ছবি নিয়ে পড়াশুনা করিনি। ছবির অ আ ক খ কিছুই জানা নেই। জানা নেই রং-ছায়ার মানে। আমি শুধু ছবি দেখি। দেখতে ভালো লাগে। ছবিকে নিজের মতো বয়ান করি নিজেরই মনে মনে। কালো কিংবা ধূসর, লাল কিংবা নীলের গল্প শুনেছি গানে, কবিতায়। যারা ছবি নিয়ে পড়াশুনা করেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চয়ই আমার থেকে আলাদা। ঠিক আর বেঠিকের…
১ ব্রেসব্রিজ তারাতলা ছাড়িয়ে সম্প্রীতি সেতু বরাবর অনেকটা গেলে বাটা রিভারসাইড প্রকল্প। সামান্য পরেই পথ গঙ্গা-সমান্তরাল। বৃষ্টি-জল-রাস্তার মসৃণ ভাঁজে ভাঁজে ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিনের ঠোক্কর। আকরা বাঁধ ধরে উঁচুনীচু সোজা কিছুদূর। বুনিয়াদি ভূগোল। জলের আঁধারে কত ম্লান তরুবীথি। কথা ছিল— যেখানে নদীর শরীর চোখের নাগাল থেকে সবেমাত্র দূর, জলে ও পানায় মাঝেমধ্যে জেগে আছে জল, চারটি শতক…
সুবলা তেতে আছে মাছ ভাজার আগে গরম করা কড়াইয়ের মতো, গৌরীর মুখ নেই সেখানে দুফোঁটা আত্মপক্ষ সমর্থনের জল দেয়। রাস্তা ভালো নয়, বাতের ব্যথায় হাঁটা অসম্ভব, গিয়েও মন্টুর দেখা মিলে কিনা কে জানে ইত্যাদি গৌরী তাকে সঙ্গে না নেয়ার জন্য যত অজুহাতই খাড়া করছে, সুবলা নিজের গোঁ থেকে সরছে না মোটেই। বরং গৌরীর উপর নিজের…
বৃহস্পতিবার। আধবেলা স্কুল। ছুটি হয়েছে দুটোয়, বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরও কিছুটা সময়। আমাদের বৈঠকখানার সামনে তখন বিভিন্ন বয়সি মানুষের জটলা। ছোটো হওয়ার কারণে অন্যদের পায়ের ফাঁক গলিয়ে সামনের দিকে যেতে অসুবিধা হল না। দেখি, একটা লোক ধুলোতে থেবড়িয়ে বসে; চটের বস্তা শরীরে জড়ানো। সিনেমায় দেখা বুড়ো চীনাদের মতো দাড়ি। জটপাকানো চুল। স্মরণকালে হয়তো চুল কাটেনি,…
১মনোবাসিনীর ঘুম ঘুম ভেঙে যায়। তখন সকাল। ঘুমন্তের বিকারগ্রস্ততায় ছেয়ে আছে শরীর, আমার মন। পাশে মায়ের ঘুমিয়ে থাকা দেহ, নিজঝুম উষ্ণতা এসে আশ্বস্ত করে। বারান্দা থেকে পড়তে আসা ছেলেমেয়েদের কথাবার্তা সাংকেতিক, জটিল, দুর্বোধ্য। অতএব, লেপ থেকে ধীরে ধীরে ভ্রান্তিময় জেগে ওঠা শুরু হয়, সকালের। তখনই, চটি খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করি এঁটোকাঁটা। জলের বোতল, অর্ধেক তরলতা।…
ভাস্কর চট্টোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি যখন প্রথম নজরে আসে, তখন আমার বয়স সাত কি আট। ছবিটা ছিল জানলার পাল্লাসমান, তার নিজেরই একটা পোর্ট্রেট। সজ্ঞান চাহনি, পোড়া ইটের দাগছোপ ধরা মুখ—ছবিটা মুহূর্তে দেখায় আহত মানুষটাকে—নিজের রক্তক্ষরণের প্রতি উদাসীন। মা, তার সহজাত সংস্কারে মামাকে এরকম পৈশাচিক ছবি ঘর থেকে সরিয়ে ফেলতে বলেছিল। আমি শুধু ভাবছিলাম, আঁকিয়ের কথা, কীরকম…
স্ব-প্রতিকৃতি একটি নির্বচন। এজাহার। স্ব-এর অন্তস্থল খুঁড়ে অনুভূতি ও চেতনাপ্রবাহের অথবা নিছকই ব্যক্তির অস্তিত্বের রূপ ও রঙের উদযাপন। ধর্মীয় বিষয়ে দাসত্ব ছেড়ে ব্যক্তির প্রতিকৃতি নির্মাণ অবধি শিল্পের বিষয়ভিত্তিক বিবর্তনের যাত্রাপথ দীর্ঘ। বহু শতাব্দী। খ্রিস্টীয় পনেরো শতকে পৌঁছে য়োরোপে যে ব্যক্তি প্রতিকৃতিতে চোখ পড়ে আমাদের তা মূলত রাজ পরিবার ও অভিজাতবর্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সমাজের অর্থনৈতিক ও…
এই বিভাগের অন্যান্য লেখা পড়তে ছবি-কথা ক্যাটেগরিতে ক্লিক করুন। জানি তোমাদেরও ক্লান্ত লাগে আজ-কাল। কী করব বলো? এইসব স্মৃতি বারেবারে ভাগ করে নিতে হয়। পর্যায় শেষে সন্ততিকে উত্তরাধিকারে দিয়ে যেতে হয়… আমাদেরও তো পরকাল আছে নাকি? এই যে ক্যানভাসের মেঝে থেকে ঠেলে উঠছে মৃতদেহের স্তূপ, স্বপ্নাদ্য কাবাবের মতো মানুষের, মানুষের বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্য, গা-ঘিনঘিনে, নির্লিপ্ত মাংস—…
যদিও হেঁটে যেতে হত অনেকটা পথ এবং সে-পথ ছিল বড়ো জটিল, যেন এক গোলকধাঁধা— তবু বারবার চাইতাম ও-পথে হাঁটতে। খুব চেষ্টা করতাম হাঁটতে হাঁটতে চিনে নিতে সে-পথের মানচিত্র। তবে প্রতিবারই হাঁটা শুরু করার পর ক্রমশ ভয়ে ভারী হয়ে উঠত আমার বুক, মনে হত হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পথেই মরে যাব। প্রতিবারই আমার মনের কথা পড়ে…
ছবিটাকে মাথার ভেতরে নিয়ে আমি হেঁটে চলি। একটা ঘর; ঘরের ভেতরকার একটা অংশ; যেখানে একটা জানলা আছে, জানলার নীচে আর পাশে থাকা সীমাহীন দেয়ালের আভাস আছে, যেমনটা আর দশটা গড়পড়তা বাড়িতে দেখা যায়; অনেকটা যেমন শহর বা শহরতলির আমার বা আমার পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের, চেনা মানুষজনের বাড়িতে বছরের পর বছর দেখেছি, গিয়েছি কিংবা থেকেছি, ঠিক সেরকম।…
