নিঝুম সোমের অসুখ – সৌগত ভট্টাচার্য
স্যাঁতস্যাঁতে বর্ষা। নিঝুম দেখে ওর সারা গায়ে হালকা একটা সবুজের আবরণ পড়েছে। সাবান ঘষে স্নান করেও গায়ের সবজে ভাবটা ওঠে না। গায়ে লেগে থাকা হালকা সবুজ আভা যদিও কোনো সমস্যা করে না! বর্ষা জোরদার হলে সবজে ভাবটা আরো গাঢ় হতে থাকে। দাড়ি কাটার পর সবুজ আভা লেগে থাকে গালে।
নিঝুম সোম ফোনে ডাক্তার বন্ধুকে ওর সমস্যা জানায়। ডাক্তার বন্ধু বলে, “চিন্তার ব্যাপার নেই, এই সময় অনেকেরই এরকম হচ্ছে!”
দুই
নিঝুম সোম কিছুদিন পর লক্ষ্য করে, সে চোখে তেমন পরিষ্কার দেখছে না, চশমায় নতুন কাচ লাগায়, নানা ওষুধপত্র ড্রপ দিয়ে চোখ পরিষ্কার করে। কিছুদিন ঠিকঠাক চলার পর আবার সব ঝাপসা হয়ে যেতে থাকে। তার সবসময় মনে হয় চোখের সামনে যেন ঝুল ঝুলছে। নিঝুম খেয়াল করে ঝুলটা চশমায় না, দুই চোখের মণিতে দুটো মাকড়শা বাসা বেঁধেছে।
ডাক্তার বন্ধুকে নিঝুম ফোন করে। ডাক্তার বন্ধু বলে, “অনেকেই এখন চোখের সামনে এমন দেখছে। একদম চিন্তার ব্যাপার নেই ঠিক হয়ে যাবে।”
তিন
গত বছর নিজের কত বয়েস ছিল কিছুতেই নিঝুম মনে করতে পারে না। সারাদিন সে বুকের ভেতর একটা সোঁ সোঁ বাতাসের শব্দ শুনতে পায়। নিঝুম রাস্তাঘাট ইতিহাস মানচিত্র ভূগোল সপ্তাহ মাস, এমনকি অফিসের চেনা রাস্তা মুদি দোকান, বাজার চেনা মুখ কিছুই মনে পড়ে না নিঝুমের।
সব কিছু ভুলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নিঝুম ফোন করে ডাক্তার বন্ধুকে, ডাক্তার বন্ধু বলে, “সময়টাই গোলমেলে। অনেকেই অতীতের অনেক কিছু ভুলে যাচ্ছে। আবার সব ঠিক হয়ে যাবে! চিন্তা করার কিছু নেই!”
চার
দাঁত দিয়ে নখ কাটা নিঝুমের অভ্যেস। নিঝুম নখ কাটতে গিয়ে দেখে নখের ভেতরে ছোটো ছোটো পোকা। নিঝুম খেয়াল করে দাঁতের মধ্যে চুলের মধ্যে হাজার রকম পোকা দিব্যি বাসা বেঁধে আছে, এতদিন নিঝুম খেয়াল করেনি। পোকাগুলো কোনো অসুবিধা করে না নিঝুমকে।
নিঝুম তাঁর ডাক্তার বন্ধুকে ফোন করে। ডাক্তার বন্ধু বলে, “ভালো করে চুল দাঁত নখের যত্ন নিতে হবে। অনেক রোগীই এই উপসর্গ নিয়ে আসছে, সেরেও যাচ্ছে। চিন্তা করার বিষয় না এটা!”
পাঁচ
নিঝুম কাজ সেরে প্রতিদিন খাটের উপর এসে বসে। কাজ বলতে সকালে উঠে খাটে বালিশ হেলান দিয়ে বসার জন্য নিজেকে তৈরি করা। বিছানার সঙ্গে লাগানো একটা জানলা, নিঝুম সেটা দিয়ে তাকিয়ে থাকে সারাক্ষণ, বসন্তের পর গ্রীষ্ম আসে গ্রীষ্মের পর বর্ষা। বর্ষার মেঘ চোখের সামনে ভেসে বেড়ায় নিঝুমের। একদিন তাঁর খেয়াল হয় যে কাঠের খাটের নীচে কিছু শেকড় বেরিয়েছে, সেগুলো মেঝে ছুঁয়েছে। সেই শেকড়গুলো নিঝুমের পা থেকে ঝুলছে। ইদানীং খাট থেকে নেমে হাঁটতে কষ্ট হয় নিঝুমের।
সে তার ডাক্তার বন্ধুকে ফোন করে। ডাক্তার বন্ধু বলে, “একটু ফ্রি হ্যান্ড করতে হবে! অনেকেরই এমন হচ্ছে। এটা চিন্তার ইস্যু না!”
সারা গায়ে কীসব যেন নড়েচড়ে বেড়ায় নিঝুমের। ঠিকমত দেখতে পায় না। যদিও জ্বালা যন্ত্রণা ব্যথা অস্বস্তি কিছুই বোধ করে না। হঠাৎ সকালে দেখে সারা ঘর ভরে গেছে অজস্র প্রজাপতিতে। নানা রঙের প্রজাপতি সারা শরীরে উড়ে বেড়ায়। মাথার ভিতর বাসা বেঁধে থাকা দোয়েল পাখিদুটো শিস দিচ্ছে… নিঝুম শোনে। নিঝুমের দমবন্ধ হয়ে আসে… ও দৌড়ে বেরতে চায়… পারে না!
নিঝুম ডাক্তার বন্ধুকে সবটা জানিয়ে ফোন করে। ডাক্তার বন্ধু বলে, “এ তো চিন্তার বিষয়… এমন তো আগে কখনো শুনিনি!”