কাল্পনিক চরিত্র – রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেয়ার করুন


পৃথিবীর প্রকোষ্ঠে ক্লেশ ছড়ায় ৷ মানুষের অকাতর ঘুম বিবেকের পাশ ফিরে শুয়ে থাকা ৷ যে গাছটা আভূমি বিস্তৃত শুধু তোমাকে ঘিরে ৷ যার পাতায় পাতায় তোমার যাতায়াত, যার ডাল শিকর তোমার নৈবেদ্য সাজায় , তাকে তুমি ছারখার কর ৷ মরিচ ঢেলে দাও দু’চোখের পরিখায় ৷ অন্ধত্বের দায় নিয়ে তবু বারবার ফিরে যাই তোমার ভুল ঠিকানায় ৷ পাজরের হাড়গোড় আজই ভাসিয়ে দিলাম ভাগীরথীর জলে ৷ এত পীড়া, এত জ্বরে পুড়ে পুড়ে ছাই হওয়া, এই ক্ষয়, এই জন্মের দায় আমাকে প্ররোচিত করে ৷ প্ররোচিত করে নিজেকে আহুতি দিতে ৷ আজন্ম যে মানুষটার  প্রেমে রক্তের ফোঁটা সাজিয়েছি পরপারের গণ্ডি এঁকে , তার অচেনা আদল , আমি কেমন করে বয়ে বেরাব এ জন্মের খোলসে ! 
যাবার বেলা তবু কেন এত মায়া ঘিরে ঘিরে আসে ৷ কেন শুধু তার, সেই প্রথম দেখার দিনের অসহায় চোখ দুটো জ্বলে ওঠে আমার প্রস্থানের পথের বাঁকে! কেন তার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, কপট অছিলা, বিস্তৃত হই বারবার! ভুলে যাই সেই রাত, নিদারুণ একা করে দিয়ে, তোমার চলে যাওয়া অন্য জীবনের কাছে! বহুবার শ্রাবণকে চেয়েছি ক্ষমা করে দিতে ৷ আজও চাই ৷ তবু আজ বড়ো প্রকট হয়েছে অভিমান ৷ আমি কোনো বিকল্প নই, যে তুমি কোন একজনকে বেছে নেবে!  প্রতিদিন আমি যে দেবালয়ে তোমার জন্য প্রার্থনা করি, আলোর রেণুতে  ভরে দিতে চাই তোমার অন্ধকার কোণগুলো, আউশের গন্ধে ভরে দিতে চাই তোমার উঠোন, তোমার প্রতিটি বিকেলে ভরে দিতে চাই গুলালে, তুমি তো জানো সে সব! 
আর হয়ত ফিরে আসা হবে না৷ আর হয়ত দেখা হবে না কোনো রেস্তরাঁয়, কফি হাউসে, গঙ্গার ঘাটে কিংবা কোনো গোধূলির ছায়ায়৷ তবু এ দু’চোখ উপড়ে রেখে গেলাম তোমার হেফাজতে, যাতে সে চোখে আর, কেউ না পরে ধরা ৷ 
ভুলে যেও আমায় , তোমার কবিতার কোনো কাল্পনিক চরিত্র ভেবে ৷

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • কস্তুরী সেনের পাঁচটি কবিতা

    শুরু নারাণ মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু হল এই বর্ষাকাল,যূথী নাই জাতী নাই, প্রতীতি কি হবে?প্রতীতি, শব্দের মানে সহাস্য কুসুম।ঘন রাস্তা লোক ভিড় নতুন ফলের গন্ধ সঙ্গে নিয়ে বর্ষা এল সন্ধে সন্ধে,‘একটি কবিতা চাই’ বর্ষা এল শিয়ালদাবাজারবেঁটে ছাতা ত্রিশ টাকা দরদামে চমৎকার খুশি হয়ে লাফিয়ে ধরেছ যে রানিংয়ের ট্রেন,তোমাকে শোনাই এসো গ্বালিবের প্রেমিকাটি বাঙ্গালিনী ছিল এ প্রবাদ…

  • তার গল্প – সরোজ দরবার

    পুরোপুরি নিরপেক্ষ ছিল সে। কোনও দলের সঙ্গেই তার কোনও যোগাযোগ ছিল না। অন্তত তার টুথব্রাশ, মাজন, চায়ের কাপ, বিস্কুটের কৌটো এমনটাই জানত। এ নিয়ে তারা তাই কোনোদিন কোনও সন্দেহ প্রকাশ করেনি।আর এমনিতে তো সে শান্তই। আপনভোলা বলতে হয়। মাথা ঠান্ডা। সাতে-পাঁচে নেই। এতটা বড়ো হয়েছে, কোনোদিন কোনও দলের দিকে সে ফিরেও তাকায়নি। কোনও দলও তার…

  • শুভ্রাশ্রী মাইতি-র পাঁচটি কবিতা

      সঞ্জীবনী এই তো জল ছলছল আয়নাবিলাসী দীঘি আমার, কবেকার যেন; আঁজলার পর আঁজলা ভরে কী এত স্মৃতিভার তুলছ তুমি বলো… শ্যাওলাঝাঁজির গন্ধমাখা!   হাতের পাতায় একে একে উঠে আসছে আমাদের নরম নীল চিঠি, পাখিগানের সুপ্রভাত, ঘামফুলের নির্জন দুপুর, অলিভ পাতার  চকচকে সবুজ আদরচুম্বন আর বহু পুরাতনী ভালোবাসার স্নেহ তিরতির ঢলঢলে মুখ কোনো  দ্যাখো, ভালো করে…

  • রক্তিম সূর্য মণ্ডলের পাঁচটি কবিতা

    ১. অভিমানী চূড়া থেকে পাদদেশে নেমে আসে সবজি-বাগান।তার পর পরই আলোর কৌটোয় গুঁড়ো দুধ রাখতে শেখা।নিয়মিত চা বানাইসময়ে, অসময়ে;খিদে মরে, ভাত ফেলা যায়।মা দেখলে হাতে মেখে জোর করে খাওয়াতেন,আমি গিলতে থাকতাম ভাত, থালা, হাঁড়ি, উনুন…মা বলতেন, “আর একটু আনি?”—আনবে? অল্প কিন্তু, এক্কেবারে একমুঠো,তোমার তালুতে যা ধরে। ২. আমরা শ্রাবণ মাসে ফুল তুলিনি একটাওলুকিয়ে আছি,আশ্বিন আসুক।এই…

  • অয়ন মুখোপাধ্যায়ের পাঁচটি কবিতা

    আত্ম উপলব্ধি প্রস্থছেদের কোনো জানালা- আরো কিছু নির্বাসনের নদী। শব ছুঁয়ে আছে ঢেউ। চিতার আগুন থেকে স্ফুলিঙ্গ; অস্থি কলস ভেসে যায় । রাতের অন্ধকার -নিস্তব্ধ নক্ষত্র -কেউ নেই…….. নির্বাসন। আর কেউ জেগে উঠবে না। অপলকের কাছাকাছি …. মনুষ্যত্বের নাম প্রেম। স্মৃতি তর্পনে রাত্রি নামে অন্ধ হওয়ার পর। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমার চারপাশের বেঁটে মানুষের…

  • ওগো দুখজাগানিয়া – আফজল আলি

    ওগো দুখজাগানিয়া (  কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুতে কবিগুরুর একটি অসম্পূর্ণ দলিল ) রাত্রির মতো ভেসে যাচ্ছে রাত কল্পনার মুখে একচামচ সন্ধ্যা তুলে দিলাম তুমি সেই তাকিয়ে ছিলে  –   তোমার চোখের  থেকে মুক্তা ঝরে  অনুরূপ  – ওগো দুখজাগানিয়া-    তোমায় গান শোনাব নীরবতার কাছে ঘনিষ্ঠ হয়ে যা কিছু ছিল সে সব আমার ছড়িয়ে  গিয়েছে কোথায় ছেলেবেলার সেই খেলা…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *