বিহঙ্গপুরাণ – কুণাল বিশ্বাস
গ্রামের নৃত্যানুষ্ঠান শেষে গন্ধর্বগণ শিল্পীদের ভোগ করতেন। চৌষট্টিরকম পঞ্চালিকা কলায় পারদর্শিনী ওইসব মেয়ে ভালোবেসে কাউকে গ্রহণ করেছিল কি-না জানা যায় না। নটী, পরিচারিকা, দাসী, স্বৈরাচারিণী, বিনষ্টা—পরিবর্তনশীল নামে তারা কেউ সুপরিচিত, কেউ-বা মহাকাব্য জুড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। বাকিরা সবাই উড়ে গেছে মগডালে—শুশ্রূষায়, বসবাসে।
ভাস্কর প্রসাদের এই ছবি তেমনই এক পাখির আলো-ছায়া-রৌদ্রের ঋণ—একফোঁটা জলের খোঁজে দীর্ঘ নীল উড্ডয়ন।
বিহঙ্গপুরাণ
১.
কে তুমি মধ্যাহ্ন ফেলে ছুটে গেছ বিকেলের দিকে—
সরযূবালার দেশ, ক্ষেত্রপাল গান বাঁধে সুরে
যে অশ্বত্থ গাছ নিয়ত জলের দিকে ঝুঁকে—চিরপ্রণয়িনী
তুমুল মদের ঘোরে দৈত্য খুঁজে নেয়
জন্মান্তর, মাটির প্রদীপ
যে তুমি হাওয়ায় উড়ে গেছ দূর শীতলার থানে—
প্রশান্ত হাওয়ায় রাত, আলোর বিধবা…
২.
বার্ধক্যের পক্ষে কথা বলি, আর দেখি
গাছের বয়সি মদ মিশে আছে জলে
মৃত্যু, ছোটো বালকের রূপে ছোলা বেচে
সমীহ আদায় করে ক্ষুদে রোদ, বটের চাতাল
বিবাহমুখর ঘ্রাণ থেকে, রজনীর শাদা থেকে
সুধা নাম্নী যুবতীর হাত শুধু আমাদের তাপ দিয়ে যায়
৩.
তুমি, শেফালী গাছের আঁধারে নতুন এক ভোর
প্রতিটি সুষুপ্তি শেষে দুঃস্বপ্নে তুমুল
স্বেদবিন্দুর মতন জেগে ওঠে স্মৃতি
পুঁথি পড়ে থাকে এলোমেলো
প্রাঙ্গণময় পাতার খরস্পর্শ রোদ…
সজিনার ডাল আমি লুকাব কোথায়—
৪.
তুমি কি এখনো হাতে আঁকা টিপ পরে
মাঝরাতে চুপিসারে আয়নায় যাও—
ডুমুরের ঝোপ ফুঁড়ে বের হয় সাপ
কুচকুচে—আততায়ী ছাপ
উঠে আসে ঘরে…
এমন কাহিনী শেষে প্রীতিভোজে ঘরময়
বেজিদের কথা বলে কেউ
জাগে আরো কালো রাত, সদাশিব প্রাণ
গরুড় দেবতা এসে শীতঘুমে তোমাকে বাঁচায়
৫.
অনেক রঙের খেলা বয়ে চলে আমার ভিতর
কে আসে, অমৃত তুলে ইন্দ্রের ভবনে
একটি চড়ুইপাখি উড়ে সেই কতদূর থেকে
পুরনো উঠানে বসে দানাগুলি খায়… আড়চোখে
তুলে নেয় বিষ—আমার বুকের মাঝে
খেলা করে কাক, জল… সুগঠিত নরম পুতুল
৬.
এখানে আলোর অনুবাদ খুব সোজা
অনেক গোলাপ আজ অপলক নীল
চেয়ে আছে নির্নিমেষ আমাদের পানে
প্রথম ভোরের পাখি উড়ে যায় দেখি
আরো দূর চলে যায় শ্রান্ত গমক্ষেত
ফুলের আগুনে লাল দফাদার বাড়ি
ক্ষমা করো পালাগান, জলের স্বদেশ
আহা বড় ভালো লেখা, মনে হয় এই লেখার কাছে চুপ করে বসে থাকি
কী বলি! ভালোবাসা জেনো।
লেখাগুলো ভাইরাল হবে যদি বলি তাহলে অভিসম্পাত করা হবে , কিন্তু এই লেখাগুলোর নিজস্ব পাখা আছে বলে মনে হ’ল – তাই এরা ক কালান্তরে উড়ে যেতে পারে |♧♧ খুব আনন্দ পেলাম