শের আলি আফ্রিদি, ইতিহাসের পাতায় বিস্মৃত এক নাম – দীপক সাহা
চাপা নিস্তব্ধতা। হঠাৎ খসখস করে পায়ের তলা দিয়ে কী একটা চলে গেল! শের আলি পা সরিয়ে নিলেন তৎক্ষণাৎ। ওই তো কালো কুচকুচে। এঁকেবেঁকে দ্রুত চলে যাচ্ছে। হাতেপায়ে মশার কামড়ের জ্বলুনি। কিন্তু মারা যাচ্ছে না, পাছে সামান্যতম শব্দ-বিপদ ঘটে যায়। অতএব জঙ্গলে মশার কামড় খেয়ে ঘাপটি মেরে বসে শিকারের জন্য অপেক্ষা করা। একবার শুনেছিলেন লর্ড সাহেব আন্দামানেই আসছেন। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। পড়ন্ত বেলায় বড়লাট লর্ড মেয়ো প্রথমেই গেলেন চ্যাথাম দ্বীপে। সেখানে সুন্দর একটা পাহাড়ও আছে। মাউন্ট হ্যারিয়েট। লর্ড মেয়ো হ্যারিয়েট দ্বীপের সানসেট পয়েন্টে সূর্যাস্ত দেখতে গেলেন। সে তো অনেকক্ষণ। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। সাহেবের ফেরার কথা নেই। চারিদিক শুনশান। পাতা খসে পড়লেও শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ঘন জঙ্গলে অন্ধকারে মশার কামড় খেয়েই সন্ধেটা পেরিয়ে যাবে। নিশ্চিত শিকার কি হাতছাড়া হয়ে গেল! মন ছটফট করছে। অধৈর্য শের আলি আরেকবার ছুরিটা পরখ করে নিল। কিচেন নাইফ হলেও দুর্দান্ত ধার। মাংস কাটা ছুরি বলে কথা। ধারালো ইস্পাতে আঙুল ঠেকতেই রক্তটা কেমন গরম হয়ে উঠল। চোখ দুটো এখনও জ্বলছে। দেখতে দেখতে প্রায় তিন বছর হয়ে গেল। আন্দামানে সাজা খাটছে। সেই ১৮৬৯ সাল থেকে। এত বছর পরে একটা মনের মতো সন্ধে! শুধু আর একটু অপেক্ষা! পাহাড়ে যখন একবার উঠেছ বাছাধন, নামতে তোমাকে হবেই! আর নামলে এই পথ দিয়েই যেতে হবে। ওই তো খচখচ শব্দ! কারা যেন দ্রুত পা ফেলে এদিকেই আসছে। চোখ দুটো স্থির হয়ে গেল। হৃদস্পন্দন থেমে গেছে। তিনি আসছেন, তিনি আসছেন, তিনি আসছেন! ভাইসরয় সাহেব আসছেন।
ডান হাতের মুঠোটা আপনা থেকেই শক্ত হয়ে গেল। সারা শরীরে শিহরণ। ওই তো! বেশ কয়েকজন। একজনের হাতে মশাল। সন্ধ্যার ঘন অন্ধকার চিরে মশালের হাল্কা একটা আভা। কিন্তু লর্ড মেয়ো কোন্ লোকটা? পেছনের সাহেবটি আচমকা দাঁড়িয়ে পড়তেই আড়াল সরে গেল! ওই তো! না, কোনো সন্দেহ নেই। ছবিতে যেমন দেখেছে৷ পেটানো চেহারা, পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুল-পোশাক, ইউনিফর্ম— না, আর এক মুহূর্ত দেরি নয়! পাথরের আড়াল থেকে তড়িৎগতিতে একটা ছায়া ছুটে গেল। পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির দশাসই অবয়ব। মুহূর্তে পিঠ ভেদ করে প্রায় ফুসফুস ছুঁয়ে ফেলল ধারালো ছুরিটা। একবার, দুবার– গভীর থেকে আরও গভীরে! ফিনকি দিয়ে রক্ত! মশাল হাতে হৈহৈ করে ছুটে এল রক্ষীরা। মশালের আলোতে ঝলকে উঠল মেয়োর পিঠে বিদ্ধ রক্তাক্ত ছুরি। ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। ধরাধরি করে মেয়োকে একটি গরুর গাড়িতে ওঠানো হল। শেষবারের মতো তিনি বললেন “আমার মাথাটা একটু উঁচু করে ধরো।” তারপর সব শেষ।
ততক্ষণে রক্ষীরা আততায়ীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে! ছায়াটা একবারও পালানোর চেষ্টা করল না। তার মনোবাঞ্ছা আজ পূর্ণ হয়েছে। পাঠান যুবক শের আলি আফ্রিদি তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে সক্ষম হলেন, হত্যা করলেন ব্রিটিশ বড়লাটকে।
আন্দামানের নির্জন দ্বীপের বন্দি ‘বিপ্লবী’ শের আলি আফ্রিদি! চতুর্থ ভাইসরয় রিচার্ড সাউথওয়েল বোর্ক, সিক্সথ আর্ল অফ মেয়ো ওরফে লর্ড মেয়োর দুঃসাহসী হত্যাকারী! ক্যালেন্ডারের পাতায় সেদিন ৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৭২! এই ঘটনা ভারতের ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়।
তারপর একমাস ধরে চলল বিচারপর্ব। শের আলি এমনিতেই যাবজ্জীবন কারাবাসের আসামি। আর এই হত্যাকাণ্ড তো অনেকের চোখের সামনেই ঘটেছে। ডজন ডজন সাক্ষী। বড়লাট বলে কথা! ভারতের সর্বাধিনায়ক। ব্রিটিশ শাসক ছেড়ে কথা বলবে নাকি! এখন হলে মেকি এনকাউন্টারে খতম হয়ে যেতেন। বিচারপর্ব চলাকালীন ইংরেজ বিচারপতি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন— “তুমি এটা কেন করেছ?” শের আলির উত্তর ছিল— “খোদা নে হুকুম দিয়া।” তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই কাজে তার সাথে আর কে ছিল। ওই একইভাবে স্থির কণ্ঠে তিনি জবাব দিয়েছিলেন— “মেরা শরিক কোই আদমি নেহি, মেরা শরিক খোদা হ্যায়।” বিচারে শের আলির ফাঁসির আদেশ হয়। ইংরেজরা ভাইপার দ্বীপে এই বীরের ফাঁসি দেয়, ১৮৭২ সালের ১১ মার্চ।*
অত্যাচারী, বিদেশি ব্রিটিশ শক্তির প্রতিভূ লর্ড মেয়োকে হত্যা করে বীরের মৃত্যু বরণ করলেন মহাবীর ‘বিপ্লবী’ শের আলি আফ্রিদি। পোর্ট ব্লেয়ারের মাউন্ট হ্যারিয়েট ন্যাশনাল পার্ক সাক্ষী হয়ে থাকল বিরলতম এক বীরত্বের, অনন্যসাধারণ সাহসের! ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোনো বড়লাটকে হত্যা করতে সক্ষম হন।
পড়তে পড়তে আপনার নিশ্চয় রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে। গর্বে বুক ফুলে উঠছে। না পাঠক, অত রোমাঞ্চিত হওয়ার আগে একটু দাঁড়ান। আমার মতো এবার আপনার মনেও প্রশ্ন জাগছে। তাই না? নেতাজী, বিনয়-বাদল-দিনেশ, মাস্টারদা সূর্য সেন, রাসবিহারী, বাঘা যতীন, ভগত সিং, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকির সাহস, দেশপ্রেম, বীরত্ব নিয়ে স্কুলপাঠ্য ইতিহাসে যে চর্চা হয়, চরম শত্রু মহাপরাক্রমশালী লর্ড মেয়োর ভবলীলা সাঙ্গ করেও শের আলি আফ্রিদিকে নিয়ে কেন এর ছিটেফোঁটাও হয় না? স্কুলপাঠ্য না হয় বাদই দিলাম এদেশের ইতিহাসে শের আলি আফ্রিদি নামক “বিপ্লবীর” কোনো উল্লেখই নেই। আলোচনা, চর্চা, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, মাল্যদান এসব তো দূরের কথা! মনে প্রশ্ন জাগে, একটি শব্দও তাঁর স্মরণে ইতিহাসের পাতায় খরচ করা হল না কেন?
প্রিয় পাঠক, আপনার নিশ্চয় এতক্ষণ জানতে ইচ্ছে করছে কে ছিলেন এই শের আলি আফ্রিদি? কী তাঁর পরিচয়? তিনি কি সত্যিই বিপ্লবী ছিলেন? আন্দামানেই বা কেন গিয়েছিলেন? আসুন আগে এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজি!
শের আলি আফ্রিদি। তার নামের অর্থ পরাক্রমশালী বাঘ। আক্ষরিক অর্থেই কাজেও তিনি তাই দেখিয়েছেন। তাঁর জন্ম তৎকালীন খাইবার প্রদেশের পেশোয়ারে জামরুদ গ্রামে। অর্থাৎ বর্তমান পাকিস্তান। পিতার নাম ঊলি আলি খান। তিনি পাঞ্জাব মাউন্টেড পুলিশে কিছুদিন কাজ করেন। পেশোয়ার কমিশনারের আপিসেও কিছুদিন কাজ করেছিলেন। এর আগে তিনি আম্বালাস্থিত অশ্বারোহী বাহিনীতেও নিযুক্ত ছিলেন। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির অধীনে প্রেসিডেন্সি আর্মিতেও কাজ করেন (১৮৫৭ সাল)। পরবর্তীকালে তিনি মেজর জেমস নামক এক ব্রিটিশের অধীনে অশ্বারোহী হিসেবে কাজ করেন। তারপর মালিক বদলে চলে আসেন রেনেল টেলরের কাছে। আর্দালি হিসেবে। অভিযোগ এখানে কর্মরত থাকাকালীন তিনি একটি খুন করে বসেন। পারিবারিক কলহের ফলশ্রুতিতে হায়দার আলি নামের এক আত্মীয়কে হত্যা করেন। অন্যমতে তিনি ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী ওয়াহাবী আন্দোলনের (ইসলামের একটি চরমপন্থী শাখা গোষ্ঠীর ধর্মীয় আন্দোলন) সাথে যুক্ত, যদিও এ নিয়ে নানা পরস্পরবিরোধী মত আছে। শীর্ষস্থানীয় ওয়াহাবী নেতা মৌলানা জাফর থানেশ্বরী সহ অন্যান্য বিপ্লবীকে ধরিয়ে দেওয়া ও পুলিশের গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে হায়দার আলি নামক এক যুবককে হত্যা করেন শের আলি।
পেশোয়ার থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৮৬৭ সালে ২রা এপ্রিল বিচারে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়। পরে কলকাতা হাইকোর্ট আপিলে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে তাঁকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে দণ্ডিত করে। ১৮৬৯ সালে শের আলিকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি হিসাবে আন্দামানে পাঠানো হয়। তখন তাঁর বয়স ২৫ বছর। তথাকথিত সভ্য মানুষ বর্জিত, নির্জন আন্দামানে বিপ্লবী থেকে শুরু করে খুনি, ডাকাত, বিপ্লবী সবাইকেই এক সঙ্গে রাখা হত। রাজনৈতিক বন্দি বলে ভিন্ন কোনো সমাদর ছিল না। আন্দামানে তখনও সেলুলার জেল তৈরি হয়নি (উল্লেখ্য ১৮৯৩ সালে নির্মাণ করা হয় কুখ্যাত সেলুলার জেল)। কয়েদি ও বন্দিদের বিভিন্ন দ্বীপে কঠোর পাহারায় রাখা হত। পোর্ট ব্লেয়ারের হোপ টাউন অঞ্চলের পানিঘাটায় বন্দি ছিলেন শের আলি।
সেই সময় আন্দামানই ভারতবর্ষের জনমানুষের কাছে কালাপানি। কলকাতা থেকে ৭৫০ মাইল দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন আকারের ২০৪টি দ্বীপ নিয়ে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ। বড়ো দ্বীপটির দৈর্ঘ্য ৩৫৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৬০ কিলোমিটার। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর বিদ্রোহীদের নৃশংসভাবে হত্যা করার পর যেসব বিদ্রোহী ফাঁসিকাষ্ঠ এড়াতে সমর্থ হয়েছেন, সেই সমস্ত ২০০ জন কারাবন্দি স্বাধীনতা সৈনিককে নিয়ে ১০ই মার্চ ১৮৫৮ তে কুখ্যাত সুপারিন্টেন্ডেন্ট জেবি ওয়াকার আন্দামান পৌঁছান। পরবর্তীতে ১৮৭২ সালে লর্ড মেয়ো যখন আন্দামান পরিদর্শনে যান তখন সেখানে ভারতীয় বন্দির সংখ্যা ছিল ৭০০০।** তাদের সবাই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি। বেশিরভাগ স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধের সৈনিক। পায়ে শিকল পরা অবস্থায় জোঁক-সাপ-বিছে পরিপূর্ণ জলা ও জংলাভূমি পরিষ্কার করে পথঘাট তৈরি করাই ছিল এই কয়েদিদের দিনরাতের কাজ। কাজে মন্থরতা দেখা দিলে তাঁদের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হত। চারদিকে অথই সাগর, পালানোরও কোনো পথ নেই।
আন্দামানে ব্রিটিশ শাসনের ভয়াল রূপ শের আলিকে বিচলিত করে তোলে। ইতিমধ্যে অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যারা সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিলেন তাঁদের এখানে নির্বাসন দেওয়া হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মোহাম্মদ জাফর, ইয়াহিয়া আলী, মৌলবি আহমদুল্লা প্রমুখ। ব্রিটিশ সরকারের দলিল-দস্তাবেজ থেকে জানা যাচ্ছে ১৮৫৭-এর সিপাহি বিদ্রোহের সময়েও তাঁরা যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন। এঁদের সংস্পর্শে এসে শের আলির মনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী ঘৃণার মনোভাব আরও তীব্রতর হয়। অবশ্য স্বভাবে তিনি ছিলেন খুবই সরল, দয়ালু এবং ধর্মভীরু প্রকৃতির। জেলে মজুরি হিসেবে সামান্য যে পয়সা পেতেন তার সবটাই সহযোগী বন্দিদের মধ্যে বিলি করে দিতেন। এর ফলে অল্পদিনেই বন্দিদের মধ্যে তিনি খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। অন্যদিকে, দিনরাত একই চিন্তা, বিপজ্জনক নির্জন দ্বীপে নির্বাসন অবস্থায় অত্যাচারের বদলা কীভাবে নেওয়া যায় এবং দেশবাসীকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করা যায়। শের আলি প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি কোনো উচ্চপদস্থ ব্রিটিশকে হত্যা করে তাঁর প্রতি অবিচারের প্রতিশোধ নেবেন। উপযুক্ত সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় তিনি ধৈর্য ধরে রইলেন। একটি ছুরি নিয়ে দ্বীপের পাহাড়ের পাথরের গায়ে প্রতিদিন শান দিতেন। এভাবেই মাসের পর মাস কেটে গেল।
১৮৭২ সালে ৮ই ফেব্রুয়ারী সেই মোক্ষম সুযোগ উপস্থিত হয়। লর্ড মেয়োর আন্দামান পরিদর্শনের সংবাদ শুনে শের আলি তাঁর কর্তব্য স্থির করে ফেলেন অর্থাৎ যেভাবেই হোক তাকে হত্যা করতে হবে। তিনি এটাও জানতেন তিনি ধরা পড়বেন এবং তাঁর মৃত্যু অবধারিত। তাই আগেই তাঁর হিন্দু-মুসলিম সতীর্থদের কাছ থেকে বিদায় পর্ব সেরে নেন এবং তাঁর যে সামান্য অর্থ ছিল তা দিয়ে রুটি-মিষ্টি খাওয়ান।
আন্দামানের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে এসে ভিড়ল ‘গ্লাসগো’ নামক রণতরী। এই গ্লাসগো রণতরীতেই ছিল লর্ড মেয়ো। রণতরী থেকে বেরিয়ে আন্দামানের পাহাড়-পর্বত ঘুরে বেড়াতে লাগলেন তিনি। সেদিন পড়ন্ত বিকেলে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে হ্যারিয়ট দ্বীপের সানসেট পয়েন্টে উঠলেন মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্ত দেখার জন্য। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তারপরের রোমহর্ষক ঘটনা তো আগেই বলেছি।
ব্রিটিশ সরকার এই ঘটনার কোনো রাজনৈতিক রং দিতে চায়নি পাছে শের আলি শহিদের মর্যাদা পেয়ে যান এবং পরবর্তী প্রজন্মের অনুপ্রেরণায় পরিণত হন। তাই অত্যন্ত গোপনে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। শের আলি জানতেন, তাঁর দেশকে স্বাধীন করতে তাঁকে চরম মূল্য দিতেই হবে। তিনি তা-ই দিয়েছেন। কিন্তু স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই মেয়ো হত্যা এবং হত্যাকারীকে নিয়ে বিশেষ কোনো আলোচনা হয় না কেন? এমন চাঞ্চল্যকর একটি অধ্যায় নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা, হেলদোল নেই কেন? অথচ এমন দুঃসাহসী একটি চরিত্রকে আমরা “বিপ্লবী” আখ্যা দিইনি। শের আলি আফ্রিদি অন্ধকারেই থেকে যান। বলা ভালো তাঁকে অন্ধকারে রাখা হয়। মেকি ইতিহাসের গোলকধাঁধায় শের আলি হারিয়ে যান। তাঁর জন্য রচিত হয় না কোনো ভাস্কর্য, কোনো শহিদ বেদি। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু দিনে একটা শুকনো ফুলও কোনোদিন কেউ দেয়নি, এটাই সবচেয়ে বড়ো ট্র্যাজেডি। ইতিহাসের পৃষ্ঠায় কোনো একদিন নিশ্চয়ই তাঁরও নাম উঠবে। পাবেন দেশপ্রেমিকের প্রাপ্য মর্যাদা। পাঠ্যবইয়ে জ্বলজ্বল করবে একটি স্ফুলিঙ্গ নাম— শের আলি আফ্রিদি!
* তথ্যসূত্র: বড়লাট লর্ড মেয়োকে হত্যার কাহিনি, গয়রহ, এম আর আখতার মুকুল, পৃষ্ঠা ৬।
** সূত্র- The Assassination of Lord Meyo by Hellen James