গ্রেটেস্ট অব অল টাইম (গোট) – সৌরাংশু
উইল স্মিথ অভিনীত কিং রিচার্ড ছবিটিতে একটা ডায়লগ আছে। তখন ভিনাস এবং সেরেনা উইলিয়ামসকে রিক মেসির কোচিং ক্লিনিকে ভর্তি করতে রিচার্ড উইলিয়ামস তাঁর সমগ্র পরিবারকে নিয়ে পৌঁছে গেছেন ফ্লোরিডা। মেসিকে বুঝিয়েছেন এই দুই ছোট্ট টেনিস খেলোয়াড়ের ভিতরকার সম্ভাবনার কথা এবং জোর করছেন যে ফি না দিয়ে যেন পরবর্তীকালের এন্ডোর্সমেন্ট ডিল থেকে একটা পার্সেন্টেজ নেন মেসি। মেসি দোনামনা করে রাজি হলেন বটে, কিন্তু শুধুমাত্র ভিনাসকে নিতে। ছোটো সেরেনার ট্রেনিং-এর দায়িত্ব তুলে নিলেন সেরেনা আর ভিনাসের মা ওরাসিন প্রাইস এবং বাবা রিচার্ড। দিদিই যখন সব প্রশংসা পাচ্ছেন তখন নিভৃতে উইলিয়ামস দম্পতি সেরেনার পিছনে খেটে যাচ্ছেন। তাঁরা উইলিয়ামস বোনদের জুনিয়র সার্কিটে খেলাবেন না বলে ঠিক করেছেন, কারণ এক তো কৃষ্ণাঙ্গ হিসাবে বর্ণবিদ্বেষ। এছাড়াও, ট্রফি জেতায় সমস্ত সময় ব্যয় করলে ট্রেনিং কীভাবে হবে!
সেরেনা ভালো খেলছেন, কিন্তু কাউকে দেখাতে পারছেন না তখন। মনখারাপ। একদিন ছোট্ট সেরেনাকে রিচার্ড বললেন, ‘আমি সবার সামনে বললাম ভিনাস ভবিষ্যতে মহিলাদের টেনিসে ১ নম্বর হবে, কিন্তু যেটা বলিনি সেটা হল তুমি, সেরেনা উইলিয়ামস সর্বকালের সেরা মহিলা টেনিস খেলোয়াড় হবে’।
ভদ্রলোক ছিটিয়াল, দুর্মুখ ছিলেন, কিন্তু ভবিষ্যতদ্রষ্টা। আমরা তখন জানতাম মার্টিনা হিঙ্গিস, আনা কৌর্নিকোভা, ভিনাস উইলিয়ামস। ফস করে দেখি ইউএস ওপেন ফাইনাল খেলছেন ভিনাসের বোন সেরেনা। জিতেও গেলেন হিঙ্গিসকে হারিয়ে। সালটা ১৯৯৯। তদ্দিনে আন্দ্রে আগাসি, জেনিফার ক্যাপ্রিয়তির কোচ নিক বোলিটেয়ারি দায়িত্ব নিয়েছেন দুই বোনের।
ভিনাসের অবশ্য গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিততে জিততে পরের বছর। উইম্বলডন এবং ইউ এস ওপেন দুটিই জিতলেন ভিনাস। শুরু হল টেনিসের উইলিয়ামস যুগ।
কিন্তু দিনের শেষে দেখা যাচ্ছে ভিনাসকে অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়েছেন সেরেনা। ভিনাসের যেখানে পাঁচটি উইম্বলডন এবং দুটি ইউএস ওপেন, সেরেনার সেখানে সব মিলিয়ে ২৩। আর উনিশ বছর ধরে গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতেছেন, একুশ বছর ধরে গ্র্যান্ডস্ল্যাম ফাইনাল খেলেছেন। এমন হিসাব করে দেখা গেছে ২০১৭-র অস্ট্রেলিয়ান ওপেন যখন জিতছেন তখন তাঁর গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাস চলছে।
কিন্তু এত দীর্ঘদিন ধরে মহিলা টেনিসে রাজত্ব করা সম্ভব হলই বা কী করে? সেরেনার পেশিবহুল পাথরকোঁদা শরীরে শক্তি যেন আনাচে-কানাচে ভরপুর। কিন্তু সেরেনার খেলা কি শুধু শক্তি? খুব দ্রুত বিপক্ষের দুর্বলতা ধরে ফেলতেন, তারপর সেখানে আক্রমণ, নিরন্তর, রিলেন্টলেস।
পাওয়ার হিটিং-এর মজার কথা হল নিয়ন্ত্রণ হারানো খুব সহজ, যে বলটা ফিরে আসছে সেটার গতি বাউন্স বা স্পিনের উপর ভিত্তি করে র্যাকেট হেড সোজা রেখে স্যুইং নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সে তো ভিনাসও করেছেন, জাস্টিন এনাও, মারিয়া শারাপোভা, জেনিফার ক্যাপ্রিয়তি, অ্যাশলে বার্টি বা স্টেফি গ্রাফ, মনিকা সেলেসও। তাহলে সেরেনা আলাদা কোথায়? স্টেফির কথা আলাদা। সেটা একদিন না হয় আলাদা করেই কথা বলব। কিন্তু শক্তি আর নিয়ন্ত্রণ, মানসিক জোর ছাড়াও ম্যাচ রিডিং-এর এক অনন্য ক্ষমতা বাকিদের থেকে অনেকটা এগিয়ে রেখেছে সেরেনাকে। আর ছিল সার্ভিস। টেনিসে সার্ভিস করতে গেলে বলটা আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে নেমে আসার ঠিক আগে হাঁটু মুড়ে লাফ দিয়ে সাধ্যমতো সর্বোচ্চ অবস্থায় টেনিস র্যাকেট দিয়ে বলটাকে মারতে হয়। সেরেনার সার্ভিসের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৮২ শতাংশ সময়, শরীর ছুঁড়ে সর্বোচ্চ অবস্থায় বলটাকে র্যাকেটে নিয়ে মারছেন যখন তখন শরীরের অবস্থান এবং মসৃণ অ্যাকশনের কারণে সর্বোচ্চ গতি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে।
তবে শুধু তো পাওয়ার সার্ভ নয়, একই অ্যাকশনে একই জায়গায় বল র্যাকেটে মিট করিয়ে একাধারে পাওয়ার সার্ভ, টপস্পিন সার্ভ এবং স্লাইস সার্ভ করতে সক্ষম তিনি। ফলত প্রতিপক্ষ আগে থেকে অনুমান করতে পারছেন না। যদিও লিন্ডসে ড্যাভেনপোর্ট, মারিয়া শারাপোভা বা দিদি ভিনাসের থেকে দ্বিতীয় সার্ভের গতি কম, কিন্তু হাই কিকিং টপস্পিন সার্ভ, যা মুহূর্তে প্রতিপক্ষের কাঁধের উপরে উঠে যায় তাকে ঠিকঠাক সামলে রিটার্ন মারা চাট্টিখানি কথা নয়।
তার সঙ্গে রয়েছে সার্ভিস রিটার্ন, রিচার্ড এবং ওরাসিন খুব বড়ো মাপের টেনিস খেলোয়াড় না হলেও টেকনিকের দিক থেকে নিখুঁত শিক্ষা দিয়ে দুই বোনকে তৈরি করেছেন। ফলে, বেসিকটা বরাবরই ঠিকঠাক হয়েছে। ব্যাকহ্যান্ড রিটার্নের সময় র্যাকেট হেড সঠিকভাবে ৭৫ ডিগ্রিতে রেখে বাঁ-কাঁধ ঠেলে শক্তির প্রয়োগ আর ফোরহ্যান্ডের সময় ঠিক ডান কাঁধের নীচে বলটাকে হিট করার সময় ডান কোমরের সামান্য ঝটকা। এভাবেই সেরেনার রিটার্ন মেয়েদের টেনিসে এক ভয়ের বস্তু হয়ে উঠেছে।
চোট আঘাত, মাতৃত্ব, বৈষম্য সব মিলিয়ে কতকাল আগেই ছেড়ে দেওয়া যেত। শেষ গ্র্যান্ডস্ল্যামও জিতেছেন সেই ২০১৮-য়। তারপর দু-দুবার উইম্বল্ডন ও ইউএস ফাইনালে উঠেও হেরে যেতে হয়েছে। একবার তো বেশ বিতর্কিত পরিস্থিতিতে। ২০১৮-র ইউ এস ওপেন ফাইনালে নাওমি ওসাকার বিরুদ্ধে চেয়ার আম্পায়ারের বিরুদ্ধে সরাসরি বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ আনেন, ঝগড়া করে পেনাল্টি পয়েন্ট হারিয়ে গেম, সেট ও ম্যাচ হারান। তা এই চারটের মধ্যে একটা কি হত না? হলে হয়তো সর্বাধিক গ্র্যান্ডস্ল্যাম বিজয়িনীর তকমায় ‘ওপেন এরা’ কথাটা লিখতে হত না। মার্গারেট কোর্টের সঙ্গে একাসনে বসতেন।
