ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ১০)

শেয়ার করুন

দশম পর্ব


২৭.

সন্ধ্যা হয় হয়। এই সময়ের একটা পরিচিত শব্দ থাকে যা অন্যমনস্ক লোককেও আকর্ষণ করে। বলাই একই সঙ্গে পরমার খোলা চুল-পিঠের ওপর একটা হাত রেখে নিজেকে সঁপে দিয়েছে ওই শব্দগুলোর ঘাটে। ক’দিনের ভারী বৃষ্টিতে রামচক ধোয়া মোছা পাথরের চকচকে বুক। কুঁরগি ফুলে উঠেছে কয়েকদিনেই। পরমা শিরশিরিয়ে ওঠে যতবার দেখার মতন করে সে কুঁরগিকে দেখে। একটা অচেনা গাছ তার অন্ধকার গুঁড়িকে চুবিয়ে রেখেছে কুঁরগির স্রোতের ভেতর।
—আজ নিয়ে তিনদিন হল… গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সময় আকাশের দিকে মুখ করে থাকলে, যেমন হয়, তেমন আবেশ নিয়ে বলে যায় পরমা।
—তুমিই নাম ঠিক করে দিও
একটু আয়ত হাসি হেসে নিমেষেই কোন্ ভাবনায় গড়িয়ে যায় সে। শাড়ির সংস্থানে কোনো হুঁশ নেই। পায়ের পাতাগুলো সামনে ছড়িয়ে হাঁটু দুটো মুখের সামনে উঁচু করে রাখে। হাঁটুর ওপর দুটো হাতের বিছানা। চিবুকে ভর দিয়ে পরমা একভাবে স্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছে নিজেকে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা সবকিছুকে তার অধিকারে নিয়ে এলে তাদের চোখের সামনে ভেসে বেড়ায় একঝাঁক অন্ধকার। সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিজেকে দেখতে পাওয়ার এক মোক্ষম আয়না।
বলাই পরমার কিছু চাওয়া নেই। সম্পর্কের বাধ্যতা নেই। সমাজের ভয় নেই। লজ্জা সেখানে কেবল নিজেকে গুটিয়ে রাখতেই। এমন সম্পর্কের গোপনীয়তা নিয়ে কেউ যদি চিন্তিত হয়, তবে রামচকের নজরে সে পাপী। গতবারের বিছানায় বলাই আর পরমার মিলন এক ভ্রূণের জন্ম দিয়েছে। আলোরও এমন একটি ভ্রূণ চাই। নিবেদন আছে তার কিন্তু জোর নেই। পাতার শিরা থেকে উপশিরা সবকিছুর ওপর একটা গভীর চোখ ফেলে সব বুঝে নিতে পারছে আলো। একটা মৌমাছি বসে বসে বৃথা শুঁড় ঘোরাচ্ছে পাতার বোঁটায়। বলাই আলোর কাছে কোনোদিন কিছু লুকোয়নি। বরং বুকে জড়িয়ে আলো তাকে আরো ভালোবাসে। একদিন আলো আর একটি ভ্রূণও মিলে যাবে নাড়ির পথে। প্রসন্ন একটা হাসি সর্বদা তাই আলোর মুখে।

২৮.

বিকেলের রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে কিছুই চোখে পড়ে না তার। কবির এমন স্বভাব আগেও ছিল। তবে এখন দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। গাছপালা আর খোলা আকাশের সঙ্গে সঙ্গে চপলাকে দেখে সে প্রতিদিন। ভেদ করতে পারে না। তাকিয়ে থাকার মধ্যে একটা অস্পষ্টতা আছে। মায়া আছে। দিনের যেকোনো সময়েই তার মধ্যে চাক চাক ভাবনা দানা বাঁধে। এক অপরিচিত অসুখ তার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে ডানা মেলে। অস্বচ্ছ দৃষ্টি আর মুখের নির্লিপ্ত ভাব বাদুড়েরও পরিচিত। কোনো কোনোদিন অন্ধকার গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে রামচকের ঘোড়া মাঠে। পা পা ফেলে সময় পেরোয়। আকাশের দিকে মুখ করে কোনো একটা তারা খোঁজে তীক্ষ্ম নজরে। তারার ওপর মুখ বসায় প্রিয়জনের। প্রিয়জন থেকে ছিটকে ছিটকে বেরিয়ে আসে লাল আভা। দৃষ্টি ক্রমে মৃদু থেকে মৃদুতর হতে থাকে কবির। তারাদের জীবনে মানুষই কলঙ্ক আনে এভাবে কিংবা মানুষই তাদের মানুষ করে তোলে।
শুধু অন্ধতা থেকে নয়, অন্ধবিশ্বাস জন্ম নেয় ক্ষীণতা থেকেও। এক একদিন সাদা চাদর সারা গায়ে ঢেকে অন্ধকারে চলাফেরা করা কবিকে দেখে রামচক ভুল ভাবে। সেই কোন্ দিন একটা ঘোড়ার মুখ থুবড়ে পড়া গল্প তাদের কাছে এখন কাঁচা কাঁচা সত্যি হয়ে ঘুরে বেড়ায়। চপলা আজকাল কবিকে ভালোবাসে। খুব। কিন্তু নিজেকে সাহস জোগাতে পারে না। কবির আনমনা ভাব আর ভাবনা তাকে সর্বক্ষণ পীড়া দেয়। অথচ বুঝতে পারে সে, ওই ভাবনাটাই আসল। ভাবনার খোলস থেকে মানুষটাকে বের করে আনতে চাইলে একটা রক্তের প্রবাহ দেখে শিশু কান্নার রোল উঠবে। চপলার এখন চোখে চোখে কবি। নিজেকে অনেকখানি তৈরি করে নিতে পারছে।
—নিজত্ব কাটাছ্যাঁড়া করে তারা হয়ে নজর রাখব তোমার ওপরএকদিন চপলার এই হালকা কথায় প্রায়ই কবি ঘোড়া মাঠে তারার গায়ে চপলার মুখ খোঁজে।
