মহুয়া বৈদ্য-র পাঁচটি কবিতা

মহুয়া বৈদ্য-র পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

ফোকাস

বৃষ্টি পড়ছে। রামধনুর সাতরং ছড়িয়ে পড়ছে ক্যামেরার কারিকুরিতে। মা, তুমি ভিজছ, আমি দেখতে পাচ্ছি। ক্যামেরার ডিটেলে ফুটে উঠছে তোমার স্বচ্ছ চোখ, নিটোল চিবুক। এক ঢাল চুল থেকে সাতরঙা জল টুপিয়ে পড়ছে, দেখতে পাচ্ছি তাও। তোমার পাশে অস্বচ্ছ ছায়ার মতো ও কি আমি?! আরেকটু শার্প করলাম ক্যামেরাকে। এবার তোমার মাথার কাছে গোলাপি রঙের উদ্ভাস বেশি, আর, জলের ফোঁটা তোমার মাথায় পড়ে লাফিয়ে উঠল যেন আকাশের তারা… কিন্তু এত বৃষ্টি এত রঙের মধ্যে দেখি তুমি ভেজার আনন্দ ভুলে কাঁদছ। অশ্রুমুখী মা আমার। এত রঙের মাঝে তোমার চোখের জল বর্ণহীন হল! পৃথিবীর সমস্ত রং যতেক দুঃখে পাক খেয়ে বেরঙা হয়ে তোমার চোখ থেকে ঝরে পড়ছে। অসহায় আমি কাঁধ এগিয়ে দিই আর ক্যামেরার ফোকাস নড়ে যায়। ঝাপসা আমি আরও অঝোরে ঝাপসা হই। তোমার গা থেকে রং আর চোখ থেকে অশ্রু কি ঝরতেই থাকবে! আমি বেদম চেষ্টায় তোমার চোখের সামনে বাড়িয়ে দিই আমার হাত। তোমার অশ্রুবিন্দু আমার মুঠোয় এসে মুক্তোদানা হল কিনা দেখতে, এবার আমি লোভীর মতো ক্যামেরার ফোকাস ঘোরাই।
এভাবেই দূরত্ব পথ পালটায়। ঝাপসা হয় লেন্স।
আমি এখন যথানিয়মে ‘মা’ হয়েছি, আমার দুইটি সন্তান।

নগরকীর্ত্তন

বিচিত্র বিভঙ্গ পথ বসে আছি অচল মুদ্রায়
নিমেষ জানায় কিছু, বাকি কথা মীড়, জোছনায়
ভরের সঠিক পাশে ভারশূন্য ভূমা এসে ভাসে
বিলম্ব-রাগিনী বাজে খরজ সুরের পরবাসে
জন্মায় অক্লান্ত ভ্রূণ সেইহেতু বিস্রস্ত আখরে
লিখে রাখি সমনাম অজান্তেই অকাল বাসরে
ফুলের বিশেষ কিছু কাজ নেই এই বিছানায়
কারণ অজস্র কীট অনায়াসে কানায় কানায়
গ্লানির অধিক ঢালে বেসরম ঢ্যামনামো বিষ
সাপের খোসার মতো ত্যাগ করি সময়… অনীশ
এসব কথার মাঝে আকস্মিক অপ্রস্তাব জাগে
ছেনে রাখি জলবায়ু নিভে আসা পরাগে পরাগে
ফুলের সুবাস যদি বেঁচে থাকে কথার ভিতর
জলের ঠিকানা লিখি ঢেউ ভাসে বদর বদর
ভ্রমণ নিভৃতে চলে সবুজ পাতার আড়ে আড়ে
অলিখিত দশমিক ঘর বাঁধে শূন্যের মাঝারে।

ডিনার টেবিল অথবা…

টেবিল সেজেছে রাগে, অনুরাগে আত্মহত্যা করি
প্রতিকোণে কি নিঁখুত কাপড়ের টানটান ভাঁজ
এমন নিপাট সাজ থাকে থাক সাজিয়েছে ডিনারের প্লেট
কাঁটা ও চামচ এসে দুইপাশে বসে আছে এত সাবলীল
হত্যাযন্ত্রের মতো বিদ্ধ করে পাপাচার, খাবারের আয়ু
প্রতিপদে নিঃশর্ত জলযোগ, শরীর ভরন্ত হবে, এইমতে বিচ্ছুরিত স্নায়ু
বৃদ্ধি পাচ্ছে দেহ খাঁজে সংখ্যা যদিও সুস্থির
অযান্ত্রিক দেহপট খুবলে খাচ্ছে অতিরিক্ত মাংসল জিকির।

প্রবাদ

নিভন্ত জলের পাশে টগর ফুলের সাদা রং
সাবেক নিঝুম বেলা, উচাটন, অসার সফর
এইকথা বলবার অর্থ নেই, বিভাজিত মেঘ
আষাঢ় আসার আগে ঢেলে দিচ্ছে শিলাবৃষ্টি কিছু
আমের মুকুলগুলি ঝরে যাবে, সেই ছোঁয়া পেয়ে
কিছু ফল ক্ষত পাবে তাদের পড়ন্ত হবে বেলা
বয়স কথার কথা, অসময়ে শিলাবৃষ্টি এলে
ঝরে দল ফল ঝরে, যেহেতু শীতল স্পর্শ পেলে
গলিত বরফ জল আবার কঠিন হয়ে যায়
শীতের নায়াগ্রা যদি দেখে থাকো, বুঝেছ; সময়
মাঘের বাতাস পেলে, বাঘের চামড়া ভেদ করে
স্থানুও তো করে তাকে, এমন প্রবাদ পরিচয়ে
গুছিয়ে আগুন এনে কোটরের পাশটিতে রেখো
অনির্বাণ চিতা যেন বসে থাকে আত্মাটির পাশে
তবেই জীবন-নদী পেরোনো সহজ আরও আলো
আগুনের কাছ থেকে ধার করে ঠিকঠাক পথ পেতে পারো।

সহজিয়া

আকাশ এসেছে আজ বারান্দার সরল আশ্রয়ে
রোদের আলাপ এসে ছুঁয়ে দিল অসামান্য ঠোঁট
কথার প্রয়াসে যদি অমৃতের ভাণ্ড খসে পড়ে
ধুলিময় অমরত্ব খুঁজে ফেরে বায়ু, নিস্ফলক

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২