কিন্তু ওই যে ফেডেরার বলেছেন না, পরিস্থিতি, যুগ, কতৃত্ব এবং সর্বোপরি টেনিস ধরলে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে একজনকেই সর্বকালের সেরা ‘গোট’ বলা যায়। সেরেনা উইলিয়ামস নিজের মাইলস্টোন নিজে লিখেছেন। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরেও রোবটের পৃথিবীতে মানুষ মনে রাখবে যে কাঁচাপাকা দাড়িওলা খামখেয়ালি অথচ স্পষ্টবক্তা ও ভবিষ্যতদ্রষ্টা যে কৃষ্ণকায় অ্যামেরিকীয় নিজের টেনিস খেলিয়ে ছোটো মেয়েটি সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণীটি করেছিলেন আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগে, তা সত্যি করতে সেই অতিমানবী কোনও কোর্টের ধুলো মাখতে বাকি রাখেননি। টেনিস ও সেরেনা সমার্থক, গ্রেটেস্ট অব অলটাইমও।
পুরনো কাগজের যে বস্তাটা পড়ে আছে কুলুঙ্গির উপরে, সেটা বার করে কাগজগুলো খুলে খুলে দেখি, খান কতক কবিতা, খান কতক প্রেমপত্র, কিছু ফর্দের হিসাব, কয়েকটা অকেজো আঁকিবুকি। যে মেয়েটিকে প্রথম প্রেমপত্র লিখেছিলাম, সে তার উত্তরে হৃদয় উপুড় করে দিল। হৃদয়, একটাই তো হৃদয়। কাকে কাকেই বা দিই।
আমাদের ছেলেবেলায় রজার ফেডেরার ছিল না। আমাদের ছেলেবেলায় জেভিয়ার পায়াস, গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, দিলীপ দোশি, শিবাজী ব্যানার্জী, জিকো, জনি ম্যাক, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, মহম্মদ শাহিদ, প্রকাশ পাড়ুকোনেরা ছিল। তারপর একে একে বরিস বেকার, আজহার, সুদীপ চ্যাটার্জি, রুদ গুলিট, রোমারিও, ওয়াল্ডনার, নিক ফাল্ডো, আয়ারটন সেনা, মাইকেল জর্ডন, শাহবাজ আহমেদ, ওয়াসিম আক্রমরা এল। বড়ো হতে হতে এসে গেল রোনাল্ডো নাজারিও।
হিসেব করে দেখছি, কারুর চলে যাওয়াটা এমন ভাবে হয়নি। হয় তিনি ধীরে ধীরে দিনান্তে মিশে গেছেন, অথবা তলিয়ে গেছেন অন্ধকারে। আজহার, আয়ারটন সেনা। কাঁদিয়েছিল এদের চলে যাওয়া। ধোনির চলে যাওয়াটা তো অমোঘই ছিল।
কিন্তু রজার? সেই গানটা মনে পড়ে গেল, ‘আজই গোধূলি লগনে…’
সূর্যের ডুবে যাওয়ায় রং ছড়ায় চরাচরে। নারঙ্গি, বেগুনি, অপার্থিব লালচে হলুদ অথবা ঘন নীল। সূর্যের ডুবে যাওয়াটাও ভবিতব্য, মৃত্যুর মতোই ভবিতব্য। তবু তো হৃদয় উদাস হয়, মনে পড়ে যায় সেই সুর্যোদয়ের রংটা। সামান্য পনিটেলে সাদা হেডব্যান্ড নিয়ে ছেলেটা মাস্টরের সাম্রাজ্যে হানা দিয়ে টেনিসের আধুনিকিকরণকে নির্ণিত করে দিয়ে গেল। উইম্বলডন জিততে অবশ্য আরও দু-বছর। তারপর আর থামানো যায়নি।
রাফার ক্লে ছিল, নোভাকের রিটার্ন। রজারের ছিল তুলি। যে তুলিতে পেশির ওজন চাপিয়ে আজকাল গোলা ছোঁড়া হয়, রজার তা দিয়ে ছবি আঁকত। তবে প্রয়োজনে গোলা কি ছোঁড়েনি? বিলক্ষণ ছুঁড়েছে। ২০০৯-এ রডিক ছুঁড়ল বাথটব, রজার ছুঁড়ল সুইমিং পুল, এই উইম্বল্ডনেই। তার পরের বছর আস্ত একটা মহাকাশযান ছুঁড়েও থামাতে পারেনি রাফার রকেট। তারপর ২০১৫-য় সব শেষ হয়ে যাবার পরেও ফিরে এসে ২০১৭-য় রাফার হৃদয়তন্ত্রে শব্দভেদী বাণ ছুঁড়ে রাঙিয়ে দিল ফ্লিন্ডার্স পার্কের নীল কোর্ট।
ওই এক-দুবছর। নিভে যাবার আগে যেমন রংমশাল তার হৃদয় খুঁড়ে সেরা রংটা দিয়ে যায়, রজারের টেনিসও ২০১৯-এর উইম্বলডন ফাইনাল দিল।
“সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে—সব নদী— ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।”
এবার সময় হল, অন্ধকারে মুখোমুখি বসিবার। টেনিসের রক্তমাখা সংগ্রামের কুরুক্ষেত্রে যে দুদণ্ড শান্তি আমরা গত দু’দশকে পেলাম, তার চিরমুক্তি হয়ে গেল।
কত কিছুই হয় তো বাকি থেকে যায়, রাফা, জোকার দুজনেই ডিঙিয়ে চলে গেল গ্র্যান্ড স্ল্যামের সংখ্যায়, সর্বকালের সেরা হবার দৌড়েও হয়তো। হয়তো একটা ফিরে আসা লেখা ছিল, জর্জরিত শরীর তা আর হতে দিল না। হয়তো আরও কিছু চাইবার থেকে গেল। হয়তো মানসিক কাঠিন্য দেখাতে পারলে ২০১২ থেকে ২০১৭-এর এক দীর্ঘস্থায়ী খরার সম্মুখীন হতে হত না, হয়তো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আনফোর্সড এরর করে নোভাককে ইউএস বা উইম্বল্ডন অথবা রাফার বিরুদ্ধে ফ্রেঞ্চে। কিন্তু এসব কারণেই তো রজার মানুষ, নশ্বর মানুষ। আমাদের মধ্যে থেকেই উঠে আসা এক অপার বিস্ময়, কিন্তু মানুষ। শিল্প তো মানবতার থেকে দূরে থাকতে পারে না, এখানেই হয়তো রজারের সম্পূর্ণতা।
আর এভাবেই হয়তো যাওয়া ভালো, সর্বকালের সেরারা ঘিরে রয়েছে, আলো করে রয়েছে ইতিহাসের প্রতিটি অক্ষরকণা, আর রজার ফেডেরারের মুক্তোর ফোঁটা ছড়িয়ে পড়ছে অপার্থিব অস্তিত্বে।
কাগজগুলোকে ঝেড়ে বেছে আবার নতুন করে গুছিয়ে রাখতে হবে। কে জানে, হৃদয়ের এত কাছাকাছি আর কোনও খেলোয়াড়কে রাখা যাবে কিনা। চুলে পাক ধরেছে, অস্থানে মেদ। অসময়ে ক্লান্তি নেমে আসে চোখে। তবু বন্ধ চোখে মনের ইউটিউবে বেছে বেছে মুহূর্তগুলিকে ধরে রাখি। দ্বিতীয় সার্ভিসে হঠাৎ সার্ভিস লাইনে উঠে এসে ড্রপ শট, র্যালি চলাকালীন অপার্থিব পেলবতায় নেট ছুঁইয়ে বলটিকে বশে রাখা, মসলিনী ভলি, ক্ষুরধার ব্যাকহ্যান্ড, চাবুক ফোরহ্যান্ড অথবা সেই সার্ভিসের আগের মুহূর্তে অতিরিক্ত বল ধরা বাঁ হাতের পিছন দিয়ে কপালের উপরের ক-গাছি চুল সরিয়ে নেওয়া। এভাবেই মনমুকুরে বেঁচে থাকবেন তিনি।
অ্যাডিউ ফেডেরার, টেনিস যখন দানবদের হাতে প্রায় চলেই গেছিল, দু-দশকের জন্য মানবপ্রভা ছড়িয়ে তাকে ঘাসের কাছাকাছি রাখার জন্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ আরও কত কী’র। কুড়ি কুড়ি বছর পেরিয়ে রুপোলি চুলের রং ছুঁইয়ে ম্যাজিক একটা সময়কে হাতের মুঠোয় করে দেবার জন্য, সেলাম সুলতান। বিদায়…