সুরের বাংলা, সুরেলা বাঙালি… – সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
দেখতে দেখতে ১১৬ বছর হয়ে গেল। আচ্ছা, কুমিল্লার মাঠে ঘাটে, পথের ধারে এখনও কি কেউ গেয়ে ওঠে ‘আকাশে ছিল না বলে হায় চাঁদেরই পালকি/ তুমি হেঁটে হেঁটে সন্ধ্যায়/ আসোনি কাল কি…..’?
বোম্বের জুহু বিচে আজও কি কেউ অস্তগামী সূর্যের দিকে চেয়ে উদার কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন ‘দুরিয়াঁ অব ক্যায়সি/ আরে শাম যা রহি হ্যায়/ হমকো ঢলতে ঢলতে সমঝা রহি হ্যায়….’?
হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এই ক্ষয়িষ্ণু যুগে শচীন দেব বর্মন আজও এক পলকা টাটকা বাতাস। জন্মের ১১৬ বছর ও মৃত্যুর ঠিক ৪৬ বছর পরেও।
মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি কলকাতায় আসেন এম এ পড়তে। মেধাবী ছাত্র শচীনদেব স্নাতক হন মাত্র ১৯ বছর বয়সে।
মণিপুরের রাজকন্যা নির্মলাদেবী তাঁর মাতা, যিনি শচীন দেবের দুই বছর বয়সে মারা যান। পিতা নবদ্বীপ চন্দ্র দেব বর্মন ত্রিপুরার রাজপুত্র। পিতামহ ছিলেন ত্রিপুরার মহারাজা ঈশানচন্দ্র মানিক্য দেববর্মন।
কিন্তু শচীনদেবের আগরতলার জাঁকজমক ভালো লাগত না। তাই কুমিল্লার নদী, মাঠ তাঁর প্রিয় ছিল। যার প্রভাব তাঁর সুরে লক্ষ করা যায়। এই কারণে স্বাধীনতার পরে তিনি ত্রিপুরার মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যান করেন।
১৯৩২ সালে ৭৮ আর পি এম রেকর্ডে গান প্রথম প্রকাশিত হয় (একপিঠে ‘এ পথে আজ আশা প্রিয়’, অন্য পিঠে ‘ডাকলে কোকিল রোজ বিহনে’)। ততদিনে তিনি রেডিও আর্টিস্ট। এরপর নাটকে সুর দেওয়া শুরু। ১৯৩৩ সালে প্রথম প্লেব্যাক (যদিও গান বাতিল)। ১৯৩৬ সাল থেকে ফিল্মে গান সুর করা শুরু। তারপর থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি সুর করেন ২০ খানা বাংলা ও ৮৯ খানা হিন্দি ফিল্মে। বেশি নয়? ঠিক ধরেছেন। তিনি মনে করতেন কুয়ো থেকে বেশি জল তুললে জল ফুরিয়ে যাবে তাড়াতাড়ি। তাই বেশি সুর করতেন না। তাঁর সুরে গেয়েছেন কিশোর কুমার, মহম্মদ রফি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, মুকেশ, তালাত মেহমুদ, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, গীতা দত্ত, সন্ধ্যা মুখপাধ্যায় প্রমুখ।
সুরকার হিসেবে বোম্বের হলেও গায়ক শচীনদেব কিন্তু একান্ত ভাবে বাংলার। তা সে যতই তিনি ‘সফল হোগী তেরি আরাধনা’ গেয়ে জাতীয় পুরস্কার পান। ‘মন দিল না বধূ’, ‘রঙ্গিলা রঙ্গিলা’, ‘নিশীথে যাইও ফুল বনে’, ‘বিরহ বড়ো ভালো লাগে’, ‘প্রেম যমুনায় হয়তো কেউ’, ‘নিটোল পায়ের’, ‘হায় কী যে করি মননিয়া’, ‘বর্ণে গন্ধে ছন্দে’, ‘আমি ছিনু একা’, ‘দূর কোনো পরবাসে’, ‘তুমি এসেছিলে পরশু’, ‘বাজে না বাঁশি গো’, ‘তোরা কে যাস রে’, ‘ঘুম ভুলেছি নিঝুম’ প্রভৃতি অজস্র বাংলা গানের গায়ক শচীন দেব বাংলার সেরা পাঁচ জন গায়কের একজন।
তাঁর স্ত্রী মীরা দেবী অজস্র গান লিখেছেন, উল্লেখ করা যাক তিনি বাংলা গানের অন্যতম সেরা গীতিকার হওয়ার যোগ্য।
২ বার ফিল্ম ফেয়ার পাওয়া ও ৫ বার নমিনেশন পাওয়া এই সুরকার ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের জয়লাভের কারণে ‘আমি টাকদুম টাকদুম বাজাই, বাজাই ভাঙা ঢোল’-কে বদলে আবার রেকর্ড করেন ‘আমি টাকদুম টাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’ কারণ ‘মা পুতের এই বাঁধন ছেঁড়ার সাধ্য কারোর নাই’।
মৃত্যু শয্যায় শুয়ে যখন একপ্রকার অসহায়, হাতের কাজ বন্ধ, তখন সুযোগ্য পুত্র রাহুল দেব ও গায়ক কিশোর কুমার দায়িত্ব নিয়ে তাঁর মতো করে শেষ করেন গানের রেকর্ডিং। মনে হয় মিলি ফিল্মের ‘বড়ি সুনি সুনি হ্যায়’ গানটি যেন শচীন কর্তাকেই বলছেন কিশোর।
ওই অবস্থাতেও তিনি শেষবার সাড়া দিয়েছিলেন ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের মোহনবাগানকে ৫ গোলের কথা শুনে।
১লা অক্টোবর ১৯০৬ সালে কুমিল্লায় জন্মেছিলেন আই পি টি এর সমর্থক, ক্ষুদ্র দেশীয় রাজ্যের রাজপুত্র, মহান সঙ্গীত জগতের রাজা শচীন দেব বর্মন।
কলকাতার ঢাকুরিয়া ব্রিজের পাশে তার বাসগৃহ দেখতে দেখতে যেন ভেসে আসে কিশোর কুমারের কণ্ঠ– ‘অব সাথ না গুজরেঙ্গে হম/ লেকিন য়হ ফিজা বাদি কি/ দোহরাতে রহেগী বরসো/ তেরে মেরে অফসানে কো/ জীবন কে সফর মে রাহী/ মিলতে হ্যায় বিছড় জানে কো/ অর দে জাতে হ্যায় য়াদে/ তনহাই মে তড়পানে কো…’
শচীন কর্তার এই আবির্ভাব দিবসের কিছুদিন আগেই প্রায় নিঃশব্দে কেটে গেল বাঙালির আরেক সাঙ্গীতিক আইকন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। অথচ আজও খুব হেমন্ত শুনতে ইচ্ছে হয়।
‘কোনোদিন বলাকারা এতো দূরে যেত কি’ কিংবা ‘অলির কথা শুনে বকুল হাসে’।
আজও মনে পড়ে – ‘বিষ্ণুপ্রিয়া গো আমি চলে যাই’ বা ‘সারাটি দিন ধরে/ চেয়ে আছিস ওরে/ তোর মনে কথা/ তবুও কেউ জানল না’।
আকাশে মেঘ করলেই মনে পড়ে ‘মেঘের স্বপন দেখি’ –
শুধু একজনের জন্য – হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
আজকের ভবানীপুরের যেখানে কাশাঁরীপাড়া, ওইখানে একটা লাইব্রেরি আছে। কোনো একদিন বিকেলে সেখান থেকে ফেরার সময় এক অল্পবয়সি লম্বা কিশোরকে তার বন্ধু বলেছিল, ‘তোর দ্বারা সাহিত্য হবে না, তুই গানটাই ভালো করে গা।’ এর প্রায় ৫০ বছর পরে সেই বন্ধু, তখন পক্ককেশ বৃদ্ধ ‘পদাতিক কবি’ সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন ‘ভাগ্যিস সেদিন লেখাটা ছেড়ে দিয়েছিল। না হলে আমাদের লেখা কেউ পড়ত না।’
মাঝে মাঝে ওখান দিয়ে হাঁটি। মনে হয় যেন বিষণ্ণ বিকেলে কোথা থেকে ভেসে আসছে ‘ঝরা পাতাদের মর্মর ধ্বনি মাঝে/ কান পেতে শোনো/ অশ্রুত সুরে/ মোর এই গান বাজে…’।
কখনও আবার বেশি রাতে আজও শুনি বিবিধ ভারতীতে, ‘তেরি দুনিয়া মে জিনেসে/ তো বেহতর হ্যায়/ কে মর যায়ে।’ আর সাথে যদি হয় ‘ছুপালো যুঁ দিল মে প্যার মেরা’, তাহলে তো আর কথাই নেই।
বাবাদের ছেলেবেলায় খুব প্রিয় ছিল ‘শূর্পনখার নাক কাটা যায়/ উই কাটে বই চমৎকার/ খদ্দেরকে জ্যান্ত ধরে/ গলা কাটে দোকানদার।’
মা এখনও শুনতে চায় ‘ঘুম যায় ওই চাঁদ মেঘ পরীদের সাথে’। জ্যাঠার ঘরে বসে কত দুপুর কেটেছে শুধু ‘বসে আছি পথ চেয়ে’ শুনে।
সেই কোন্ ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি ‘যদি জানতে চাও তুমি/ এ ব্যথা আমার কতটুকু/ তবে বন্দি করা/কোনো পাখির কাছেই জেনে নিও’।
তারপর ‘গাঁয়ের বধূ’, ‘রানার’, ‘ঠিকানা’, ‘পালকির গান’, ‘দূরন্ত ঘূর্ণি’ বা ‘ধিতাং ধিতাং বোলে’ তো আছেই।
২০০৯ সালে ইউনিভার্সিটিতে মুক্তমঞ্চে গেয়েছিলাম— ‘সজনী লো দেখে যা/ উথালি পাথালি হল মন।’
সারাদিন টিউশন ইত্যাদি সেরে প্রায় আধা নির্জন রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। চায়ের দোকানে ঝাঁপ পড়ার আগে শুনলাম রেডিওর বিবিধ ভারতীতে গান হচ্ছে, ‘কুছ দিল নে কহাঁ/ কুছ ভি নহিঁ/ এইসি ভি বাতেঁ হোতি হ্যায়/এইসি ভি বাতেঁ হোতি হ্যায়…’
যখন ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে একা একা বসে থাকতাম, চারপাশের সবুজ মনে করিয়ে দেয় ‘শূন্যে ডানা মেলে/পাখিরা উড়ে গেলে/ নিঝুম চরাচরে/ তোমায় খুঁজে মরি’।
খুঁজলেও পাওয়া যাবে না যাঁকে তিনি হেমন্ত। ঋতুটা আর ভালো করে চেনা যায় না – কিন্তু গলাটা আজও রয়ে গেছে। বসন্ত আসুক ছাই না আসুক। আমরা তো হেমন্তই হতে চাইতাম।
‘এ কূল ভেঙে ও কূল তুমি গড়ো…’
সত্যি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের একটি কূল ভেঙে ছিল। সেই তিরিশের দশকে ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘একটি দিন’ গল্পটি প্রকাশিত হলেও তিনি সাহিত্যিক হননি। সন্তোষকুমার ঘোষ বা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো বন্ধুরা সাহিত্যিক হলেও তিনি গায়ক হন। দুই বছর পরেই প্রকাশিত হয় প্রথম রেকর্ড ‘জানিতে যদি গো তুমি/ পাষাণে কী ব্যথা আছে’ আর ‘বলো গো বলো মোরে’।
সাহিত্যিক হিসেবে যে জীবনকথা তিনি তুলে ধরতেন গানেও একই রকম জীবন্ত হয়ে উঠত সেই আবেগ। প্রতিটি শব্দের প্রকৃত অর্থ ব্যঞ্জনাময় হয়ে উঠত তাঁর কণ্ঠে। সে ‘বর্গী রা সব হাঁকে’-ই হোক কিংবা ‘স্বপ্ন জাগানো রাত’-ই হোক।
যেমনভাবে উচ্চারিত হয়েছে ‘প্রাণহীন শহরের ইতিকথা’ তেমনই মূর্ত হয়েছে সামান্য কেরানির জীবনের বিবর্ণ যাপন। ‘ঘরেতে অভাব পৃথিবীটা তাই/ মনে হয় কালো ধোঁয়া’ গাইবার সময়ে অভাবের সংসারে যেভাবে দুনিয়ার কালো হয়ে যাওয়া ফুটে ওঠে, তেমনই ফুটে উঠেছিল গল্পে – অসুস্থ মেয়ের ওষুধ-পথ্য জোগাড় না করার সমস্যা।
কিন্তু মানুষ তবু স্বপ্ন দেখে। ‘অসীম আকাশ’-এর নীচে মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। কেরানির স্ত্রী আর তাঁকে জাগিয়ে তুলতে চায় না। মধুপুরে ঘুরতে যাওয়ার হিসেব নয়তো পরেই হবে। ‘ছোটো ছোটো মানুষের ছোটো ছোটো আশা/ কে রাখে খবর তার’।
এই জীবন দর্শনের টানই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে টেনে নিয়ে গিয়েছিল IPTA করতে। বাংলা কমিটির সঙ্গীত সম্পাদক ছিলেন তিনি। সেখানেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ সলিল চৌধুরীর। সলিল তখন ছাত্র ফেডারেশন ছেড়ে IPTA করছেন। প্রথম যৌথ কাজ ‘গাঁয়ের বধূ’। তখন সলিল আন্ডারগ্রাউন্ড। ফলে ১৯৪৮-এর রেকর্ডের সুর সলিলের হলেও সঙ্গীতায়োজন কিন্তু হেমন্তের। এরপর ১৯৬১ অবধি ১৪টা বেসিক গান। পরে ১৯৬৯-১৯৭০ নাগাদ আরও কিছু। এরপর প্রায় এক দশক বাদে ১৯৮২ অবধি আরও কয়েকটা। প্রসঙ্গক্রমে বলি, সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা ‘অনুভব’, ‘ঠিকানা’ বা ‘রানার’ ছাড়াও ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতি’ সুর করেছিলেন সলিল। গেয়েছিলেন হেমন্ত। সলিল চৌধুরী-হেমন্ত মুখোপাধ্যায় জুটির বাংলা বেসিকে মোট ২৬টি, বাংলা ফিল্মে ৭টি (৪টে ফিল্মে), হিন্দি ফিল্মে ১৪টি (একটি অপ্রকাশিত সহ, ৯টি ফিল্মে) গান আছে। এছাড়াও হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের সুরে সলিলের কথায় একটি বেসিক এবং অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে ও সলিলের কথায় একটি আকাশবাণীর গান (রম্যগীতি না এমাসের গান জানি না) আছে হেমন্তের।
কিছু গানের কথা চূড়ান্ত পলিটিক্যাল। যেমন অল্পশ্রুত গান ‘এ জীবন বেশ চলছে’। গানটি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রেকর্ড করেন ১৯৮০-৮১-৮২ নাগাদ। কিন্তু কম্পোজিশন সেই ষাটের দশকের। যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময় দক্ষিণ-২৪ পরগণায় একটি জনসভায় এই গান প্রথম গেয়েছিলেন সলিল নিজে। লুম্পেন শক্তির বিরুদ্ধে এই গানটির একটি অন্তরা বাদ দিয়ে প্রকাশ হয়।
অনেকে হয়তো অবাক হবেন রাহুল দেব বর্মনের সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মাত্র তিনটি গান ছিল। যার দুটি পাওয়া যায়। প্রথম টি পঞ্চমের অপ্রকাশিত ফিল্ম ‘রাজ’-এ হেমন্ত-গীতা ডুয়েট। ‘তুম মেরে জিন্দেগী মে’ যেটা পরে কিশোর কুমার-লতা মঙ্গেশকর রেকর্ড করেন। বাংলায় অমিত কুমার গেয়েছিলেন।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় পঞ্চমের সুরে আর দুটো গান গেয়েছেন। একটা হল ‘আজা মেরা প্যার আজা’। অন্যটা ঐতিহাসিক। ‘চোর হো তো এইসা’ ফিল্মের গান। সঙ্গে আবার কিশোর কুমার আশা ভোঁসলে। ‘মস্তি মে বৈঠ কে লাগাও’। কিশোর কুমারের সঙ্গে আর একটাই ডুয়েট ছিল। ‘দুস্তর পারাবার পেরিয়ে’।
তাঁর সুরে কিশোর কুমার গেয়েছেন ‘আমার পূজার ফুল’, ‘সে যেন আমার পাশে’, ‘সরস্বতীর সেবা করি অন্ন যে তাই জুটল না’ কিংবা ‘ওহ শাম কুছ আজিব থি’। তিনিও কিশোর কুমারের সুরে গেয়েছেন ‘রাহি তু রুক মত জানা’ কিংবা ‘চলতি চলি যা’।
সুধীন দাশগুপ্তই হোন বা শঙ্কর-জয়কিষণ, শচীন দেব বর্মনই হোন বা তিনি নিজে, ডুয়েটে সন্ধ্যা মুখার্জীর ‘তুমিই বলো’ হোক কিংবা লতা মঙ্গেশকরের ‘নয়ন তো নয়ন নাহি মিলাও’, তিনি খুব স্পষ্ট ভাবেই নিজের অস্তিত্ব রেখেছেন।
বাংলায় যেমন একদিকে উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তেমনই তাপস পাল-প্রসেনজিৎ অবধি চলেছে। হিন্দিতেও দেব আনন্দ, বিশ্বজিৎ, অভি ভট্টাচার্য, প্রাণ এমনকি শাম্মি কাপুরও ছিলেন।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম কেটে গেছে। তিনি নেই ৩২ বছর হল। একদিনও মনে হয়? জন্মদিনটা ১০১ বার এল। সেই ভবানীপুর, মিত্র স্কুল পেরিয়ে টালিগঞ্জ, HMV, কলম্বিয়া, IPTA, বোম্বে। শাপমোচন থেকে নাগিন। বিশ সাল বাদ থেকে পাকা দেখা। ‘আমি পথ ভোলা এক পথিক’ থেকে ‘হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা’। ‘পথে এবার নামো সাথী’ থেকে ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’।
‘একদিনেতে হইনি আমি তোমাদের এই হেমন্ত।’
এ ধরণী আবার শান্ত হবে। দুপুরের রোদের পরে ছায়া নেমে আসবে… সাদার্ন এ্যাভিনিউর রাস্তা ধরে সন্ধ্যা নামবে। লেকের জল নীল থেকে কালো হবে… আমরা আবার গাইব, ‘মৌমাছি ফিরে গেলে জানি তার গুঞ্জন থামবেই…’