স্বর্গীয় ছোরা ও এক আজগুবি সর্বনাশ (ইতি দিওতিমা পর্ব ৬) — বল্লরী সেন
সপ্তম অধ্যায়
তাই বলে নিজের বাবাকে খুন করার স্বপ্ন!
তা বলে নিজের হাতে নিকোলাইয়ের মরা শরীর ছুঁয়ে ছেনে এতগুলো রাত্রি পার করা সহজ ছিল না, কোনো সমাধান নেই, পিঠের কশেরুকা ঘেঁষে সেই চোরা আনন্দ পান করার সাংঘাতিক লালসা ক্রমশ ফাঁসিয়ে ফেলছে আমাকে। লীন হয়ে ডুবে যাচ্ছি প্যাঁচের পর প্যাঁচ, একটার পর একটা কষ্ট রুইয়ে দেবার জন্য; বাবা আমাকে, আমার ওই সব জায়গায় যখন টিপে ধরেছেন, তিনি চাইছেন লাগুক, খুব লাগুক, আমি কায়মনোবাক্যে চাইছি আরও, আরও। কোদাল কোপানো এই রাঙা আলুর আসবাবগুলো লাল হচ্ছে, আমার গ্রীবা থেকে সোজা না গিয়ে উনি যে রাস্তা ধরলেন পানকৌড়ির মতো, গজব সে মার্গ। লা জবাব সে মার্গ, এই তো বাজু, এই তো কবজি, এই তো স্যামন মাছের আঁশরিক্ত তেলা তমকলেবর—চোখের মণি, বুকের পা, পায়ের খিড়কি, কোমর হয়ে ওষ্ঠ আমার যত লাগছে আমার সর্ব অঙ্গে তত সুখ, সর্ব অঙ্গে কাদার মতো কষ্ট, তত বাড়ছে হ্লাদ, ততই। ততক্ষণে বাহুরোমে চিৎকার নেমে এসেছে আমার, ছড়ে যাচ্ছে আমার না-জানা চত্বর, ওই যেখানে মুথাঘাসের মতো হরিণডুরি রোমশ ত্রিবলিরেখা, ওর আরও এক ক্রোশ পেরোলে দণ্ডকারণ্যের ধাপ। আমার স্তনের কানে কানে তখন গোটা গোটা অক্ষরে কেউ নাম সই করছে, লিখে, আবার মুছে, আবার লিখে… চোখ তাকিয়ে হাঁ হয়ে গেলাম। হ্যাঁ, কার্ল ইয়ুং স্বয়ং হাজির। ভুল দেখছি না, স্বপ্ন দেখছি না। অস্থিরতা রুখতে আমি কখন যে মাঝরাতে হুটিং আউলের হুইসলের সঙ্গে নিজেকে ডনবৈঠক করিয়েছি, মনে নেই। খাটে শুয়ে নেই, নেমে গেছি কার্পেটে, মাথায় বালিশ নেই। কেবল একটা হাতের ওপর আমার গোটা দেহটা একটা উলঙ্গ পিস্তলের মতো ঠায় খাড়া হয়ে আছে। আর চোরের মতো তার একটা হাত আমার শিফন গাউনের রেকাবিতে উপুড় করে শোওয়ানো। ভোগের আলো জ্বেলে সে তবে আমাকে নিয়ে যা-খুশি করিয়েছে আর আমি তা হলে আমার লোভের মুখে রক্তখাদকের কোন্ আশায় এই শরীর শরীর উচ্ছ্বাসে সায় দিলাম? আমায় কি এমন কিছু খাইয়ে দিয়েছে কার্ল যাতে আমার নিজের ওপর বশ না থাকে, যাতে নেশার বশে আমার সম্মতিহীনতাই জরুরি বলে মনে করা হয়—স্তম্ভিত হয়ে না থেকে এবার আমি অলস কী এক দাপটে জাহান্নম থেকে পায়ের বেড়ি, মাথার ক্লিপ, কোমরবন্ধ, কানপাশা নিজের কাছে এনে রাখলাম আর ঠিক এ সময়ে ঘুম থেকে তেড়েফুড়ে উঠলেন উনি, যার কথা সমগ্র বলতে হবে ফ্রয়েড সাহেবকে, সমস্ত। কিছুই না লুকিয়ে। কী কী রসদ যুগিয়ে আজ আমার শ্বাসিত নাভির জিভ কোনও অনুবেদনের প্রস্তুতি ছাড়া এরকম উদ্বেজিত হল, তা একান্ত নারীর নিজস্ব রমণক্ষেত্র। দুই পায়ের উত্তাপে তখন বেহালার আগুন দিকে দিকে এগোচ্ছে হুপিং কাশির মতো, আমার ঘুমের মধ্যে নিকোলাই আর ইয়ুং-এর সাদা প্রতিকৃতি বেলুনের মতো ফেটে চৌচির হল। পৃথিবীর সেরা পুরুষ, আমার জন্মদাতা পিতা আর সেই, যিনি আমায় সারিয়ে তুলেছেন—দুজনকেই, আমার এ নারীত্বক, আমার কল্পজ রাসপূর্ণিমার শাগির্দ, এই সীতাফল শরীরের যাবতীয় প্রজাতির অধরের সাহায্যে আমি শাসন করেছি।
আর এই ধ্বংসকামের শিখরে আছেন নিকোলাই স্পিয়েলরিন, যাঁর ব্যভিচারের প্রথম অবিকল্প প্রস্তুতি আমার এই অপূর্ণ শৃঙ্গার।