বর্ষশেষের কলকাতা : কলকাতার ক্রিকেট (পর্ব ১০) – সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
পর্ব ১০
১৯৩৭ সালের মরশুম বাংলা তথা ভারতের ক্রিকেটে খুবই গুরত্বপূর্ণ সময়। সেই বছর শেষের দিকে এম সি সি তার সরকারী দল নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়। ফলে লর্ড টেনিসনের (কবির ভ্রাতুষ্পুত্র) দল ভারত সফরে এসে বেসরকারি টেস্ট খেলে। তবে সেটা ১৯৩৭-৩৮ মরশুমে। তার আগে ১৯৩৬-৩৭ মরশুমে কলকাতায় CU বেশ কটা আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাচ খেলেছিল।
সেবার ৪ঠা ডিসেম্বর বাংলা রেঞ্জার্স মাঠে বিহারের বিরুদ্ধে খেলতে নামে। টসে জিতে বাংলা ব্যাট নেয়। প্রথম দিন সম্পূর্ন ব্যাট করে ৭ উইকেটে ৩৭২ রান তোলে। কমল ভট্টাচার্য ৬১, ভ্যান ডের গুচ ৬৯, ইন্ডের অপরাজিত ৫৭ ও অধিনায়ক হোসি ৫১ করেন।
পরের দিন কমল ভট্টাচার্য (৪/২০), জীতেন (৩/২৮), ইন্ডের (২/৬) বিহারকে মাত্র ৯৯ রানে অল আউট করে দেয়। বিহারের দ্বিতীয় ইনিংসে বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন লংফিল্ড। হ্যাটট্রিক সহ ১২ রানে ৬ উইকেট নেন তিনি। বাংলার হয়ে রঞ্জি ও প্রথম শ্রেণির খেলায় এটাই ছিল প্রথম হ্যাটট্রিক। মোহনবাগানের ফুটবলার বিজয় সেন ব্যাট হাতে (৪৬) রুখে না দাঁড়ালে বিহার ১০৭ রানের গণ্ডিও টপকাতে পারত না। বাংলা ইনিংস ও ১৬৬ রানে হেরে যায়।
যাই হোক ১৯৩৭ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর কলকাতায় শুরু হয় বেসরকারি টেস্ট। দত্তা হিন্দেলকর ও মুস্তাক আলী ওপেন করতে নামেন। হিন্দেলকর (১০) করে আউট হলেও মুস্তাক ও ভিনু আক্রমন শুরু করেন। ভিনু ৫৫ করে ফিরে গেলে লালা অমরনাথ নামেন। মুস্তাক ও লালা দুজনেই শতরান করেন। মুস্তাক ১০১ ও লালা ১২৩ করেন। দিনের শেষে ভারত ৩১৩/৫ থাকলেও পোপ (৫/৭০) ও গোভার (৪/৯৩) ভারতকে দ্বিতীয় দিন ৩৫০ রানের বেশি এগোতেই দেয়নি।
জবাবে জোসেফ হার্ডস্টাফ (৫৯), নর্মান ইয়ার্ডলে (৩৮) ও পোপ ৪১ করেন। দ্বিতীয় দিনের শেষে ২১৯/৮ থাকলেও পরের দিন ২৫৭ রানের মধ্যে টেনিসনের দল আউট হয়। টেনিসন ৯ নম্বরে নেমে অপরাজিত ২৮ করেনি। নিসার (৫/৭৯) ও অমর সিং (৩/৬৫) দারুন বল করেন। আমির ইলাহি (২/৫১) যোগ্য সঙ্গত দেন।
জবাবে ল্যাঙ্গরিজ (৬/৪১) ও ওয়েলার্ড (৪/৬৭) এর জন্য ভারত ১৯২ রানে আটকে যায়। হিন্দেলকর (৬০), মুস্তাক (৫৫) ও ভিনু (২৫) যা একটু খেলেন। ভারতের রান একসময় ১৪২/২ ছিল। জবাবে তৃতীয় দিনের শেষে ৪২/২ থেকেই টেনিসনের দলেও ৪২/২ তোলে। পরের দিন অমর সিং (৪/৭৬), আমির ইলাহী (২/২৫) ও ভিনু (৪/৪৭) টেনিসনের দলকে ১৯২ রানে অল আউট করে দিয়ে ভারতকে ৯৩ রানে জিতিয়ে দেয়।
৩ জানুয়ারি, ১৯৩৮ – কলকাতায় একটি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলা হয়েছিল। বাংলার রঞ্জি সদস্য পি এন মিলার ১০৪ ও পল ভ্যান ডের গুচ অপরাজিত ৫২ করেন।
৬ জানুয়ারি ১৯৩৮, শুরু হয় টেনিসনের দলের সঙ্গে কোচবিহার মহারাজা দলের লড়াই। টেনিসনের দল টসে জিতে ব্যাটিং নিলে মোটের ওপর ভালো ব্যাট করে ৩১৬ রান তোলে। পার্কস ৮৯ ও ল্যাংরিজ ৮৩ করেন। টেনিসন নিজে ২৭ করেন ও পোপের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ৭৮ রান তোলেন। পোপ ৪৪ করেন। জীতেন ব্যানার্জী ৮৪ রানে ৩ উইকেট নেন। কোচবিহারের মহারাজা ২২ রানে ২ উইকেট পান। অন্যান্য রাজ পরিবারের ক্রিকেটারের মতো বোলিং করা কে ‘ শ্রমজীবীদের কাজ ‘ বলে অগ্রাহ্য করতেন না তিনি।
কোচবিহার কিন্তু পোপ (৪/৫৩) ও ল্যাঙরিজ (৩/৪০) এর সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। লঙফিল্ড ৩৭ ও ভ্যান ডের গুচ ৪২ করেন। কোচবিহার তোলে মাত্র ১৬৭।
টেনিসনের দল দ্রুত গতিতে মাত্র ২১ ওভারে ১ উইকেটে ১২১ তোলে। হার্ডস্টাফ অপরাজিত ৬৪ করেন। ওয়র্থিংটন করেন ৪৩।
পোপ (৫/৩৫) ও ল্যাংরিজ (৪/২২) দাঁড়াতেই দেয়নি কোচবিহার কে। মাত্র ৮৩ রানে তাঁরা অল আউট হয়ে যায়। লংফিল্ড কেবল ২২ করেন। কোচবিহার ১৮৭ রানে হেরে যায়।
শুধু কলকাতার দুটি ম্যাচ থেকে পোপ ১৪ টি উইকেট তুলে নেন। গোটা সফরে পোপ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ গুলোয় ৮৯টি এবং অন্যান্য ম্যাচে ২১টি উইকেট নেন।
জানুয়ারি একদম শেষে (২৯ তারিখ, ১৯৩৮ সাল) রঞ্জি ট্রফির খেলায় মুখোমুখি হয় বাংলা ও সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া। যথারীতি টসে জিতে বাংলা ব্যাটিং নেয়। কিন্তু বিজয় হাজারে (৪/২১), সি কে নাইডু (৩/৫০) ও মুস্তাক আলি (২/২৫) বাংলাকে মাত্র ১১০ রানে ফেলে দেয়। শুধু পি এন মিলার ৪১ করেন।
জবাবে জেমস আলেকজান্ডার (৩/৪০), কমল ভট্টাচার্য (৩/৩৮) ও জীতেন ব্যানার্জী (২/১১) সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া কে ১৫৪ রানে আটকে দেন।
বাংলা দ্বিতীয় ইনিংসে ২২ রানের মধ্যে মিলার, ইন্ডের, সন্তোষ গাঙ্গুলী (পরবর্তী কালে আম্পায়ার) ও নির্মল চ্যাটার্জীকে হারিয়ে বসে। এরপরেই অধিনায়ক জর্জ কার্টার (৮৫) ও ভ্যান ডের গুচ (৮৫) পঞ্চম উইকেটে ১৫৪ রান যোগ করেন। শেষ অবধি ২১৭ তোলে বাংলা। হাজারে ৮৯ রানে ৫, সি কে নাইডু ২৬ রানে ৩ উইকেট ও মুস্তাক আলী ৪৬ রানে ২ উইকেট পান।
১৭৪ রানের লক্ষ্য নিয়ে সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া খেলতে নামে। কিন্তু আলেকজান্ডার (৪/৩২), ইন্ডের (৩/৩৬) ও বাকিরা মিলে সেন্ট্রাল ইন্ডিয়াকে ১৪৫ রানে অল আউট করে দেয়। ভান্ডারকর ৫০ ও জে এন ভায়া ৩৯ করেন।
বাংলা এই ম্যাচটিও ২৮ রানে জিতে যায়। উল্লেখ্য, প্রথম রঞ্জি ম্যাচ ছিল অধিনায়ক হোসির শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচ আলেকজান্ডার জীবনের শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। এরপর তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করেন ও যুদ্ধেই মারা যান। তাঁর কবর আছে কলকাতার ভবানীপুরের কবর খানায়। কলকাতায় টাউন ক্লাবের হয়ে খেলতেন। কলকাতার ক্লাব ক্রিকেটে একাধিক বার ইনিংসে ৯ উইকেট, ৮ উইকেট ও ৭ উইকেট নেন। তাছাড়া ওড়িশা বোর্ড তৈরী হওয়ার পরে বাংলার হয়ে ওড়িশায় খেলতে গিয়ে ম্যাচ ১৪ উইকেট নেন।
১৯৩৮-৩৯ এর মরশুম বাংলার ক্রিকেটে ঐতিহাসিক মরশুম। সেই বছর শুরুই হয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোহিন্টন বারিয়া ট্রফির ম্যাচ ওয়াক ওভার পেয়ে এবং পরের ম্যাচেই (৬-৮ জানুয়ারি, ১৯৩৯) বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় দলের কাছে হেরে। কে সি ইব্রাহিম (পরে ভারতের হয়ে চারটে টেস্ট খেলেন) অপরাজিত ৪৯ করেন, এস এম মেহতাও ৪৯ করেন। পি ডি দত্ত (২/৪৭) ও এ কে দত্ত (৪/৫৫) বোম্বেকে ১৯৯ রানে আটকে দেন। কিন্তু এস এন মেহতা ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে কলকাতাকে ১০৬ রানে আটকে দেন। আর গুপ্ত ৪১ ও পি ডি দত্ত ২১ করেন। এরপরে প্রভাকর গুপ্তে ৮০ করলে এন এ চ্যাটার্জীর ৪২ রানে ৫ উইকেট ও এ কে দত্ত ৪৬ রানে ৩ উইকেট নিলেও বোম্বে ১৬৭ করে। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৯ এর বেশি কলকাতা তুলতে পারেনি। এস এন মেহতা আবার ৪৭ রানে ৫ উইকেট নেন। বোম্বে ১০১ রানে জয়ী হয়।
সে বছর রঞ্জীর ব্যাপারটা আলাদা মাত্রা গ্রহণ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কায় ‘টেস্ট’ খেলার সম্মান ছেড়ে ভারতে চাকুরীরত ব্রিটিশ খেলোয়াড় দের দাপট দেখলো ভারত। হৌসী, লংফিল্ড, স্কিনার, জনস্টন। হয়ত টেস্টে সি.কের ভারতের মুখোমুখি হতেন লং ফিল্ডের ইংল্যান্ড। হয়ত টস করতেন ইডেনে। তার বদলে দলগুলো গেল বদলে। যদিও স্থান কাল পাত্র একই রয়ে গেল। ‘টেস্ট’ এর বদলে ‘রঞ্জী’ ট্রফি। বাংলার আগামীর লড়াই। লাহোরে রেঞ্জার্স ক্লাবও সেবার কলকাতা সফরে এসেছিল।
টালা পার্কে ১৯৩৮ এর ৩ ডিসেম্বর বিহারের বিরুদ্ধে রঞ্জি খেলতে নেমে মাত্র দুদিনে জয়ী হয়। আব্দুল জব্বার আর নির্মল চ্যাটার্জী শতরান করেন। দ্বিতীয় ম্যাচে আবার সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া। তৃতীয় দিন লাঞ্চের আগেই ম্যাচ জিতে নেয় বাংলা। ভ্যান ডের গুচ শতরান করেন। লংফিল্ড দারুন বল করেন।
দ্বিতীয় রঞ্জি ম্যাচের ঠিক আগে ডিসেম্বরের শেষ দিকে জামশেদপুর দল কলকাতা সফরে আসে। ২৭ সে ডিসেম্বর তাঁরা মোহনবাগানের সঙ্গে ড্র করে। বিজয় সেন ৭৭ ও এম ব্যানার্জীর ৬৮ তাঁদের ৯ উইকেটে ২৩৫ অবধি নিয়ে যায়। পরবর্তী কালের কিংবদন্তী কর্মকর্তা ধীরেন দে বল হাতে ৭৬ রানে ৫ উইকেট পান। এরপর মোহনবাগানের এ মিত্র অসাধারণ ১০৬(অপরাজিত) করেন। সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় মোহনবাগান ১৭২/৪ তোলে।
সেই সময় ঢাকায় সেন অ্যান্ড সেন ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হতো। তাতে একটি সেমিফাইনাল হয়েছিল উয়ারী বনাম পণ্ডিতপাড়া। রাখাল মজুমদারকে পণ্ডিতপাড়া দলে রাখলে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। উয়ারী ১২৭ করলে দিনের শেষে পণ্ডিত পাড়া ৮৩/৪। অন্য সেমিফাইনালে সেবার ইস্ট এন্ড (১৭৩ ও ১১৮) ভিক্টোরিয়ার (২০০ ও ৯৭/৪) বিরুদ্ধে ৬ উইকেটে হেরে যায়। ঘটনাটি ঘটে ২৯ সে ডিসেম্বর। ওই দিন কলকাতায় কার্তিক বসু তাঁর সমগ্র (ক্লাব/ রঞ্জি) কেরিয়ারের ৪৬ তম শতরান করেন। মহামাডেনের বিরূদ্ধে মহামাডেনের মাঠে অপরাজিত ১০১ রান করেন। নতুন বছরের শুরুর আগেই ই বি আর ম্যানসন, কাস্টমস ও ওড়িশার বিরুদ্ধে শতরান তখনই করে ফেলেছিলেন। ওই ম্যাচে বাপি বসু ৬২ করেন। এম জে আনোয়ারের ৬৪ রানের জন্য মহামাডেন ২০১/ ৭ তোলে। স্পোর্টিং ইউনিয়ন ১৮৩/৪ তুলে ছয় উইকেটে জিতে যান।
মাত্র দুইদিন বাদেই ক্যালকাটার বিরুদ্ধে বেঙ্গল জিমখানার হয়ে খেলতে নেমে কার্তিক বসু ১০৫ ও বাপি বসু ১০০ করায় বেঙ্গল জিমখানা ২১৫/৩ তোলে। কিন্তু ক্যালকাটা ১৫১/৬ তোলে। স্কিনার কেবল একাই ৬০ করেন। উল্লেখ্য, এই শতরান কার্তিক বসুর মোট ৪৭ তম শতরান ও ইডেনে পঞ্চম (এর আগে স্পোটিং ইউনিয়নের হয়ে পাঁচটি, ইউনিভার্সিটি অকেশনালসের হয়ে একটা ও এইটা)। যাই হোক এরপরই দ্বিতীয় ম্যাচ খেলা হয় রঞ্জির।
সেই সময় একদিকে যুদ্ধ, একদিকে সুভাষচন্দ্রের শারীরিক অবস্থার অবনতি, AISF কলকাতা সম্মেলন, সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন ছাড়াও নিয়মিত কলকাতায় ম্যাচ হচ্ছিল। এইরকম এক ম্যাচে সদ্য নির্মিত ওড়িশা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কে ইস্ট বেঙ্গল অনেক কষ্ট করে ১ উইকেটে হারায়।
আগেই বলেছি বাংলা অতি সহজে সেমিফাইনালে ওঠে। এবার মাদ্রাজ। দাঁড়াতেই পারেনি বাংলার সামনে। বেসিল ম্যালকম ১৮১ করে রেকর্ড করেন। মিলার ৮০ আর কার্তিক বসু করেন ৫০। ম্যালকম আর তারা ভট্টাচার্য মাত্র ৬৫ মিনিটে ১৮০ রান যোগ করেন। বাংলা ৫১৫ রান করে।
ইডেনে ফাইনাল শুরু হলো ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৯।
প্রথমদিন ইডেনে বাংলা টসে জিতে ব্যাটিং নেয় এবং লালা অমরনাথ (৪/৪৪) ও আমির ইলাহি(৫/৭৩)-র সামনে ২২২ রান তুলতে সক্ষম হয় । কার্তিক বসু (৪৮) ছাড়া কেউ দাঁড়াতে পারেনি। তবে বাংলার প্রত্যাঘাতে দক্ষিন পাঞ্জাব দিনের শেষে ২৯/২ ।
পরের দিন কমল ভট্টাচার্য ও বাকিদের চেষ্টায় পাঞ্জাব ১৯৪/৮ হয়ে যায়। তৎকালীন ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান ও পাঞ্জাব দলপতি ওয়াজির আলি শেষ দুজনকে নিয়ে ১৩৪ যোগ করেন যার মধ্যে শেষ জুটিতে ৮৯। তিনি একাই বাংলার রান করেন (অপরাজিত ২২২)। কমল ভট্টাচার্য ১০০ রানে ৫ উইকেট পান। বাংলা দিনের শেষে বিনা উইকেট ২০।
তৃতীয় দিন মিলারের ৮৫, ভ্যান ডের গুচ এর ৬৫ ও ম্যালকমের ৯১ বাংলাকে ৭ উইকেটে ৩১০ অবধি টেনে দেয়। বাংলা ২০৪ রানে এগিয়ে ছিল।
চতুর্থ দিনের শুরুতেই লংফিল্ড ও তারা ভট্টাচার্য ৩২৯ এর মধ্যে আউট। এমতাবস্থায় শেষ উইকেটে আব্দুল জব্বার (রঞ্জিতে বাংলার হয়ে প্রথম শতরানকারি) ও শেষ ব্যাটসম্যান জীতেন ব্যানার্জী(রঞ্জিতে বাংলার প্রথম বাঙালি অধিনায়ক) ৮৯ রান যোগ করলে বাংলা ৪১৮ তোলে। জব্বার ৫৮ ও জীতেন ব্যানার্জী অপরাজিত ২৯ করেন যা তাঁর প্রথম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ। লালা(৯৭/৩) ও মুরাব্বত হোসেন(৯৭/৪) ভালো বল করেন। চতুর্থ ইনিংসে পাঞ্জাবের লক্ষ্য ৩১৩।
দক্ষিন পাঞ্জাব যথেষ্ট শক্তিশালি দল। লালা আর ওয়াজির দুজনেই টেস্ট খেলোয়াড়। ওয়াজির তো বেসরকারি টেস্টে ক্যাপটেনও হন ভারতের। পরে এই দলের আমীর ইলাহিও টেস্ট খেলেন।
বাংলার দলও লড়াকু। ৮ নম্বর অবধি সেঞ্চুরি ব্যাট। জীতেন ব্যানার্জী ছাড়া সবার অর্ধ শতরান ছিল।
বাংলার ভ্যান ডারগুচ ছিলেন টি প্লান্টেশন ইঞ্জিনিয়ার। বেরহেন্ডের জন্ম খিদিরপুরে। বিশ্বযুদ্ধের সমম় মনিপুরে মারা যান। স্কিনার সেনাবাহিনিতে ছিলেন। লংফিল্ড কাজ করতেন অ্যান্ড্রু ইউলে। বেসিল ম্যালকম কাজ করতেন বার্মা শেলে। তিনি ৮০ গড় নিয়ে প্রথম শ্রেণির জীবন শেষ করেন। কেন যে মাত্র তিন খানা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেন তা এক রহস্য। তাঁর রঞ্জি অভিষেকে অপরাজিত ১৮১ আজও বাংলার হয়ে রঞ্জি অভিষেক-এ সেরা। ১৯৬৬/৬৭ অবধি ভারত সেরা ছিল। এখন চতুর্থ।
আব্দুর রহমান ৪ রানের মাথায় কমল ভট্টাচার্যের বলে তাঁরই হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট। ৫ রানের মাথায় মুরাব্বত হোসেনের চাবুক পুল ধরেই আব্দুল জব্বার এর দৌড় “পকড় লিয়া পকড় লিয়া” বলে। খানিক বাদেই আজমৎ হায়াত লঙফিল্ডের বলে বোল্ড। পাঞ্জাব ১৮/৩। লালা আর রোশনলাল ৬১ অবধি টানার পর বেরহেন্ডের বলে লালা বোল্ড হন ৩৭ করে। ৬১/৪। এরপর লঙফিল্ড ওয়াজির কে বোল্ড করলেন। অর্ধেক পাঞ্জাব ৭৫ এ শেষ। বাকিটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। কমল ভট্টাচার্যের বলে যখন সাহাবুদ্দিন ভ্যান ডারগুচের হাতে ক্যাচ তুললেন তখন পাঞ্জাব ১৩৫ ।
অবশেষে রঞ্জি এল বাংলায়। ইডেন প্যাগোডার পেছনে লাল সূর্য টা ডুবতে ডুবতে কি ভাবতে পেরেছিল যে পরের রঞ্জি আসতে ৫১ বছর লাগবে ?