অমোঘ জ্যোৎস্না – রত্না

অমোঘ জ্যোৎস্না – রত্না

শেয়ার করুন

বাদাবনের কাছাকাছি আসা এই আমার প্রথম। বাদাবন বলতে এদিকে যোগেশগঞ্জ, উল্টো পিঠে নদী পেরিয়ে ঝিঙেখালি। সুন্দরী, গরাণ, গেওয়া, হেতালের জংগল। নেই, নেই করে তিনটে মাস থাকবো।
যোগেশগঞ্জ বাজারে তিনতলা উঁচু সমান community হল তৈরি হচ্ছে। আমাকে হীরেন কাকার সাথে সিমেন্ট, বালির তদারকি আর সেই সাথে পাহারাদারের কাজ। ভোর ছয়টার ভুটভুটিতে ধামখালি থেকে ইট,সিমেন্ট আসে। আমাকে হিসেব মিলিয়ে নিতে হয়।

যে বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়েছে, তার মেঝে দেওয়াল পাকা হলেও, ছাদ বলতে খড়ের ছাউনি আর জানলা তো খোলার উপায় নেই,সবেদা গাছের ডাল জানলাটার কাছে এসেছে, আর তাতেই মৌচাক।আসতে যেতে মৌমাছির কামড় আমার নিত্য সাথী। চাক ভাঙতে মন চায় না। অপেক্ষা করে আছি, একটি গভীর জোৎস্নার রাতে ওরা বাসা খালি করে চলে যাবে হয়তো।

যোগেশগঞ্জ বাজার থেকে ছয় মিটার মশারির জাল কিনে এনেছি। জানলা, দরজায় পর্দার মতন টানিয়ে দিতে হবে। মশারির নেটটি জানালায় লাগানোর সময় একটি পাল্লা অল্প খুলে দেই। ওদের কত চটপট চলাচল। কথা বিনিময়। আমার দিকে তাকানোর ফুরসৎ কই? এই যে আমি, যার বাজারদর না কানাকড়ি, ঘষটে চলা জীবন, দাড়িতে ভাঙাচোরা পাকা কাঁচা চুল, দায়হীন, মায়াহীন একা থাকা, তাতে মৌমাছির কীই বা যায় আসে?

ডান হাতটি বার করে মৌচাকে রাখি। হাতটি মৌমাছি আর আমার মাঝে সাঁকোর কাজ করে। মৌচাকের মৌমাছিরা এখন আমার হাতে। ওদের বাসা খালির জন্য আর কোনো জোৎস্নার দরকার নেই। আমার সারা শরীর জুড়ে ঝুপ করে নেমে এসেছে অকাল জোৎস্নার তীব্রতা …

চিত্রঋণ মৌমিতা ভট্টাচার্য্য

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২