উনিশ শতকে বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চা : নানা অভিমুখ – মিতালী বিশ্বাস
[প্রাক্তন এম.ফিল.গবেষক, বাংলাবিভাগ ভাষাভবন, বিশ্বভারতী ]
আধুনিককালের বাংলা সাহিত্যে প্রাগাধুনিক বা মধ্যযুগীয় সাহিত্যচর্চা একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। যদিও এই সাহিত্যচর্চার সূচনা হয়েছিল উনিশ শতক বা তার কিছু আগে থেকেই। বাংলার সমাজ, ইতিহাস ও সাহিত্যের জগতে উনিশ শতক একটা আলোড়নের সময়। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে বাংলাদেশের কিছু শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এইসময় বালার অতীত ইতিহাস অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা শুরু করেন। এর ফলে অস্পষ্ট অতীতের অনেক কিছুই আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে ইতিহাসের স্থায়ী উপকরণে উন্নীত হওয়ার সুযোগ পেল। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের তথ্যসন্ধানীরা মধ্যযুগের সমাজ-অর্থনীতি-সাহিত্য-দর্শন-ধর্ম-শিল্প-ইতিহাস ইত্যাদি সম্বন্ধে উৎসাহী হয়ে উঠলেন। আমরা জানি, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য মূলত ধর্মকেন্দ্রিক। এর কোনোটি পৌরাণিক ঐতিহ্যানুসারী আবার কোনোটি লৌকিক বিশ্বাসের জগৎ থেকে উদ্ভুত। যেমন—অনুবাদ সাহিত্য, বৈষ্ণব সাহিত্য, শাক্ত পদাবলি এবং বাংলার লোকায়ত জীবনবোধ থেকে জাত মঙ্গলকাব্য ইত্যাদি। তাই বলা যেতে পারে, প্রাগাধুনিক সাহিত্যচর্চায় বৈষ্ণব সাহিত্যের স্থান অন্যতম।
বৈষ্ণব ধর্ম ভারতবর্ষ তথা বাংলাদেশের একটি বিশিষ্ট শক্তিশালী পৌরাণিক ঐতিহ্যলালিত ধর্ম বিশ্বাস। বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম উপাস্য কৃষ্ণ সুপ্রাচীন পৌরাণিক দেবতা বিষ্ণুর সঙ্গে অভিন্ন।¹ পরবর্তীকালে বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন শ্রীচৈতন্যদেব। তিনি ভক্তিবাদী বৈষ্ণব ধর্মের দ্বারা বাংলার সামাজিক ও আত্মিক পরির্বতন ঘটাতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। বাঙালির আত্মপ্রতিষ্ঠায় শ্রীচৈতন্যের অবদান অবিস্মরণীয়। ফলে প্রচলিত বৈষ্ণব-ভাবনা মহাপ্রভুর ভক্তি আন্দোলনের প্রভাবে নতুন মাত্রা পায়। সমাজের ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি লালিত রক্ষণশীল ধর্ম ভাবনা ও লোকায়ত ধর্মের হিংসাত্মক বীভৎস রূপ ইত্যাদির ফলে ধর্মের মজে যাওয়া ধারাটি নতুন স্রোতে বইল চৈতন্যের ভক্তি আন্দোলনের প্রভাবে। তাই উনিশ শতকে প্রাগাধুনিক সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি পড়ে বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চার দিকে।
উনিশ শতকে প্রাচীন ও মধ্য যুগের একটা ধারাবাহিক সাহিত্যের ইতিহাস লেখার চেষ্টা শুরু হল। বিভিন্ন দিক দিয়ে ইতিহাস অনুসন্ধান করা হল। যেমন, উনিশ শতকে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে প্রাচীন ও মধ্যযুগের নানা পুথি সংরক্ষণ ও সম্পাদনা করা হল। এই পুথিগুলি কিছু কিছু বই আকারে প্রকাশিত হল। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে নানা বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধ রচিত হল। সৃজনশীল আধুনিক সাহিত্যে মধ্যযুগের সাহিত্যের প্রয়োগ দেখা গেল। এছাড়া জাতীয়তাবাদী মানসিকতা থেকে অতীত মনীষীদের জীবন দর্শন খুঁজে প্রকাশ করার প্রবণতাও এইসময় শুরু হয়। আর সাময়িক পত্র-পত্রিকাতেও প্রাগাধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যের অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করা হয়। এগুলি ছাড়াও উনিশ শতকে কিছু মৌলিক সাহিত্য রচিত হয়।
উনিশ শতকে বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চার স্পষ্টত চারটি দিক দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলো যথাক্রমে—
ক) প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চা
খ) ব্যক্তিগত উদ্যোগে বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চা
গ) পত্র-পত্রিকায় বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চা
ঘ) মৌলিক বৈষ্ণব সাহিত্য রচনা
ক) প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চা
উনিশ শতকে পুথি সংরক্ষণ, পুথি সম্পাদনা ও পুথিগুলিকে বই আকারে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য। এই পুথিচর্চার ক্ষেত্রে প্রথমে আগ্রহ প্রকাশ করেন বিদেশী পণ্ডিতগণ। পরে দেশীয় পণ্ডিতরা এগিয়ে আসেন। উনিশ শতক বা তার কিছু আগে-পরে তাকালে আমাদের পারস্পরিক কিছু ঘটনা চোখে পরে। যেমন—এশিয়াটিক সোসাইটি (১৭৮৪), শ্রীরামপুর মিশন (১৮০০), বেঙ্গল আকাডেমি অফ লিটারেচার ওরফে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ (১৮৯৪) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলি উনিশ শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে উনিশ শতকে প্রাগাধুনিক সাহিত্যচর্চায় সর্বপ্রথম নাম করা যায় এশিয়াটিক সোসাইটির। এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যগণ মূলত পুথি সংগ্রহ করার কাজে উদ্যোগী হয়। কিন্তু বাংলা পুথিতে তাঁদের বিশেষ কোনো আগ্রহ ছিল না। তাঁরা আগ্রহ দেখায় সংস্কৃত সাহিত্য, প্রাচীন ভারতীয় বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্ম এবং প্রাচীন ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে। পরবর্তীকালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এশিয়াটিক সোসাইটির পুথিচর্চার দায়িত্ব গ্রহণ করলে, তিনি বাংলা পুথির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে বাংলা পুথির ধারা বিবরণী তৈরী করে প্রকাশ করেন। যার নাম দেন, A Descriptive Catalogue Of The Vernacular Manuscripts In The Collections Of The Royal Asiatic Society Of Bengal। এখানেই তিনি বেশ কিছু বৈষ্ণব পুথির সন্ধান দেন। সেগুলি যথাক্রমে—রতন কবিরাজের শ্রীশ্রীমদনমোহনের বন্দনা (৩৬১৫ নং পুথি), পদপদাবলী (৪৯৪৩ নং পুথি), রঘুনাথ দাসের সিদ্ধান্ত টীকাবলী (৩৭৪৭ নং পুথি), কৃষ্ণ দাসের শ্যমানন্দ প্রকাশ (৪৯০৩ নং পুথি), গুণরাজ খানের শ্রীকৃষ্ণ বিজয় বা গোবিন্দ বিজয় (৩৫৭১ নং পুথি), রসামৃতসিন্ধু কড়চা (৪৮৯৫ নং পুথি), নিত্যানন্দের নিত্যানন্দ কড়চা (৪৯৬৮ নং পুথি), প্রেমদাসের গৌরাঙ্গ কড়চা (৪৮৯৫ নং পুথি), দামোদর রচিত স্বরূপদামোদরের কড়চা (৫৩৫৩ নং পুথি), দ্বিজ মুকুন্দের জগন্নাথ মাহাত্ম্যম্ (৪৯৯০ নং পুথি) ও রামকুমারের ভাগবত (৫০০৭) ইত্যাদি।²
এরপর উল্লেখ করা যায় উলিয়াম কেরীর শ্রীরামপুর মিশনের কথা। আঠারোশো শতকে শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে বাংলা সাহিত্যের জগতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে। সেই পরিবর্তনের নাম ছাপাখানা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিপুল পরিবর্তন দেখা দেয়। হাতে লেখা পুথির বদলে বাঙালি পেল ঝকঝকে কালির ও কলে তৈরি কাগজের বই। শ্রীরামপুর মিশন থেকে একে একে প্রকাশ হতে থাকে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, তর্কশাস্ত্র, ন্যায়, দর্শন ইত্যাদি। তবে উনিশ শতকে শ্রীরামপুর মিশন থেকে বিশেষ কোনো বৈষ্ণব সাহিত্য প্রকাশিত হয়নি। যাই হোক, এই শতকে প্রাগাধুনিক সাহিত্যচর্চা তথা বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চায় মুনশিয়ানা দেখিয়েছে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ। সৃষ্টিলগ্নে সাহিত্য পরিষৎ-এর উদ্দ্যেশ্য ছিল বাংলা ভাষার বিশুদ্ধ, পূর্ণাঙ্গ অভিধান ও পরিভাষা রচনা করা। বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ-এর ইতিহাস সম্পর্কে বলা হয়—“বাঙালীর সারস্বত সাধনা ও গবেষণা ও মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার হারানো পরিচয় পুনরূদ্ধার, বঙ্গসংস্কৃতির অতীত নিদর্শন গুলির পরমাশ্চর্য সংগ্রহ বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ-এর অক্ষয় কীর্তি।”³ উনিশ শতকের শেষের দিকে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ পুথিচর্চা শুরু করে অর্থাৎ এইসময় পুথিগুলো বই আকারে প্রকাশিত হয় ও বৈষ্ণব সাহিত্য নিয়ে নানা বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে শুরু করে। এ সম্পর্কে হীরেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন—“সুখের বিষয় আমাদেরও প্রাচীন সাহিত্যের প্রতি দৃষ্টি পড়িয়াছে। বাঙ্গালা ভাষার ও বাঙ্গালী জাতীর শুভদৃষ্টি বটে।”⁴ বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ-এ ১৩০৩ বঙ্গাব্দ থেকে বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। এই সময় থেকে প্রকাশিত সাহিত্যগুলি হল—অচ্যুতচরণ চৌধুরীর ঈশান নাগরের অদ্বৈত প্রকাশ (১৩০৩ বঙ্গাব্দ), রসিকচন্দ্র বসুর হরিচরণ দাসের অদ্বৈতমঙ্গল (১৩০৩ বঙ্গাব্দ), নগেন্দ্রনাথ বসুর জয়ানন্দ ও চৈতন্যমঙ্গল (১৩০৪ বঙ্গাব্দ), অচ্যুতচরণ চৌধুরীর নরোত্তম ঠাকুর (১৩০৪ বঙ্গাব্দ) ও লোকনাথ দাসের সীতাচরিত্র (১৩০৪ বঙ্গাব্দ), নীলরতন মুখোপাধ্যায়ের চণ্ডীদাসের অপ্রকাশিত পদাবলী (১৩০৫ বঙ্গাব্দ), কালিদাস নাথের বৈষ্ণব কবি জগদানন্দ (১৩০৫ বঙ্গব্দ), চণ্ডীদাসের চতুর্দ্দশ পদাবলী (১৩০৫ বঙ্গাব্দ), নগেন্দ্রনাথ বসুর পীতাম্বর দাসের রসমঞ্জরী (১৩০৬ বঙ্গাব্দ), শিবচন্দ্র শীলের গোবিন্দচন্দ্রগীত (১৩০৬ বঙ্গাব্দ) এবং আনন্দনাথ রায়ের ঠাকুর নরহরি সরকার ও রঘুনন্দন ঠাকুর (১৩০৬ বঙ্গাব্দ)।⁵ এই প্রবন্ধগুলিতে মধ্যযুগের বৈষ্ণব উপাদান নিয়ে নানা সৃজনশীল আলোচনা হয়, যা আমাদের সমৃদ্ধ করেছে।
প্রাতিষ্ঠানিক বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চায় আর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল বাংলাদেশের বৈষ্ণব পাটবাড়িগুলি। নবদ্বীপের হরিবোল কুঠীরের হরিদাস দাস, বরাহনগর পাটবাড়ি, বর্ধমানের শ্রীপাট শ্রীখণ্ড, উত্তর চব্বিশ পরগণার চৈতন্যডোবা, নদিয়ার শান্তিপুরের অদ্বৈত শ্রীপাট, বর্ধমানের কুলীনগ্রাম বাঘনাপাড়া ইত্যাদি শ্রীপাট গুলোতে উনিশ শতকে নিয়মিত বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চা হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, ভক্তসুলভ দৃষ্টিতে চৈতন্যজীবন, গৌড়ীয় বৈষ্ণব তত্ত্ব, বৈষ্ণব পদসাহিত্য, পদসংকলন এবং নানা তাত্ত্বিক ও বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করার প্রবণতা। শুধু তাই নয়, উনিশ শতকে বৈষ্ণব পাটবাড়িগুলিতে কীর্তন গানেরও চর্চা হত। এপ্রসঙ্গে শ্রীখণ্ড, কুলীনগ্রাম, নবদ্বীপ প্রভৃতি স্থানের কথা উল্লেখ করা যায়। খেতুরি উৎসব যে বিভিন্ন বৈষ্ণব ঘরানার সৃষ্টি হয়েছিল তার মধ্যে রেনেটি, মান্দারনী এবং মনোহরশাহী বৈষ্ণব ঘরানা বর্ধমানেই প্রবর্তিত হয়েছিল। তবে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত বর্ধমানের শ্রীখণ্ডে জাত মনোহরশাহী ঘরানা। বর্ধমানই নয় নদিয়াতেও মনোহরশাহী কীর্তন ঘরানার প্রচলন আছে। তবে নদিয়াতে একসময় গরানহাটি কীর্তনের প্রভাব ছিল। দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে—“বাংলাদেশের রাজশাহীতে উৎপত্তি হলেও গরানহাটি কীর্তনের বিস্তারভূমি ছিল নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ।”⁶ বিশিষ্ট কীর্তন রসিক ও মৃদঙ্গ বিশারদ মৃগাঙ্কশেখর চক্রবর্তী জানিয়েছেন—“বৈষ্ণবদের কার্তিকব্রত বা পুরশ্চরণকাল হয় রাসপূর্ণিমায়। মাসাধিক এই সময়ে নবদ্বীপের প্রতিটি ঠাকুরবাড়ীতে বড় বড় গায়কদের গান থাকে। এই ঠাকুরবাড়ীগুলির মধ্যে মহাপ্রভুর বাড়ী, নিতাইর বাড়ী, গোবিন্দবাড়ী, শ্রীবাসঅঙ্গন, নবদ্বীপ হরিসভা, মদনমোহনের বাড়ী ইত্যাদি প্রধান। প্রায় প্রতিদিনই নগরসংকীর্তন এবং ধাম-পরিক্রমার দল নিয়ে সংকীর্তনাদি হয়ে থাকে।”⁷ বর্ধমানের কীর্তনগান চর্চার কথা সর্বজনবিদিত। সারাবছর বিভিন্ন সময়ে বর্ধমানের শ্রীপাটগুলিতে বড়ো বড়ো কীর্তনের আসর বসে। এককথায় বাংলার কীর্তনের বর্তমান রূপটি ভীষণভাবে জীবিত আছে বর্ধমানের শ্রীপাটগুলোকে কেন্দ্র করেই। সেই কীর্তন হল মনোহরশাহী ঘরানা। কয়েক দশক আগেও বর্ধমানের শ্রীখণ্ডে নিয়মিত কীর্তন অধ্যায়ন করানো হত। নরহরি সরকারের উত্তরপুরুষ বিশিষ্ট কীর্তন সাধক গৌরগুণানন্দ ঠাকুর ছাত্রদের মনোহরশাহী কীর্তনের শিক্ষা দিতেন। সার্বভৌম কীর্তন গায়ক গৌরগুণানন্দ শুধুমাত্র মনোহরশাহীই নয় গরানহাটি ও রেনেটি কীর্তন ঘরানায়ও স্বছন্দবিহারী ও সিদ্ধকণ্ঠ ছিলেন। গরানহাটি ঢঙের শেষ বড়ো গায়ক ছিলেন তিনিই।⁸
খ) ব্যক্তিগত উদ্যোগে বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চা
উনিশ শতকে প্রতীচ্যের আলোয় প্রাচ্যের মুখগুলি আলোকিত হয়েছিল। বাঙালিরা নিজেদের অতীত ইতিহাস অনুসন্ধানের জন্য এবং কিছুটা জাতীয়তাবাদী আবেগ থেকে মধ্যযুগের সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। এক্ষেত্রে ঈশ্বরগুপ্ত, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখরা বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিদ্যাসাগর ব্যাক্তিগত উদ্যোগে মধ্যযুগের পুথি সংরক্ষণ করেছিলেন। ঈশ্বরগুপ্ত পুথি সংগ্রহ ও সম্পাদনা করেছেন। যদিও তিনি সুকৌশলী পুথি সংগ্রাহক ছিলেন না। তাই জাতীয়তাবাদী আবেগ থেকে তিনি কবিওয়ালাদের গান সংরক্ষণ করেছন। বঙ্কিমচন্দ্রও একাজে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে তিনি পুথি সংগ্রহের তুলনায় মধ্যযুগীয় সাহিত্যের বিশ্লেষণমূলক আলোচনা বেশি করেছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে উনিশ শতকে বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে স্মরণ করা যায়, জগবন্ধু ভদ্রের মহাজন পদাবলী (১৮৭৪ সাল, বিষয় বিদ্যাপতির পদাবলি)-র কথা। এছাড়া অন্যান্য বৈষ্ণব পদকর্তাদের নিয়ে জগবন্ধু ভদ্র মহাজন পদাবলী-র দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ করেন ১৮৭৫ সালে। এরপর ১৮৭৮ সালে অক্ষয়চন্দ্র সরকারের সম্পাদিত প্রাচীন কাব্যসংগ্রহ প্রথম খণ্ড (চণ্ডীদাসের পদ) ও দ্বিতীয় খণ্ড (বিদ্যাপতির পদ), সারদাচরণ মিত্রের বিদ্যাপতির পদাবলী (১৮৭৮ সাল), রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের বিদ্যাপতি প্রবন্ধ, গঙ্গাচরণ সরকারের বঙ্গসাহিত্য ও বঙ্গভাষা (১৮৮০সাল), কৈলাসচন্দ্র ঘোষের বাঙ্গালা সাহিত্য পুস্তিকা (১৮৮৪ সাল) এবং সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাচীন পদাবলী (১৮৮৫) প্রকাশিত হয়।⁹ মধুসূদন ব্রজাঙ্গনা কাব্যে বৈষ্ণব পদাবলির ব্যবহার করেছেন। রবীন্দ্রনাথ বৈষ্ণব পদাবলি ও বৈষ্ণব সাহিত্যকে কেন্দ্র করে একাধিক সৃজনশীল সাহিত্য রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের রচিত সাহিত্যগুলি হল—রবীন্দ্রনাথ ও শ্রীশচন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত পদরত্নাবলী (১২৯২ বঃ), বিদ্যাপতি নিবন্ধ (শ্রাবণ ১২৮৮ বঃ, ভারতী), প্রাচীন কাব্য সংগ্রহ/ উত্তর প্রত্যুত্তর (ভাদ্র ১২৮৮ বঃ ভারতী), বিদ্যাপতির পরিশিষ্ট (কার্তিক ১২৮৮ বঃ ভারতী), চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি (জৈষ্ঠ্য ১২৯০ বঃ ভারতী) ও বৈষ্ণব কবির গান (১২৯১ বঃ নবজীবন) ইত্যাদি। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ বৈষ্ণব পদাবলির ভাব ও ভাষা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ ও গবেষণা করেছেন।¹⁰ শুধু দেশীয় পণ্ডিতরাই নয় বিদেশি পণ্ডিতগণও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ দেখালেন। স্যার জন বীমস Indian Antiquary পত্রিকায় The Early Vaisnava Poets Of Bengal (১৮৭৩) নামে বিখ্যত প্রবন্ধটি লেখেন।
গ) পত্র-পত্রিকায় বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চা
উনিশ শতকে বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চার একটি বড়ো ক্ষেত্র হল সমসাময়িক পত্র-পত্রিকা। এ বিষয়ে উল্লেখ করা যেতে পারে সংবাদ প্রভাকর (১৮৩৬), বিবিধার্থ সংগ্রহ (১৮৫৫), বঙ্গদর্শন (১৮৭২) ইত্যাদি পত্রিকার কথা। ঈশ্বরগুপ্তই প্রথম সংবাদ প্রভাকর-এ প্রাচীন কবিদের সাহিত্য ও জীবন ইতিহাস প্রকাশ করলেন। রাজেন্দ্রলাল মিত্র বিবিধার্থ সংগ্রহ (১৮৫৫-১৮৭২)-এর পাতায় মধ্যযুগের সাহিত্যচর্চার ধারাটি বজায় রেখেছিলেন। তিনি বঙ্গভাষার উৎপত্তি (১৮৫৮-৬০) প্রবন্ধে বৈষ্ণব মহাজনদের সন্ধান দিয়েছেন।¹¹ বঙ্গদর্শন পত্রিকায় বঙ্কিমচন্দ্র, রামদাস সেন (গৌড়ীয় বৈষ্ণবাচার্যবৃন্দের গ্রন্থাবলীর বিবরণ প্রবন্ধটি লিখেছেন কার্তিক ১২৮০ বঙ্গাব্দে), রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় (বিদ্যাপতির বাঙালিত্ব নিয়ে চিরাচরিত ধারণার পরিবর্তন করেছেন), শ্রীকৃষ্ণদাস প্রমুখরা মধ্যযুগের কবিদের নিয়ে অলোচনা করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র বৈষ্ণব সাহিত্য নিয়ে বঙ্গদর্শন-এ একাধিক প্রবন্ধ লিখেছেন। যথা—বঙ্কিমচন্দ্র দীনেশচরণ বসুর মানস বিকাশ প্রবন্ধের সমালোচনায় বিদ্যাপতি ও জয়দেব (পৌষ ১২৮০ বঃ) প্রবন্ধ, বলরাম দাস (চৈত্র ১২৮০ বঃ), জ্ঞানদাসের পদানুসরণ (চৈত্র ১২৮০ বঃ), জ্ঞানদাস (মাঘ ১২৮০ বঃ), বিদ্যাপতি (জৈষ্ঠ্য ১২৮২ বঃ), কৃষ্ণচরিত্র (চৈত্র ১২৮১ বঃ), চৈতন্য (আশ্বিন-ফাল্গুন ১২৮২ বঃ) ইত্যাদি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন।¹² এছাড়া বিষ্ণুপ্রিয়া পত্রিকায় শিশিরকুমার ঘোঘ ১৮৯৩ সালে গোবিন্দদাসের কড়চা সম্বন্ধে নানা তথ্য দেন। এই বিষয় নিয়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী Calcata Review পত্রিকায় The Diary Of Govindadasa প্রবন্ধটি লেখেন।
ঘ) মৌলিক বৈষ্ণব সাহিত্য রচনা
উনিশ শতকের প্রথমার্ধে কিছু মৌলিক সাহিত্য রচিত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বৈষ্ণব সাহিত্য ছাড়াও বিভিন্ন দেবী মাহাত্ম্যমূলক (দুর্গা, চণ্ডী, কালিকা, যোগ্যদা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, মনসা, গৌরী প্রভৃতি) গান ও পাচালি রচিত হয়েছে। সেগুলি যথাক্রমে—পৃথ্বীচন্দ্রের গৌরীমঙ্গল (১৮০৬); কৃষ্ণকিশোর রায়ের দুর্গালীলাতরঙ্গিনী (১৮১৫-১৬); দ্বিজরামচন্দ্রের দুর্গামঙ্গল বা গৌরীবিলাস (১৮১৯-২০) ও হরপার্বতী মঙ্গল (১৮২০); রঘুবংশের গৌরীবিদায় (১৮২২); দীনদয়াল গুপ্তের দুর্গাভক্তি চিন্তামণি (১৮৩২); রাধাচরণ রক্ষিতের চণ্ডিকামঙ্গল (১৮৪৬); জয়রাম বিশীর দেবীযুদ্ধম্ (১৮৫২) ও পদ্মমঞ্জরী (১৮৫২); রাজীবলোচন শর্মার শিবদুর্গারবিবাহ (১৮৫২); দ্বিজ শম্ভুরামের জীমূতমঙ্গল কাব্য, মধুসূদন দাস সরকারের জিতাষ্টমী ব্রতকথা ইত্যাদি।¹³ এইসময় কৃষ্ণদাস গৌরাঙ্গলীলামৃত কাব্য নামে একটি চৈতন্য জীবনী বিষয়ক কাব্য লেখেন। এছাড়া এইসময়ে অনেক কৃষ্ণলীলা বিষয়ক কাব্যও রচিত হয়েছিল। সেখানে কৃষ্ণ কখনও নারায়ণ, কখনও জগন্নাথ, কখনও বিষ্ণু, আবার কখনও হরিহর বা সূর্যের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। সেই সব কাব্যগুলির মধ্যে আমরা উল্লেখ করতে পারি—রামচন্দ্র মুখুটির শ্রীকৃষ্ণলীলামৃত কাব্য বা অক্রূর সম্বাদ (১৮৪৯-৫০); বিশ্বনাথ তর্কালঙ্কারের কৃষ্ণকেলীকল্পলতা (১৮৫০); রাধামাধব ঘোষের বৃন্দাবনলীলা, মথুরালীলা, দ্বারকালীলা এবং চৈতন্যলীলা (এই কাব্যগুলি ১৮৪০-৫০ সালের মধ্যে রচিত); জয়নারায়ণ দাসের শ্রীশ্রীকরুণানিধান লীলাগান (১৮৫২); শিশু রামদাসের প্রভাসখণ্ড (১৮৬৮); বনোয়ারীলাল রায়ের কোকিলগীত (১৮৪২); জয়নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারকাবিলাস (১৮৫০); দ্বারকানাথ রায়ের রাসরসামৃত (১৮৫৩); নারায়ণ চট্টরাজের রাসবিলাসক্ষ (১৮৫৫); ঈশ্বরচন্দ্র দাসের বৃন্দাবিলাস (১৮৫৮); পীতাম্বর সেনের ঊষাহরণ ও প্রহ্লাদচরিত্র (১৮৪৩); কুঞ্জবিহারী দের হরিরূপীর উপাখ্যান (১৮৫৭); দ্বিজ জগন্নাথের জগন্নাথ বন্দনা এবং ব্রজমোহন রায়ের গৌরাঙ্গচরিত্র-এর কথা।¹⁴ এই কাব্যগুলি মধ্যযুগের কাব্যধারার রীতি থেকে কিছুটা ভিন্ন হয়েছে। সাহিত্যগুলিতে কাব্যের গীতিধর্মীতার বদলে আখ্যনের দীর্ঘতা অনেক বেশি। আবার উনিশ শতকে ধর্মীয় সাহিত্য তার সর্বজনীনতাবাদ থেকে বেরিয়ে এসে ব্যক্তিচিত্ত আশ্রয়ী হয়ে উঠেছিল।¹⁵
প্রাগাধুনিককালে সংঘটিত বৈষ্ণব আন্দোলনের সুযোগ্য নেতা হিসাবে চৈতন্যজীবন ও তৎপ্রভাবিত সাহিত্যের মূল্যায়ন করা হয়েছে এই সমস্ত সাহিত্যে। উনিশ শতকে বিশ্লেষণমূলক বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চায় কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। একদিকে চৈতন্য ভক্তের ভগবান, অন্যত্র রাধাকৃষ্ণলীলা বিষয়ক পদাবলির গীতিময়তা আর ‘কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং’-এর লীলার প্রকাশ ঘটেছে আধুনিক সাহিত্যে। অন্যদিকে ষোড়শ শতকে মানব সাম্যের লক্ষ্যে সংঘটিত বাংলাদেশের প্রথম গণতান্ত্রিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে শ্রীচৈতন্য ও সমকালীন সময়-স্বভাবের মূল্যায়নও ঘটেছে অনেক সাহিত্যে। হরিদাস দাস, গৌরগুণানন্দ ঠাকুর প্রমুখের সাহিত্যে ভক্তসুলভ ছাপ পাওয়া যায়। বঙ্কিমচন্দ্র, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্যদের রচনায় ঐতিহাসিক, সামাজিক ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ আছে। বলা বাহুল্য উনিশ শতকের নবজাগরণের আলো সমাজের সর্বত্র লাগেনি। তাই গ্রামবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে মধ্যযুগের কথকথার আসর প্রাণবন্ত হয়েছিল। এই কথকতা সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। এপ্রসঙ্গে অধ্যাপক অপর্ণা রায় লিখেছেন—“বৈষ্ণব পদাবলী ও শাক্ত পদাবলীর গীতি আবেদন উনিশের প্রথমার্ধে কবিগানের কৃষ্ণ-রাধা প্রেমকথা, শিব-পার্বতীর জীবনকথার খণ্ডচিত্রে ধরা দিয়েছিল।”¹⁶ অতএব বলা যেতে পারে, উনিশ শতকে বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চার পরিসর বিস্তৃতি লাভ করেছে।
তথ্যসূত্র:–১. ভারতীয় ধর্মের ইতিহাস, নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, জেনারেল, কলকাতা, ২০১৪, পৃষ্ঠা -১৭৪-১৭৫।
২. A Descriptive Catalogue Of The Vernacular Manuscripts In The Collections Of The Royal Asiatic Society Of Bengal; Haraprasad Shastri; The Asiatic Society, Kolkata 1; 1893.
৩. বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর ইতিহাস (প্রথম পর্ব); মদনমোহন কুমার; বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ মন্দির; কলকাতা; পৃষ্ঠা–৫।
৪. সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা প্রথম ভাগ (ত্রৈমাসিক); সম্পাদক – নগেন্দ্রনাথ বসু; ১৩০১ বঙ্গাব্দ; প্রবন্ধ–প্রাচীন সাহিত্য সমালোচনা; প্রাবন্ধিক–হীরেন্দ্রনাথ দত্ত; বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ মন্দির; কলকাতা; পৃষ্ঠা–১৪৪।
৫. সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা তৃতীয়-চতুর্থ-পঞ্চম-ষষ্ঠ-সপ্তম ভাগ (ত্রৈমাসিক); সম্পাদক–নগেন্দ্রনাথ বসু; ১৩০৩, ১৩০৪, ১৩০৫, ১৩০৬ ও ১৩০৭ বঙ্গাব্দ; বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ মন্দির; কলকাতা।
৬. আনন্দবাজার পত্রিকা (দৈনিক); সম্পাদক–অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়; প্রবন্ধ–কাহিনির টানেই জনপ্রিয়তা বেড়েছে মনোহরশাহী ঘরানার; প্রাবন্ধিক–দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়; কলকাতা–১; ১৫ জুন, ২০১৬ সাল; পৃষ্ঠা–১৩।
৭. বাংলার কীর্তন গান; মৃগাঙ্কশেখর চক্রবর্তী; সাহিত্যলোক, কলকাতা–৬; দ্বিতীয় সংস্করণ, মার্চ, ১৯৯৮; পৃষ্ঠা–১১।
৮. বাঙ্গলা কীর্তনের ইতিহাস; হিতেশরঞ্জন সান্যাল; কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানী, কলকাতা–১২; দ্বিতীয় মুদ্রণ, ২০১২; পৃষ্ঠা–১৬৬।
৯. আঠেরো নিয়ে উনিশে; অপর্ণা রায়; ভারবি, কলকাতা ৭৩; এপ্রিল ২০০৩; পৃষ্ঠা–৭৩-১০৫ [অতঃপর বইটি আঠেরো নিয়ে উনিশে নামে উল্লেখিত হবে]।
১০. পাঠক রবীন্দ্রনাথ; বিশ্বনাথ রায়; সুজন প্রকাশনী, কলকাতা; ২০১১; পৃষ্ঠা–৩১-১৩২।
১১. বিবিধার্থ সংগ্রহ (প্রথম-চতুর্থ ভাগ); রাজেন্দ্রলাল মিত্র; কলকাতা; ১৮৫৫-১৮৬০ সাল।
১২. বঙ্গদর্শন মাসিক পত্র ও সমালোচন প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয়-চতুর্থ ভাগ; বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায়; কাঁঠালপাড়া, উত্তর-চব্বিশ পরগণা, ১৮৭২-৭৪ সাল।
১৩. উনবিংশ শতাব্দীর পাঁচালীকার ও বাংলাসাহিত্য; নিরঞ্জন চক্রবর্তী; মহাজাতি প্রকাশক, কলকাতা ১২; ১৩৭১ বঙ্গাব্দ; পৃষ্ঠা–২৬০-৩৪৫।
১৪. তদেব।
১৫. আঠেরো নিয়ে উনিশে; পৃষ্ঠা–৭৩।
১৬. তদেব; পৃষ্ঠা–৭৫।