রামকৃষ্ণ মাহাতো-র পাঁচটি কবিতা
ঝুমৈরা
সংসারটা ছোটো নয় , দু-দুটো পেট আছে
সেই পেটের ভরণ-পোষণ আছে
আছে ভাদ্রের দুপুর;
সেই দুপুরে চলে চৈত বৈশেখের বাড়তি গাঁজন,
ঝুমৈর গাঁজন। মাঝে মাঝে মুখ চেয়ে ঝুমৈর শুনে নতুন বৌ
ঝুমৈর হাঁকাই গা ভিজে, মন ভিজে
ভাদরের চাল ভিজে নাই।
মোরগ লড়াই
দুটো মোরগ। দু-জন রসিক।
মৃত্যু মৃত্যু খেলা;
আখড়ার ভিতর জুড়ে বীর রক্তের তিলক,
এই বীর রক্ত সূর্যাস্তে আরও রঙিন হয়ে উঠল
মাঠে পড়ে থাকল তেলেভাজার ঠোঁঙা
আখের ছিবড়া বাদামের খোসা এবং একটা দীর্ঘশ্বাস!
দেখো সে সন্ধ্যায় কড়াই ভর্তি পাহুড় মাংসের ঝোলে
ভেসে উঠেছে তাহুত হাতের স্বাদ…
প্লাবন
একা দ্বারকেশ্বর।
দু-দিকে দুটো জোড় এসে মিশেছে একটু আগে
তার আগে আরকেটা;
এইটুকু নদী। ব্যাস!
আর মরা ঘাসের উপর একটা প্রত্যন্ত উপত্যকা
তবুও যারা এই উপত্যকায় ঘর বাঁধে
তাদের বুকে নিয়মিত প্লাবন!
ক’জন জানে এই ক্ষুধার্ত মাটি আর পাঁজর থেকে
এত প্লাবন আসে কী করে?
আখড়া
সন্ধে হলেই জেগে ওঠে আখড়া
নাচে গানে;
একে একে জুটে যত রসিক, মাতাল, মুরুব্বিরা
কেউ তালে তাল দেয় কেউ সুরে সুর
এই সুর তাল তখন বৃষ্টি ফোঁটার মতো নবীন
এ-বছর বর্ষা নেই। চাষ হয়নি।
অথচ দেখো এ গাঁয়ের হা-ফাড়া মাটি প্রতিদিন ভিজে…
ছাদ
হঠাৎ যেদিন বৃষ্টি হয় সবাই দৌড়ে
গিয়ে ঘর, চালা, গাছের তলায় দাঁড়াই
মাথাটাকে বাঁচিয়ে রাখি;
এই নতুন জলে ভিজে গেলেই জ্বর আসতে পারে
সুতরাং সাবধান।
জল পড়লে দৌড়ে ঘরে এসে ঢুকি আমিও
শুধু সংসারের ছাদটা নেই বলে ভিজে যায় সবসময়।