কিছু সময় দেখার পর যে লাল আভায় ঢেকে যায় তারাটি, কবি বুঝতে পারে, ওটাই চপলার ত্যাগ। স্বপ্নে ভয় পাওয়া শিশুর মতন তার মুখ থেকে প্রতিবাদ বা চিৎকার বেরিয়ে আসে না। নিশ্চল নিরুপায় হয়ে দেখা ছাড়া কোনো গতি নেই তার। চোখ আবছা হয়ে যায় বাষ্পে। ওই একটা তারাই ভাগ হয়ে টুকরো টুকরো পাশাপাশি আরও কত তারা হয়ে কবিকে হাত নাড়ে। তাদের কেউ পঞ্চু। কেউ রামচকের বাইরের সমাজ। স্বভাবসিদ্ধ থেকেও টুকরো টুকরো তারাগুলি কী এক মায়ায় জড়ানো। তাদের থেকে চোখ ফেরাতে পারে না কবি। কালো চাদর বিছিয়ে দেওয়া মাটিতে চোখ। হঠাৎ করেই একটা ভাবনা থেকে থেকে কবিকে উতলা করে তোলে। পঞ্চু যে রামচক ত্যাগ করবেই, এই অনুমান আর বিশ্বাস প্রথম থেকেই কবির মধ্যে ছিল। নিজেকে বড্ড দোষী মনে হচ্ছে তার।
ভাবনা থেকে বাঁধন আলগা হতেই ধুলো চেপে চেপে ঘরে ফেরে কবি। একলা ঘর। আরো নির্জনতা। কবিকে কিছুতেই স্থির থাকতে দেয় না। অবশ্য এমন নির্জনতা তার ভীষণ দরকার। গভীর রাতে সেদিন ঘুমেল চোখে কবি দেখে, প্রদীপের ক্ষীণ আলো অমসৃণ দেওয়ালে কতগুলো উলঙ্গ ছায়ামূর্তি হয়ে নেচে বেড়াচ্ছে। তাদের অস্পষ্ট ভঙ্গি নানা কথা আর আচারের জন্ম দিচ্ছে। রামচক পূর্বে কখনও এমন ভঙ্গির জন্ম দেখেনি। বাইরে স্যাঁতস্যাঁতে বাদলা হাওয়ার বেগ কবির পুরো ঘরটাকে গ্রাস করছে। নিঃশব্দ আতঙ্ক যেন। যেন তার ভাবনাসুদ্ধ ঘরটাকে এখুনি দূরে কোথাও নিয়ে গিয়ে ফেলবে। রামচক আর কুঁরগি ছাড়িয়ে। আপনমনে কুঁজো হয়ে বসে আছে অসংখ্য ছায়া। কাকের মতন একটা পাখি গলা ফাটিয়ে চিৎকারের ভঙ্গিতে স্থির হাঁ করে শূন্যে ভেসে আছে। একটা বিশালাকায় মূর্তি এই সবগুলি ছায়াকে ঢেকে দমফাটা হাসির মুদ্রায় দাঁড়িয়ে আছে।
প্রদীপের দুর্বল আলোয় বাতাসের আঘাত লাগে। এখন কবির কাছে সবকিছুই ক্ষণজীবী। মৃত্যু হল শেষ আলোটুকুর। আর কিছু ভাবতে পারছে না সে। বিছানার অস্তিত্ব শূন্য মনে হয়। তলিয়ে যাচ্ছে কোন্ অতল গভীরে। কপালের ঘামে চিটে যাচ্ছে সূত্রের চুল। এখন চপলার ছোঁয়া পেয়ে নিজেকে সুস্থ করে তুলতে মরিয়া হয়ে ওঠে কবি। নিস্তব্ধ নিঃসাড় আহ্বানেও চপলা আসে না। চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে তার।

