শুভদীপ মাইতির দশটি কবিতা

শেয়ার করুন

১.
রোদ

হলুদ বেড়ালের মতো জানলা দিয়ে ঢুকে আসে হিরন্ময় আভা
পুড়ে যেতে যেতে, অন্ধকার কেটে কেটে প্রকট হন
সূর্য দেবতা

চলে যাওয়ার আগে এসো প্রণাম করি পবিত্র হৃৎস্পন্দনে

২.
অসুখ

মনখারাপের দিনে ভীষণ ছোঁয়াচে বসতহীন পাখিটির মেঘ
বাদলাপুরের সেতু ছুঁয়ে গুমোট আকাশ, চুপি পাখিরালয়
সানাইয়ের করুণ সুরের মতো দরদ। ভিজে যাচ্ছে আনন্দনগর ও জন্মান্তর

৩.
ভাঙন

জিরানকাটের চিহ্ন নিয়ে শরীর। ভেঙে যায় ভ্রূণ। ভেঙে যাচ্ছে স্তন
ছেড়ে যাওয়া মুখ আগলে কবি

উপকূল জুড়ে সংক্রামক ভেঙে যাচ্ছে নড়বড়ে বাঁধ

৪.
ঘাট

স্নান ফেরত রমণীদের দ্রোহকাল ও নাভির জলে ভিজে থাকে ঘাট
আছাড়ে আছাড়ে আরও পিচ্ছিল

জল ভেঙে গেলে জেগে ওঠে প্রসব বেদনা

৫.
উনুন

ভেতরে ভেতরে জ্বলে ওঠে অভিমান। গৃহকর্মনিপুণা গৃহস্থ লক্ষ্মী
তেলে ঝালে সেজে ওঠে পঞ্চব্যঞ্জন
তলপেটের খিদের মতো জ্বর নিয়ে পড়ে থাকে শূন্যতায় একা

৬.
আশ্রয়

রামকুমার মান্নার টেরাকোটার নৌকার মতো
যে চাঁদটি ছড়িয়ে দিচ্ছে আলো,
তার অন্ধকারের একান্ন পিঠে সংক্রামক ব্যাধির মতো নুন ফুটছে।
এর ঠিক উল্টোদিকে সহজ পাঠের ছবির মতো ভাঙনে আটকে কবি।
তাঁর যাবতীয় হোমিওপ্যাথিক শুশ্রূষায় উপশম দিচ্ছে
ট্রাইচুরেশন ও ভেষজ শাকের ক্ষেত

একসময় টান বাড়ে, বিপদসীমা ছুঁয়ে নেয় ক্ষত

ক্ষয়ে যাওয়া পুরুষের নাভি থেকে ক্রমে স্পষ্ট হয়
সন্তানের মুখ ও বিকেলের ছায়াপথ

৭.
উদয়ন গ্রাম

ব্যারাকপুর উদয়নের সমগ্র জীবন জুড়ে যখন ক্ষিদে
একটি সমান্তরাল বাইশ গজে ব্যাট হাতে নেমে এলেন ঈশ্বর
তাঁর সবুজ উত্তরীয় থেকে বেরিয়ে আসছে
নিজস্ব ফসল ও চিকনি শাকের ক্ষেত

প্রতিটি লেপ্রোসি কলোনি জুড়ে যে ক্ষয়ে যাওয়া শরীর
তাদের আজন্ম প্রশ্বাসে সন্ধে প্রদীপের মতো উত্তাপ
ছড়িয়ে দিচ্ছে ঈশ্বরের গ্রাম

এসময় আকাশ ভারী হয়ে বৃষ্টি নামে
সমস্ত মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে থাকে ছোটো ছোটো পায়েদের ছাপ

৮.
মৃত্তিকা

যে তারাটি অভিমানের পাহাড় নিয়ে খসে পড়ল নীচে
সে জানে, আত্মহত্যার শেষ সময়ে
শরীর জুড়ে জেগে ওঠে নিজস্ব মাটির ঘ্রাণ

সমুদ্রের নীচে যখন ভেঙে যাচ্ছে ঘুম
পাথরপ্রতিমা প্রেমিকাটির শরীরে তখন রূপনারায়ণ

আসলে কবির সমস্ত প্রেম ও বিচ্ছেদ ছুঁয়ে যে নদী
সে কখনও শেকড় হতে চায়নি

কবির বুকে যখন বাঁক নিচ্ছে কপোতাক্ষ
সবার অলক্ষ্যে একটি চর জেগে উঠছে

৯.
অপরিণত

আমাদের মফস্বলে এসময় একটি বিষণ্ণ বিকেল নেমে এলে
আমি বঙ্গোপসাগরের উঠোন জুড়ে দেখি
তারা মাছেদের মৃতদেহ ও লাল কাঁকড়ার গোপন

এই পৃথিবীর সমস্ত পিপাসায় জেগে থাকে ক্ষত

বালিশ ভেজার রাতে যখন বুকের ভেতর ধ্বস নামছে
একটি জোড় হাত উঠে আসে কপালে

আমাদের সত্যিই কিচ্ছু দেওয়ার নেই
আসলে বাংলার উপকূল জুড়ে এই যে আবেদন
আমরা তার কিছুই চিনে নিতে পারিনি

কবি এযাবৎ তার সমস্ত কবিতা ভাসিয়ে
ফিরে যাচ্ছেন

১০.
বিয়োগ

তোমার চিবুকের তিলের মতো
এই যে শুকতারাটি নেমে এলো চাঁদের নীচে,
তেমন করে তিনিও চেয়েছিলেন

আসলে পরিকল্পিত কোন অধ্যায় ছিল না। আমি নামিনি।

কথারা মরে গেছে। আমি কথা হতে চাইনি।

আরও জোরে কামড় দিচ্ছে শিকড়

শুধু একটি ‘ভালো হচ্ছে’ শব্দেই
কখন যেন ডুবে গ্যালো

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *