শিশির আজমের পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

 

ভাসমান সুপার মার্কেটের যন্ত্রণা

নরম লাল জুতোর ওপর মেয়েটা ভেসে রয়েছে

সুপার মার্কেটে

যখন আমরা কথা বলছি আমাদের কথাগুলো

মহাশূন্যে ভেসে রয়েছে

বাগানের ধাবমান বাতাসে পাথরে গড়া মুখ আর কিছু ব্যথা

পৃথিবীতে শান্তি আসুক

আমার যদি বিশ্রাম থাকত

নিশ্চিন্তে সেখানে বসিয়ে দিতাম

                          গ্রামের কাঠবিড়ালিটিকে

সে-ই ঢুকতে পারে বৃত্তটির ভিতর

সেখান থেকে জলের রাস্তায়

শান্তিময়তার দেশে আমাদের নিয়ে যাবে

সেখানে অন্য সব প্রাণী

চিফ হিট অফিসার

এখন দুপুর সাড়ে ১২

হ্যাঁ এখন এই মুহূর্ত থিকা আপ্নে আমার চিফ হিট অফিসার হইলেন

আমার শহরে তাপমাত্রা কখন কী লেভেলে থাকবে

কোনটা স্যুইটেবল

সেইটা ডিসাইড করবেন আপ্নে

আচ্ছা আপ্নের কি ধারণা আছে এই শহরে পুরুষ গাছগুলা

কতটা ডায়াসপোরিক

আর পাখির সংখ্যা

আর ইয়োলো অর্গ্যান আর ওদের দ্রুত বিবর্তনমূলক আচরণ

নদী পার্ক খেলার মাঠ

জিমনেসিয়াম নাচের স্কুল

নাইটক্লাব

বেশ্যা পুলিশ তেলাপোকা

কবি

এদের ব্যাপারে মোটামুটি পরিসংখ্যান জানি না আপ্নের ডেস্কে

সরবরাহ করা হইছে কি না

কিন্তু আমি

আমি তো আপ্নেরে নিয়োগ দিই নাই

আপ্নের প্রফেশনালিজমের প্রতি আমি যথেষ্ট সিনসিয়ার

এবং রেস‌্পনসিবল

যে মাল্টিন্যাশনাল অর্গ্যানাইজেশান আপ্নেরে চ্যুজ কইরা পাঠাইছে

এইখানে

আর নিয়মিত আপ্নেরে ডলারে পে করবে বইলা প্রতিশ্রুত হইছে

সে

সে কী চায় কী চাইতেছে সে

সে

আমার রক্তের পাশে কখনও ঘুমায় নাই তো

ময়ূর

সেই কৈশোর থেকেই আমার ময়ূর পোষার শখ

আজও

কিন্তু সত্যিকার কোনো ময়ূর আমি দেখিনি

অবশ্য বইয়ের পাতায় দেখেছি

টিভিতে দেখেছি

হ্যাঁ

চিড়িয়াখানায় দেখেছি

কিন্তু ওরা তো কেউ আমার ময়ূর না

কেউ

আমার ময়ূর

না

ল্যাম্পোস্টের নীচে

ইনিয়ে বিনিয়ে সে আমাকে যা বোঝাল তার অর্থ দাঁড়ায় জীবনের লক্ষ্য মৃত্যু, জ্যোৎস্নার আসলে অনেকগুলো স্তর

একেকটি গাড়ির কাঙালিপনায় ঘেন্না ধরে যায়

আমরা কাণ্ডজ্ঞানহীন, যেন পরিবারে আমাদের দায়িত্বকর্তব্যগুলো গুরুতর কিছু নয়, কিন্তু আগামীকাল দিনটা কীভাবে শুরু হবে এর সূচি তো ঘুমোতে ঘুমোতে করে ফেলি

চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়, আমরা দেখতে পাইনে বাদুড়ের ডানার আঘাতে কম্পমান রাত

ভাবো দিকি ওই ট্যাক্সিড্রাইভারটার কথা আর তার কাঠের আলমারি আর তার দু-গণ্ডা ছেলেপুলে, সতেরো কেজি ওজনের চাঁদ সে ঘাড় থেকে নামাতে পারছে না এদিক-ওদিক করেও

মোড় ঘুরে বামের রাস্তায় শ্যমলা এক মেয়ে, কালো চুল, কালো আঁধার

সৌরজগতের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে সে দেখছে পৃথিবী ঠিক আর দশটা গ্রহের মতো নয়, মানুষ এখানে সৃষ্টি করেছে পানি, আগুন তৈরি করেছে ইতিহাসের গতিপথ

জেদি স্মৃতিগুলোর হাতের বাঁধন খুলে দাও; প্রতিদিন পৃথিবীতে গাছের যত পাতা ঝরে, প্রতিদিন যুদ্ধে যত মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মানুষ মরে ভালবাসা না পেয়ে

লিফট

লিফটের ভিতর দাঁড়িয়ে, তোমাকে দেখে

ওই কুড়ি সেকেন্ড সময়ের ভিতর, হঠাৎ মাথায় ভাবনা এলো, হুয়ান মিরো কবি না তো?

তিন মাস ভাজা ইলিশ খাইনি। একজন ভারতীয় ডাক্তার বললেন

মাংস খাওয়া নিষেধ, মদ চলতে পারে, আমি শুনিনি, আমি কাতালান নই।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পড়িনি ছয় মাস, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে যে মৃত্যু বিষয়ে

আমার নিজস্ব একটা দর্শন তৈরি হওয়া দরকার।

আচ্ছা এব্যাপারে আমার ওই পকেটমার বন্ধুটির সঙ্গে কথা বললে কেমন হয়?

ওর বউ অসুস্থ, এক ফোঁটা ইংরেজি জানে না, স্বামীকে

ভক্তি করে খুব—সেদিন এক অদ্ভুত কথা বলল বন্ধুটি,

মানে কথাটা ওর বউর—ঢাকঢোল পিটিয়ে একদিন সমাজ ছেলেটিকে

বা মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দেয়, কিন্তু সবার অজান্তে এমন কি

নিজেরও অজান্তে কখন তার বিয়ে হয়েছে কাশফুলে না লাল প্রজাপতির

রাস্তায়

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *