জৌনসার-বাওরে বিস্সু পরবে – শিবু মণ্ডল (২য় পর্ব)
দ্বিতীয় ও অন্তিম পর্ব
সামনে সারি সারি পাহাড় না পাহাড়ের ছায়া! সব একাকার। তবে ছায়া আছে। জৌনসার-বাওর এর পাহাড়ে ঢেউ খেলানো চাঁদের আলো। মাঝে মাঝে ছায়া দেখে বোঝা যায় পাহাড়ের শরীর আছে, আছে নানা ভাঁজ, আছে লোমশ অরণ্য। এই বৈশাখী পূর্ণিমায় সে শুয়ে আছে না জেগে আছে আমি বুঝতে পারি না। তার শীত শীত করছে না কি কোনও গোপন উষ্ণ স্রোত বইছে কোথাও। চাঁদ জানে হয়তো। চাঁদ সব জানে। এই পাহাড়ে কারা কবে এসেছিল, কারা এসেছে আর কারা আসবে। এসেছিল কৌরব, এসেছিল পাণ্ডব! রাজ করেছে পাঞ্জাব, কাশ্মীর। তবুও তো পাহাড় একই আছে। গ্রামগুলির সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে মোড়লের সংখ্যা। এখন তো কোনও রাজা আসে না। রাজার প্রতিনিধি আসে। কেউ সর্দার সেজে। কেউ অগ্রবাল সেজে। এই হোটেল রিসর্টের মালিক চেতন অগ্রবালেরা যেমন তিন পুরুষ ধরে হোটেলের ব্যবসা করছে। যেমন ওই কমল চান্দনা। যিনি আজ এই রিসর্টের একটি অংশ ভাড়া নিয়ে পার্টি করছে। মি. চান্দনা আর মিসেস চান্দনার বিবাহের সিলভার জুবিলী। শহরের ছোটোবড়ো ব্যবসায়ী ও নেতারা ফুলের তোড়া ও উপহার নিয়ে হাজির। কেক কাটা হয়ে গেলে চলবে খানা-পিনা ও নাচা-গানা। পাহাড়ের এক একটা ধাপে এক একটা লন। হোটেলের মূল বাড়িটি হেরিটেজ তকমা পেয়েছে। ১৮৩৬ সালে তৈরি। কাঠ ও পাথর দিয়ে তৈরি গোটা কয়েক ঘর বিশিষ্ট কটেজটি কলোনিয়াল স্থাপত্যের এক অনুপম নিদর্শন। ইংরেজদের সৌন্দর্যবোধ দেখলে অবাক হতে হয়। ভারতের শৈলশহরগুলি তারা যেভাবে সাজিয়েছিল ছেড়ে যেতে নিশ্চয়ই কষ্ট হয়েছে ভীষণ। তাদের সেই দীর্ঘশ্বাস যেন কটেজের হাঁ মুখ চিমনির ছাদে আটকে আছে এখনও। সকালের রবি আর সন্ধের চাঁদ পাহাড় থেকে উঁকি মেরেই যেন প্রথমে এই হোটেলটি দেখে। অথবা হোটেলটি সেই কোন্ এক ইংরেজ সাহেবের স্বপ্ন নিয়ে জেগে থাকে দিনের প্রথম আলো আর রাতের চাঁদের প্রথম জোছনার ফোঁটা শুষে নেবে বলে। আজও আছে। এই বাড়িটির কারিগর সাহেবের স্বপ্ন আমি জানি, অগ্রবালের স্বপ্ন আমি জানি, চান্দনার স্বপ্ন আমি জানি। কিন্ত ওই দূর দূর পাহাড়ের গ্রামগুলির ঘরে ঘরে একটি করে আলো জ্বলে আছে। তাদের স্বপ্ন কী? জানি না। আমার রুমের বারান্দা থেকে একটি কৌণিক দূরত্বে উপরের বারান্দাতে মি. চান্দনার পার্টিতে কয়েকজন নাচ করছে। সাউন্ডবক্সে কোনও এক