ্টঠাকুর ( অনেকের হাঁকডাকে তারা ‘এই ময়লা’ নামে পরিচিত) বাঁশি বাজিয়ে ময়লা নিয়ে যায়। কেষ্টঠাকুর আখ্যাটা হয়তো বাঁশির জন্য। ফলে ঠাকুর আর বাঁশি দুটোই আধুনিক। একটা ঠেলা গাড়ি নিয়ে মোড় থেকে ঘুম ভাঙ্গানিয়া পি- রিপ- পি- রিপ শব্দে কেষ্টঠাকুর ওরফে ময়লা হাজির বাড়ির দরজায়। শুরু আর এক সচেতনতামূলক কাজ-সাফাই, বাড়ির নোংরা সাফাই। ভ্যাটের গাড়িতে ময়লার সাথে পারি দিলো মাথা ভাঙ্গা পেঁচা, লেজ ভাঙ্গা মাছ, লক্ষ্মীর ঝাঁপি, ঘাড়-নাড়া বুড়োরা। গন্তব্যস্থল ভাগাড়। এক সময় যারা ছিল সংসারের কিছু খুচরো পয়সা নিজেদের কাছে আঁকড়ে রেখে অসময়ের সঙ্গী এখন তারাই অবাঞ্ছিত। প্রয়োজনের সাথে সাথে ঘরের শোভা বহাল রেখেও যে আনন্দ দিত, আজ সে ময়লা। কালের স্রোতে আজ তারা লুপ্তপ্রায়। এখন আর এদের দেখা পাওয়া যায় না বা পেলেও এরা এখন গুরুত্বহীন। এখন প্লাস্টিকের পিগি ব্যাঙ্ক, মানি ব্যাঙ্ক শোভা বাড়াচ্ছে। ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনিয়ে থাবা মেরে নিয়েও যাচ্ছে। মাটির তৈরি ওই সকল শিল্পকর্ম এখন ব্যাকডেটেড, আর ওসব তৈরির কারিগররাও। এখন আর লক্ষ্মীর কুলো, মাছ, প্যাঁচা, ট্যাঁপাটেঁপি, ঘাড়-নাড়া বুড়োদের দেখা মেলে না। ঘাড় নাড়ে পোকেমনরা। একসময় এক সন্ধ্যেবেলায় ষ্টেশনের চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে এমন এক শিল্পীর সাথে চলছিল এমন এক গল্পকথা। এখন এসবের চাহিদা, বাজার কালের স্রোতে হারিয়ে যাওয়ায় আজ তিনি ট্রেনের হকার। প্লাস্টিকের শাঁখা-পলা, কানের দুল, ছুরি, টিপ বিক্রেতা। অন্য অনেক কিছুর মতোই আধুনিকতার চাপে হারিয়ে গেছে ছাঁচে তৈরি মাটির পুতুল, খেলনা আর নেই, তাদের কারিগররাও। থেকে যাবে এমন কিছু গল্পকথা। হয়তো অনেকের মনেই জমাট বেঁধে আছে বা বাঁধছে এমন গল্পকথা। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সংস্কৃতির আর একটা অধ্যায়। ‘এই পাল্টানো সময় ফিরবে কি ফিরবে না জানা নেই’ অন্তত বাঁচুক এমন স্মৃতির গল্পকথা। চিত্র : মৌমিতা ভট্টাচার্য
শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২