২৯.
ভিজে কাপড় মালিনীকে আরো তীক্ষ্ম স্পষ্ট করে তুলেছে। কাঁটাগাছের মতন নগ্ন একটা সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ছে তার শরীর থেকে। দুপুরের মেঘলা আলোছায়া নিটোল দেহের ওপর যে কনে দেখা আলো ফেলেছে, রামচকের খুব কমজন তা লক্ষ করেছে। রামচকের বাইরে থেকে বয়ে আসা বাতাস কিংবা উড়ে আসা পাখির ডাক এখন মালিনীর মনে কোনো আশার বাণী আওড়ায় না।
—মানুষটা যে জেদ নিয়ে বেরিয়ে গেল… আর কোনোদিন তার ফিরে আসার কথা মাথায় আসে না। বলাই বলে।
দুটো কথার মাঝে একটা চাপা বিষণ্ণ শ্বাস ঠেলে ভিজে কাপড় মালিনীর আশা ভিজিয়ে দেয় বলাই। একটা হারিয়ে যাওয়া প্রত্যয়ী সুর গোটা কথাটাকে প্রতিধ্বনি সমেত করুণ করে তুলল।
আজ দুপুর দুপুর বলাই আর পরমা বেরিয়েছে কুঁরগির পথে। পৃথিবীতে ভ্রূণের জন্মের মতন একমাত্র ফুলই ফোটে। আর অন্য কিছুর সঙ্গে তার তুলনা হয় না। কিংবা পরমার কাছে ওই একক স্রোতের ভেঙে ভেঙে যাওয়া, আবার সব তরল মিলে গিয়ে একটা উর্বর সমতল ক্ষেত্র তৈরি করে।
ভিজে কাপড়ের মালিনী একটু থমকে যায় বলাইয়ের কথা শুনে। কথার রেশ আর রামচকের বলাইয়ের সম্মান মাথায় রেখে অনিচ্ছাসত্ত্বেও একটা আলতো হাসি খেলে যায় তার মুখে। খামারে মরে পড়ে থাকা উনুনটা। প্রায় বুজে গেছে। বৃষ্টির জলে আঢাকা পড়ে থেকে থেকে তার চামড়া খসখসে আর বিবর্ণ।
—আর সেকথা ভেবে কী হবে!
—প্রথম কয়েকদিন পর থেকে বৃষ্টির ফোঁটা আর কাদা তেমন করে টানে না…
টকটকে কাঁচা সোনার মতন বাহুমূল মালিনীর। বাহুমূল থেকে স্তনের উপত্যকা আর কোমরের গিঁট দেওয়া দাগের ওপর জলের চিটে থাকার দৃশ্য বলাইয়ের নজর এড়ায় না। অজান্তেই বলাই আরো জোরে পরমাকে জড়িয়ে ধরে। মালিনীর চোখে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। বর্ষার জলধারা স্রোত হয়ে খামারের এক জায়গায় যে দাগ কেটে গেছে, বিজোড় শালিক পায়ের নখে চিরে দিচ্ছে অসংখ্য ক্ষত। একটা করুণ লোভী দৃষ্টি মালিনীর চোখ থেকে বলাইয়ের সারা শরীর হয়ে দিগন্তের একটুকরো মেঘে গিয়ে পড়ছে। ওই টুকরো মেঘটা রামচকের সীমানার বাইরে হবে হয়তো। উদাসীন মন যখন হঠাৎ করে ছল আর চাতুরির মঞ্চে এসে পড়ে, একদম অচেনা কিছু মুদ্রা দিয়ে নিজের আড় ভাঙতে তাকে অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে হয়। বলাই নিজের ছন্দ ভুলে কুঁরগির দিকে এগোতে থাকে। পরমার কাঁধ থেকে হাত খসে গেছে। পরমাও থেকে গেছে পেছনে। অযত্নে।

৩০.
বিকেলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কুশল প্রতিদিনই একটা রুপোলি দুষ্প্রাপ্য মাছ হয়ে যায়। কয়েকদিন ছাড়া ছাড়াই যে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য জলের ভেতর নাচ শুরু করে। সেই সময়টাই তার কাছে আসল। নিজেকে দুরন্ত করতে করতে জল ঘোলা করে। অস্বচ্ছ সবকিছুই। চারদিক। নিজের চোখ দিয়ে মাছটা পাশাপাশি আর কিছু দেখতে পায় না কেবল নিজেকে ছাড়া। তাছাড়া আত্ম-কে বোঝার জন্য এই জল আর নাচটাই তার কাছে স্বর্গ বলে মনে হয়। মাছেদের স্বর্গ হয় কি!
নাচ থামে। দুরন্ত জলের মতন জল স্থির হয়ে যায়। আর মনে মন দিতে পারে না মাছটা। বাইরে থেকে শত্রুর ঝাঁক গুটি গুটি এগিয়ে আসে। যারা ঘোলা জলেও ছিল কাছেপিঠেই লুকিয়ে।
মাঝে মাঝে দোকানের বাইরে উঁকি দিলেই কুশল দেখতে পায়, দুটো মাদী কুকুর টসটসে স্তন মেলে পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই পুজো। দেবীর চোখ এখনও গড়ে ওঠেনি। হাত আর পায়ে জল মাটি মাখানো চালিয়ে যাচ্ছে পুরোদমে।
—একটা দেবী গড়ে তোলা সহজ কাজ নয়…
—চোখের দৃষ্টিতে করুণা আর তেজ সমানভাবে ঠিকরে পড়বে।
এসবে কুশল সিদ্ধহস্ত। এমনকি অন্য ভাবনায় সাঁতার দিতে দিতেও সে তার নিজের সবথেকে সেরা শিল্পটা দিতে পারে। মৃদু দখিনা বাতাস তার মুগ্ধতা নিয়ে সন্ধ্যাকে এগিয়ে দিচ্ছে। বাইরে এসে দাঁড়ায় কুশল। বাজারের রঙিন আলো তখনও জ্বলে ওঠেনি। প্রায় ন্যাড়া বেলগাছটার পাশাপাশি কয়েকটা ডালে যোগাযোগ স্থাপন করেছে একটা মাকড়সা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই কেন্দ্রে ফিরে এল সে। অষ্টপদ মিলিয়ে দিয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল কি! একটা বোলতা অতর্কিতে হুল ফুটিয়ে গেল মাকড়সার তলপেটে। হঠাৎ কেমন বিদ্যুৎ খেলে গেল কুশলের সারা শরীরে। কাঁপতে কাঁপতে স্থির হয়ে গেল মাকড়সা। সৃষ্টি আঁকড়ে এই তার শেষ স্থির আনন্দ। একটা হলুদ মূর্তি তার চারপাশে পাক খাচ্ছে।
আর একটা মুহূর্তও নষ্ট করতে চায় না কুশল। কিন্তু দেবীর কাজ এখনও অনেক বাকি। দেবীর চোখ স্থাপন করা যে-সে কাজ নয়। পঞ্চুর সামর্থ্য সম্পর্কে কোনো আন্দাজ নেই তার। বরং আগের রাতে দেওয়া কাজটা বেশ ভালোভাবেই করেছে।
এতক্ষণ তার চোখের সামনেই দৃষ্টি এড়িয়ে পঞ্চু বিমর্ষ বসে আছে। নামমাত্র চাকে হাত তার। মাঝে মাঝে নরম কাদায় হাত গুঁজে একটু একটু শীতলতা নিচ্ছে। এই গোধূলির রং দিয়েই পঞ্চুকে চেনা যায়। যেতে পারে। সেই কবে আতর বাজারে অন্ধকার গলিতে নিজেকে ঢেকে রাখতে গিয়ে একটা অজানা অদেখা পোকা তার হাতের ডান বাহুতে একটা কামড় বসিয়েছিল। তারপর বাতাস আর বৃষ্টির বয়স বেড়েছে ক্রমে। দগদগে হয়েছে ঘা। থেকে থেকেই একটা জলীয় রস গড়িয়ে পড়ে। এক রাতের স্বপ্নে শুঁড়-বিহীন কালো একটা বিড়াল, যার চোখগুলো মনে মনে নিস্তেজ হয়ে গেছে কবেই, শুধু জবরদস্তি নিজেকে ভয়ংকর সাজিয়ে তোলার জন্য অসুখী জীর্ণ চোখ বের করে রাখে, তাকিয়ে তাকিয়ে ঘুমন্ত পঞ্চুকে জাগায়। আঁচড় কাটে পঞ্চুর ঘায়ে। রস গড়িয়ে পড়ে। নকল সাজানো রাগী চোখে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে সে। এক অপাশবিক তৃপ্তি তার চোখে। বিড়ালটা চলে যায়। ঘুমেল চোখে অবাক হয়ে পঞ্চু দেখে লেজ নেই বিড়ালটার। এখন সেই ঘা-টা পঞ্চুকে জানান দিয়ে নীরবে টনটন করে ওঠে।
—দেবীর চোখ আঁকতে পারিস? —আজ রাতে পারবি?
—আমি একটু বেরোব। আজ আর ফিরব না।
—সামনে পুজো। এখনও অনেক কাজ বাকি…

প্রতি কথার পর কুশল পঞ্চুর দিকে তাকায়। কোনো উত্তর বা শহরের মুহূর্তের পর মুহূর্ত পালটে যাওয়ার মতন ভঙ্গি আশা করে। কিন্তু পঞ্চু নির্বাক শরতের মেঘের টুকরো ভেসে যাওয়ার মতন স্থির অবিচল আকাশ হয়ে বসে আছে। মাঝে মাঝে কেবল কুশলের কথার ফাঁকে ফাঁকে তার তর্জনী আর বুড়ো আঙুল কেঁপে কেঁপে উঠছে। একেই কি সায় দেওয়া বলে! পঞ্চুর নীরবতা দেখে কুশল মনে মনে আগের প্রশ্নগুলোকে নির্দেশে পরিণত করতে পেরে খুশি হয়। এখন কুশল এগোচ্ছে। ওই অশ্বত্থ গাছটার বাদামি সবুজ ধুলো মাখা শরীর দেখতে দেখতে পঞ্চু এক নিমেষে কুশলের ফেলে যাওয়া রাস্তাটা ভুলে যেতে চাইল।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *