শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্যশিক্ষা – এল. বীরমঙ্গল সিংহ (পর্ব ৩)

শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্যশিক্ষা – এল. বীরমঙ্গল সিংহ (পর্ব ৩)

শেয়ার করুন

কলকাতায় ‘নটীর পূজা’ সফল অভিনয়ের পর আসন্ন দোল উৎসবের জন্য নৃত্যগীতের একটি অনুষ্ঠান করাবেন বলে কবি স্থির করলেন। নতুন করে ছয় ঋতুর গানও রচনা করে ছয়টি ঋতুর পর্যায়ে সাজিয়ে নাম দিলেন ‘নটরাজ’। নিঃসন্দেহে নটীর পূজার সাফল্যই কবিকে এ কাজে উৎসাহ জুগিয়েছিল। নটরাজ-এর ঋতু পর্যায়ের গানগুলোর সফল নৃত্যরূপ দিলেন নবকুমার। রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে এসে নটীর পূজা ও নটরাজের মাধ্যমে নবকুমারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। আহমেদাবাদে বিখ্যাত শিল্পপতি আম্বালাল সারাভাই নবকুমারের খ্যাতি শুনে রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করেন তাঁর মেয়েদের নাচ শেখানোর দায়িত্ব যেন নবকুমার গ্রহণ করেন। তাই নবকুমার প্রথম পর্যায়ে প্রায় দু’বছর (১৯২৫-২৭ সাল) শান্তিনিকেতনে নৃত্যশিক্ষা দেওয়ার পর রবীন্দ্রনাথের কথায় আহমেদাবাদে চলে যান। এ প্রসঙ্গে শান্তিদেব ঘোষ লিখেছেন, “শিলঙ-এ গুরুদেবের সঙ্গে পুত্র কন্যাদের প্রকৃত শিক্ষা বিষয়ে আলোচনা কালে এ যুগে বিদ্যালয়ে নৃত্য, গীত ও চিত্রকলার স্থান কতখানি হওয়া উচিত এবং শান্তিনিকেতনে গুরুদেব এই কয়টি কলাকে সম্মানজনক স্থান দেওয়ার আয়োজন করেছেন তা শুনে আম্বালাল খুবই মুগ্ধ হন। ‘নটীর পূজা’ এবং ‘নটরাজ’ অভিনয়ের সাফল্যে মণিপুরি নৃত্যের অবদানের কথা শুনে তিনি স্থির করেন তাঁর পারিবারিক বিদ্যালয়ে তিনি নাচের প্রবর্তন করবেন এবং মণিপুরি নাচই শেখানোর ব্যবস্থা সেখানে রাখবেন। আগরতলা থেকে নবকুমার সিংহকে শিলঙ-এ আসবার জন্য সংবাদ পাঠানো হল। তিনি জুন মাসে শিলঙ-এ এসে আম্বালালের কন্যাদের মণিপুরি নাচ শেখাবার দায়িত্ব নেন। আম্বালাল আহমেদাবাদে ফিরে যাবার সময় নবকুমারকে সঙ্গে নিয়ে যান। গুজরাট অঞ্চলে মণিপুরি নাচের প্রথম সূত্রপাত হয় এইভাবে, নবকুমারের দ্বারা।” (তদেব, পৃ : ৩০)

নবকুমার আহমেদাবাদে নৃত্যশিক্ষক হিসেবে সাত বছর ছিলেন। আম্বালালের নৃত্যপটীয়সী দুই কন্যা মৃদুলা সারাভাই ও লীলা সারাভাই ছিলেন নবকুমারের কৃতী ছাত্রী।

১৯২৯ সালের জুলাই মাসে মণিপুরের ইম্ফল থেকে বিখ্যাত নৃত্যগুরু হাওবম অতোম্বা শান্তিনিকেতনে নৃত্যশিক্ষক হিসেবে এসেছিলেন। তিনি প্রথম পর্যায়ে বছর খানেক শান্তিনিকেতনে নৃত্যশিক্ষা দেওয়ার পর মণিপুরে ফিরে যান। পরে আবার নৃত্যশিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দিয়ে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত শান্তিনিকেতনে সুনামের সঙ্গে নৃত্যশিক্ষা দিয়েছেন।

সিংহলবাসীদের আমন্ত্রণে ১৯৩৪ সালের মে মাসে রবীন্দ্রনাথ ‘শাপমোচন’ নৃত্যনাট্য দল নিয়ে সিংহল সফরের জন্য মার্চ মাস থেকে মহড়া শুরু করে দেন। নবকুমার ও তাঁর পুত্র নরেন্দ্রকুমারকেও আহমেদাবাদ থেকে খবর পাঠিয়ে শান্তিনিকেতনে আনা হল। তিনি মার্চ মাসেই চলে আসেন নাচ শেখাবার জন্য। শান্তিদেব ঘোষ তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন, “এবারে নবকুমার আসার পর এবার মণিপুরি নাচের একটা নতুন রূপ আমাদের কাছে প্রকাশ পেল। খাঁটি মণিপুরি নৃত্যভঙ্গিতে গুরুদেবের গানের অনুকূল ভাব ব্যক্ত করে কয়েকটি উৎকৃষ্ট নাচ তিনি এবারে দেখালেন গুরুদেব এবং আশ্রমবাসীদের। গানের কলির ফাঁকে ফাঁকে, অনুকূল ছন্দের বোলের নাচ প্রবর্তন করেছিলেন। তাতে গানের নাচগুলিতে যেমন বৈচিত্র্য দেখা দিয়েছিল, তেমনি জমাট লাগত। এ ঢং-এ পূর্বে আমরা কোন নাচ নাচিনি। নাচের একটা নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছিল।” (পৃ : ১৬১)

নবকুমারের নাচ দেখে কবিগুরুও খুব খুশি হলেন। সে সময় তাঁর দৌহিত্রী নন্দিতা শান্তিনিকেতনে ছিলেন না। গুরুদেব নন্দিতার মা মীরা দেবীকে নবকুমার আসার খবর দিয়ে লেখেন, “মনিপুরের নবকুমার এসেছে, ছুটিতে থাকবে। নাচ শিখবার দুর্লভ সুবিধে হয়েছে। এটাকে কিছুতেই উপেক্ষা করিসনে। বুড়ির (নন্দিতা) যে স্বাভাবিক শক্তি আছে তাতেই তার যথার্থ আনন্দ ও সার্থকতা। একটুও দেরি করিসনে চলে আয়। সেই মালাবারি নাচনিও আছে, কিন্তু নবকুমারের নাচ দেখে আরো ভালো লাগল।” (পৃ : ১৬২)

‘শাপমোচন’ নিয়ে সিংহল যাত্রা সম্পর্কে নবকুমার সিংহ তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, “‘শাপমোচন’ বইটির নৃত্যনাট্য রূপদানের দায়িত্ব পড়িল আমার উপর। সঙ্গীত সংস্থাপনার ভার নিলেন পণ্ডিত ভীমরাও শাস্ত্ৰী। এই বিরাট কাজে আমাকে সাহায্য করিবার জন্য শ্রীমান নরেন্দ্রকে শান্তিনিকেতনে ডাকাইয়া পাঠালাম।” (রবীন্দ্রনাথ ও ত্রিপুরা, পৃ : ১৮৬)। শেষে কবি সহ পঞ্চাশ জনের এক বিরাট দল জাহাজযোগে ৫ মে কলকাতা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। ১২ মে কলম্বোতে প্রথম অভিনয় হয়। অরুণেশ্বরের চরিত্রে নবকুমারের অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু পরে নবকুমার ও তাঁর পুত্র নাচ ও গানের সঙ্গে মণিপুরি মৃদঙ্গ বাজিয়েছে। পুত্র নরেন্দ্রকুমার অবশ্য সুরসেনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ‘শাপমোচন’ সিংহলবাসীর মন জয় করল। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “এতো বড় বিজয়, শুধু সাংস্কৃতিক বিজয়, বোধহয় বিজয় সিংহের পর আর হয় নি।” (রবীন্দ্রজীবন কথা, পৃ : ১৫৬)। ‘শাপমোচন’ অভিনয়ের পর ফেরার পথে নবকুমার আবার বোম্বাই-এ চলে যান।

নবকুমার ১৯৩৪ থেকে টানা ১৪ বছর বোম্বাই-এ নৃত্যশিক্ষক ছিলেন। বোম্বাই-এ নবকুমারের একটি বিশেষ কীর্তি ভারতীয় সিনেমায় মণিপুরি নৃত্যের প্রথম প্রদর্শন। ‘বসন্ত সেনা’ নামে নৃত্যপ্রধান এক হিন্দি সিনেমায় তিনি নৃত্য পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর দুই ছেলে নরেন্দ্রকুমার সিংহ ও নবদ্বীপ সিংহ এবং তাঁর সহকারী রাজকুমার সুরেন্দ্রজিৎ সিংহ এই ছবির এক দৃশ্যে মণিপুরি মৃদঙ্গ বাদকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এরপর নৃত্যগুরু নবকুমার সিংহ দিল্লির বিখ্যাত কলা সংস্থা ত্রিবেণী নাট্য সঙ্গমেও শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৫৫ সালে নবকুমার আবার বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনে নৃত্য শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে বছর খানেক সেখানে শিক্ষকতা করার পর আগরতলায় ফিরে আসেন। নবকুমার শুধু শান্তিনিকেতনে নয়, আহমেদাবাদ, বোম্বাই, দিল্লিতে দুই দশক ধরে মণিপুরি নৃত্যের প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন।

ভারতীয় সিনেমায় প্রথম মণিপুরি নৃত্য প্রদর্শনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ভারতের বাইরে তিনিই প্রথম সুদূর সিংহলে মণিপুরি নৃত্য প্রদর্শন করেছেন। মণিপুরি নৃত্যকে সারা দেশে জনপ্রিয় করানোর ক্ষেত্রে নবকুমারের অগ্রণী ভূমিকা স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৬৪ সালে মণিপুরি সাহিত্য পরিষদ, তাঁকে উপাধিতে ভূষিত করেন। তার মাত্র একমাস পরে ৮১ বছর বয়সে ১৯৬৪ সালের ২১শে এপ্রিল প্রতিভাধর এই নৃত্যশিল্পীর জীবনাবসান ঘটে।

নবকুমার যখন তাঁর কর্মস্থল বোম্বাই চলে গেলেন তখন শিলচর থেকে আনানো হয় রাজকুমার সেনারিক সিংহ ও মহিম সিংহকে, শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নাচের শিক্ষকতার জন্য। সেনারিক সিংহ পুজোর ছুটিতে মাদ্রাজ ও ওয়াল্টেয়ারে অভিনয়ের পর দেশে ফিরে যান। তাঁর পরিবর্তে আসেন শিলচর থেকে নীলেশ্বর মুখার্জি। এ প্রসঙ্গে ‘কবি প্রণাম’ স্মারক গ্রন্থে নলিনীকুমার ভদ্র উল্লেখ করেছেন, “শ্রীহট্টে রবীন্দ্রনাথের মণিপুরি নৃত্য দর্শন ও শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্যের প্রবর্তন সম্বন্ধে শ্রীযুক্ত প্রভাতচন্দ্র গুপ্ত মহাশয় আমাকে এক পত্রে লিখেছেন, সিলেটে গিয়ে তিনি মণিপুরি নাচ দেখারও সুযোগ পেয়েছিলেন। …১৩৪১ বাংলাতে গুরুদেব আমাকে একবার সিলেটে পাঠিয়েছিলেন মণিপুরি নাচের শিক্ষক সংগ্রহ করতে। সিলেটে আমি উপযুক্ত লোক না পেয়ে আমি শিলচর থেকে রাজকুমার সেনারিক ও মহিম সিংহ নামক দুই নাচিয়েকে নিয়ে যাই শান্তিনিকেতনে। রাজকুমার কিছুদিন পরেই চলে আসেন। তার জায়গায় ‘নীলেশ্বর’ নামক সিলেটের আরেকজন মণিপুরি নাচের শিক্ষক শান্তিনিকেতনে যান। এই নীলেশ্বর ও মহিম সিংহ বোধ হয় শান্তিনিকেতনে বছর দুয়েক মণিপুরি নাচ শিক্ষা দিয়েছেন।” (পৃ : ৯৭)

১৯৩৫-৩৬ সালে আগরতলা থেকে নৃত্যগুরু শাপম বসন্ত সিংহ শান্তিনিকেতনে নাচ শেখাবার জন্য গিয়েছিলেন। ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যে নৃত্যরূপ দানে তাঁরও অবদান রয়েছে। তিনি বেশিদিন শান্তিনিকেতনে ছিলেন না। তিনি আগরতলার অভয়নগরে বাস করতেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি নৃত্যশিক্ষাও দিতেন। ১৯৪৮ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন ও মণিপুরে চলে যান।

শাপম বসন্ত শান্তিনিকেতন থেকে ফিরে আসার পর ১৯৩৬ সালের শেষের দিকে আগরতলা থেকে নৃত্যশিক্ষক হিসেবে রাজকুমার চন্দ্রজিৎ সিংহ শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন। বছর দুয়েক তিনি সেখানে শিক্ষকতা করেন। ‘ভানু সিংহের পদাবলী’র কিছু গানেই নৃত্যরূপ দিয়েছিলেন তিনি। ‘তাসের দেশ’ নৃত্যনাট্যেও নৃত্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নন্দলাল বসুর কন্যা যমুনা, আম্বালাল সারাভাই-এর কন্যা লীলা সারাভাই, রবীন্দ্রনাথের পালিত কন্যা নন্দিতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি তাঁর ছাত্রী ছিলেন।

শান্তিনিকেতন থেকে আহমেদাবাদে আম্বালাল সারাভাইয়ের কন্যাদের নাচ শেখাবার জন্য চন্দ্রজিৎ সিংহ চলে যান। সেখানে দু’বছর শিক্ষকতা করে ফিরে আসেন আগরতলায়। তিনি দীর্ঘদিন মহারানি তুলসীবতী বালিকা বিদ্যালয়ের নৃত্যশিক্ষক ছিলেন। কিছুদিন আগরতলা মিউজিক কলেজেও শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৯০ সালে ২১ অক্টোবর ৭৭ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
রাজকুমার চন্দ্রজিৎ সিংহের পর ত্রিপুরা থেকে আর কোনো নৃত্যগুরু শান্তিনিকেতনে নাচ শেখাতে যাননি। তবে নৃত্যগুরু নীলেশ্বর মুখার্জির সঙ্গে ত্রিপুরার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। যদিও তিনি ১৯৩৫ সালে নৃত্যশিক্ষক হিসেবে শিলচর থেকে শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন।

নীলেশ্বর মুখার্জির জন্ম শ্রীহট্টের ভানুগাছ সংলগ্ন বালিগাঁও-এ। তবে তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে ত্রিপুরাতে। তিনি ১৯৫০ সালে সপরিবারে ত্রিপুরার কৈলাস শহর মহকুমায় চলে আসেন। বাস করতেন কাঞ্চনবাড়ি মশাউলি গ্রামে। আমৃত্যু সেখানেই ছিলেন। ১৯৭৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন। ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যর নৃত্যাভিনয়ের রূপরেখা তৈরিতে নবকুমার ও সেনারিক সিংহের পাশাপাশি নীলেশ্বর মুখার্জিও ছিলেন। পূর্ববঙ্গে ‘চিত্রাঙ্গদা’ মঞ্চস্থের জন্য ১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে শান্তিদেব ঘোষের নেতৃত্বে যে শিল্পীদল গিয়েছিলেন তাতেও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন নীলেশ্বর মুখার্জি। বছর দুয়েক শান্তিনিকেতনে শিক্ষকতা করার পর অসুস্থ হয়ে তিনি ফিরে আসেন দেশের বাড়িতে। এরপর নানা ঝামেলায় আর শান্তিনিকেতনে যাওয়া হয়নি।

ত্রিপুরার আর একজন নৃত্যশিক্ষক রাজকুমার সুরেন্দ্রজিৎ সিংহ পঞ্চাশের দশকে বিশ্বভারতীর নৃত্যশিক্ষক পদে যোগদান করার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য তিনি যোগদান করতে পারেননি। নবকুমারের শিষ্য রাজকুমার সুরেন্দ্রজিৎ-ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মণিপুরি নৃত্যশিক্ষক হিসেবে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি আগরতলার সরকারি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের মণিপুরি নৃত্যগুরু ছিলেন।

পরিশেষে বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ ত্রিপুরার নৃত্যগুরুদের সাহায্য নিয়ে শান্তিনিকেতনে ১৯১৯ সালের নভেম্বর বা ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে প্রথম নৃত্যশিক্ষা শুরু করেছিলেন। ত্রিপুরার নৃত্যগুরুরা রবীন্দ্রনাথের সহযোগিতায় মণিপুরি নৃত্যকে বৃহত্তর পরিসরে তুলে ধরেছিলেন। শতবর্ষ আগে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ত্রিপুরার নৃত্যগুরুদের সহযোগিতায় বৃহত্তর পরিসরে যে মণিপুরি নৃত্যচর্চার শুরু করেছিলেন তা আজ দেশে বিদেশে নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, মরিশাস, জাপান, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দেশে এখন মণিপুরি নৃত্যচর্চা হচ্ছে। মূলত শান্তিনিকেতন থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করেই ছাত্র ছাত্রীরা নিজ নিজ দেশে ফিরে গিয়ে মণিপুরি নৃত্যচর্চা কেন্দ্র খুলেছেন।

শান্তিনিকেতনে প্রথম নৃত্যগুরু রাজকুমার বুদ্ধিমন্ত থেকে শুরু এখনও পর্যন্ত যেসব নৃত্যগুরু মণিপুরি নৃত্যশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন বা করছেন তাঁদের একটা নামের তালিকা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে পরে সংশোধন করা যাবে। প্রাক্তন গুরুদের নামের তালিকা প্রয়াত নৃত্যগুরু সঙ্গীত ভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ কে. যতীন্দ্র সিংহের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলাম। বিশ্বভারতীর বর্তমান শিক্ষকদের নামের তালিকা সঙ্গীত ভবনের বর্তমান বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক য়াইখোম হেমন্তর কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি।
শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্যগুরুদের নামের তালিকা –

১। রাজকুমার বুদ্ধিমন্ত সিংহ
২।পাঙনবম নবকুমার সিংহ
৩।পাঙনবম বৈকুণ্ঠ সিংহ
৪।হাওবম অতোম্বা সিংহ
৫।রাজকুমার সেনারিক সিংহ
৬।মহিম সিংহ
৭।নীলেশ্বর মুখার্জি
৮।কামিনী সিংহ
৯।শাপম বসন্ত সিংহ
১০।রাজকুমার চন্দ্রজিৎ সিংহ
১১।সুধীর সিংহ
১২।সোরোকখাইবম পাকা সিং
১৩।অরাম্বম অমুবী সিং
১৪। কে. যতীন্দ্র সিংহ
১৫।প্রফুল্ল সিং
১৬। মাধব মুখার্জী

বর্তমানে কর্মরত –

১৭।অধ্যাপক য়াইখোম হেমন্ত
১৮।অধ্যাপিকা কে. সুনীতা দেবী
১৯। অধ্যাপিকা শ্রুতি ব্যানার্জি
২০।সহকারী অধ্যাপক ড: সুমিত বসু
২১।সহকারী অধ্যাপিকা টি. জ্ঞানপতি দেবী

সহযোগী –

১। কে এইচ প্রেমজিৎ সিং (পুঙ)
২। এম. কেন্দ্র সিং (পুঙ)
৩। শ্রীমতী এল. রাসেশ্বরী দেবী (কণ্ঠ সঙ্গীত)

তথ্যসূত্র:

১। রবীন্দ্রনাথ ও ত্রিপুরা – রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ, সম্পাদক : শ্রী গোবিন্দনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও শ্রী হিমাংশুনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, ত্রিপুরা আঞ্চলিক রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী সমিতি, আগরতলা, ১৯৮৭ মুদ্রণ ।
২। রবীন্দ্রজীবন কথা – প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, আনন্দ সংস্করণ ।
৩।গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিক ভারতীয় নৃত্য – শান্তিদেব ঘোষ, আনন্দ, কলকাতা ।
৪।রবিজীবনী, ৭ম খণ্ড – প্রশান্তকুমার পাল, আনন্দ, কলকাতা ।
৫। রবীন্দ্র জন্ম সার্ধশতবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থ – ত্রিপুরা সরকার ।
৬।কবি প্রণাম – ২য় সংস্করণ, বাণীচক্র-ভবন , শ্রীহট্ট ।
৭।রবীন্দ্রনাথ ও মণিপুরি নৃত্য – পান্নালাল রায়, একুশ শতক ।
৮। গুরু হাওবম অতোম্বা সিংহ – হাওবম ইবোচাওবা, জওহরলাল নেহেরু মণিপুর ডান্স একাডেমী, ইম্ফল ।
৯। মণিপুরী সঙ্গীত কলাবু খুৎমাবা ওঝাশিং – প্রো: সনসম ধনেশ্বর সিংহ ।

                                                  (সমাপ্ত)
শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২