মলাট – সঞ্জীব নিয়োগী
মলাট
(গ্রামের দিকে যেতে পারি, চোখ মারতে পারি)
“সজ্ঞানে অনেক কিছু অস্বস্তিকর। ছলে-বলে শরীর, যথা-কৌশল। পারবেন, দেখুন। মনের কাহিনি অবিশ্বাস্য; সেখানে একজন রজ্জু বিষয়ক জ্ঞানী অন্য কোনও থাম-বিশেষজ্ঞ কে কুলো সম্পর্কে নিঃসন্দেহ আরেক পণ্ডিত বিষয়ে অবহিত করেন। সমস্ত অধিকার ছেড়ে দিলে যেভাবে আপনাকে ধন্যবাদ দিতে পারে লোলুপ মাথাগুলো, সেইভাবে কোনও দিন কথা বলে দেখবেন, আরাম পাবেন। অথবা বমি পেতে পারে। ট্রাই করে দেখবেন, তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন, কেন-না আরামের জন্য সিদ্ধান্তে আসা দরকার।… এ এমন কিছু না, একবার ‘ভাগ শালা!’ বলে তাচ্ছিল্য করতে শিখে নিন।”
হাঁটতে হাঁটতে যে এমন গুছিয়ে কথা বলা যায়, তারক খামারুকে না দেখলে জানতেই পারতাম না।
তারক আরও বলেন, “দেখুন, মলাট তো আমাদের সবারই আছে কমবেশি। ‘শুধু সত্যিকারের মহাত্মাদের মলাট থাকে না’—এরকম কিছু আপনি বলতে যাওয়ার আগেই বলি যে, ওই মানুষদের আরও পুরু মলাট থাকে। হেব্বি সিয়ানা চিজ হন তেনারা, বাবু, অত্ত সহজ নয় গো দুনিয়া! …দেখবেন ইচ্ছাকৃতভাবে এলোমেলো হয়ে আছে, হাফ সোয়েটারের তলা দিয়ে শার্টের কিছু অংশ বেরিয়ে আছে বা জামার কলারের একদিকে বেঁকে!”
“আপনি গ্রামের দিকে যেতে পারেন না?”
আমি ভাবার যথেষ্ট অবকাশ না পেয়ে এবং নিজের সামর্থ্য বিষয়ে যাচাই না করেই বলি, “পারি।”
“বেশ। কী ছিঁড়বেন গ্রামে গিয়ে?”
“মানে?”
“মানে আবার কী! আরে, গ্রামে কে না যেতে পারে। বস্তুত যে কোনও খানেই, চাঁদেও। একটা কোনও বাহন ধরলেন, চলে গেলেন। আমি কি সেই যাবার কথা বলেছি? আরে, হাগতে যাবার কথা বলেছি! হাঃ হাঃ হাঃ! শালা!”
“গাল দিচ্ছেন?”
“হুঁ।…আচ্ছা, কখনও মনে হয়নি, যাই গ্রামে গিয়ে খানিক হেগে আসি!”
তখনই “তারকদা! তারকদা!” বলে নাটকীয়ভাবে চিৎকার করতে করতে জনৈকা প্রবেশ করেন। (ইনি না এলে আমার পক্ষে গল্পটা টেনে নিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে উঠছিল)। এখন, এটা বুঝতে পারলাম না যে, বয়সে তারকের চেয়ে অনেকটাই বড়ো এই মহিলা কেন তারককে ‘দাদা’ সম্বোধন করছেন। সেটা অবশ্য সম্মান জানাতে। বা, আরও কারণ থাকতে পারে। যেমন মহিলা নিজেকে ছোটো ভাবেন তারকের চেয়ে। এইসব আরকি।
এরপর মহিলা কী বলবেন/করবেন?
উঁ…
উঁ…
উঁ…
আচ্ছা বেশ, তারপর তারক খামারুর বিস্মিত চোখের দিকে চেয়ে মহিলা বললেন, “সর্বনাশ হয়েছে তারকদা! রুক্মিণী গলায় দড়ি দিয়েছে গো!”
দুই.
(Key words: রজ্জু, জ্ঞান, সর্বনাশ, চোখ, গ্রাম, মলাট, এলোমেলো)
বস্তুত, গ্রাম-জ্ঞান দিয়ে তুমি নিজে কিছু করলে কিনা। এখন আর, সত্যি বলতে কী, ওসব লোকে খায় না। …এখন গানগুলো ধরতে পারি, জানো। খুব মনের সাথে মিশে থাকতে পারি।
মলাট কেন লাগে একথা বাজারের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারো। সকালের দিকে এসব নিয়ে বসতে হবে না, একটু ফুরসত পাবে যখন, যদি আদপে পাও, তখন দেখো। অবসর না পেলে এসব ভেবো না, ভাত-কাপড়ের চিন্তা না থাকলে, তখন, ভেবো।
যারা কার্বন বলে না, কাবন বলে, তুমি তো তেমন না।
তারক অপরিচিত মানুষের কাছে নিজের উপাধি বলেন না। মনে করেন উচ্চবর্ণের মানুষ খামারু টাইটেল শুনলে আগেই শালা আন্ডার এস্টিমেট করে ফেলবে। যাই হোক।…
যাই হোক, কেমন? হাঃ হাঃ!
আচ্ছা শোনো, লোকের ‘খাওয়া’ নিয়ে কি আর কিছু বলবে?
মার্কেট। লগ্নি। ভাবতে হবে বৈকি!
আপনি কি নীট খান?
যাচ্চলে!
কেন!
মুততে বসে হাগছ যে!
চালাক চালাক কথা বলা পছন্দ করেন না তারক খামারু সহ অনেকেই। এই যেমন এখন হঠাৎ নীট খাই না জল দিয়ে এসব প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সব গণ্ডগোল করে দিতে চাচ্ছেন। বস্তুত প্যারা ভাগ করে করে উত্তর দিলেও কোনও সমাধান হবে বলে মনে হয় না।
আররে, পদবি দেখে বাবা তবে ডাক্তার উকিল এসব চয়েস করতে হয়।
হয় বইকি! বন্দ্যো, মুখো, ভট্টা, চক্র এসব সিলেক্ট করবেন, জীবন বলে কথা! হাঃ হাঃ হাঃ, দাঙ্গা লাগিয়ে ছাড়বেন মশায়, নাকি?
তিন.
স্যার, নমস্কার!
হুঁ। কী চাই?
না। এমনি। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। মণ্ডল কমিশনের সুফল কি পাব না স্যার?
হুঁ? আমাকে বলছেন?
হ্যাঁ স্যার!
কত দূর? আপনার গ্রাম? ফিরতে তো রাত হয়ে যাবে। আসুন এখন, কেমন?
আমি গ্রামে থাকি না তো স্যার। কত বছর হয়ে গেল, ভাদই ধানের চালভাজ খাওয়া হয়নি, জানেন!
রাজনীতি কচ্ছ?
না। না না। নাঃ!
ওই যে, মণ্ডল ফণ্ডল আওড়াচ্ছিলে—
আরে, ওটা তো চোখ মারামারি খ্যালা, স্যার! আমিও বুঝি আর আপনিও যা বোঝার বুঝে যান, তাই না?
হুঁ। আজকাল তারক খামারুর খুব নাম শুনছি হে ছোকরা, কী ব্যাপার বলো দিকি? জানো কিছু?
আমিও যে জানি তেমন তা নয়, তবে শুনি, “সমস্ত অধিকার ছেড়ে দিলে যেভাবে আপনাকে ধন্যবাদ দিতে পারে লোলুপ মাথাগুলো, সেইভাবে কোনও দিন কথা বলে দেখবেন, আরাম পাবেন।” এরকম কিছু কিছু, এইভাবে, নাকি বলে তারক খামারু এবং তা হাঁ করে শোনার জন্য মানুষের ভিড় আজকাল ক্রমশ বাড়ছে।
হুঁ…
আরও সব উদ্ভট কথা বলে।
শুনেছি নোংরা কথা বলে। গালি দেয়। মহাপুরুষদের মান্য করে না?
তবে ‘মলাট’ নিয়ে কথা বলে যখন, সারা তল্লাট নিশ্চুপ হয়ে যায় আর বিবেক-দংশনে মরে।
বটে?
হ্যাঁ স্যার।
তবে কি তুইও ওই মাদারচোদের প্রতি আগ্রহ আর সহানুভূতি চুদিয়ে থাকিস?
আজ্ঞে?
বঞ্চিত লাঞ্ছিত হারামি গাণ্ডু বুর্বক গর্দভ শালা কিছুই বুঝতে পারছ না, না?
না স্যার।
বেশ, আধার কার্ড আর প্যান নম্বর নিয়ে আসবি, একটা ভাতা-টাতার ব্যবস্থা করতে পারি কিনা দেখি।
মেয়েছেলে সাপ্লাই দিতে হবে না তো?
আরে না না, ভালোবেসে করে দিব।
আমার বউকে ডাকবেন না তো?
আরে ছি! পাগল নাকি। ভালোবেসে করে দিব।
আমার মা কে করছেন, নাকি?
ভাগ বে বাঁড়া, হারামি শালা! নকশাল হয়েছিস নাকি বে?
নকশাল আবার মানুষে হয় গো কাকা! শহরের কিছু বালচোদা বই পড়ে আর নকশাল চোদায়। বাস্তবে কিছু নাই। আর চীন কিছু ফান্ডিং করে। বাকি রইল জনবল, সে ওই কিছু ক্রিমিনাল এসে মাথা গুঁজেছে নকশাল এর ছাতার তলায়, এই আর কী!
আচ্ছা? এটুকুই?
হুঁ কাকা, এখন আর এর চেয়ে বেশি কিছু নাই। সারমর্ম বলতে এই চার লাইনের প্যারাগ্রাফ।
কোন্ দলের গুপ্তচর বে তুই?
নিদ্দল…
অসম্ভব। ওই যে আরবান নক্সালের থিওরি আওড়ালি, এ তো… ঠিক যেন…
মনের কথা?
হুঁ…
চার.
“গ্রামে যেতে পারি” আর “চোখ মারতে পারি” কি দুটো পরস্পরবিরোধী বাক্য? বা, দুটো কি একসাথে যেতে পারে?
চোখ মারা থেকে অনেক রকম রাস্তা খুলে যায়, যেমন গ্রামে যাওয়ার খবর থেকেও অনেক রং বিচ্ছুরিত হয়।
গ্রাম-কে গ্রাম এখন ফোর জি ইন্টারনেট সেবার অফুরান আওতায়। হাজার হাজার গ্রামের ইন্টেলিজেন্স জড়িয়ে থাকে আঙুলে গোনা গুটিকয় শহরের হম্বিতম্বি; খাদ্য, শিক্ষা, জনবল সবকিছু। তবু শহর দাদাগিরি করে। শহর, আদতে, এখন, একটি করুণা করার সাবজেক্ট।
মোবাইলে কী কী খেলা খ্যালো হে?
বিশ্ব লয়ে এ এ এ?
হাঃ হাঃ বাবা!
আচ্ছা শোনো, অরিজিনাল ডকুমেন্ট লাগবে? ফটোকপি দিলে হবে না?
কী জানি বাপু!
খামারু কি আগন্তুক? নাকি সাচ্চা ইন্ডিয়ান?
বিপদ আর কাকে বলে…
কেন, আশ্রমে আবার কে উঁকি দিতে যাবে? …আচ্ছা, কী যেন বলছিলাম?
বলছিলেন যে, দামি মলাট দিয়ে কী হবে, আসলি চিজ তো থাকে ভেতরে…এইরকম কিছু একটা বলছিলেন মনে হয়…
হুঁ…। আচ্ছা বলো তো, মলাট কি তবে কিছুই না? নিশ্চয়ই, অনেক কিছুই।
এবার তবে একটা গল্প শুনি?
হুঁ…। হাঃ হাঃ হাঃ। সেই বসন্ত রায়-এর জমির গল্পটা নিশ্চয়?
আরে শুনুন না। এক কথা বারবার উচ্চারণে তাহা মন্ত্রে রূপান্তরিত হয়। শক্তি ঘটে উহার অভ্যন্তরে। খুব মজার গল্প স্যার। বুঝলেন, খামারু স্যার?
বল না বে, ভ্যানতারা মারিস না!
…আচ্ছা, তো, বসন্ত রায় নামে এক একদা জমিদার অধুনা প্রান্তিক চাষি এক জনবিরল গ্রামে, সেন্ট্রাল গভঃ তে যখন একচ্ছত্র কংগ্রেস আমল, বাস করিতেন।
বটে?
হুঁ। সেই বসন্ত (প্রেমিকার শরীর শুঁকতে ভালোবাসত যে আধ-পাগল খ্যাপা) মনে মনে ডি-কলোনিয়ালিজম জাতীয় একটা জেনর সে খাড়া করতে চেয়েছিল। সেই বসন্ত ইংরেজ আসার আগের বাংলা গদ্যভাষা রপ্ত করতে চেয়েছিল প্রেমিকার কথপোকথনে। বা, বিভিন্ন প্রকাশ্য ও গুপ্ত অঙ্গের ঘ্রাণ। যথা, জমি বিক্রয়।
বসন্ত রায়, একদা জমিন্দারের বংশধর, দেখলো, বিঘা তিন কি চার আর তার ভাগ্যে অবশিষ্ট।
তখন কী করল? তখন কী করল??
হ্যাঁ, তখন এন্টি কলোনালিয়াজম ফ্রড কল্লো, বসন্ত রায়!
সেই ফ্রড হচ্ছে তিন বিঘা জমি তেত্রিশ জন কে ধাপে ধাপে ও ক্রমাগত বিক্রয় করা। হাঃ হাঃ।
এন্টি কলোনালিয়াজম না কী একটা বললে বটে, সেটা কী? সেটা কি হেথায় বলবার মতো ঘটনা?
আচ্ছা দেখো, কিছু লিটেরারি টেকনিক্যাল টার্ম মুখস্থ করে রেখেছিলাম, ঝাড়ার সুযোগ পাইনি, এখন খ্যালা শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে বসিয়ে দিলাম এখানে! হাঃ হাঃ!
আচ্ছা যাক। তো সেই বসন্ত রায় বলে একজন করতো কী, না, একই জমি ছত্রিশ বার ছত্রিশজনকে বিক্রি করত। এটা বুঝতে হবে সেই সর্বহারা জিজ্ঞাসা থেকে, যখন, যেখানে, একজন বুর্জোয়ার বাচ্চা দিনান্তে সর্বহারা হয়েছে এবং সেই আইন ও ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে, যা, আদপে শোষণের।
তখন বেগতিক দেখে নবগুরু খামারুর এক চ্যালা বলল, স্যার একজন নারী চরিত্র এসেছেন, যিনি সারাক্ষণ পুলিশের কাছ থেকে আত্মগোপন করে চলেছেন।
খামারু তাহা শ্রবণে বলিল, হিচকক এর সিনেমা থেকে উনি বেরিয়ে এলেন, নাকি? যত্তসব!
না স্যার, বারুইপুরে নাকি বাসা…
হুঁ। বসাও নিয়ে ভেতর ঘরে। চা-ফা দাও। মেডিক্যাল করাও ততক্ষণ, আসছি আমি। লুম্পেন পার্টির সিন্ডিকেটেট দাদাদের ফাঁদে পড়ে পেট করে এসেছে কিনা দেখে নিও। দলীয় কোন্দল, ইহা, যথা, শোষিতের প্রাণবায়ু!
থামুন স্যার, ভাট বকলে লোকে বুঝতে পারবে যে হয় আপনি বিরল বোকা নয়তো কড়া কোনও ধূমপান করেছেন।
পাঁচ.
মলাট তবু মলাটের থেকে বেশি ও বিরত হয়ে থাকে। আসলে, মলাট-সর্বস্ব জীবনের ক্লেদ ও ঐশ্বর্য। জটিলতাহীন শিল্পের কসম যারা খায়, তারা রেনেসাঁর বুলি নিয়ে ও শিল্প বলতে ইন্ডাস্ট্রি বুঝিয়ে থাকে।
গ্রামে কি মাস্টারি বা সিভিক ভলিনটিয়ার বা আশা কর্মি বা ওইজাতীয় কিছু চাকরি আর সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়? যে পার্টি ক্ষমতায় থাকে সেই পার্টি কি চাকরির সিন্ডিকেট মারফত যাবতীয় হাঃ হাঃ হাঃ করে না?
…এসো, তাপিত পরাভূত যাবতীয় নির্ঘুম …
কোথায় থেকে কোথায় চলে যাচ্ছেন, দাদা!
হুঁ, ঠিকই তো। গল্পের গোল-টেবিল হচ্ছে না, বলো?
পুঁজি ফাঁসাবে যে, বলুন, সে কি কিছু মুনাফা আশা করে না?
তা তো বটেই। কিন্তু বলো তো, খামারু শুনলে মুখার্জি কেন ভাবে, যে, এবার হাসতে হবে?
এ তো বড্ড জটিল ও অস্বস্তিকর প্রশ্ন ফেঁদে বসলেন হে গুরুভাই। তথা, গুরুভার।
নকল করছ?
হবে হয়তো। কে আর ভুঁইফোড়, বল?
একটা কথা এড়িয়ে যাচ্ছ, বলো তো, কত ধানে কত চাল হয়?
তাহলে তো পরিবার সমেত না হলেও, অন্তত, একা গ্রামে গিয়ে থাকতে হয়। বা, না থাকলেও, অনেক দেনা-পাওনার হিসেব চুকিয়ে নিতে হয়। কোন্ ধান, কবেকার ধান ইত্যাদি।
অধিকার ছেড়ে দিলে কী বাকি থাকে বলতে পারবেন, স্যার?
পারব হয়তো, তার আগে বলতে হবে তোমার ও তোমার বিপক্ষের অধিকারকে সমান ও নিরপেক্ষ মর্যাদা দিতে পারবে কিনা!
তাহলে কি সত্য বলে অবিচল কিছু নেই?
আছে। বা, নেই। যেমন ধরো বসন্ত রায় নামের সিম্বলিক এক একদা-জমিন্দার (যে নিজে যেচে জমিন্দার হয়নি। পুরুষানুক্রমে পেয়েছে এবং যদি সেখানে অপরাধের অনুষঙ্গ কেউ আনতে চায়, তবুও সে এই বিষয়ে নিরপরাধ) অধুনা সর্বহারা, নিজের দু বিঘা জমি ছত্রিশ বার ছত্রিশ জনকে বিক্রি করে।
সারমর্ম তাহলে কী?
বোঝাই যাচ্ছে, এত নিটোল গল্পের ভেতরেও তুমি রস পাচ্ছ না, উজ্জীবন পাচ্ছ না, তার কারণ তোমাকে সিজিনড করা হয়েছে একটা হাস্যকর ও বৃত্তাকার চক্রান্তে। যেখানে চাঁদের নীচে দাঁড়িয়ে কোনও এক মেয়ে হুহু করে কাঁদবে, ক্লান্ত দুপুরে একজন যুবক ব্যাগে লুকিয়ে হত্যা-সামগ্রী বহন করবে।
সেগুলো কি আদালতে পেশ করার মতো কথা নয়, গল্প নয়?
তা বটে। অবশ্যই, সেগুলোর নিজস্ব ওজন আছে।
তবে?
তবে ওগুলোই একমাত্র এভিডেন্স নয়। এটুকুই। …নাও, বলো, খামারু কি শেষ পর্যন্ত গ্রামে গিয়ে সফল হতে পেরেছিলেন, তাঁর উদ্দেশ্যে?
ছয়.
না, রাজনৈতিক ‘সত্য’ খামারুর সব প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিয়েছিল। কেন-না, প্রাকৃতিক সত্য সহ্য ও উপভোগ করার মতো পরিস্থিতি তখনও তৈরি হয়নি।
কত কত স্বর ওভারল্যাপ করছে! কার্নিভাল চলছে যেন। ওই কী ওয়ার্ডসগুলোও যেন একটা স্বর। হেটেরোগ্লসিক। কেন্দ্র পিছলে পিছলে যাচ্ছে। পড়তে পড়তে মনে হয় হাটের মতো প্রাণময় জায়গায় এসে পড়েছি।