মাত্রিকতার খেলা – অনিন্দ্য দত্ত

শেয়ার করুন

দুটি দ্বিমাত্রিক সমতল। দুটি বিষয়। মানুষ ও প্রকৃতি। একটিতে এক নারীমুখ, আরও একটিতে প্রকৃতির মাঝে, প্রকৃতি থেকে নানা উপকরণ নিয়ে গড়ে ওঠা মানুষের আবাস। পিছনের পাহাড়ের ইশারা। আর উদ্ভিদের ব্যস্ত আয়োজন।

আবাস, যা একধরনের নিশ্চয়তা দেয় আমাদের, নিরাপদ দূরত্বে থাকা দর্শককে। এ কী গোধূলি না প্রাগুষা? নাকি উজ্জ্বলতম রাত্রি? যেখানে প্রগাঢ় অন্ধকারে দেদীপ্যমান, শুধু ঘরে ফেরার পথটিই? কারণ পিছনে ঘনায়মান অন্ধকারের প্রক্ষিত তো সামনে আমাদের চিরচেনা মাটির কোল। হে মাটি, হে স্নেহময়ী, ওই স্থির, ওই ধ্রুব, ওই পুরাতন, সর্ব উপদ্রব সওয়া আনন্দভবন, শ্যামল কোমল, সেথা যে কেহই থাকে, অদৃশ্য দুই বাহু মেলে, টানিছে তাহাকে, অহরহ কী বিপুল টানে! কোথায় তার গন্তব্য? কেন? এই কবিতার কবি তো অকপটেই বলেছেন—দিগন্ত জোড়া তার নোনা মেয়েমানুষের শান্ত বুকের কাছে।

শিল্পী: ভাস্কর প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়


এ নীড়ের চাল ও দেওয়ালে সমুদ্রের নীল, অতি দূর সমুদ্রের পর, হাল ভেঙে যে নাবিক দিশা হারিয়ে, ক্লান্ত পায়ে হলুদ ভেজা বালি মাড়িয়ে মাড়িয়ে তার নারীটির কাছে ফিরে আসছে, সে কি ওই সমুদ্রনীলে খুঁজে পাবে তার প্রোষিতভর্তৃকার আশ্বাসের আর আশ্লেষের স্বাদ? নীল ছাদ আর নীল জানালা তাকে ডাকে৷ আমূল, শূন্যমাঘ এক শরীরের কাছে। সেই নারী যেন গোঁগ্যার তাহিতি নন্দিনী, লাল মুখে লাস্য তার অবিরাম, মণিহীন চোখে সে চেয়ে আছে, তার বাসনার প্রপঞ্চের নীড় থেকে সূদুর নীহারিকার পানে। কণ্ঠদেশে রজ্জুবদ্ধ যে বাঁধন তাকে আবদ্ধ রেখেছে, এক আদিম জুগুপ্সার বাঁধনে, তার অত্যাচারিত শরীরের আভাস আমরা পাই, এই দ্বিমাত্রিক সমতলে। সে কি তার অতীত, নাকি বর্তমানের গূঢ়ৈষা? তার বাক্যহীন, ভাষাহীন, লাল তাহিতি মুখের রুক্ষ শ্যাওলার চুলে কী ইশারায় আমরা দর্শকরা আমাদের ধর্ষকাম চরিতার্থ করব?

শিল্পী: ভাস্কর প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

শিল্পী নিশ্চয়ই দুটি দ্বিমাত্রিক পটে, দুটি ভিন্ন মাত্রা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই লিখছি, এই অক্ষম দর্শকের কাছে দুটি আখ্যান এক সুতোয় যুক্ত হয়ে গেল। এইভাবেই তো ক্রমাগত আখ্যানের জন্ম হয়, আর একটি প্রভাতের আহ্বানে, অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *