গুচ্ছ কবিতা : অনূদিত আমি – বেবী সাউ

শেয়ার করুন

এক।

আমাকে সামান্য জেনে, বের করে এনেছ তুমিও
বিভক্ত ধাতুর মতো। বারবার অবকাশ দেখে
এই বরফের দেশ, এই নুড়ি পাথরের দেশ
অচেনা যেমন ছিল, পরিচিতহীন বোধে তাও
কৌতুক বিশ্বাসী আর লেনদেন ছেড়ে ভাঙা পথ…
সামান্য চকলেট লোভ প্রত্যাশী আমিও, পিপিলিকা
মুখে করে নিয়ে আসি মিথ্যে পরিচয়, হাতছানি

অথচ, যেতেই হবে; এই পরিযায়ী বেশ ছেড়ে
দেশ ছেড়ে; সহজেই; নিপুণ খুনির মতো ভয়
নেই, আশা নেই, শুধু পথ আর পথ—শীতে মোড়া
অধিক শীতল চোখ! তোমার ঘরের কাছে পড়ে
আছে মায়া মোহ, গান—সামান্য সঞ্চয়! এতদিন
যাকিছু জমানো আছে স্মৃতিচারণের এই ঘরে
গৃহপালিতের মতো; শুধু তার বশ্যতা টুকুই
একাধিক প্রাপ্তি ভেবে, আমিও নিশ্চিত; চকলেট
লোভে বারবার আসি এদেশেই, সে ভুলবশতই…

দুই।

এই পথ বলে দেবে পথ? এই পথ দেখাবেই
সম্পূর্ণ নিশান? আর এই অন্ধকার আমি থেকে
খুঁজে নিতে পারি শুধু নিজস্ব আমিকে! তারপর?
স্বপ্নের পোশাক পরে, মিথ ভেঙে নির্লিপ্ত দুপুরে
পাইনের চিরায়ত বাঁকে যেন খুঁজে পেয়ে গেছি—
পাওয়ার ছিল না তাও! এরকম প্রথম উচ্ছ্বাসে
টানটান মুখ, চোখ—ঘুম ছেড়ে, বারবেলা ভেঙে
হাঁটি। যেখানে দুচোখ। সাথে শুধু হাতবোমা, স্নায়ু…
নিজেকে হত্যার রঙে লিখে রাখি মিথ্যেজন্ম আর
তুমি… তুমি… তুমি…

তিন।

নিজের মুখোশ থেকে খসে পড়ে মুখ। কাটা দাগ…
ক্রমাগত ছাইয়ের পরিধি বাড়ায়। টানেলের
পার্শ্বরেখা ভেঙে ওড়ে হাওয়ার নিশ্বাস; ঘন ঘন
এখানেই পড়ে ছিল কণ্ঠনালি; সামান্য ভয়েস
অনুসরণের ঢঙে তার কাছে ফিরি। চুপচাপ…
কতকাল বয়ে গেছে এপথেই শ্বাস, বায়ু, নল…
প্রাপ্তির সান্ত্বনা খুঁজে স্কুল বাস আরোহী বালিকা
মেষপালকের ঘরে এসে বসে… পুরোনো কথায়
ঝাঁপি খুলে খুলে দেখে আর বলে, মনে পড়ে… মনে…

চার।

এমন শীতার্ত দিনে, ছাই চাপা আগুনের কাছে
তুমি ফেরি করে ফেরো রঙিন উৎসব… ডোরাকাটা
সোয়েটার। মাফলারে মুখ ঢেকে নরম সূর্যাস্ত
বিদেশি সিনেমা দেখে ফেরে। বুকে পোষমানা বাঘ

যে অবকাশ নরম অথচ… ক্রমশ দীর্ঘ। হতে
জিরাফ তাকেই ভেবে, কাঁটাগাছ, দু’ফালি বিশ্বাস
আর কিছু নিয়তির ছেড়ে যাওয়া পরিচয়লিপি
তুলে ধরে ধরে বলি, নাও! মানে মানে কেটে পড়ো…
জ্বালিও না আর…

পাঁচ।

জিভের কাহিনি সব। রসালো টসটসে তাজা। আর
মুখরোচকের ভারে হেরে যায় নিজস্ব আমিত্ব।

অভিমানী। দিশাহীন। চুপচাপ বসি। খাদ শূন্য…
তারাখসা রাত। গাঢ়তর। মাঝে নিশ্বাসের সুরে
যুক্তাক্ষর ভেঙে ভেঙে উচ্চারিত হয় ধ্বনি, কথা
ডাকনামে জেগে উঠে ক্রিয়াপদসহ ধাতু, শব্দ
নিজেকে এদের কাছে আনি। ফেলি। হাতজোড় করে
বারবার বলি, দাও! পরিচয় দাও! ওহে! শূন্যজন্ম…

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *