অবেলার ঢেউ – রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
ছোট থেকেই তিতলির নিজেকে নিয়ে বড় কৌতূহল। আর পাঁচটা মেয়ের থেকে সে বড় আলাদা ৷ অনুশূয়া সেদিন স্কুলে বলছিল, “জানিস, কাল বাড়ি গিয়ে দেখি স্কার্টে রক্ত লেগে, মা বলল, বড় হলে মেয়েদের এমন হয় প্রতি মাসে।” মাকে এসে তিতলি প্রশ্ন করে, “এটা কি জ্বরের মতো কোনো শরীর খারাপ? আমারও হবে বুঝি?” মার চোখটা ছলছল করে ওঠে। তিতলি কিছুই বুঝতে পারে না ৷ সেদিন আকাশ মেঘলা , ইলেগুঁড়ির মত বৃষ্টি পড়ছে। আষাঢ় মাসের আগে এমন বৃষ্টিতে বড্ড মনকেমন করে। তিতলি বারান্দায় আরাম কেদারায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিল৷ বই পড়ছিল নাকি অন্যমনস্ক, যেন অন্য কোনো জগতে ৷ পাশের বাড়ির পিউ বৌদির মেয়ে হয়েছে, হিজরেরা এসেছে ঢোল নিয়ে নাচ-গান করতে ৷ তাদের একজনের সাথে চোখাচোখি হতেই বুকের ভেতরটা কেমন তোলপাড় করে উঠল তিতলির। এতো আকর্ষণ কেন অনুভব করছে, মনে হচ্ছে কত জন্মের চেনা ওরা! ওরাও উল্লাস করে ওঠে, হারিয়ে যাওয়া মানুষকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে। তিতলি বশীভূতের মতো ওদের দিকে এগিয়ে যায়৷ মা ঝর ঝর করে চোখের জল ফেলে আটকানোর চেষ্টা করে। আজ আর তিতলিকে আটকানো যাবে না ৷ ওর জীবনের যে গূঢ় সত্যটা আজ প্রকট হয় গেছে, তা বড় কঠিন। এই নতুন পরিচয়, এই অবেলায় ওঠা ঢেউ, সে সইতে পারবে তো !