সেইসব না-বলা কথা – সুপ্রতীক চক্রবর্তী 

শেয়ার করুন

(ধরা যাক, পরপারে এক বর্ষার সন্ধ্যায় রবি ঠাকুরের বাসগৃহে হঠাৎ হাজির হলেন সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন আর ঋতুপর্ণ ঘোষ। তারপর?)

রবীন্দ্রনাথ: কী ব্যাপার!!! তোমরা হঠাৎ! পথ ভুলে?

ঋতুপর্ণ: প্রণাম গুরুদেব। এটা আসলে মানিকবাবুর প্ল্যান। বললেন বিকেলটা ফাঁকা রাখতে। তাই তিনজন চলে এলাম।

রবীন্দ্রনাথ: তা বেশ, বোসো তোমরা। তবে তোমাদের মাঝে আরেকজনকে দেখতে পাওয়ার বাসনা জাগছে। ঘটক বাবু, তিনি কোথায়? ফটকের বাইরে?

সত্যজিৎ: না না, ওনাকেও বলেছিলাম, শুনে বললেন আপনার সাথে ওঁর আলাদা কথা রয়েছে, পরে বলবে।

রবীন্দ্রনাথ: ওহ, তবে তাই হোক। বড়ো পছন্দ করি ওঁকে, অমন প্যাশনেট ছোকরা তোমাদের লাইনে খুব কম এসেছে। …মৃণাল চুপ কেন??

মৃণাল: ভারী অদ্ভুত লাগছে গুরুদেব। সেদিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

রবীন্দ্রনাথ: কোন্‌ দিন?

মৃণাল: আপনার শেষযাত্রা।

রবীন্দ্রনাথ: ওরে বাবারে! সে এক দিন বটে! জোড়াসাঁকোর বাড়িটা যে ভেঙে পড়েনি এটাই অনেক…

মৃণাল: সে ভিড়ে আমিও ছিলাম গুরুদেব। নিমতলায় আপনাকে নিয়ে যাওয়ার পর দেখেছিলাম এক দৃশ্য, বাঁধনছাড়া জনস্রোতের মধ্যিখানে এক দরিদ্র বাবা তার মৃত সন্তানকে বুকে আগলে রেখেছেন, সৎকারের উপায় নেই।

ঋতু: ঠিক, আপনি তো পরে বলেওছিলেন এই দৃশ্যই আপনাকে পরবর্তীকালে “বাইশে শ্রাবণ” ছবিটি তৈরির ইন্ধন জোগায়।

রবীন্দ্রনাথ: এতকিছুর মধ্যেও সেই ছোট্ট ঘটনাটি তোমার হৃদয়ে আঁচড় কেটেছিল, এটাই মানবিক শিল্পীসত্ত্বা তৈরি করে। তোমাদের কোনও প্রশ্ন থাকলে করতে পারো।

সত্যজিৎ: গুরুদেব, আপনাকে নিয়ে যে ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলাম, সেটা দেখেছেন?

রবীন্দ্রনাথ: দুবার দেখেছি। আমার জীবনের বর্ণময়তা, কসমোপলিট্যান অ্যাপিল, শান্তিনিকেতন ও তার ইতিহাস আরও অনেক কিছু সেখানে ঠাঁই পেয়েছে বটে, তবে তোমার ছবিটি আমার অনুভূতি বা অন্তর্চেতনার অন্বেষণ করেনি খুব একটা। ঋতুপর্ণ, তুমিও তো বানিয়েছিলে আমাকে নিয়ে?

ঋতুপর্ণ: হ্যাঁ,গুরুদেব। আমি একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে চেয়েছিলাম। 

রবীন্দ্রনাথ: শূন্য… শূন্য বড়ো সাংঘাতিক বস্তু হে, শূন্যের বুকে এক মহাকাল ঢুকে থাকে, শূন্য কেবল শূন্য নয়… এর বিকাশ চিরন্তন, স্বতোৎসারিত।

সত্যজিৎ: গুরুদেব, মনে হতে পারে সাক্ষাৎকার নিচ্ছি, তবুও এ প্রশ্ন করার লোভ সামলাতে পারছি না, আপনি সারাজীবন লিখেছেন, আপনার কাছে লেখা মানে কী?

রবীন্দ্রনাথ: তোমার কাছে ক্যামেরা মানে কী? পিকাসোর কাছে রং মানে কী? আমার কাছেও লেখা ঠিক তেমনি। লেখা মানে আনন্দ, লেখা মানে যন্ত্রণা, সংরাগ, সাহচর্য… এতটুকু অযত্নে তা বিমূর্তায়িত হয়ে পড়ে।

মৃণাল: “Today writing is an act of militancy… and in no sense a decorative activity”

সত্যজিৎ: ভালো বলেছেন মৃণালবাবু। গুরুদেব, শিল্প কতখানি নিয়মবিরুদ্ধ হওয়ার ক্ষমতা রাখে?

রবীন্দ্রনাথ: এটা মজার প্রশ্ন। আমার কাছে মাঝেমধ্যে “শিল্প” শব্দটাই তো নিয়মবিরুদ্ধ ঠেকে। নিয়ম বলতে আমরা অভ্যাস বুঝি, সেই অভ্যাসতান্ত্রিক অবয়বকে ছিঁড়েখুড়ে ফেলাটাই শিল্পীর কাজ। তাই শিল্পের গভীরে এক অসীম ছন্নছাড়া বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে থাকে। আবিষ্কার করে ফেলতে পারলেই তুমি রাজা!

ঋতুপর্ণ: রোঁলা বার্ত বলেছিলেন, “I am worth more than what I write.” আপনিও তো তাই?

রবীন্দ্রনাথ: তোমার কী মনে হয়? ‘রক্তকরবী’ তো পড়েছ! ‘গোরা’ তো পড়েছ!! যে লোকটা “আরোগ্য” কাব্যগ্রন্থ লিখেছে, যে লোকটা “ডাকঘর” নাটক লিখেছে সে লোকটাই তোমাদের রবীন্দ্রনাথ। আমি আমার লেখায় নিজেকে লুকোতে চেয়েও লুকোতে পারিনি। প্রতিনিয়ত নিষ্ঠুরভাবে নিজেকে খুঁড়েছি প্রতিটা লেখায়… আচ্ছা, একটা কথা বলো তো, তোমরা তোমাদের কাজে আমায় কতটা পেয়েছ? প্রথমে মানিক, তারপর বাকিরা বলবে…

সত্যজিৎ: সত্যি কথা বলতে কি, আপনার ব্যাপ্তি এত বিস্তৃত যে আপনাকে সম্পূর্ণরূপে ভুলে যাওয়া আবার আপনাকে সর্বাঙ্গীনভাবে ছুঁয়ে থাকা একইরকম অসম্ভব এক ব্যপার। তবে ব্যক্তিগতভাবে আপনার গান আর ছোটোগল্প আমায় বরাবর আকৃষ্ট করেছে। 

ঋতুপর্ণ: গুরুদেব, আমার প্রতিটা ছবিতেই কোনও না কোনও ভাবে আপনি ঢুকে আছেন। সেটা ‘রেইনকোট’ হোক কিংবা ‘দহন’। কখনও গানে, কখনও নেপথ্যে, কখনও দৃশ্যকল্পে, কখনও-বা চরিত্রের অভিব্যক্তিতে…

মৃণাল: আমার ছবিতে আপনি থাকেননি। কনটেমপোরারি পলিটিকাল স্টেটমেন্ট তৈরি করতে বেশি উৎসাহিত বোধ করতাম। তবে সারাজীবন ধরে আপনাকে পড়েছি। আপনার গানকে সঞ্জীবনী মনে হয় আমার। অমন আধুনিক!

রবীন্দ্রনাথ: আধুনিক কথাটা হেঁয়ালির মতো! আধুনিকতা কাকে বলে? নতুন কিছু লিখলে সেটা আধুনিক নাকি নতুনভাবে লিখলে?? আমার অভিজ্ঞতায় বলছি, বঙ্কিমবাবু গদ্যরচনায় যে নবতরঙ্গ এনেছিলেন সেটা আধুনিক, পরবর্তীকালে অনেক লেখক ‘বিষবৃক্ষ’-র প্যাটার্ন ফলো করতে গিয়ে মূল সাবজেক্টেই খেই হারিয়ে ফেলতেন! আর তোমাদের সিনেমার ক্ষেত্রে সাহিত্যের আধুনিকতা একটা বড়ো প্রভাব ফেলে। আমার কী মনে হয় জানো তো, শুধুমাত্র দৃশ্য, সংলাপ আর অভিনয় দিয়ে একটা গোটা সাহিত্যকে তুলে ধরা বেশ কঠিন। ‘পোষ্টমাষ্টার’ গল্পের কথাই ভাবো, শেষ দৃশ্যের যে বর্ণনা দিয়েছিলুম সেটা… 

সত্যজিৎ: হ্যাঁ গুরুদেব, আমি বলতেই যাচ্ছিলাম। গল্পের শেষটা কোনো ক্যামেরার লেন্সেই ধরা সম্ভব নয়। গোটাটাই ভীষন abstract…

মৃণাল: ওটাকে কি abstract tragedy বলা যায় মানিকবাবু?

সত্যজিৎ: আমি ওভাবে দেখিনি। একটা নিঃসঙ্গতা এবং অনিবার্য বিচ্ছেদ হিসেবে দেখাই শ্রেয়। ট্র্যাজেডি কিনা সেটা গুরুদেব বলতে পারবেন।

ঋতুপর্ণ: মানিকবাবু একটা কথা বলছি, আপনার ‘পোস্টমাষ্টার’ ছবিটি দেখেই আমি মূল গপ্পটা পড়েছিলাম আবার। 

রবীন্দ্রনাথ: ট্র্যাজেডি… হয়তো আপাত দৃষ্টিতে তাই… সেদিক থেকে আমার বেশিরভাগ ছোটোগল্পই তো ট্র্যাজেডি দেখায়। সে ‘ছুটি’ই হোক কিংবা ‘জীবিত মৃত’… তবে আমার কাছে বিষয়টা অন্যরকম…

মৃণাল: কীরকম?

রবীন্দ্রনাথ: সাহিত্য হোক বা জীবন, বিচ্ছেদ বা মৃত্যুকেই আমরা ট্র্যাজেডি বলে ধরে নিই। কিন্তু ট্র্যাজেডির মূল সুরটা রয়ে যায় প্রাপ্তির গভীরে। এ আমি আগেও লিখেছি। মহাভারতের কথাই ধরো, মহাপ্রস্থানের পথে একে একে পাণ্ডবগণের মৃত্যুটা ট্র্যাজেডি নয়, বরং ট্র্যাজেডি তখন থেকে শুরু হয়েছিল যখন পাণ্ডবরা কুরুক্ষেত্রে জয়লাভ করল। সব কিছু পাওয়ার পরেও নিঃস্ব আত্মা, এটাই ট্র্যাজেডি!

ঋতুপর্ণ: “সকল পাওয়ার মাঝে আমার মনে বেদন বাজে… নাই নাই নাই রে…”

রবীন্দ্রনাথ: ‘নষ্টনীড়’-এর শেষ দৃশ্যে যে ট্র্যাজেডি প্রচ্ছন্ন অবস্থায় আছে সেটা ভালো করে ফুটিয়েছ মানিক তোমার ছবিতে। 

সত্যজিৎ: ওটা আমার সবচেয়ে নিখুঁত ছবি বলে মনে হয়। 

রবীন্দ্রনাথ: যে কোনও শিল্পের পিছনে একটা দর্শন থাকে। নানা জন নানান রকম দর্শন লালন করে। কিন্তু সেটার বহিঃপ্রকাশ প্রখর হওয়া প্রয়োজন। “আত্মপরিচয়” নামক এক প্রবন্ধে এ কথাই লিখেছিলুম।

ঋতুপর্ণ: এবার একটু কবিতা নিয়ে জানতে চাই গুরুদেব। 

রবীন্দ্রনাথ: আগে বলো বাংলাদেশে কটা ছবি কবিতার মতো তৈরি হয়? অতীন্দ্রিয় চিত্রকল্প তৈরি করতে পারে তোমাদের সিনেমা নামক বস্তুটি?

ঋতুপর্ণ: হয়তো পারে গুরুদেব। তবে তার আগে কবিতার আত্তীকরণ প্রয়োজন।

রবীন্দ্রনাথ: কবিতা অনেকটা ধর্মবিশ্বাসের মতো, সে আলোকিত করে তাদেরই শুধু, যারা বিশ্বাসী। কবিতাকে যদি একটা নদী ভাবো, তবে দেখবে সেই নদীর উৎস হৃদয় এবং তার প্রবাহও হৃদয়ের দিকেই। কবিতা মানে চিত্রকল্প, অব্যক্ত গভীর আখ্যান।

মৃণাল: কিন্তু গুরুদেব, যদি ডিটেলিংয়ের কথা বলি, তবে সেটা তো পদ্য অপেক্ষা গদ্যেই বেশি লক্ষিত হয়।

সত্যজিৎ: মৃণালবাবু, আপনার এ কথা মানতে পারলাম না। কালিদাসের শকুন্তলা যখন পড়েছি কিংবা বোঁদলের লিরিক কবিতাগুলো পড়লে অবাক হতে হয় যে কী সাংঘাতিক ডিটেইলড সেগুলো। 

ঋতুপর্ণ: বোঁদলের কথাই যখন তুললেন, ওনার একটা কথা মনে পড়ছে। উনি বলেছিলেন যে প্রতিটি আর্টফর্মেই কবিতা লুকিয়ে থাকে। 

রবীন্দ্রনাথ: হতে পারে। আসলে শিল্প মানে সাধনা। আর সব সাধনাই আত্মানুসন্ধানের পথকে বিস্তৃত করে। কখনও তা প্রকৃতির মাঝে, কখনও তা যাপন-মাঝে। কবিতা এ কাজটি ভালো পারে। যা কিছু সুন্দর, তার সাথে আত্মার সুদৃঢ় মেলবন্ধন গড়ে তুলতে কবিতা সমর্থ। মানিকের প্রথম ছবিতে যখন ভাইবোন বৃষ্টিতে ভিজছিল, ওটা একটা কবিতার মতো দৃশ্য! আরও এমন প্রচুর দৃষ্টান্ত রয়েছে।

মৃণাল: লোকায়ত দর্শন তো আপনার জীবনের গভীরে ছাপ ফেলেছিল শুনেছি…

রবীন্দ্রনাথ: সেটাই স্বাভাবিক নয় কি? রাজশাহী, শিলাইদহে জমিদারি দেখাশোনার কালে লোকায়ত দর্শন গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এই লোকায়ত দর্শনই পরবর্তীকালে আমার মধ্যে প্রবিষ্ট আধ্যাত্মবাদকে ঋদ্ধ করেছিল। শেষের দিকের লেখাগুলি পড়লে বুঝবে।

মৃণাল: সেটা বোঝা যায়। আপনি নিজেকে ভাববাদী বলতে ভালোবাসেন নিশ্চয়ই!

রবীন্দ্রনাথ: হাহাহা, শুধু ভাবনার চাষ করলে আমি রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠতাম না হয়তো। লোকে বলে আমার চিঠিপত্রে নাকি এক অন্যরকম বুদ্ধিদ্দীপ্ত বাস্তববাদী রবীন্দ্রনাথ ফুটে ওঠে। তবে আর যাই হোক, আমি চার্বাকপন্থী নই। কণাদের “বৈশেষিক সূত্র” নিয়ে সেদিনই আলোচনা করছিলাম বিহারীলাল চক্রবর্তীর সাথে। ও স্বীকার করল বস্তুবাদ, ভাববাদের অনেক ওপরে মানবতাবাদ।

সত্যজিৎ: গুরুদেব, শান্তিনিকেতনে যখন থাকতাম, একবার নন্দলাল বসু কথায় কথায় সমবায় নীতির কথা বলছিলেন। বাংলাদেশে এই নীতির প্রবর্তন তো আপনিই করেছিলেন!

রবীন্দ্রনাথ: বলতে পারো। জমিদারির কাজে বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে যেতে হত, দেখতাম মাইলের পর মাইল খেত, মনে হত আমরা গরিব কেন? ধনের অভাবে নাকি ভরসার অভাবে? সমস্ত কৃষক একজোটে কাজ করলে তো ফলন বাড়বে, সাথে সাথে অনেক বাজে খরচ বেঁচে যাবে। তখনই সমবায় নীতির কথা ভাবি। তবে সেটা ফলপ্রসূ হয়নি। ইউরোপ পারলেও আমরা পারিনি। 

মৃণাল: সেটার কারণ মূলত সমাজ ব্যবস্থা। Fragmented land holding থেকে যাবেই। এর সাথে পুঁজিবাদীদের সম্পর্ক আছে।

রবীন্দ্রনাথ: ঠিক বলেছ মৃণাল, এটা আমিও মনে করেছিলাম, লিখেওছিলাম।

সত্যজিৎ: ওহ মৃণালবাবু, আপনার ‘জেনেসিস’ ছবিটি আবার দেখলাম। একটা সত্যিকারের ভালো ছবি ওটা। দেখেছেন গুরুদেব?

রবীন্দ্রনাথ: না হে, আমার সিনেমা দেখার অভ্যেস নেই তেমন। তবে তেমন বিশেষ কিছু বিষয়ের ওপর হলে নিশ্চয়ই দেখব। থিম কী ছবিটির? বাইবেল টাইবেল নিয়ে কিছু?

মৃণাল: না না! মাতৃতান্ত্রিক সমাজের ভেঙে পড়াটা…

রবীন্দ্রনাথ: বেশ, দিও, দেখব। আসলে বায়োস্কোপের প্রতি আমার উৎসাহ থাকলেও সেখানে আমি বিচরণ করতে অস্বস্তি বোধ করি। তবে গর্ব হয় তোমাদের দেখলে যে, তোমরা বাংলাদেশে কী কাণ্ডটাই বাঁধিয়ে এসেছ!

ঋতুপর্ণ: আমাকে একই দলে ফেলবেন না গুরুদেব। আমার কাছে সিনেমার ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর হলেন রায় সেন ঘটক। আমি এমন কিছু করে আসতে পারিনি।

মৃণাল: বেশি বিনয় ভালো নয় ঋতু, তোমার ‘আবহমান’ আমি নিজে তিনবার দেখেছি, ‘বাড়িওয়ালি’ও আমার ভীষণ প্রিয়।

সত্যজিৎ: গুরুদেব, আকাশে মেঘ জমছে, আজ উঠতে হবে।

রবীন্দ্রনাথ: কী বলছ!! আবার মেঘ!! আজকে আবার বৃষ্টি আসবে!

ঋতু: গুরুদেব, যাওয়ার আগে শেষ একটা প্রশ্ন। মৃত্যুর এতদিন পরে আপনার কোনও অভিযোগ নেই?? 

রবীন্দ্রনাথ: অভিযোগ?? আমরা তো এসবের অনেক ওপরে এখন… তবুও বলছ যখন, আমার এ কথা বেঁচে থাকতেই মনে হত যে যারা আমাকে নিয়ে দিনরাত মত্ত থাকছে, যারা আমার সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে সারাজীবন আমাকে ঈশ্বর জ্ঞান করেছে, তারা মাথাটা সোজা রাখলে আমায় আরও কিছুটা দেখতে পেত, হয়তো বুঝতেও পারত। আমি ঈশ্বর হতে চাইনি, আমি তোমাদেরই লোক হতে চেয়েছিলাম।

সত্যজিৎ: আজ আসি গুরুদেব। ভালো থাকবেন।

রবীন্দ্রনাথ: আবার এসো। সামনের বার ঘটককে নিয়ে আসবে।

মৃণাল: একদম।

ওঁরা চলে যেতেই কবি লিখতে বসলেন। সন্ধ্যাকাশে মেঘ জমেছে। 

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *