সৌমাল্য গরাই-এর পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

চক্রব্যূহ

১.

বিসর্গ ফুটেছে যেন পাশাপাশি রাখা দুটি চোখ
সীমান্ত পেরিয়ে এসেছে যে আলোদূত
তাকে তুমি কোন্ মৃত্যু দেবে?

শিয়রে নদীর শ্বাস, বটবৃক্ষ মূলে
শুনেছি শুঁয়োর গায়ে কাঁটা ফুলের নিশ্বাসে
প্রজাপতি হয়, তেমনই দেখেছি
বীজপত্র ফেটে বের হয় অতল শিকড়
এইসব ক্ষুদ্র তুচ্ছ প্রাণ তোমাকে প্রণাম
করি করজোড়ে। জেনে রেখো
আদতে মানুষ মাছ, গর্ভজলে সাঁতার পেরিয়ে
এসেছে ডাঙার কাছে কালচক্রপাকে

২.

বিস্ময়ের পাশে বসি, দু’দণ্ড জিরোই
লম্বাটে দাঁড়ির নীচে ছোটো এক ফুটকি
মনে হবে মৃত কোনো লোক শুয়ে আছে—
কপালে চাঁদের গোল ফোঁটার মতন বুলেটের গর্ত
একটু উল্টিয়ে দেখি
আশ্চর্য মায়ায় উঠে দাঁড়ায় দৈত্যের বাগানের সেই শিশু
ক্ষতচিহ্ন দিয়ে দেখিয়েছে ভালোবাসা কীভাবে ফুটেছে
মাটির ওপরে
গাছে গাছে, ফুলে ফলে, লতায় পাতায়…

৩.

ভাঙা মন্দিরের কাছে
ধসে গেছে জরাজীর্ণ সিঁড়ি
পথ তবে কোনদিকে যাবে?
ছেঁড়া আলখাল্লা গায়ে উলঙ্গ ফকির
হাঁক দেয়—কে আসে, কে যায়?

আকাশ নিকষ অন্ধকারে ঢেকে আছে তবু
সরু ফাটলের গা হতে কীসের
ঝিকিমিকি ওঠে, দূর থেকে

যে নক্ষত্র মরে গেছে তার আলো নিয়ে
জোনাকি জন্মায়

৪.

মাকড়সার লালারসে সূক্ষ্ম এক জালে, পোকামাকড়েরা মাকড়সার শরীরে বিলীন হতে হতে, শেষ অব্দি মাকড়সাই হয়, না হলে যাবেই বা কেন বারবার?

তবে কী গভীর এই রূপান্তর লোভে পোকামাকড়রেরা এভাবে শিকারি মাকড়সার খাদ্য হতে আসে!


সোনার কাঠি, রুপোর কাঠি

লিখবার পেন আমি হারিয়ে ফেলেছি
ফিরে আসবেই, এ-বিশ্বাসে
দ্রাক্ষালতার শৃগাল হয়ে
আঙুরের লোভে চেয়ে আছি

এখন আমার
মাথার উপর পয়গম্বর আকাশ
সেইখানে আনন্দের বয়সি ছেলেরা সুতো ছাড়ে
আত্মাময় এই খাঁচাছাড়া। লালনও যেমন
ছেড়েছিল বহু শতাব্দী আগে

খুব সামান্য একটা কলম গুপ্তভ্রমণে বেরিয়েছে
আমি এখন দেখব—অস্তনির্জন সন্ধ্যা
শালবল্লরীর মনস্তাপ,
মাথায় বোঝা নেওয়া ঈশ্বরী পাটুনিকে

এইসব দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ব
কালো রঙের অচৈতন্য মলাটের দুই পাশে
কেউ আমাকে ওলটালেই আমার ঘুম ভাঙবে
জেগে উঠে ফের লিখবার চেষ্টা করব আমি

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *