বর্ষশেষের কলকাতা : কলকাতার ক্রিকেট (পর্ব ৬) – সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
ষষ্ঠ পর্ব
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন অন্যত্র ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায় বন্ধ হয়ে যায়। বহু ক্রিকেটার যুক্ত হয় বিশ্বযুদ্ধে। অনেকেই মারা যান, আহত হন। যদিও সৈন্যদলের মধ্যে ক্রিকেট খেলা অব্যাহত ছিল ভালোরকমই।
কলকাতায় ক্রিকেট খেলা কমেনি, উলটে সংখ্যা বেড়ে যায়। ১৯১৪ সালের নভেম্বরে দেখছি বালিগঞ্জ ক্রিকেট ক্লাব ও ক্যালকাটা স্কটিশ ভলান্টিয়ার্স দলের মধ্যে খেলা হচ্ছে। বালিগঞ্জের ১৮১ রানের (ব্যারেট ৩৪, স্কিনার ৩৬, মুইর ৫ উইকেট) জবাবে ক্যালকাটা স্কটিশ ভলান্টিয়ার্স ও ১৮১ তুলছে, তবে ৯ উইকেটে। সি ডব্লু এইচ অ্যাঙ্গেলস ৪৭ করেন ও গোল্ড ৫ উইকেট নেন।
ওই মাসেই পোর্ট কমিশনার ১৯১ তুলছে CCC-র বিরুদ্ধে। টেম্পলটন ও জিটিবি হার্ভে ৩৭, পিটার ৩৪, এল্ডার্টন ৩৪ ও এস সি চ্যাটার্জি ২৩ করেন। জবাবে CCC ২৩২ করে। গাইস ৫৭, এস সি বি লী ৪৭ করেন, টেম্পলটন ৭টি উইকেট নেন।
৬ ডিসেম্বর রেঞ্জার্স ৭ উইকেটে ২৭৫ তোলে CCC-র বিরুদ্ধে। স্কিনার ১১৮ করেন। সিম্পসন অপরাজিত ৬৫ করেন। CCC-র মুইর ১০০ রানে ৪ উইকেট নেন। জবাবে CCC ৮ উইকেটে ১৬৮ করে। টার্নবুল ৫৭, কর্নার ৫৬ করেন। প্রেস্টন ৬৭ রানে ৫ উইকেট নেন।
১৭ ডিসেম্বর, মিস্টার এ ডাকাসের দল ৪ উইকেটে ১৯৭ তোলে (রোজার ৬২) টেন্থ মিডলসেক্স (১৮০/৯)-এর বিরুদ্ধে। জে ডব্লু গুডউইন ৭০, মেজর এফ সি হসকেন ৫৪ করেন। সিম্পসন ৪টে, টেম্পলটন ৩টে ও ভন ২টো উইকেট নেন।
১৯ ডিসেম্বর টেন্থ মিডলসেক্স মাত্র ১০৯ (গুডউইন ২৯, ক্লিফোর্ড ২৩) তোলে ওয়েসলে ইয়ানস-এর বিরুদ্ধে মূলত জ্যাকসনের ৬ উইকেটের জন্য। জবাবে ওয়েসলে ইয়নস ৪৮ রানে ৬ উইকেট নেন।
পরের দিন দুটো খেলা ছিল। CCC জে ডি গাইস এর ৯৮, থমাসের ৫৭ ও কার্টিস হেওয়ার্ড এর ৪৫ এর সাহায্যে ২৪৩/৫ তোলে। জবাবে ফার্স্ট ক্যালকাটা ভলান্টিয়ার্স রাইফেলস মাত্র ১২৬ তুলে অল আউট হয়ে যায়। ডি এস শ্যালো ৫১ করেন। টি এল ট্রুম্যান ২৯ করেন। বিধ্বংসী বল করেন কার্টিস হেওয়ার্ড (৯/৬৪)। নতুন তথ্য না পাওয়া অবধি ইডেনে এটাই প্রথম ৯ উইকেটের নজির।
অন্য খেলা বালিগঞ্জে হয়। বালিগঞ্জ সিসি লটন (৪ উইকেট) ও ফিসারের বোলিং (৩ উইকেট)-এর সামনে মাত্র ১৩৪ করে রেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে। জবাবে রেঞ্জার্স ৮ উইকেটে ২৯৫ করে। জনসন ৮৭, সিম্পসন ৫৫ ও এস স্মিথ অপরাজিত ৭৫ করেন। কুলথার্ড ৪টে উইকেট পান।
আর কোনো বড়ো ম্যাচের খবর নেই ওই বছর। তবে, ১৯১৫ সালের ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান স্কুল বনাম ইংলিশ স্কুলের (সবাই ইংল্যাণ্ডের ও ভারতের বিভিন্ন পাবলিক স্কুলের প্রাক্তনী) খেলা হয়। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান স্কুল ১১৮ করে। সি এম বার্লো ৩৯ করেন। জবাবে ইংলিশ স্কুল অতিকষ্টে ১২৩ করে। এস সি বি লী ৩৪ করেন। নিকোলাস ২২ করেন। জনসন ৪ উইকেট নেন। উল্লেখ্য, সেই যুগে রান টপকে যাওয়ার পরেও ব্যাটিং হত।
পরের বছর থেকে (অর্থাৎ ১৯১৫/১৬ মরশুম) প্রচুর দেশীয় ক্লাবের ম্যাচের উল্লেখ থাকছে। অর্থাৎ কলকাতায় দেশীয় খেলোয়াড়দের উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
অক্টোবর মাসে মরশুম শুরু হচ্ছে। মার্কাস স্কোয়ারে স্পোর্টিং ইউনিয়ন পর্যুদস্ত করছে টেন্থ মিডলসেক্স রেজিমেন্টকে। কে পি বোসের ৭৫ স্পোর্টিং ইউনিয়নকে ৭ উইকেটে ১৫৪ রানে পৌঁছিয়ে দেয়। জবাবে টেন্থ মিডলসেক্স রেজিমেন্ট মাত্র ৪০ রান করে। এ মল্লিক ৩টে আর পি মল্লিক ২ উইকেট নেন।
নভেম্বর মাসে টেন্থ মিডলসেক্স রেজিমেন্ট (৭৭ ও ৭৫/১) বালিগঞ্জের (১৭৬/৩) বিরুদ্ধে ড্র করে। বালিগঞ্জের এ এন ওয়ার্ডলি অপরাজিত ১৪১ করেন।
ওই মাসেই বালিগঞ্জ (৮৬) ডালহৌসি (৬৯)-কে হারিয়ে দেয়। বালিগঞ্জের হোয়াইট ৭ উইকেট ও ডালহৌসির হার্টলে ৫ উইকেট পান। ডালহৌসি আগে ব্যাট করে।
আবার একই মাসে পোর্ট কমিশনার (৬১) আগে ব্যাট করে। ক্যালকাটার হোসি ৫টি উইকেট নেন। ক্যালকাটা এস সি বি লীর অপরাজিত ৭৫ এর ওপর ভর করে ১৪৭/৭ তোলে।
ডিসেম্বর মাসে বালিগঞ্জ ইউনাইটেড (এখনও সি এ বি লীগ খেলে) নাটোর পার্কে ৬৩ করে অল আউট হয় সেম্পার (৬ উইকেট) ও চন্দ্রনাথ (৪উইকেট) এর বলে। জবাবে নাটোর ৭ উইকেটে ২৭৩ তোলে। আর এন রায় ৫৪ ও সেম্পার ৮৬ করেন। মহারাজা যতীন্দ্রমোহন (রাণী ভবানীর বংশধর) অপরাজিত ৫৫ করেন।
ডিসেম্বরেই ডালহৌসি (১১২) ও এরিয়ান (৫১/৬) ম্যাচ ড্র হয়। ওয়েব ২৪ ও হ্যানয় ৩২ করেন। ডি বোস ৪ উইকেট নেন। এরিয়ানের এইচ মুখার্জী অপরাজিত ২৫ করেন। স্যার দুঃখীরাম মজুমদার ব্যাট করার সুযোগ না পেলেও দুটো ক্যাচ লোফেন।
অন্যদিকে রেঞ্জার্সের মাঠে মুসৌরি (৮১) খেলতে আসে। ওঁদের জ্যাকস্মিথ ৩৫ করেন। রেঞ্জার্সের লিন্ডসে ৬টা উইকেট নেন। জবাবে রেঞ্জার্সের রান ওঠে ৩ উইকেটে ১৬১। স্মিথ ৭৬ ও জনসন ৬২ করেন।
এরপর ১৯১৫/১৬ মরশুমের কোনও খবর নেই। ১৯১৬/১৭ মরশুমে অর্থাৎ ১৯১৭ সালের প্রথম দিক থেকে কলকাতায় বড়ো ম্যাচের সংখ্যা বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, ১৯১৭ কলকাতার ক্রিকেটের ইতিহাসে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বছর। এই বছরেই কলকাতায় প্রথম শ্রেণির খেলার সূত্রপাত।
এই প্রথম শ্রেণির ম্যাচ কোন্গুলি সেটা বোঝাবার জন্য Association of Cricket Statistician এর গাইড সিরিজের বই ‘A Guide To First Class Matches In India’ (১৯৮২)-তে বলা আছে “All the guides to first-class matches issued by the Association abide by the decisions made by the relevant body controlling first-class cricket. Until the 1970s however the Board of Control for Cricket in India did not concern itself with the classification of matches outside the major tournaments; in the absence of official classification, this Guide has followed the rankings used in the semi-official Indian Cricket annual, which has been published since 1946-47, though there are a few instances in which the annual omitted to print score details of first-class matches. Over the years, Indian Cricket has published brief biographies of famous Indian cricketers. including their first-class statistical records; these records have been used to assist in the classification of many matches from about 1925 onwards. For the years prior to 1925, this Guide has had to rely almost entirely on references printed in various English cricket periodicals. These references are infrequent and in order to assist the readers, those which have been located, are quoted below in full. Our research has been thorough, but the Association welcomes any additional contemporary notes, of which readers may be aware.”
এরই ভিত্তিতে এই ম্যাচগুলি প্রথম শ্রেণির স্বীকৃতি পায়।
১৯১৭ সালের মরশুম অক্টোবর মাসে শুরু হয় মার্কাস স্কোয়ারে মেট্রোপলিটন কলেজ (বর্তমানে বিদ্যাসাগর) বনাম স্পোর্টিং ইউনিয়নের মধ্যে। স্পোর্টিং ইউনিয়নের এম ব্যানার্জি ও জে ঘোষ (দুজনেই ১১ রানে ৫ উইকেট নেন)-এর বোলিং মেট্রোপলিটন-কে ৩৫ রানে অল আউট করে দেয়। স্পোর্টিং জিতে যাওয়ার পরেও ব্যাট করে। তারা ১১২ তোলে। এম ব্যানার্জি ২৫ ও পি ব্যানার্জি ২৩ করেন। মেট্রোপলিটনের বি উকিল ২৮ রানে ৬ উইকেট নেন। ডি শেঠ পান ১১ রানে ৩ উইকেট।
১৫ নভেম্বর মোহনবাগান প্রেসিডেন্সি কলেজের বিরুদ্ধে যে মাঠে খেলতে নামে সেটা আজকের প্রেসিডেন্সি ও হেয়ার স্কুলের দুটো মাঠ জুড়ে একটা মাঠ ছিল। কে সরকার ৪৭ ও বি দাশগুপ্ত ২৯ করলে মোহনবাগান ১৪৮ করে। জবাবে প্রেসিডেন্সি মাত্র ৯৭ রানে অল আউট হয়। এ ব্যানার্জি ৩৮ করেন। আর রায় ২৭ করেন।
১৭ তারিখে ওরিয়েন্টাল ক্লাব ২৯৭ করে আলিপুর স্পোর্টিং ক্লাবের বিরূদ্ধে। এম এম নাগি ১১৪ করেন। হায়ার ৯৬ করেন। জবাবে আলিপুর স্পোর্টিং ৬৮ করেন। এ জ্যাকব ৪৫ রানে ৪ উইকেট ও এম এম নাগী ৯ রানে ২ উইকেট নেন।
এরপরেই আসে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বেঙ্গল গভর্নর বনাম মহারাজা অফ কোচবিহার একাদশের মধ্যে ইডেনে প্রথমবারের জন্য প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা হয়। ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর ১৯১৭।
বেঙ্গল গভর্নর দলের হয়ে নামেন একটি টেস্ট খেলা মরিস বার্ড। ইনি ল্যাঙ্কশায়ার ও সারের হয়ে কাউন্টি খেলতেন। ইনি ৮২৯৫ রান করেন প্রথম শ্রেণির খেলায় ১২টি শতরান সহ। দলে ছিলেন সাসেক্স এর হয়ে কাউন্টি খেলা হ্যারি সিমস। তিনি প্রথম শ্রেণির খেলায় ৩১৫৪ রান করেন ২২০ উইকেট পান। এছাড়া ছিলেন জর্জ ডাল যিনি ২১৫১ উইকেট নেন।
কোচবিহারের দল ছিল দুর্দান্ত। প্রথম শ্রেণির খেলায় ১৭,৯৫২ রান ও ১৫১২ উইকেট নেওয়া ফ্রান্সিস ট্যারান্ট, হ্যাম্পশায়ারের জ্যাক নিউম্যান ( ১৫,৩৬৪ রান ও ২০৫৪ উইকেট), উইকেট কিপার ওয়াল্টার লিভেস ( ৩৮২টি ক্যাচ ও ২৬৬টি স্টাম্প) ছাড়াও ছিলেন বিধু মুখার্জী, মনি দাস, বরোদার মহারাজ কুমার ধৈর্য্যশীল রাও গায়কোয়াড়, সুধন্য কুমার বোস, প্রকাশ ঘোষ, প্রতুল ব্যানার্জি, প্রফেসর শৈলজা রায় (CAB এর প্রতিষ্ঠা সদস্য ও সুকুমার রায়ের খুড়তুতো ভাই)। অধিনায়ক ছিলেন কোচবিহারের রাজকুমার প্রিন্স ভিক্টর নীতেন্দ্রনারায়ণ (কেশব সেনের নাতি)।
ফ্রান্সিস ট্যারান্ট (৫/৯) ও জ্যাক নিউম্যান (৫/২৩) গভর্নর দলকে ৩৫ রানে ফেলে দেয়। কোচবিহার ১৩৮ (ট্যারান্ট ৪৩, মনি দাস ২২, ডালে ৪/৬৯, সিমস ৬/৬৫) তোলে। গভর্নর দল জবাবে মাত্র ৫৯ তোলে। নিউম্যান ৩২ রানে ৩ উইকেট ও ট্যারান্ট ২৬ রানে ৭ উইকেট পায়।
ইতিহাস রচিত হল ইডেনে। এই প্রথম ভৌগলিকভাবে বাংলা থেকে দুটো দল প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলল। একটার ক্যাপ্টেন নিজেই বাঙালি। দলের সাত জন বাঙালি। এতজন বাঙালি তখনও পর্যন্ত একসঙ্গে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেনি। এর আট বছর আগে প্রিন্স হিতেন্দ্রনারায়ণ সমারসেট দলের হয়ে খেলেছিলেন, কিন্তু একা। এবার ৭ জন। সেই ১৯১৭ সালে ৭ জন বাঙালি হারাল এগারোজন ইংরেজের দলকে। একই দলে রাজকুমার-শিক্ষিত মধ্যবিত্ত-দলিত একসঙ্গে খেলল ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে। এবং দলটি জিতল। যদিও মূল কৃতিত্ব ফ্রান্সিস ট্যারান্টের, কিন্তু মনে রাখতে হবে, তিনিও উপনিবেশের মানুষ। অস্ট্রেলিয়া।
১৯১৮ সালে ভালো মতো প্রস্তুতি চলল বড়ো ম্যাচের।
মরশুমের শুরু হয় স্পোর্টিং ইউনিয়ন ও মহামেডানের ম্যাচ দিয়ে। এ মল্লিকের ৭ উইকেট মহামেডানকে মাত্র ১৯ রানে ফেলে দেয়। জবাবে নীরজা রায় ৬২ ও প্রতুল ব্যানার্জীর ৫৯ স্পোর্টিং ইউনিয়নকে ৬ উইকেটে ২৯০ অবধি টেনে নিয়ে যায়। এরপরে বাকি সময়ে মহামেডান ৭ উইকেটে ৪৫ করে।
নভেম্বরে CCC-BCC ১৩১ করল স্পোর্টিং ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। লয়েড ৩৪ করেন, সুধন্য বোস ৩টে ও জে ঘোষ ২ উইকেট নেন। জবাবে স্পোর্টিং ইউনিয়ন ৫৮ করে। প্রতুল ব্যানার্জী ও নীরজা রায় ২২ করেন। CCC-BCC ৭ উইকেটে ৭৭ তোলার পরে ম্যাচ ড্র। জে ঘোষ ৫টি উইকেট নেন।
এরপরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ (১৩১) ডালহৌসি (৫০)-কে ৮১ রানে হারায়। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ফাদার ব্রায়ান ৪০ করেন ও ই আলেকজান্ডার ২০ রানে ৮ উইকেট নেন।
২২ ডিসেম্বর ইডেনে আসানসোল খেলতে নামল CCC-BCC যৌথ দলের বিরুদ্ধে। সিমস ৫ উইকেট নিলে আসানসোল ১৩১ রানেই শেষ। জবাবে CCC-BCC ৯ উইকেটে ২২৭ তোলে। এম সি বার্ড ৬১, গাইস ৮৩, সিমস ৪৯ করেন। নিকোলাস ৫ উইকেট নেন।
ওইদিন রেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ৮ উইকেটে ২২৩ করে। ফাদার ব্রায়ান অপরাজিত ১০৫ রান করেন। রেঞ্জার্স ও ১৯২/৬ তোলে। জ্যাকসন ৫৩ করেন। নাহফিয়েট ৫টি উইকেট নেন।
ওই একই দিন আলিপুরের উডল্যান্ড মাঠে বেঙ্গল জিমখানা ডালহৌসির বিরুদ্ধে মাত্র ৯৫ করেন। বিধু মুখার্জী ২১ ও এইচ মুখার্জী ২৬ করেন। হার্টলে ৬ টা ও লী ৪টে উইকেট নেন। ডালহৌসি ১৬০ তোলে। এইচ ডব্লু লী ৫৫ করেন। নওরোজী ৪ উইকেট নেন।
এরপরেই বর্ষশেষের কলকাতায় বসল বড়ো ম্যাচের আসর। ৩০/৩১ ডিসেম্বর আবার কোচবিহার মুখোমুখি বেঙ্গল গভর্নর দলের। এবারে কোচবিহার দলে আছেন হেনরি লী (ইনি টেস্ট খেলেছেন, মিডলসেক্স এর হয়ে কাউন্টি খেলেছেন। ২০০০০ রান ও ৪০০ উইকেট আছে তাঁর নামে।), পালোয়ানকার বালুর ভাই, বোম্বে ঘরানার প্রথম ভারতীয় ব্যাটার পালয়নকার বিঠঠল (ইনি গোটা কেরিয়ারে সেই যুগে ভারতের প্রথম শ্রেণির খেলায় ২৪০৪ রান করেন), ডলি কাপাডিয়া (সেই যুগে ভারতের প্রথম শ্রেণির খেলায় ১৯০৫ রান করেন), বালুর আরেক ভাই গণপত, বিধু মুখার্জী, সমারসেট দলের হয়ে কাউন্টি খেলা প্রিন্স হিতেন্দ্রনারায়ণ, ডি এম যোশী (সেই যুগে ভারতের প্রথম শ্রেণির খেলায় ১৪৮ উইকেট) ও অধিনায়ক প্রিন্স ভিক্টর নীতেন্দ্রনারায়ণ (পরে মহারাজা)।
কোচবিহার ২৬৫ করে। ট্যারান্ট ৫২, কাপাডিয়া ৫১, নিউম্যান ৯৪ রানে ৫ উইকেট নেন। জবাবে গভর্নর দল তোলে ১০৫ (ম্যাকক্রেডি ৪৩) ও ১৪৩। ট্যারান্ট ম্যাচে ১১৩ রানে ১১ উইকেট।
৩ জানুয়ারি, ১৯১৯। শিয়ালদহে খেলা। ইস্টবেঙ্গল রেলওয়ে (১০২) বনাম কাস্টমস (১২৬/৪)। ই বি আরের জে ও’ কোনর ৫২ করেন। হল ৪টে ও ম্যাকরেডি ৩টি উইকেট নেন। কাস্টমসের আলেকজান্ডার ৪০ ও ম্যাকরেডি ৪৯ করেন।
ওইদিনই কোচবিহার ১৬৩ করে CCC-BCC-র বিরুদ্ধে। কোচবিহারের ট্যারান্ট ৩০ করেন। হোজি ৫টি ও সিমস ৪টে উইকেট নেন। জবাবে CCC-BCC ১৮৭ করেন। হোজি ৪৬ ও সিমস ৩৩ করেন। ট্যারান্ট ৬২ রানে ৪ উইকেট নেন।
৫ জানুয়ারি ১৯১৯ আবার বড়ো ম্যাচ ইডেনে। প্রথম শ্রেণির খেলা। এবার কুচবিহারের অধিনায়ক প্রিন্স হিট্টি ওরফে হীতেন্দ্রনারায়ণ। আগেই বলেছি, সমারসেটের হয়ে কাউন্টি খেলেন। অনেক পরে, ১৯৯৯ সালে, সৌরভ গাঙ্গুলি যে মাঠে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে ১৮৩ করেন, সেই মাঠে ১৯০৯ সালে সমারসেট স্ট্রাগলার্স দলের হয়ে ডেভন ডাম্পলিং এর বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে দুই ইনিংসেই শতরান করেন, পরের ম্যাচে ওই মাঠে ইনকগনিটি দলের বিরুদ্ধে দুই ইনিংসেই ৯০ এর ওপর করেন। তিনি এবার অধিনায়ক। উলটো দিকের দল মরিস বার্ড একাদশ।
কোচবিহার প্রথম ইনিংস ভালোই খেলল। ২৭৭ উঠল। বিঠঠল ১২৬। রঞ্জীর পর প্রথম ভারতীয় যিনি ইডেনে শতরান করলেন। এটাই ইডেনে প্রথম শ্রেণির খেলায় প্রথম শতরান। হিউম্যান ১০৪ রানে ৪ উইকেট নিলেন। MC Bard একাদশ জবাবে তুলল বিশাল ৪১৪। হেনরী লী এবারে MC Bard দলের হয়ে করলেন ১০৪। হোসি করলেন ১৫৮। যোশী ১৪৫ রানে ৪ উইকেট পেলেন।
জবাবে কুচবিহার জবাবে ৯১ রানে অল আউট। ১ ইনিংস ও ৪৬ রানে পরাজিত।
অনেক আশা ভরসায় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। ভিক্টোরিয় মূল্যবোধ ভেঙে পড়ছে। ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলার থেকে কলকাতায় চাকরি শ্রেয় এই ভেবে সওদাগরি অফিসে চাকরি করতে বিলেত থেকে মধ্যবিত্ত ইংরেজরা আসছে। জাতীয় মুক্তি আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। ক্রিকেট মাঠে বাঙালির দাপট বাড়ছে।