শনিবার আসে – বনমালী মাল

শনিবার আসে – বনমালী মাল

এখন একটু বেলা করেই ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। কিংবা শীত যেকোনো কালেই। সকাল কিছুটা গড়িয়ে গেলে ধীরে ধীরে দুয়ারে এসে বসেন। কোনো তাড়া নেই। নিশ্চিন্ত মানুষের মতন মুখ। জমাট ঘুমের ফোলা ফোলা চোখে আলো এসে পড়ে। বুকের মাঝখানে কাঁচা পাকা লোমের ভেতর আঙুল বোলাতে বোলাতে রয়ে-বসে হাই তোলেন। আড়মোড়া ভাঙেন। প্রতি সকালে উঠে অন্য মানুষের…

ডাহুকের আড়ালে –  বনমালী মাল

ডাহুকের আড়ালে – বনমালী মাল

                              হরির হাঁপানি আছে। মারণ হাঁপানি। রাত্রির মাঝ প্রহর পেরিয়ে যাওয়ার পর পরই হরি ঘরের পেছন দিকে একটা ত্রিপল ঘেরা বাঁশের পাটাতনের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পেচ্ছাব করে। প্রায় দিনই করে। পা গুণে গুণে বড়ো জোর দশ থেকে বারো পা। আবার বিছানায়…

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ১২)

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ১২)

দ্বাদশ পর্ব ৩৪. পরমা দীর্ঘাঙ্গী। রুগ্ন। এলোচুল প্রায়ই। রামচকের সংসার যে কয়টি সূত্র মেনে চলে, তার মধ্যে প্রধান বহমানতা। সূত্রের পর সূত্র ধরে অগোছালো এগিয়ে চলাই তাদের রীতি। কিংবা অরীতিও। তাদের কাছে প্রমাণ বলে কিছু নেই। সিদ্ধান্ত তাদের কোনোদিন ছুঁতে পারে না। মনকে প্রশ্রয় দিয়ে স্রোত আর স্রোত মেখে মেখে ভাসাই তাদের ইচ্ছা। মোহনা তাদের…

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ১১)

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ১১)

৩১. দূরান্ত থেকে একটা বাস এসে দাঁড়াল বাজারের মাঝে। কয়েকটা আদেশানুসারী পা ওঠানামা করে হিসেব চুকিয়ে দিল। দিন মাস তারিখের হিসেব কোনোদিন রাখে না পঞ্চু। কুশলের কথায় কয়েকদিনেই পুজো। পুজোর জন্য দেবীর প্রয়োজন। প্রায় লটকে পড়া কিংবা শুকিয়ে যাওয়া একটা লাউডগার মতন এখানকার মানুষগুলোকে ভাবতে শুরু করেছে পঞ্চু। এখানে আসা থেকেই সে নিজেকে নন্দবাবা কথিত…

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ১০)

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ১০)

দশম পর্ব ২৭. সন্ধ্যা হয় হয়। এই সময়ের একটা পরিচিত শব্দ থাকে যা অন্যমনস্ক লোককেও আকর্ষণ করে। বলাই একই সঙ্গে পরমার খোলা চুল-পিঠের ওপর একটা হাত রেখে নিজেকে সঁপে দিয়েছে ওই শব্দগুলোর ঘাটে। ক’দিনের ভারী বৃষ্টিতে রামচক ধোয়া মোছা পাথরের চকচকে বুক। কুঁরগি ফুলে উঠেছে কয়েকদিনেই। পরমা শিরশিরিয়ে ওঠে যতবার দেখার মতন করে সে কুঁরগিকে…

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ৯)

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ৯)

২৪. মোলায়েম কাদা নিয়ে পঞ্চু এক রাতে অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলেছে। ফেলে আসা প্রতি রাতের মতন এই রাতে রামচক একবারের জন্যও তার চোখে ভাসেনি। কেবল মন আর হাতের কোণে কোথাও যেন কুঁরগিতে ভাসতে থাকা রাজহাঁসের নরম পালকের ছোঁয়া লেগে ছিল। আকাশের সবথেকে উজ্জ্বল একটা তারার দিকে তাকিয়ে সে যেমন এক পলক থেকে আরেক পলক এতদিন…

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ৮)

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ৮)

অষ্টম পর্ব ২১. একদিন শহরের রাজপথে লাল নীল আলোগুলো জ্বলে উঠতেই হঠাৎ নিজেকে অবাক করে দিয়ে পঞ্চু মায়াময় হয়ে পড়ে। এমন সন্ধ্যাকে রামচকের ঝাউ আঁধারের সঙ্গে মেলানো যায় না। রামচকে সন্ধ্যা এলে জানান দেয় মিলিয়ে যাওয়া ঝাউ ছায়া, খোলা মাঠ কুঁরগির কালো জল আর রাজহাঁসের কালো পালক। এখানে সন্ধ্যা আসে প্রসাধনের হাত ধরে। যা কিছু…

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ৭)

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ৭)

সপ্তম পর্ব ১৮. আতর বাজার ছেড়ে আসার পর পঞ্চু ভাবনায় ভাবনায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সারা শরীরে একটা রি-রি ভাব তাকে ঝালাপালা করে তুলছে। কী কারণে এই অসহ্য বোধ, সে বুঝতে পারে না। কারণ খোঁজার চেষ্টা ক্রমে তার সমস্ত বোধকে ক্লান্ত করে দিয়েছে। কিছু মুখে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে। রাত এখন বেশ গভীর। রাস্তার পিঠে আঁশের…

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ৬)

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ৬)

১৫ আজ মালিনীর একলা সকাল। অভ্যাস-ভোরে ঘুম ভাঙলেও বিছানা ছাড়ে না সে। শরীর ভারী হয়ে আছে যেন। কাল দুপুরের পর থেকে মন এই আশায় ছিল যে, মানুষটা হয়ত কুঁরগির পাড় থেকেই ফিরবে। মানুষ যেমন ফেরে মানুষের টানে। কিংবা রাজহাঁস, কুঁরগির জল, মায়া ঠিকরে ঠিকরে তাকে ফেরত পাঠাবে রামচকে। ক্রমে সন্ধ্যা রাত্রি হয়, রাত্রি যখন নিদ্রা,…

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ৫)

ঘুণমাটি – বনমালী মাল (পর্ব ৫)

১৩. দুপুরের একটা নিজস্ব গুমোট থাকে। ভ্যাপসা গরমে মুখের ভাষা পড়ার জো নেই। তবে মালিনীর মুখ বৃষ্টি ঝরিয়েও যে পরিষ্কার হয়নি তা বেশ স্পষ্ট। পঞ্চু মালিনী মুখোমুখি হয়, পাশাপাশি হয়। তবুও কোনো কথা যেন পথ খুঁজে পায় না। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত মালিনী নিজে নিজে কথা বলে ক্লান্ত। কোনো সৎ উত্তর না পেলেও উত্তর পাওয়ার…