পাহাড়ি গান। পরে জেনেছিলাম এটি একটি জউনসারি নৃত্য। সেই পাহাড়ি বারান্দা থেকে ঠিক নীচের পাহাড়ি বারান্দায় দুই-তিনটি ফ্যামিলি মিলে বারবিকিউ রাত উদযাপনে মত্ত। এরা নিশ্চিত দিল্লিবালাবালি। সংগীত যেমন মানুষকে কাছাকাছি আনে, তেমন আগুনও। তবে দুটির পথ একটু ভিন্ন। গন্তব্যও এক নাও হতে পারে। এতক্ষণে চাঁদ, কোণাবিযুক্ত চাঁদ পাহাড়ের শরীর ছুঁয়ে, পাইন ও বুরান্সের ফুলগুলি ছুঁয়ে একটু কৌণিক পথে চলে গেছে আমার ছাদের আড়ালে। এই বারবিকিউ শিখা, এই কেকের সুবাস এই নেশার ফোয়ারা তবুও ঢাকা দিতে পারেনি এই পাহাড়ের আনন্দ, পাইনের গন্ধ, আর চাঁদের স্বপ্ন। জৌনসারি নর-নারীরা এখন রাতের চাঁদের আলো হয়ে গেছে কাল দিনের সূর্যালোক হবে বলে।
পরদিন সূর্যালোকের মতো ঝলমলে সাবেকি পোশাক পরা চারজন মহিলা নীচের গ্রাম থেকে পাহাড় বেয়ে উঠে আসছে রাস্তার দিকে। মনে হয় সূর্যের আলো ওই বেগুনি রেশমি ঘাঘরা হয়েছে, সূর্যের আলো ওই আকাশ নীল কুর্তি হয়েছে। মাথায় ম্যাচিং ছোটো স্কার্ফ দিয়ে চুল তাদের পুরোপুরি ঢাকা। জৌনসারি ভাষায় একে ধান্তু বলে। কানে, গলায় ধাতব সোহাগ। হাতের চুড়িগুচ্ছ তাদের মতোই কথা কম বলে অথচ চঞ্চল। পাহাড়ি ঝরনার মতো তাদের সহজ চলন। কোথায় যাচ্ছে তারা? পিছু পিছু একটি কুকুর। তারা কি কোনও স্বর্গের পথে যাচ্ছে। যাচ্ছে হয়তো। এ তো স্বর্গই! চারিদিকে স্বর্গ। দ্যুতিময়। প্রাণময়। শান্ত প্রকৃতি ও উচ্ছল প্রাণের এই সহাবস্থান স্বর্গ নয়তো কী? কাছাকাছি আসতেই তাদের কলরব নীচু স্বরে নেমে আসে। কী কথা বলছিল তারা! ভাষা তো জানি না তাদের। তবু মনে বড়ো কৌতূহল তাদের কথা শুনি, শুনি তাদের গোপন কথাটি। কথার গুঢ় অর্থ ভেবে ভেবে আকাশ পাহাড় এক করে ফেলি। এ এক অদ্ভুত নেশা মানুষের। পুরুষ জানতে চায় নারীর গোপন কথাটি, নারী বুঝতে চায় পুরুষের গোপন ব্যাথাটি। এ এক আবহমান ইচ্ছা চক্রাকারে ঘোরে ছয় ঋতুর মতো।
কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারলাম তারা সবাই যাচ্ছে চার কিলোমিটার দূরের চিলমিরি টপে। সেখানে আজ মেলা বসবে। বিসসু পরব উপলক্ষে বসবে সেই মেলা। আহা! মেলা! মানে মানুষের মহা মিলন। শুধু মানুষ কেন। মানুষের সখের সাথে সখের মিলন, আনন্দের সাথে আনন্দের মিলন। ভাবের সাথে ভাবের মিলন। কথার সাথে কথার মিলন। সুরের সাথে সুরের মিলন! এই মেলা কী করে মিস্ করি। চল পানসি চিলমিরি টপ!
