সৌমেন শেখরের পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

বেনামী–১


দৃশ্যত তাকে মনে পড়ে

অংশত আরোগ্য আর অসুখের মাঝে

যেটুকু নির্জন, সেটুকুই নরম স্বাধীনতা

হিমের টুপটাপ

আমাদের এই ঝরে যাওয়া গল্পের মায়ায় শিউলি ফোটে মৃদু ওমের রাতে

রাতচরা পাখি’রা ডেকে ডেকে যায় দীর্ঘ দ্রাঘিমার দিকে

আমাদের তেমন ডাল, পাতা নেই তবে শেকড় আছে ভালোবাসায়।

বেনামী–২


শীত প্রশাখাবতী হলে

শূন্য ফসলের মাঠে কুয়াশার পেখম নেমে আসে

বেজে ওঠে পাখিদের সমবেত গীত

দেশ, কাল, জন্মান্তর আর তুলসীতলা পেরিয়ে, শাঁখেদের ধ্বনি থেমে যায় নতুন বধূটির ঘোমটার কাছে

ফিসফিস স্বরে নিষিদ্ধ মন্ত্রের মতন শোনায় সে পূণ্যলগ্নের কথা, ভাবী সন্ততির কথা।

বধূটির মাথা ঝুঁকে আসে মিহি গন্ধের আবেশে

আর দূরে এক কুবোপাখি, কোনো শিমুলের গাছে, সন্তান আঁকড়ে ধরে হিম ভেজা ডানার নীচে।

এসব গল্পই চিরকাল বয়ে যায়
আমাদের স্মৃতি অথবা শিরায়।

হেমন্তবিষাদ


মনকেমনের হাওয়া বয়ে আনে এ হেমন্ত

একটা ভেঙে যাওয়ার রং লাগিয়ে যায় সবখানে, গোপন মন্ত্রের মতন

এই বিষাদে মাতাল হলে আপনার সর্দিকাশিজ্বর হয় অথচ আপনি ভালোভাবেই জানেন এসব জাগতিক নয়

এরা সেই মনখারাপের দেশের লোক, কানে ফুসমন্তর দিয়ে কেটে পড়ে ঝিম অন্ধকারে

চোখে জ্বলে ওঠে বিষাদের বাতি, দ্বিপ্রাহরিক ঘুম ছেড়ে যায় আপনাকে,

তুমুল নেশার মতো ঘিরে ধরে বিষণ্ণতা
পরতে পরতে নেমে আসে ক্ষতচিহ্নের সোহাগ আর আজীবন রক্তক্ষরণ…
আপনি ঠিক বুঝতে পারেন না এই বিষণ্ণতা আসলে কী চায় !

ঠিক কেমন মনখারাপ আপনার পছন্দসই
ঠিক কোন্ উষ্ণতা পেলে আপনি এসব আশীর্বাদ ফেলে চলে যাবেন যেদিকে দুচোখ যায়।
এ সব বোঝার আগেই আয়ু ফুরিয়ে যায়, ধীরে…
শিশিরের রাতে আপনি বিষাদ জ্বেলে বসে থাকেন একা, আর ভাবেন এ হেমন্তবাঁশির ছায়া কোথা পায় এত বৈরাগ্যধ্বনি!

দেহরক্তজল

খুব সম্ভবত রক্তের ভেতর আর কিছু নেই

রুপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ কিংবা বিরহ

খড়িমাটির ভার নামিয়ে ও কোন্ পথে যায় বিষণ্ণ বৈষ্ণবী?

ভেজা পাতার ভেতর টুপ টুপ শব্দে কে তাকে ডাকে, নির্জন পাখি?

হাতের পাতা খুলে রেখার মতন সব নক্ষত্র মেলে ধরি মৃদু অবকাশে

শীতলপাটি জুড়ে নামে আবছায়া ঘোর

আমাদের তো কোথাও যাওয়ার কথা ছিল না অরুন্ধতী

স্মৃতিদুয়ারের পাশে, সাঁঝ আকাশের নীচে, কাঁসাইয়ের ঘাটে বসে, শুধু দেখি…

তেত্রিশকোটি দেবতা ভেসে যায় বৈষ্ণবীর দেহরক্তজলে।
————————-

গৃহপালিত–২

জীবন্ত মানুষের চিতা সাজাতে নেই বলে আজও গাছের ছায়ান্ধকারে ঘুরে ঘুরে ফেরে

একটা পথ চলে গেছে দুইকুড়ি বসন্ত পেরিয়ে

সেভাবে অনাদরের কাছে মাথা নীচু করে দাঁড়ানো হল না আর

চিতা জ্বলে কখনও সখনও। উপুড় হয়ে পুড়ে যায় মৃত অহং এর আখ্যানগুলি

শুধু গাছেদের কাহিনির কাছে থেমে যায়…

কীভাবে যেন মাংসের গন্ধ পেরিয়ে বৈরাগ্য এসে থামে ছাইয়ের পাশে, নিঃসাড়ে।

অস্ফুট পদধ্বনি ফোটে কার, আনকোরা পথের পিঠে?

রাত্রির চৌকাঠে কারা পাশ ফিরে শোয়, ঘুমন্ত মানুষের গায়?

বধ্যভূমি থেকে ফিরে এসব গল্প শোনে এক আদিম জল্লাদপুরুষ

আর নব শস্যের গন্ধ এসে ভরে দেয় নতুন বধূটির গর্ভদরজা।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *