ধর্মীয় বিদ্বেষের বাতাবরণে তালাক আন্দোলন – আফরোজা খাতুন
তালাক নিয়ে শুনানি শেষ হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে মে ২০১৭ তে। রায় ঘোষণা জুলাই মাসে হওয়ার কথা ছিল। জুলাই পেরিয়ে গেল, তালাকের রায় এখনও ঘোষণা হয়নি। পক্ষ এবং বিপক্ষের মানুষ অপেক্ষায় রয়েছেন। উত্তাপের পারদ কিছুটা স্তিমিত দেখালেও, আন্দোলন কিন্তু চলছে। বেশ কিছু সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে মৌখিক তালাকের বিরুদ্ধে। খবরে পাওয়া এবং খবরের আড়ালে থাকা তালাকের ঘটনা এই আন্দোলন গড়ে ওঠার প্রেক্ষিত। কখনও পণের দাবিতে, কখনও পুত্র সন্তান জন্ম দিতে না পারলে অথবা সন্তান না হলে কিংবা আবার বিয়ের প্রলোভনে কিছু পুরুষ তালাকের সরলীকরণের সুযোগ নিয়ে চলেছে। তালাক দেওয়া স্ত্রীকে আবার বিয়ে করতে চাইলে এক ঘৃণ্য প্রথার মধ্য দিয়ে আসতে হয় মেয়েটিকে। এমন প্রথার আর্থিক লাভের সুবিধাও কোন পুরুষের কৌশলী তালিকায় চলে আসে। অতি সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের হরিহর পাড়ার এক মহিলা সেই কৌশলের শিকার। স্বামী তালাক দেওয়ার কিছুদিন পর স্ত্রীকে আবার বিয়ে করতে চাইলেন। কিন্তু সরাসরি বিয়ে করার অনুমতি ধর্মীয় আইনে নেই। আর এদেশের মুসলিমরা এখনও মুসলিম ব্যক্তিগত আইনেই চলে (এই নিয়ম প্রতিবেশী বাংলাদেশ,পাকিস্তানে আর নেই। সংস্কারকৃত আইনে তালাকপ্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রী সেখানে সরাসরি বিয়ে করতে পারে), তাই সেই আইন মেনে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে অন্য পুরুষ বিয়ে করে আবার তালাক দেবে। তবেই পূর্ব স্বামীকে বিয়ে করার অনুমতি মিলবে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর। মুর্শিদাবাদের সেই তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর পাত্র ঠিক করেছিলেন তাঁর পূর্বতম স্বামী। বিয়ের পর সারারাত মহিলাকে ধর্ষণ করে এক রাতের স্বামী। মহিলার বাধা পেয়ে জানিয়ে দেন, তাঁর স্বামী এই এক রাত্রের জন্য তার কাছে টাকা নিয়েছে। সকালে তাঁকে তালাক দেন। তিন মাস অপেক্ষার পর পূর্ব স্বামীকে বিয়ে করার কথা। কিন্তু প্রাক্তন স্বামী মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে তাঁর দেহ খাটিয়ে টাকা রোজগার করেছেন। তাঁকে আর বিয়ে করেননি। বিয়ে করেছেন অন্য মহিলাকে। বিচ্ছেদের সহজ পদ্ধতির ইচ্ছেখুশী ব্যবহারে পারদর্শী পুরুষরা কতরকমভাবে মেয়েদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছেন। তালাক দেওয়ার বাহারও রকমারি। মদ খেয়ে তালাক, ফোনে তালাক, চিঠিতে তালাক, এস এম এসে তালাক, ইমেইলে তালাক, ম্যাসেঞ্জারে তালাক, হোয়াটসআপে তালাক। মধ্যযুগের আইনের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনের এ এক সফল রসায়ন। স্বামী মদ খেয়ে স্ত্রীকে ফোনে তালাক দেন কিন্তু নেট ওয়ার্ক সমস্যায় স্ত্রী তালাক শুনতে পাননি। স্বামী এই তালাক দেওয়ার খবর জানিয়ে দেন। এই তালাকের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে দেওবন্দ তার বিধান দেয়। দাম্পত্য সম্পর্ক হল সিসা, তালাক হল পাথর। পাথর ছুঁড়লে সিসা ভাঙবেই। ফলে তালাক হয়ে গিয়েছে। এত রকম তালাকের প্রয়োগ আর ফতোয়ায় দিশেহারা ভারতীয় মুসলিম মেয়েরা অবশেষে তালাকের (বিবাহ-বিচ্ছেদের) লিপিবদ্ধ আইনের দাবিতে সংঘবদ্ধ হয়েছেন। শাহবানু, ইমরানা,গুড়িয়া খবরের শিরোনাম হয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিবেকের কাছে। সায়রা বানু, আফরিন রেহমান, গুলশান পারভিন, ইশরত জাহান, আতিয়া সাবরির কেস সুপ্রিম কোর্টে। রায়ের অপেক্ষায় আমরা।
লিপিবদ্ধ আইনের দাবিতে, কেন্দ্র সরকারকে পাঠানোর সুপারিশ জানিয়ে ২০১০ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং মাননীয় রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে সাউথ কলকাতা সোসাইটি ফর এমপাওয়ারমেন্ট অফ উইমেন এবং রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি। মুসলিম মেয়েদের জন্যে আইন তৈরির ব্যাপারটা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই সংগঠন দুটির ব্যানারে দাঁড়িয়ে সভা-সমিতিতে, সই সংগ্রহে ও জনমত গড়ে তুলতে ধর্ম পরিচয়ের বাইরে গিয়ে একসঙ্গে কাজ করছেন বাংলার যুক্তিবাদী মানুষ। আন্দোলনের ব্যয়ভার কোন স্বদেশী বা বিদেশী অর্থসাহায্যকারি সংস্থা বহন করে না। আন্দোলন চলে জনগণের অর্থসাহায্যে।
২৪ ডিসেম্বর ২০১৬, কলকাতার ভারতসভা হলে পশ্চিমবঙ্গের আট নটি জেলা থেকে তালাকপ্রাপ্ত মহিলারা এসে তাঁদের কথা শুনিয়ে গেলেন রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি ও সাউথ কলকাতা সোসাইটি ফর এমপাওয়ারমেন্ট অফ উইমেন-এর আয়োজনে। আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে (২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬) ভারতসভা হলের ভাষ্য ও সুশীল সমাজকে আহ্বান অতিব গুরুত্বে চিত্রায়িত—‘…একদা যে ভারতসভা সভাগৃহে ভারতের সমমর্যাদা ও সমানাধিকারের বীজতলা রোপণ করা হইয়াছিল, সেখানেই মুসলিম মহিলাদের একটি সংগঠন স্বাধীন ভারতে ন্যায় ও অধিকার দাবি করিলেন, ইহা লক্ষণীয় বটে। …প্রতিটি নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কাজ, সমাজেরও। ইসলাম ধর্মের অভিপ্রায় যত শুভ হোক, এ দেশে শরিয়তের প্রয়োগ যে রূপে হইতেছে তাহা অন্যায়। এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা সেই অন্যায়ের প্রতিকার করিবার কোনও উপায় খুঁজিয়া পাইতেছে না। একটি বিপন্ন, নির্যাতিত মেয়েকে নিরাপত্তা ও খোরপোশ দিবার ব্যাবস্থা করিতে দেশের উচ্চতম আদালত হইতে সংসদ, সকলেই এ পর্যন্ত ব্যর্থ হইয়াছে। ফলে শাহবানু, ইমরানা, সায়রা বানোর মতো মহিলাদের প্রতারণা আটকানো যায় নাই। তাহাদের অসহায়তার দৃষ্টান্তে নির্ভয় হইয়া গ্রামে গ্রামে শহরে শহরে নির্যাতন ও তালাকের আরও ঘটনা ঘটিতেছে।…গ্রাম হইতে শহরে আসিয়া যাহারা তাহার প্রতিবাদ করিতেছে, সেই দরিদ্র মুসলিম মেয়েরা তাই ব্যতিক্রমী। এখন প্রয়োজন নাগরিক সমাজের উদ্যোগ। রাজনীতি যে ঝুঁকি লইতে নারাজ, তাহা সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল নাগরিককে লইতে হইবে। নারী নির্যাতন, পণপ্রথা ও তালাক, এই তিনটি একই সূত্রে গ্রথিত। একটির প্রতিবাদ করিলে অপরটিতে নীরব থাকা চলিবে না। আর প্রতিবাদ করিতে ভুলিলে তাহা মানবধর্মে সহিবে কি?’
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সুবিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু তালাক, হিল্লা বিয়ে (স্বামী তালাক দেওয়ার পর আবার সেই স্ত্রীকে বিয়ে করতে চাইলে মাঝখানে অন্য পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর বিয়ে হওয়া অবধারিত) বহুবিবাহ ও উত্তরাধিকার সম্পত্তির বন্টনে মুসলিম মেয়েরা বিচার চাইতে গেলে, তাদের সম্প্রদায়ের গণ্ডিতে রেখে আইনের সহায়তা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করা হয়। কারণ এই আইন এখনও লিপিবদ্ধ হয়নি। অনেক তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে, অসত্য আশ্বাসে শুধুই কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালছেন। বাস্তব পরিস্থিতিই মুসলিম মেয়েদের সমানাধিকারের দাবিতে আন্দোলনের জন্ম দিল এবং এই দাবি উঠল সম্প্রদায়ের ভেতর থেকেই। সরকারের কাছে স্মারকলিপি পেশ, জনসভা, লেখালেখির প্রচারে যখন আন্দোলনের শক্তিশালী রূপ গড়ে উঠেছে তখন হঠাৎ জেগে উঠল দেশের মৌলবাদী গেরুয়া শক্তি। মুসলিম মেয়েদের সুরক্ষার বলয়ে মুড়তে তাঁরা অত্যধিক তৎপর। মৌখিক তালাক, হিল্লা বিয়ে, বহুবিবাহ বন্ধ করে মুসলিম মেয়েদের বাঁচাতে হবে। এবং এই মেয়েদের বাঁচানোর জন্যই যেন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা আশু কর্তব্য বলে মনে করছে। প্রবীণ আইনজীবী রাম জেঠমলানী, আর এস এসের শাখা সংগঠন ফ্যানস-এর (ফোরাম ফর অ্যাওয়ারনেস অব ন্যাশনাল সিকিউরিটি) হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করার সময়, তালাক বন্ধের জন্য এখনই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার কথা বলেন। তাঁদের তৎপরতা থেকে বেরিয়ে পড়ছে বিদ্বেষ-বিভাজন-সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন।
তাৎক্ষণিক তালাক বন্ধের পক্ষে ঝুঁকেছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। মুসলিম মেয়েদের বাঁচানোর জন্য আর এস এস, বিজেপির কুম্ভীরাশ্রু দেখে আজ তাঁরাও দ্বিধা বিভক্ত। গরুর মাংস সন্দেহে একের পর এক মুসলিম পুরুষদের পিটিয়ে মারছে গেরুয়া বাহিনী আর সেই দলের সরকার কিনা বাঁচাবে মেয়েদের? বিশ্বাসের প্রশ্ন, গ্রহণের প্রশ্ন এখানেই। তালাক ইস্যুতে বিভাজন করাই কেন্দ্রীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য। নিজেদের প্রশাসনিক দুর্বলতা, ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য বিভিন্ন বিষয়কে ইস্যু করে দাঙ্গা আর বিভাজনের খেলায় মত্ত তারা।
মুসলিম মেয়েদের সমানাধিকারের দাবিতে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে স্মারকলিপি জমা পড়ছে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে। সুপ্রিম কোর্টে আইনের লড়াইও কম হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রের বর্তমান শাসকদল বিজেপি ও সংঘ পরিবারের তালাক নিয়ে কৌশলী আগ্রাসন আন্দোলনের ধারকে লঘু করে ফেলছে। মুসলিমদের মুখে মৌখিক তালাক বন্ধের দাবি উঠলেই তাঁরা তুষ্ট হয়ে যেন জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তোমরা আমাদেরই লোক। তিন তালাককে অস্ত্র করে মুসলিম ভোট তোলার নিরলস চেষ্টার অগ্রসরও ধরা পড়ছে। প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংখ্যালঘুদের ভয় কাটাতে একটা কমিটিও গড়ছেন যেখানে মুসলিম প্রতিনিধি থাকবেন। মুসলিম মেয়েদের মৌলিক অধিকার আদায়ের লড়াই এখন রাজনৈতিক তরজার বিষয়। এটাকে কাজে লাগিয়ে আখেরে কে কত লাভবান হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তো মুসলিম মেয়েদের সমানাধিকারের দাবিকে নস্যাৎ করে মুসলিম মৌলবাদকে সমর্থন জানিয়েছেন। যার যা ধর্ম তাই নাকি পালন করতে দিতে হবে। ধর্মের ব্যাপারে এত নিষ্ঠা থাকলে তো হিন্দু কোড বিলের বিপক্ষেও কথা বলা উচিত। হিন্দু ধর্মকে সংস্কার করেই কিন্তু হিন্দু কোড বিল তৈরি হয়েছে। ১৯৫৫ সালে হিন্দু কোড বিল পাস হওয়ার সময়ও রক্ষণশীল হিন্দুদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল।
অপরদিকে অল ইণ্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড, গোটা দেশের অভিভাবক সেজে ছড়ি ঘোরানোর মরীয়া প্রয়াস চালাচ্ছে। তিন তালাকের সমাধান খুঁজতে আদর্শ নিকাহনামাও তৈরি করেছে তারা। ধর্মবিশ্বাসী মুসলিমদের তিন তালাক থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিলেও, তিন তালাকের বৈধতা মেনে নিয়েছে। কিছু মানুষ তালাকের অপপ্রয়োগ করছে। তাই নাকি আইন জরুরি নয়। সেই মানুষদের বোঝানোটাই জরুরি। কিন্তু বোঝানোর পরেও যদি সেই মানুষরা না শোনেন? আত্মস্বার্থচরিতার্থ করার প্রয়োজনে যদি তালাক দিয়ে স্ত্রীকে বের করে দেন? সেই মুসলিম পুরুষকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা কি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অল ইণ্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের হাতে রয়েছে? একটা এন জি ও-র কথা নাগরিকরা শুনতে বাধ্য নয়। সে দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বেশিরভাগ মানুষই আইন্ মেনে চলেন। সে ধর্মের বা রাষ্ট্রের। তবে না মানা লোকের সংখ্যা কম হলেও, স্বস্তির পরিবেশে বিঘ্ন ঘটে। তাঁদের দমনের জন্যই আইনের প্রয়োজন হয়। দেশের সবাই চোর নয়, দুষ্কৃতি নয়। তবু আইন আছে এই ধরণের অপরাধের জন্য। যিনি স্বার্থের কারণে তালাক দিচ্ছেন, তিনি অপরাধী। তাঁকে দমনের আইন থাকবে না কেন? যদিও আইন থাকলেই সব অপরাধ বন্ধ হয়ে যাবে এমনটাও নয়। তবু এটা তো ঠিক, প্রশাসনের কাছে আবেদন করা যাবে, চাপ সৃষ্টি করা যাবে। পার্সোনাল ল বোর্ডের তরফে কপিল সিব্বল সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন, তিন তালাকের সঙ্গে ধর্ম পালনের প্রশ্ন জড়িত। মুসলিম ধর্ম কি শুধু তালাক, বহুবিবাহের আধারেই আশ্রিত? দেশে বহু মুসলিম এখন চাকরি করেন। পি এফ এ টাকা রাখেন। শুদসমেত ফেরত নেন। ব্যাংকেও তাই। বাড়ি তৈরির সময় লোন করেন। সুদসমেত ফেরত দেন। অথচ ইসলাম ধর্মে সুদ নেওয়া এবং দেওয়া দুটোই হারাম (নিষিদ্ধ)। জীবন জীবিকার প্রশ্নে এরকম বহু নজির টানা যায় যেখানে মুসলিমরা শরিয়তের বাইরে বেরিয়েছেন। কেবল মহিলাদের অধিকারের প্রশ্নেই ধর্ম রক্ষার তাগিদটা বড্ড বেশি।
দেশের উচ্চ আদালতের কাছে মুসলিম মহিলাদের ন্যায্য অধিকারের আবেদন আর সংগঠনগুলির সমানাধিকারের দাবির আন্দোলনকে আড়াল করে এখন বিজেপি, সংঘ পরিবার বনাম ভারতীয় মুসলিম ল বোর্ড তালাক সমস্যা নিয়ে প্রবল ধর্মীয় মেরুকরণ বাড়িয়ে তুলেছে। দুই মৌলবাদি শক্তির আগ্রাসী রূপে অস্থির হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি। তাৎক্ষণিক তালাক ও বহুবিবাহের বিরুদ্ধে গিয়ে রাষ্ট্রপ্রণীত আইনের দাবি ছিল অনেকেরই। তাঁদের কণ্ঠেও কিছুটা দ্বিধা চলে আসছে আর এস এস, বিজেপির চতুর অগ্রসরে। দুই মৌলবাদি শক্তির বিরুদ্ধে গিয়েই আন্দোলনের ভিত আরও মজবুত করতে হচ্ছে। কোন ধর্ম মহিলাদের সমান অধিকার দেয়নি। নারীর অধিকার- আইন হয় আন্দোলনের চাপেই। ভোট-বাজার ধরার কৌশলে নয়। ফলে মুসলিম নারীর অধিকারের আন্দোলন কোন বিচ্ছিন্ন আন্দোলন নয়। মুসলিম পিতৃতান্ত্রিক আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে রাষ্ট্রপ্রণীত আইনের দাবিতে তাঁরা সংগঠিত হয়েছেন। বিজেপি, সংঘপরিবার বা ল বোর্ডের মতো ধর্মীয় পিতৃতান্ত্রিকতার কবল থেকেই তো মুক্তি চাই। তাহলে এঁদের ছত্রছায়ার আগ্রাসনে কেন গ্রাস করতে দেব আন্দোলনকে? পথ চলি সজাগ হয়ে, সেই শপথের সময় এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়, আইনসভা প্রণীত আইনের অপেক্ষায় অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা। বিপরীত ভাষ্যে তৈরি হবে বৃহত্তর আন্দোলনের গতিমুখ।