বর্ষশেষের কলকাতা : কলকাতার ক্রিকেট (পর্ব ৯) – সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
নবম পর্ব
১৯৩৫ সালের পর থেকে ভারতীয় রাজনীতি অন্যদিকে মোড় নেয়। বোঝাই যাচ্ছিল যে কোনও ভাবেই ব্রিটিশরা আর এই দেশ ধরে রাখতে পারবে না। এমতাবস্থায় ভারতীয় ক্রিকেট বিশেষ করে বাংলার ক্রিকেটেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লক্ষ করা যায়। ইডেনে গোটা শীতকাল ধরে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলা হয়।
প্রথমেই ডিসেম্বর মাসে (১৯৩৫) রোহিন্টন বারিয়া ট্রফির দুটো ম্যাচ হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় খেলতে নামে প্রথমে ঢাকা ও পরে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। দুটি ম্যাচেই কলকাতা জয়ী হয়। সেবার সেমি ফাইনাল অবধি উঠেছিল কলকাতা।
২১ ডিসেম্বর ১৯৩৫, কলকাতায় ইডেনে ভাইসরয় একাদশ ও ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটি অকেশনাল দলের মধ্যে খেলা হল। ভার্সিটি দলের সেক্রেটারি ছিলেন বেরী সর্বাধিকারী (নগেন্দ্রপ্রসাদের ভাইপো, পরে দুর্দান্ত ধারাবিবরণী দিতেন ইংরেজিতে; সাংবাদিক; প্রথম সাংবাদিক হিসেবে ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ৫০টি টেস্ট কভার করেন)। তিনি না খেলায় কিপিং করেন অর্ধেন্দু দাস (ভাসি দাস, গায়ক কুমারপ্রসাদের বড়ো কুটুম্ব)।
ওয়াজির আলির অপরাজিত ২৬৮ রানের জন্য ভার্সিটি দল ৪১৯/৪ তোলে। পালিয়া ৫৭ করেন। জবাবে ভাইসরয় দল ২৬৪ তুলে ফলো অন করে। লালা ৭৭ ও নাজির আলি (ওয়াজির আলির ভাই) ৭৮ করেন। লংফিল্ড ৫৬ রানে ৪ উইকেট নেন ও শুঁটে ৬২ রানে ৩ উইকেট নেন। গোপালদাস ৪১ রানে ২ উইকেট নেন।
ফলো অন ইনিংসে ভাইসরয় ২৭৪/৩ তোলে। লালা একাই অপরাজিত ১৪৯, বাকা জিলানী ৭৬ করেন।
জবাবে ভার্সিটি দল ৬৬/২ তোলার পর সময়ের অভাবে খেলা শেষ হয়। ভাসি দাস ও গণেশ বসু ২৪ করেন।
তারপর, সেবার পাতিয়ালা মহারাজার আমন্ত্রণে ভারতে খেলতে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া দল। দলে ব্র্যাডম্যানকে আনার অনেক চেষ্টা হলেও তিনি আসেননি। দলের অধিনায়ক ছিলেন জ্যাক রাইডার, তিনি ১৯২৯ সালে টেস্ট ও ১৯৩১-৩২ সালে প্রথম শ্রেণির খেলা থেকে অবসর নেন। তারপরেও রাইডার ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচগুলোয় ৮৭২ রান করেন ২টি শতরান সহ (ভারত ও সিংহল সফর মিলিয়ে)। যদিও প্রথম শ্রেণির ছাড়াও অন্যান্য ম্যাচ ধরলে রানটা ১১৫০ ও শতরান ৪টে।
অক্সেনহ্যাম ভারত ও সিংহল সফর মিলিয়ে মোট ১২ ম্যাচে ৮৬ উইকেট নেন। অন্যান্য ম্যাচ ধরে ১৫ ম্যাচে ১০১ উইকেট।
সফরের অন্যদের মধ্যে ম্যাককার্টনি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ গুলোয় ব্যাট হাতে ৩৩৮ রান করেন ও ৩২ টি উইকেট নেন। অন্যান্য ম্যাচ ধরে রান ৫৫০ ও উইকেট ৩৫।
জ্যাক রাইডার সম্পর্কে দু’চার কথা বলা যাক।
অস্ট্রেলিয়ার এই প্রাক্তন টেস্ট অধিনায়ক ১৯২০-২৯ এর মধ্যে টেস্টে ৫১ গড়ে ১৩৯৪ রান করেন ও ১৭ উইকেট নেন, তিনটি শতরান সহ। তাঁর সর্বোচ্চ ছিল অপরাজিত ২০১। প্রথম শ্রেণির খেলায় ১০,৫০১ রান করেন ৪৪ গড়ে ২৪টি সেঞ্চুরি সহ। উইকেট পান ২৩৮ (সেরা ৭-৫৩)। প্রথম শ্রেণির খেলায় তাঁর সর্বোচ্চ ২৯৫। যে ম্যাচে ভিক্টরিয়া ১১০৭ রান তুলে প্রথম শ্রেণির খেলায় বিশ্বরেকর্ড করে।
রাইডারের কতগুলি অদ্ভুত রেকর্ড আছে যেমন ডেবিউ টেস্টে দুই ইনিংসেই রান আউট। প্রথম অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ২০ ইনিংস খেলার পরেও ৫০ রানের গড় ধরে রাখা। তাছাড়া ১৯৭৭ সালে শতবার্ষিকী টেস্টের সময় তিনি সর্বাপেক্ষা বয়স্ক অধিনায়ক হিসেবে জীবিত ছিলেন।
“কিং অফ কলিংউড” নামে তিনি খ্যাত ছিলেন কারণ ভিক্টরিয়া ক্রিকেট এসোসিয়েশন প্রিমিয়ার লিগে ১৯০৮/০৯ থেকে ১৯৪২/৪৩ অবধি ৩৫ বছর টানা খেলেন কলিংউডের হয়ে, শুধু ১৯৩১/৩২ (নর্থকোট) ও ১৯৩৯/৪০ (ভিক্টরিয়া ক্রিকেট এসোসিয়েশন কোল্ট) বাদে। এই প্রতিযোগিতায় ৩৩৮ ম্যাচে ৩৭ সেঞ্চুরি সহ ১২,৬৭৭ রান করেন ও ৬১২ উইকেট নেন।
রণ অক্সেনহ্যাম এই সফরের সময় ৪৪ বছর বয়সি। তাতেই বল হাতে কাঁপিয়ে যান। প্রথম শ্রেণির খেলায় ৩৬৯৩ রান ও ৩৬৯ উইকেট নেওয়া কুইন্সল্যান্ডের এই ক্রিকেটার ১৯২৮/২৯- ১৯৩১/৩২ এর মধ্যে ৭টি টেস্টে ১৪ উইকেট পান। এই সফরের মাত্র বছর তিনেক বাদে ৪৮ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
চার্লি ম্যাককার্টনির কথা আর কি বলব। তিনি তো কিংবদন্তি। পাক্কা দশ বছর পর ক্রিকেটের মাঠে প্রথম শ্রেণির খেলায় নামেন। শেষ পাঁচ বছর কোনো খেলাই খেলেননি। তবুও সব মিলিয়ে সফরে ৫৫০ রান ও ৩৫ উইকেট পেতে সমস্যা হয়নি।
২৬ ডিসেম্বর কোচবিহার মহারাজার দলের বিরুদ্ধে একদিনের এক ইনিংসের খেলা খেলতে নামল অস্ট্রেলিয়া, আজকে যেখানে আলিপুরে উডল্যান্ড হসপিটাল, সেখানে খেলা হল। অস্ট্রেলিয়া তুলল ৩৯ ওভারে ৬ উইকেটে ২১১। মরিসবি করলেন ৮০। চার্লি ম্যাককর্টনি ৬৩। তাঁকে আউট করলেন মহারাজা জগদ্বীপেন্দ্র নারায়ণ নিজে। ট্যারান্ট অস্ট্রেলিয় দলের হয়ে খেললেন। ক্যাবলা দত্ত ও শুঁটে ব্যানার্জী দুটো করে উইকেট নিলেন।
জবাবে ফিরোজ ইন্দুলজী পালিয়ার অপরাজিত ৫৭ রানের জেরে কুচবিহার ২ উইকেটে ১০১ (২৭ ওভারে) করার পরে ম্যাচ ড্র হয়ে যায়।
২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৫। বাংলার ক্রিকেটের ঐতিহাসিক দিন। জ্যাক রাইডারের অস্ট্রেলিয়া দলের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো প্রথম শ্রেণির ম্যাচে খেলতে নামল ‘বেঙ্গল’ নামের কোনও দল। হ্যাঁ, এটাই বাংলার প্রথম শ্রেণির খেলায় প্রথম ম্যাচ।
বাংলা টসে জিতে ব্যাট করতে নামলে কমল ভট্টাচার্য (৪৮) ছাড়া কেউ দাঁড়াতেই পারেনি ফ্রেডরিক মেয়র-এর সামনে। তিনি মিডিয়াম পেস আর লেগ ব্রেক বল করে ৪৩ রানে ৫ উইকেট তুলে নেন। জবাবে দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া ১ উইকেটে ৭০।
এরপরে ব্র্যায়ান্ট (৫০), মরিসবি (৭৬), ম্যাককার্টনি (৮৫) করায় অস্ট্রেলিয়া ৩০৮ রান তোলে। শুঁটে ব্যানার্জী ৫ উইকেট নেন ৫৩ রানে। দিনের শেষে বাংলা ২ উইকেটে ৩৮।
পরের দিন আরাটুন ৫৬, লংফিল্ড ৩৩ ও গিলবার্ট ২৫ করায় বাংলা তোলে ১৮৪। লেদার ৩১ রানে ৪ উইকেট পান। অক্সেনহ্যাম ৪০ রানে ৪ উইকেট পান। জবাবে প্রয়োজনীয় ১৩ রান ১ উইকেট খুইয়ে অস্ট্রেলিয়া তুলে নেয়। সেই উইকেট ও নেন শুঁটে ব্যানার্জী। বাংলার অধিনায়ক ছিলেন আলেকজান্ডার লিন্ডসে হোসি।
৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৩৫। ইডেনে শুরু হল সফরের দ্বিতীয় বেসরকারি টেস্টের আসর। সি কে নাইডুর ভারত টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে মাত্র ৪৮ রানে শেষ। ওয়াজির আলি কেবল ২০ করেন। ম্যাককর্টনি ১৭ ও অক্সেনহ্যাম ৭ রানে ৫টি করে উইকেট নেন।
বৃষ্টি বিঘ্নিত খেলায় ভয়ংকর হয়ে উঠে মহম্মদ নিসার (৬/৩৫) পাল্টা ধ্বস নামালে অস্ট্রেলিয়া দিনের শেষে ৯৯ রানে আউট হয়ে যায়। ব্র্যায়ান্ট কেবল ২৯ করেন। বাকা জিলানী ২৯ রানে ৩ উইকেট নেন।
জবাবে লেদার (৫/২৯), ম্যককার্টনি (৩/৪২) ও অক্সেনহ্যাম (২/৩০) ভারতকে ১২৭ রানে ফেলে দেন। কেবল লালা অমরনাথ ৩৯ করেন। প্রয়োজনীয় রান তুলতে অস্ট্রেলিয়া (৮০/২) মাত্র ২ উইকেট হারায়। অস্কার বিল একদিক ধরে রেখে ম্যাচের সর্বোচ্চ ৪৫ করেন।
ম্যাচ দুই দিনের কমে শেষ হওয়ার জন্য একটা ফিল আপ ম্যাচ করা হয় ভিজিয়ানাগ্রাম একাদশ ও ট্যারান্ট একাদশের মধ্যে। তাতে ভিজির দল ২৩৫ ও ৪ উইকেটে ৬৩ তোলে। শুঁটে ব্যানার্জী ৪৯, পালিয়া ৩৬, সি কে ৩৯, লংফিল্ড ৩২ ও সি এস ৩৬ করেন। লাল সিং দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৩০ করেন। ট্যারান্টের দল ২১৮ করে। বিল ৯১ ও ট্যারান্ট ৩৭ করেন। ট্যারান্টের দলের হয়ে আমির ইলাহী প্রথম ইনিংসে ৬১ রানে ৫ টি ও গোপালদাস দ্বিতীয় ইনিংসে ১২ রানে ৩ (ম্যাচে ৫/৭৭) উইকেট নেন। ভিজির দলের হয়ে সাহাবুদ্দিন (৩/২৬), সি এস নাইডু (৩/৪০), শুঁটে ব্যানার্জী (২/৪৭) ও লংফিল্ড (২/৬৪) ভালো বল করেন।
২০২১ সালের সন্দেশ পত্রিকার শারদ সংখ্যায় সত্যজিৎ রায়ের ডায়েরির এন্ট্রিতে ১৯৩৬ সালের ১লা জানুয়ারি তারিখে এই ম্যাচের কথা লেখা আছে।
সেবারই বাংলা প্রথম রঞ্জি খেলতে নামে। ১০ই জানুয়ারি ইডেনে সি পি অ্যান্ড বেরারের বিরুদ্ধে। টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে বাংলা বিপক্ষকে মাত্র ১৪৯ রানে অলআউট করে। ভোহরা ৪৪ ছাড়া কেউ রুখে দাঁড়াতে পারেনি। গিলবার্ট (৩/৫৪) ও কমল ভট্টাচার্য (৩/৩৯) দারুণ বল করেন। জবাবে বাংলা অধিনায়ক হোসির ৮২ ও গণেশ বসুর ৪৬ রানের জন্য ১৯৬ রান তোলে। জহুর আহমেদ ৫৪ রানে ৩ উইকেট নেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে সি পি অ্যান্ড বেরার ২৬৪ রান তোলে। ফ্রেজার ৬০, জহুর আহমেদ ৭৭ করেন। ভোহরা অপরাজিত ৪৫। গিলবার্ট ৯৬ রানে ৫ উইকেট নেন। তিনি বাংলার প্রথম বোলার যিনি রঞ্জি ট্রফির খেলায় এক ইনিংসে ৫ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২১৮ তুলতে বাংলা হারায় ৫ উইকেট। ওয়ারেন ৬৬, হোসি ৪১, কমল ভট্টাচার্য অপরাজিত ৫৪ ও গণেশ বসু ৩৬ করেন।
১৮ জানুয়ারি ইডেনে রঞ্জির দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে নামে বাংলা, সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে। সি কে, সি এস, বিজয় হাজারে, জে এন ভায়া, মুস্তাক আলি, জাগদালে, কমল ভান্ডারকর, টাটা রাও প্রভৃতি বিখ্যাত ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে নামেন কার্তিক বসু, শুঁটে ব্যানার্জী, স্ট্যানলি বেরহেন্ড, হোসি, লংফিল্ড, ভ্যান ডের গুচ, কমল ভট্টাচার্য, গণেশ বসু, বাপি বসু, সুশীল বসু, জিতেন ব্যানার্জি।
এই ম্যাচে বাংলার হয়ে তিন ভাই, কার্তিক, গণেশ বাপি এবং সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ার হয়ে দুই জোড়া ভাই সি কে ও সি এস নাইডু আর মুস্তাক ও ইশতিয়াক আলি একসঙ্গে খেলতে নামেন।
ভ্যান ডের গুচের ৯৩, কমল ভট্টাচার্যের ৪১, বেরহেন্ডের ৩৮ বাংলাকে ২৮৩ রানে পৌঁছে দেয়। সি কে ৬৩ রানে ৭ উইকেট নেন। জবাবে বেরহেন্ড (৩/২৯), লংফিল্ড (৩/৬৩) ও কমল ভট্টাচার্য (২/২০) সেন্ট্রাল ইন্ডিয়াকে ২০০ রানে আটকে দেয়। সি এস ৬৮ ও জাগদালে ৪৬ করেন।
এরপর বাংলা সি কে (৪/৫৯) ও সি এস (৪/১১১) এর ভালো বোলিং সত্ত্বেও ২৫৯ রান তোলে। ভ্যান ডের গুচ আবার ৭১ করেন। হোসি করেন ৫৩। সুশীল বসু করেন ৩৭।
সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া ৫ উইকেটে ১৯৫ তোলার পরে খেলা শেষ হয়ে যায়। সি এস ৫১, সি কে ৪৭ ও জাগদালে ৩৮ করেন। মুস্তাক ২৯ করেন। প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থেকে বাংলা সেমি ফাইনালে ওঠে। টসে বাংলাই জিতেছিল। ম্যাচের অন্যতম আম্পায়ার ছিলেন বেচু দত্তরায়।
পরের মরশুমে বাংলা ১৯৩৬ সালের ১৯শে ডিসেম্বর, রেঞ্জার্স মাঠে রঞ্জি ম্যাচ খেলে বিহারের বিরুদ্ধে। বিহার ১১৩ রানে অল আউট হয়। মোহনবাগানের ফুটবলার বিজয় সেন বিহারের হয়ে সর্বোচ্চ ২৮ করেন। সুবীর চক্রবর্তী করেন ২৩। ইনি দেশভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তানে গিয়ে সেখানে কায়েদ – এ – আজম ট্রফি খেলেন। এই দলের আরেক ক্রিকেটার মহসিন কাজীও তাই করেন। বাংলার প্রবোধ দত্ত ৩৩ রানে ৫ উইকেট ও বেরহেন্ড ৪১ রানে ৩ উইকেট নেন।
এরপর জে দাশগুপ্ত ১৮ রানে ৬ উইকেট ও ব্রুকস ৩১ রানে ৩ উইকেট নিলে বাংলা মাত্র ৮৯ রানে অল আউট হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে বেরহেন্ড ২৯ রানে ৫ ও প্রবোধ দত্ত ৩৯ রানে ৪ উইকেট নিলে বিহার তোলে ১২৭। বিজয় সেন ২৪ ও এ চৌধুরী ২৪ করেন।
কিন্তু কমল ভট্টাচার্য অপরাজিত ৫৩, কার্তিক বসু ৩৩ ও হোসি ৬০ করে বাংলাকে ৮ উইকেটে জিতিয়ে দেন।
২৩ জানুয়ারি সামনে আবার সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া। এবারে শুঁটে ৩৩ রানে ৫ উইকেট ও কমল ভট্টাচার্য ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেন্ট্রাল ইন্ডিয়াকে ১২৮ রানে আটকে দেয়। ভায়া ৩৩, মুস্তাক ২৮ ও সাইদুদ্দিন ৩০ করেন।
জবাবে বাংলা তোলে ২৫৫। হোসি ৬১, বেরহেন্ড ৪১ ও স্কিনার অপরাজিত ৩৫ করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া ২৩৪ তোলে। মুস্তাক ৬৭, ইশতিয়াক ৫২, হাজারে ৫৭ ও ওয়াজির আলি (অধিনায়ক) ৩৩ করেন। লংফিল্ড ৬ উইকেট নেন। জবাবে বাংলা ২৯ ওভারে ২ উইকেটে ১০৮ তুলে ৮ উইকেটে জিতে যায়। কার্তিক বসু ৬০ করেন।
সেমি ফাইনালে এবার বাংলা মুখোমুখি হয় হায়দ্রাবাদের। ইডেনেই খেলা হয়। টসে জিতে বাংলা ব্যাটিং নিলেও মাত্র ১১৭ রানে ৭ উইকেট খুইয়ে বসে। এমন সময় আহমেদ কামাল (সম্ভবত হকি খেলতেন মহামেডান ও ক্রিকেট খেলতেন ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে) ও শুঁটে ব্যাট হাতে রুখে দাঁড়ান, ফলে বাংলা ২৯৯ তোলে। কামাল ব্যাট হাতে ১০৫ ও শুঁটে অপরাজিত ৪৭ করেন।
এরপর লংফিল্ড (৪/৫৫) আর বেরহেন্ড (৩/২৭) হায়দ্রাবাদ কে ১৭০ রানে আটকে দেন। দ্বিতীয় ইনিংসে হায়দার আলির বোলিং (৪/৪৬) বাংলাকে ১৫৮ রানে আটকে দেন। মিলার ৩০ ও লংফিল্ড ৩৬ করেন। জবাবে হায়দ্রাবাদ ১৬০ রানেই আটকে যায়। এডুলজি আইবারা (কব্জির মোচড়ের হায়দ্রাবাদী ঘরানার জন্মদাতা, যা পরে জয়সিমা, আব্বাস আলী বেগ, কেনিয়া জয়ন্তিলাল, আজহারউদ্দিন ও ভিভিএস লক্ষন অনুসরণ করবেন) ৬৯ করেন। কমল ভট্টাচার্য ৩ উইকেট নেন। বাংলা ফাইনালে।
ফাইনাল ইডেনে হয়নি। শুধু জানিয়ে রাখি, নবনগর (আজকের সৌরাস্ট্র) শুঁটেকে খেলতে দেননি, যেহেতু তিনি নবনগরের রাজার কর্মচারী ছিলেন। বাংলা ফাইনালে হেরে যায়। শুঁটে আর কোনোদিন বাংলার হয়ে খেলেননি।