মানুষের যেকোনো মিলনের পথ সহজ নয়, দুর্গম হয়।এপথও তেমনই। চাক্রাতা-মুসৌরি হাইওয়ে থেকে একটি রাস্তা চিলমিরি নেক্ এর কাছে, পাইনের বন চিড়ে উঠে গেছে শিখরের দিকে। জৌনসারি নারীরা চলেছে হাতে হাত ধরে। পুরুষদের হাতে লাল টকটকে বুরান্স ফুল দিয়ে বানানো ঝাণ্ডা! অপ্রশস্থ পথের ধারে গভীর খাদ ঢেকে আছে পাইন ও রডোডেন্ড্রনে। শেষ বসন্তেও ফুলের লালছোপ সবুজের ফাঁকগুলো ভরে দিয়েছে। তবে এই পথ রোমাঞ্চে ভরা, অজানাকে জানার প্রবল আকাঙ্ক্ষায় ভরপুর! পায়ে হেঁটে কারা চলেছে? মানুষ! বাইকের র্যালি? কারা চলছে? মানুষ! জিপের পেট ফুলে ঢোল, ছাদেও জায়গা নেই। কারা চলছে? মানুষ! এক মহা মিলনের তরে চলেছে ওই উন্মুক্ত প্রান্তরে, ওই শীর্ষ দেশে! পথের দুর্গমতা নিয়ে ভাবছে না কেউ। ভয় আর তাড়া করছে না কাউকে।
এই বিসসু মেলা নিয়ে একটু কথা হোক। কথা হোক জৌনসার-বাওর নিয়ে। পূর্বে যমুনা ও পশ্চিমে টনস নদী। এদের মিলন হল দুন উপত্যকার কালসির কাছে। এই দুই নদীর মধ্যবর্তী ডিমের আকৃতির অঞ্চলটি উত্তরাখণ্ডের জৌনসার-বাওর এলাকা বলে চিহ্নিত। আর এখানকার আদি নিবাসীরা জৌনসার-বাওর বলে পরিচিত। উত্তরাখণ্ডের জনজাতিদের মধ্যে একটি বিশেষ জনজাতি হল এই জৌনসার-বাওর জনজাতি। মূলত নীচু উপত্যকায় যাদের বাস তারা জৌনসারি আর উঁচু ও দুর্গম অঞ্চলে যাদের বাস তারা বাওর বলে পরিচিত। যদিও উত্তরাখণ্ডের সীমানাবর্তী হিমাচলের কিছু কিছু এলাকাতেও এদের অস্তিত্ব বর্তমান। এদের পরিচিতি এদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার ভিন্নতায়।এমনিতে সমগ্র উত্তরাখণ্ডই ভারতীয় পুরাণ-মহাকাব্যের ঘটনা ও পরম্পরার সাথে সম্পৃক্তভাবে জড়িয়ে আছে। জৌনসার-বাওরদের ইতিহাসও অনেক পুরানো। এমনকি এই ইতিহাস পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি পুরানো বলে মনে করা হয়। এর কোনও লিখিত ও প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন লোকগাথা ও স্থানীয় লোকমুখে প্রচলিত মহাকাব্যিক বর্ণনায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশেষ করে এখানকার লোকগান, লোকনৃত্য মহাভারতের কাহিনির যে সংস্করণ বহন করে আনছে তাতে এই জনজাতির এক গভীর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। এখানকার বরিষ্ঠ নাগরিক ও তাদের পূর্বজদের বিশ্বাস তারা মূলত পাণ্ডবদের বংশজ। আর মহাভারতের বর্ণনায় পাওয়া যায় তামস নদীর উপত্যকায় (বর্তমানের টনস নদী) বাস করত কিরাত জনগোষ্ঠী। এই অঞ্চলের কালসি, লাখামণ্ডল সহ অনেক স্থানে পাণ্ডব ও কৌরবদের অবস্থান ও বিচরণের বর্ণনাও পাওয়া যায়। এদের জীবনচর্চা, ধর্ম, লোকাচার ও সংস্কৃতি জুড়ে তাই পাণ্ডব ও কৌরবদের প্রভাব ভীষণভাবে রয়ে গেছে। বলা হয় জৌনসারি জনজাতির লোক পাণ্ডবদের বংশজ আর বাবর জনজাতির লোকেরা কৌরবদের বংশজ। তবে নানা মিথের মধ্যেও গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের একটি সবচাইতে বিশ্বাসযোগ্য তত্ত্ব এরকম যে—কুরুক্ষেত্রের লড়াইতে পাণ্ডব ও কৌরব দুপক্ষেই খস্ নামক জনগোষ্ঠীর যোদ্ধারা ভাড়াটে সেনারুপে অংশগ্রহণ করে। ইতিহাস বলে খস্ জনজাতি মূলত ইন্দো-আর্য গোষ্ঠীর একটি শাখা। পেশাগতভাবে এরা ছিল যোদ্ধা। মহাভারতের পাণ্ডব ও কৌরবদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মুক্তি পেতে দুপক্ষের হাজার হাজার সেনা কুরুক্ষেত্রের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়। পাণ্ডবপক্ষের খস্ সেনারা আগেভাগে পালিয়ে আশ্রয় নেয় তামস নদীর নিম্নবর্তী উপত্যকায়। আর কৌরবপক্ষের খস্ সেনারা পরে এসে বসবাসের জন্য নীচু এলাকায় খালি জমি না পেলে তারা আশ্রয় নেয় অপেক্ষাকৃত তামস উপত্যকার উপরের অঞ্চলগুলিতে। তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য জানা যায় যে এই অঞ্চলে খস্দেরও আগে কিরাত জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল।
চিলমিরি টপে যখন পৌঁছলাম সূর্য মধ্যগগনে। বিশাল একটা পাহাড়ের মাথা কেটে যেন বানানো হয়েছে এই প্রশস্ত মাঠটি। চাক্রাতার সাত-আটটি গ্রামের পাণ্ডব বংশজরা মিলিত হচ্ছে আজ। পাহাড়ের শরীর বেয়ে চারদিক থেকে সাপের মতো পিলপিল করে উঠে আসছে শিশুনরনারী। এখানে সবুজ নেই। এই মাঠ রঙের কোলাজে ভরা এক জনঅরণ্য। এখানে আকাশ পাণ্ডুর ও নীল। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দে আত্মহারা জৌনসারিদের পায়ে পায়ে থানে-ডাণ্ডা মাঠটির ধুলো আকাশে মিলাচ্ছে। ধুলিকণারা ফিসফিস করে কিছু ইতিহাস বলতে চায়। কিন্তু চাপা পড়ে যায় মানুষের কোলাহলে। প্রাকৃতিক জ্বালানিতে ফটফট আওয়াজ করে জেনারেটর চালু আছে। একটি নাগরদোলা ঘুরছে। ঘুরছে শিশুনরনারী হাসি আর কান্নায়, ভয়ে আর উল্লাসে! একটু দূরে দেখি একটি গোর্খা বুড়ো বসে আইসক্রিমের স্বাদ নিচ্ছে আর নাগরদোলার দিকে চেয়ে আছে নির্লিপ্তমুখে।মাঠের চারধারে বসেছে ব্যাপারীর দল নানা পসরা সাজিয়ে। মনোহারি, পোশাক আর নানা খাবারের সমাহার নিয়ে। মেয়েরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চুড়ি বাজিয়ে দেখছে, ছেলেদের দঙ্গল ভেঁপু বাজাতে বাজাতে চষে বেড়াচ্ছে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। শিশুটির হাত থেকে উড়ে গেল গ্যাসবেলুনটি। যারা কোনও অনিবার্য বিপর্যয়ে এই মেলায় আসতে পারবে না তাদের কাছে মেলার কোনও কোলাহল পৌঁছবে না। তবে এই উড়ন্ত বেলুনের দিকে তাকিয়ে থেকে তাদের মনের মধ্যেই এক মেলা সেজে উঠবে হয়তো। জিন্স ও টপ পড়া কিশোরীটির হাত ধরে টান দিল সানগ্লাস পড়া এক কিশোর। কিশোরীটি কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত, ভয়ে আর শিহরিত দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে মাঠের প্রান্তের দিকে। যেদিকেই যাক চারিদিকেই তো খাদ। ছেলেটি চলেছে পিছন পিছন। যেসকল নারীপুরুষ নির্জনতা পছন্দ করে তারা এদিকেই বসে থাকে ভিড় থেকে একটু দূরে। একান্তে গল্প করে। একই ঠোঙা থেকে পপকর্ন ভাগ করে খায়। কেউ কেউ হয়তো হস্তরেখা বিচার করতে করতে গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে।
চারদিকের এই পার্থিব ও অপার্থিব দেওয়া+নেওয়াই কিন্তু মেলাটির মূল আকর্ষণ নয়। মূল আকর্ষণ ওই কেন্দ্রের দিকে। বিভিন্ন গ্রামের নারী ও পুরুষেরা সাবেকি পোশাক পরে দল বেঁধে গোল হয়ে হারুল নৃত্য করছে। মাঝে বাজগির দল ঢোল ও দামামা বাদ্যরত। তাদের ঘিরে বাদ্যের সুরে সুরে জৌনসারি নারীদের হাতের মুদ্রা খেলছে শূন্যে। তাদের ঘিরে বৃত্তাকারে পুরুষের দল। তবে এই নৃত্যের চলন পুরোপুরি গোলাকার নয়, শঙ্খাকার, বা সর্পকুণ্ডলীর মতো। অন্য আরেকটি দল সাবেকি যোদ্ধার সাজে তির ধনুক নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মত্ত। সাউন্ড বক্সে বেজে চলেছে হারুল সঙ্গীত সহ নানা লোকগীত। যুগ যুগ ধরে এই সব লোকগীতের মাধ্যমেই এরা ধরে রেখেছে এদের ইতিহাস। বংশপরম্পরায় এভাবেই তাদের সমাজ, সংস্কৃতি, সামাজিক শিক্ষা, প্রকৃতির গুরুত্ব, কুলদেবতা মহাসু মহারাজ ও পূজিত পাণ্ডবদের মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়ে এসেছে। কোনও লিখিত লিপি ছাড়াই এই জনগোষ্ঠী তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ধারণ করে রেখেছে। আর এই কারণেই হয়তো নানা সময়ে নানা সাম্রাজ্যের দ্বারা আক্রান্ত হলেও জৌনসারি-বাওর অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আজও অক্ষত ও প্রায় অপরিবর্তিত আছে। সব মিলিয়ে এও যেন এক মহাভারত রচিত হয়েছে এই থানে-ডাণ্ডার ময়দানে। তবে কোনও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ নয়। এ এক মানবের মহামিলনক্ষেত্র। মেলাশেষে মানুষ ফিরে যাচ্ছে প্রেম ও প্রীতি নিয়ে, নতুন আশা নিয়ে। চিলমিরি টপ থেকে নেমে যখন নেটওয়ার্কের রেঞ্জে এলাম আমরা, টুংটাং শব্দে মোবাইলের ইনবক্স তখন উপচে পড়ছে আত্মীয়বন্ধুপরিজনদের পাঠানো বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তায়!