বাঘ – সম্বিৎ চক্রবর্তী

শেয়ার করুন

জঙ্গলে বাঘ ঢুকেছে। সে এক বিশাল, হিংস্র, ভয়ানক বাঘ। তাই জঙ্গলে যাওয়া নিষেধ। ঢুকতে তো পারেই না, উলটে জঙ্গলের বাইরে এখানে ওখানে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে রাখে ওরা সারারাত।

ওরা সারারাত আগুনে, পাহারায় আটকে থাকে আর সারাদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে, বনের দিকে চেয়ে। ওখানে যে যাওয়া বারণ। কারণ—বাঘ।

বাঘের আকার, আয়তন, বর্ণ, হিংস্রতা, ক্ষিপ্রতা নিয়ে নানা কথা শোনা যায় বাতাসে, পাতার খসখসানিতে। কিন্তু কেউ তাকে দেখতে পায় না।

ওদের মধ্যে দুটো লোক একটু আলাদা; কৌতুহল আর স্পর্ধায়। লোক দুটো পাহারার বর্ম ভেদ করে কোনোভাবে জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে।

ওরা বাঘের পায়ের ছাপ দেখে। হাড়হিম করা আওয়াজও শোনে তার। কিন্তু দেখা পায় না। বরং খুঁজতে খুঁজতে আরো ভিতরে ঢুকে যেতে যেতে একসময় ওরা টের পায় জঙ্গলের বাতাস অন্যরকম হয়ে গেছে। কীভাবে যেন বিষ ভরে গেছে।

পালটে যাওয়া এই বনের খবর স্বজন বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দেয় ওদের নীল হয়ে যাওয়া দেহ দুটি।

বন আর গ্রাম আলাদা হয়ে যায় একেবারে।

এভাবে বহুদিন কেটে যায়। একদিন হঠাৎ বাঘের ডাক শোনা যায় না। পাওয়া যায় না আর বাঘের গায়ের গন্ধ।ভয় কেটে যায়। ওরা বনে ঢুকে দেখে—ফল নেই, ফুল নেই, মধু নেই, তৃষ্ণার জল নেই, ছায়ার শীতলতা নেই, ওষধি নেই, নেই আশ্রয়ের ভরসা। সব শ্রী, সব সম্পদ লুট হয়ে গেছে।

ওরা বিস্ময়ে স্থির হয়ে যায় পাতাহীন গাছের মতো। তারপর একদিন জঙ্গলছোঁয়া পাশের গ্রামটায় বাঘের ডাক শোনা যায়। তারপর তার পাশের গ্রামটায়, তারপর তার পাশের…

জঙ্গল ভুলে যাওয়া মানুষেরা বাঘের মূর্তি বানিয়ে পুজো করা শুরু করে দেয়।

[চিত্র ঋণ : মৌমিতা ভট্টাচার্য্য ]

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *