একটি উজ্জ্বল মাছ – কুণাল বিশ্বাস

শেয়ার করুন

শিল্পী: ভাস্কর প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়


ব্রেসব্রিজ তারাতলা ছাড়িয়ে সম্প্রীতি সেতু বরাবর অনেকটা গেলে বাটা রিভারসাইড প্রকল্প। সামান্য পরেই পথ গঙ্গা-সমান্তরাল। বৃষ্টি-জল-রাস্তার মসৃণ ভাঁজে ভাঁজে ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিনের ঠোক্কর। আকরা বাঁধ ধরে উঁচুনীচু সোজা কিছুদূর। বুনিয়াদি ভূগোল।

জলের আঁধারে কত ম্লান তরুবীথি। কথা ছিল— যেখানে নদীর শরীর চোখের নাগাল থেকে সবেমাত্র দূর, জলে ও পানায় মাঝেমধ্যে জেগে আছে জল, চারটি শতক পুরোনো সবেধন ব্রাহ্মণপাড়া, তার কোনো বাড়ি।

ঘরের আলাপে উঠে আসে ধোঁয়া আর স্বর। কবিতা, প্রতর্ক, গান, চা-বিস্কুট-খাবার আর ছবি… কিংখাব, ব্যগ্র, নিবিড় ও অনিবার্য কিছু ফ্রেম। তাদের অমলিন উপস্থিতি।

আয়োজন নয়। আত্মীয়সন্ধান বলা যায়। অতীত কিংবা ভবিষ্যত নয়, কেবলই মৃত্যুর বিরুদ্ধাচরণ। যাওয়া অসম্ভব জেনেও জাগরণের বিপরীতে কাঙালপ্রতিম যেতে গিয়ে আমাদের ঘুম যেভাবে স্বপ্নের দিকে সরে সরে যায়। থাকে আমার প্রতি লক্ষ্যাতীত কারো নির্দেশ—

যাও, এই সুযোগ… আলিঙ্গন করো এই ক্ষণ। উপমা সাক্ষাৎ ঝুলে আছে আয়ত শরীরে। দেখো স্ফুমাটো, পারস্পেকটিভ, কিয়ারোস্কুরো কিছু খুঁজে পাও কিনা। চুম্বন করো, যাও। যতদূর পারো, আলজিভ ঠেকাও।

মুহূর্তে সজাগ আমি। শিশুর খেলনাবৎ আদরে সাজানো একেকটি ছবি, যাদের আসল জায়গা হয়তো ল্যুভর, আমস্টারডাম, নিউ ইয়র্ক… অন্যত্র। আমার প্রতিটা রোম সতর্ক। জয়গান করেছি ক্ষণিকের। এইবার আসবে মুহূর্তের সমাকল সেই গ্র্যান্ড স্পেস, যাকে মহাকাল বলে।

আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি বিমূঢ়, একা। শাটারের তলা দিয়ে নীচু হয়ে শালিক পাখিটার মতো চলে যাব মূক ও বধির স্কুলের চাতালে… খিচুড়ির ঘ্রাণে।

শিল্পী: ভাস্কর প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়


‘ভয়ের শুরুতে শুধু এই রূপ আজ সহ্য হয়
পৃথিবী স্বয়ং করে সুন্দরের পুজো
সুন্দর, কেননা সে মৃত্যু বিষয়ে উদাসীন’
—রাইনার মারিয়া রিলকে, প্রথম এলিজি

গাছ থেকে ছিঁড়ে যাওয়া ফল অস্থির সাম্যের উদাহরণ। নিশ্চিত পরিণতি আছে। তবু দোলাচল। মফস্বলের পুরোনো রাস্তা, অথচ মনে হয় আমাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে এক বিপুল এরিনার কেন্দ্রে, অজস্র ফ্লাড লাইট, লেসার বিম নেমে আসছে শরীরে। সঙ্গী মানুষটি আমার বন্ধু, অভিভাবক। আমাকে নিয়ে চলেছে তেরছা রোদের সাবেক জনপদ ছাড়িয়ে অন্যদিকে।

গোলারুটির মতো অসমান উঠোন। জৌলুসহীন বাড়িটার হাড়ে ও মাংসে গ্রন্থিদাগ, বয়সের প্রলাপ। অবিকল সেইসব বুড়োদের তুলনা, ঘুমোলে যাদের চোখের কোণায় মাছি এসে বসে।

তিনি এই বাড়িতে থাকেন। দোতলায় ঘর। মৃত্যু ও মাধ্যাকর্ষণকে অস্বীকার করে বেঁচে থাকেন ও উড়ে উড়ে বেড়ান। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার আগে বিড়ালের সবুজ বমি এড়িয়ে সাবধানে পা ফেলতে হয়। দ্বিতলে বাফার জোন। ঈষৎ বাঁকানো কশেরুকা ও স্পাইন। তুখোড় বাগ্মী, কখনও অন্তর্বর্তী বিরতির ঢঙে চোখ মেলে জানালার ভেষজ আলোর দিকে ঠায় তাকিয়ে আছেন।

—কী দেখছেন ওদিকে?
—ষড়যন্ত্র।
—কার বিরুদ্ধে?
—পৃথিবীর জল, হাওয়া, রোদ আর আলোর বিরুদ্ধে। আসলে আমার বিরুদ্ধে!
—মানে?
—মানে কিছু নেই। আচ্ছা, আপনি হুসেনের আঁকা পছন্দ করেন?
—খুব বেশি দেখিনি।
—ওরকম আঁকতে আমার বেশ ভালো লাগে।
—ভাস্করদা, আপনার প্রিয় শিল্পী কারা?
—মার্ক শাগাল ইজ গড! মিলিয়ন টাইমস গড!
—শাগাল আমার খুব প্রিয়। অভিকর্ষ ভুলে ওঁর ছবি দেখার আনন্দ। শাগালের আত্মজীবনী অসামান্য এক বই। আটার্লি পোয়েটিক!
—হুঁ
—শাগালের জন্মের দিন ভিটেবস্কের ইহুদি বস্তিতে আগুন লাগে। শহরের একাংশ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ওঁর বায়োগ্রাফি শুরু হচ্ছে এভাবে। আপনার কোনো শৈশবস্মৃতি, যা আপনার কাছে রিমার্কেবল?
—আমার উপর রাগ করে বাবা একবার আয়না ভেঙে ফেলেছিল। আমি সেই আয়নার ভাঙা টুকরোগুলো নিজের মতো করে সাজিয়েছিলাম। সারাদিন পুকুরে সাঁতার কেটে বেড়াতাম। অবশ্য সেই ভাস্কর ভগবান ছিল। ইন্সটিংক্ট থেকে আঁকত। সে শালা মরে গেছে! এখন যাকে দেখছেন, সে বিষ্ণুমন্দিরের শাঁখ হয়ে জীবন কাটাচ্ছে। হাতে হ্যারিকেন, পোঁদে বাঁশ।……. (স্তব্ধতা)……. ছোটোবেলায় আমি সমারসেট মমের একটা ছবি এঁকেছিলাম। সে সব হারিয়ে গেছে! সবাইকেই একদিন গরুর গাড়ি চালাতে হবে। নাহলে কেউ ঈশ্বর হতে পারবে না!
—শাগাল ছাড়া আর কে কে আপনার প্রিয়?
—পল সেজান, ভারমির প্রমুখ। কনস্টেবলের ল্যান্ডস্কেপ আমার খুব ভালো লাগে। তাছাড়া বিজন চৌধুরী, বরুণ হাজরা, প্রকাশ কর্মকার এবং মঞ্জিত বাওয়ার কাজও আমার পছন্দ। B.R. Panesar-এর কোলাজ, শক্তি বর্মণের ছবিও আমার ভালো লাগে। রবি বর্মার ছবির ভিতর আমি ভারমিরের রঙের কন্টিনিউয়েশন দেখতে পাই।
—ভ্যান গঘ?
—ওসব আমি অনেক এঁকেছি। ওই ঘরে আছে।
—ভ্যান গঘ আপনার প্রিয় নন?
—আমি কখনোই ওরকম আঁকতে চাইনি।
—হুঁ। শিল্প আপনার কাছে ঠিক কী?
—এক্সপ্রেশন অব হিউম্যানিটি এ্যান্ড লাভ।
—আচ্ছা।
—আসলে সায়লেন্স ছাড়া শিল্প হয় না। স্পেস ছাড়া ছবি হয় না। বোঝাতে পারলাম?

এই ছালওঠা আয়তঘনক— এই ঘর, গা ঢাকা দেওয়া ইট, বালি, সিমেন্টের গুঁড়ো— আমার দিকে চেয়ে আছে সবাই। ভয় পাই স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যবর্তী ফাটলগুলোকে। যেন কেউ অনন্ত উৎরাই পেরিয়ে আসছে। চেনা শব্দ, রীতি, কাউকে অতিক্রম করতে না চাওয়া আলো একসাথে খুলে যাচ্ছে ঘরের ভিতর।

These moments are quiet. So much silence has collaborated here.

সময় ক্রমশ দুপুর। নীরবতা জমে আছে এখানে।

শিল্পী: ভাস্কর প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়


মনে করো পুজো। মনে করো পুকুরের জলে মাথা তোলা পদ্মের সার্বভৌম কলোনির দিকে তাকিয়ে রয়েছ তুমি আর নিমরোদ সকাল… বেতারে চলেছে মহালয়া। ‘রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি…’। তার সপ্তকে ভোরের আজান মিলিয়ে পঙ্কজকুমার মল্লিক।

কাঁঠাল গাছের নীচে বাঁধা ছাগলটাকে পাতা বিলি করছে ধুতি ও ফতুয়া পরা প্রৌঢ়। ছাগলটাও আত্মগতভাবে চিবিয়ে খাচ্ছে একের পর এক পাতা। আর কিছুদিন। তারপরেই মহানবমীর সকালে হাড়িকাঠে চাপানো হবে তার গলা। রক্তখোর পিঁপড়ের দল ব্যস্ত থাকবে কিছুক্ষণ। আর তুমি তীক্ষ্ম চোখে দেখে নেবে পদ্মের অবয়ব, কাঁঠালের পাতা, পরিচিত মাটি। একের পর এক রং তোমার অন্ধকার ঘর দখল করে নেবে।

প্রিয় ভাস্কর, অজস্র চুমকিখচিত নীলাকাশ তোমার কৈশোর। আমি সেখানে দু-একটা পাখি যোগ করলাম।

শিল্পী: ভাস্কর প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়


আমি ভাস্করপ্রসাদ। বাবার নাম গীতামৃত চট্টোপাধ্যায়। ৫ জুন, ১৯৭১ গাছপালা, তৃণভূমি, মাঠ-খামার সাক্ষী রেখে প্রথমবার কেঁদে উঠেছিলাম।

আমি একা নই। আকাশ-বাতাস-পৃথিবীর নদী-বায়ু-জল— আরো অনেকে। আমি ক্যাম্ব্রিয়ান যুগে ছিলাম। ছিলাম গ্যালাপোগাস দ্বীপে। হেমলকের ঝাল সহ্য করে সক্রেটিসের যে খাদ্যনালী, উপশিরা হয়ে তার ধার বরাবর কত রং আমি দেখেছিলাম। আমি যোগবাশিষ্ঠ, আমিই চার্বাক। সুধা নাম্নী রমণীর দেহে বেজেছিল পরিপাটি বিছে আর মল। আমি তার রেশটুকু শুনেছিলাম। প্রতিটি শিশুর জন্ম আর অকালমৃত্যু, সেমেট্রি অভিমুখে মানুষের শবযাত্রায় আমি সাক্ষী। আমার মাথাভরা হত্যা, অগণন দ্রোহ। আমি অশ্বেতর, আমি সিংহ। বুনোফুল আমি, আমিই শাল্মলীতরু। আমি প্রবৃত্তি, প্রবৃত্তি জয় করবার আনন্দ যেন আমি। মাঝরাতে নতশির লিঙ্গ থেকে আচমকা বেরিয়ে আসা ফ্রুক্টোজ আমার ভ্রমণ।

আমি ভাস্করপ্রসাদ। ভাস্করপ্রসাদ বলে কেউ ছিল।

শিল্পী: ভাস্কর প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়


টিকালো নাক, চোখ আর তারুণ্যের সূচক নীলাভ ফড়িং। ঠিক যেন রাতের আলোয় স্থির গ্রহাণু, ফুটে ওঠা তারা। এই আত্মপ্রতিকৃতি তাঁর প্রতিভার মুখবন্ধ।

অধিকাংশ শিল্পী পোর্ট্রেট আঁকতে বসে সতর্ক হয়ে পটভূমি উল্লেখযোগ্য করেন না। অনেক ক্ষেত্রেই কম্পোজিশন হয়ে ওঠে ফ্ল্যাট আর মুখ আড়ষ্ট। অথচ ভাস্করের প্রত্যেক মুখ জ্যান্ত, নিস্পৃহ, চলমান, প্রবাহশূন্য। যৌবনে আঁকা মেরুন জামা পরা তাঁর আত্মপ্রতিকৃতির দিকে নাগাড়ে চেয়ে থাকা দায়। দর্শকের উপর পাল্টা নজরদারি করছে একজোড়া চোখ। যেন প্রোফাইল ভেঙে বেরিয়ে আসবে ফ্রেমে আঁটা পরাজয় আর জিতে নেবে যা কিছু পার্থিব।

ভাস্করের বেশ কিছু ছবিতে নির্দিষ্ট নারীমুখ পুনরাবৃত্ত হয়। সে কে— এই প্রশ্নে যাওয়ার সাংবাদিক-প্রবণতা অগ্রাহ্য হয় তুলনাহীন রঙে, হর্ষে, বেদনায়। সে কি অভিন্ন কেউ— এই সন্দর্ভে ঢোকার আগে টের পাওয়া যায় অমোঘ কমোনালিটি। মনে হয় তাহিতির সেই চাষিবউ, দুপুরে অলসভাবে ঘুরে বেড়ায়, তাকে অনুসরণ করে স্থানীয় কুকুর।

এক-দু’টি ছবিতে কিউবিজম খুব উপরিস্তরে ছাপ রাখে তাঁর উপর। জ্যামিতিক সৌন্দর্য তাঁকে আকর্ষণ করলেও বস্তুর আকার-সর্বস্বতা, কাঠিন্য থেকে সচেতনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেন ভাস্কর।

‘The Vulture’ গল্পে আক্রমণকারী হিংস্র শকুন আর নিষ্ক্রিয়ভাবে রক্তাক্ত হতে থাকা মানুষটার মধ্যে দিয়ে শিল্পী ও তার প্রেরণাজগতের আন্তঃসম্পর্ক খোঁজার যে চেষ্টা কাফকা করেছিলেন, ভাস্করের ‘The Abandoned Child’ ছবিটি যেন সেই একই ক্ষেত্রসমীক্ষার উপরে দাঁড়িয়ে আছে। অজস্র ঘাস, লতাগুল্ম ও জমির প্রান্তে শিশু, অথবা তার ভ্রূণাবস্থা পৃথিবীর রঙে লীন। যেন সে সৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন, সৃষ্টির উপর বীতশ্রদ্ধ, অথবা সে নিজেই স্বয়ং সৃষ্টি। ‘মৌনং চৈবাস্মি গুহ্যানাং জ্ঞানং জ্ঞানবতামহম্’… অর্থাৎ গোপনীয়সমূহের ভিতর সে আরো গোপনীয়, মৌনী।

শকুনের রূপে যে বেদনা তাঁকে ক্রমাগত ঠুকরে ঠুকরে বিক্ষত করছে, তাকে প্রতিহত করবার কোনো চেষ্টাই তাঁর ভিতরে নেই। এই ভয়ংকর শক্তির (প্রেরণাবিন্দু অথবা উৎকর্ষ) সাথে টক্কর দেওয়ার বদলে কখনো-বা নিজেকে তার শিকার হিসেবে মেনে নেওয়া গুরুতর।

শিল্পী: ভাস্কর প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়


“লেখা এক নিঃসঙ্গ জীবন। প্রতিষ্ঠান সবসময় লেখকের একাকিত্বকে অমর্যাদা করে। প্রকৃত লেখক অবশ্যই নির্জনতার মুখোমুখি হবে অনন্তকাল।” —আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (নোবেল পুরস্কার ভাষণ)

পল সেজান দীর্ঘদিন অজ্ঞাত ও অবজ্ঞাত থাকার আনন্দ উপভোগ করে গেছেন। চিত্রশিল্পের ইতিহাস ঘাঁটলে দেশ ও বিদেশ ঘুরে এমন নজির বিরল নয়। অথচ প্যারিসের সংস্রব ত্যাগ করবার পরেও তরুণ শিল্পার্থীরা দলে দলে সেজানের কাছে এসে দেখা করে যেত তাঁর প্রৌঢ়ত্বে। বান্ধবী ক্লারা-কে লেখা উপর্যুপরি চিঠিতে রিলকে জানাচ্ছেন সেজানের ছবি কীভাবে তাঁর কবিতার ভুবন তৈরি করে দিচ্ছে একে একে। কবিতার আধুনিকতার বীজ কি নিহিত ছিল না ডাচেস অব আলবার স্মৃতিতে আঁকা ফ্রান্সিসকো গোইয়ার Naked Maja নামক বিধ্বংসী ছবিতে? এই নারী কুরূপা, ঋতুস্তব্ধ, তার ঘন ঊরুসন্ধি জুড়ে হিম শূন্যতা। আধুনিকতার বড়ো সূচনা এই স্পেনীয় ক্ষতের মাধ্যমে। পাপবোধ আর বিকল্প নিসর্গচেতনা লালন করে দু’বছর পরে (১৮৫৭ সাল) প্রকাশিত হবে শার্ল বোদলেয়ারের ‘ফ্ল্যর দু মাল’। তাঁর ভাবশিষ্য র‍্যাঁবো ১৮৭৩ সালের অগাস্ট মাসে ‘নরকে এক ঋতু’ (SAISON EN ENFER) শুরু করবেন এক নির্মম বিবৃতি দিয়ে: ‘সুন্দর স্বয়ং এসে আমার জানুর উপরে বসেছে। আমি ক্লান্ত।’ বহু বছর পরে পেনসিলের কয়েকটি মামুলি আঁচড়ে পিকাসো আঁকবেন কিশোর র‍্যাঁবোর প্রতিকৃতি।

শিল্প আসলে যৌথ অবচেতন থেকে বেরিয়ে আসা আনন্দ ও ফলিডল। সব চিত্রশিল্পীই একজন কবি। প্রত্যেক কবি নটরাজ। প্রত্যেকটি পাবলিক টয়লেটের দেওয়ালে লেখা যৌন ও রাজনৈতিক ভাষ্য একেকটি গ্রাফিত্তি।

শিল্পী: ভাস্কর প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়


আমি খুঁজতে চাইছি অন্তর্ঘাত। আর বালিকার হাতে পুতুল নেচে উঠছে। পাহাড় ও খাদের মাঝে ঝরনার কথা ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চলেছি। সরযু ফুলের বন থেকে দূরে হলুদ প্রজাপতির আস্তানা ঘিরে বাষ্পঘ্রাণে আমি একা। অনেক রাতে ঘুম ভেঙে সারা গায়ে তার হাতের ছোঁয়া টের পেয়ে মর্মন্তুদ হাসিতে ফেটে পড়ছি। বালিশের দু’ধারে শ্লথ লালা, চোখের জল, একপাশে হেলানো ঘাড়। নগ্ন সম্ভারে ঈশ্বর যেমন— নিরপেক্ষ, শ্রেষ্ঠতম বেদনায় নীল।

রাই জাগো। আমি এখনও তাঁর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে। তাঁর ছবির মানে আমি বুঝতে চেয়েছিলাম। দেখতে চেয়েছিলাম প্রবাহিত নদীর উপর হাত রেখে সময় ও জলের হাসিখুশি প্রেম, বিরহ, মাথুর।

নিশি পোহাইল, জাগো রাই।

শেয়ার করুন

Similar Posts

One Comment

  1. এইরকম ভীমপ্রতিভাকে নিয়ে কথা বলতে গেলে যে প্রেতের কলম লাগে, তা তোমার আছে কুণাল।
    আজীবন ঘরে রাখবার মতো মদ, আমাদের নিজেদেরই গড়ে নিতে হয়। তা তুমি করেছ। আশা এই, শ্রী ভাস্করপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের জান্তব আঁকাদের মুখোমুখি একদিন পঞ্চায়েত সভা বসবে, বিচার হবে যাদের চোখে জল—মুখে হাসি, তাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *