‘গল্প না-লেখার ভান করেনি’ – সুকান্তি দত্ত
“আপনপাঠ” প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের গল্পগ্রন্থ “আক্রান্ত ও অন্যান্য গল্প” পড়লাম। অনুজপ্রতিম শাক্যজিতের গল্প পড়েছি আগে, কোনো কোনো গল্প খুব ভালো লেগেছে, যার দু-তিনটি এই বইতেও আছে।
বইয়ের উৎসর্গ পত্রটি বড়ো চমৎকার, ‘পার্টনার -ইন ক্রাইম, শময়িতা’, এও এক সৃজনশীল মনের প্রকাশ।
যদিও বইটির নামকরণে ‘আক্রান্ত’ গল্পটি বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে, আমার মনে হয়েছে তার থেকেও ভালো গল্প, ‘ সামাজিক কল্যাণ ও তিরিশ বর্গফুট’, ‘ডেসমন হাঁসদা ও তার সুসমাচার’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’ , ‘বৃহদারণ্যক’ ইত্যাদি।
শাক্যজিৎ “গল্প লিখতে বসে গল্প না-লেখার ভান করেনি”( রবীন্দ্রনাথ তারাশঙ্করের গল্প পড়ে যা বলেছিলেন)। ঘটনার ঘনঘটা বা নাটকীয়তা না-থাকলেও তাঁর গল্পবয়ানে যা কিছু নান্দনিক প্রকাশ তা সূক্ষ্ম এক কাহিনিরেখা রেখেই।
গদ্যে অযথা অপ্রয়োজনীয় জটিল বাক্য গঠন করেননি ( ঠিকই করেছে, আমার মতে) কিন্তু শব্দের সৃজনশীল ববহারে, বিশেষণ, উপমায় নতুন পথ খুঁজেছেন বিষয়ে সাযুজ্য রেখে, ফলে সেই গদ্যে আমার মতো আরও অনেক পাঠকের মনন-অনুভব গভীর ভাবে আলোড়িত হবে বলে আমার ধারণা। উদাহরণ নেওয়া যাক “বৃহদারণ্যক” গল্প থেকে, “রাষ্ট্রীয় আকাশ আপাতত যোদ্ধার মতো পিঠ বেঁকিয়ে ঝুঁকে আছে কলকাতার ওপর। তার ঘামভেজা শরীর থেকে ল্যাতপেতে নোংরা মেঘের ফোঁটা পড়ব পড়ব করছে।”
দুটি গল্প, ‘উপনিবেশ’ ও ‘ শঙ্কু পাঁজার খোয়াবনামা’, ভাবনা বা কাহিনিরেখার দিক থেকে একই ধরনের মনে হয়েছে। আর প্রকাশকের প্রতি একটি কথা, উল্লিখিত দ্বিতীয় গল্পটিতে কয়েকটি পৃষ্ঠা দুবার ঢুকেছে বাঁধাইতে।
এই সময়-সমাজকে গভীর মনন ও অনুভূতি নিয়ে দেখে বুঝে তিনি যে শিল্পবাস্তব রচনা করেন, যেখানে কাহিনি গৌণ হয়ে উঠে আমাদের বোধ বা চেতনায় গভীর আলোড়ন তোলে, তা তার আগে লিখতে আসা এক সামান্য লেখক এবং এক পাঠক হিসেবে আমাকে বেশ কিছু গল্পে মুগ্ধ করে।
শাক্যজিৎ বড়ো আশা জাগিয়ে চলেছেন।
তাঁর অবিরাম সাধনা সে-আশাকে পূর্ণ করে তুলুক , অনুজের কাছে অগ্রজের এই দাবি, ভালোবাসার।
‘আপনপাঠ’- কে অভিনন্দন এমন বই প্রকাশের জন্য।