কাদম্বরী – শৌনক সরকার
সময়টা তখন ১৮৭০ থেকে ১৮৮৪ -এর মধ্যে ,ইংরেজদের তখন রাজত্ব কলকাতায়,এক এক করে বাংলার প্রতিভারা উন্মেষিত হচ্ছেন । এই সময় বাংলার ঠাকুর পরিবারও পিছিয়ে নেই , দ্বিজেন্দ্র;নাথ , সত্যেন্দ্রনাথ ছাড়াও ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর অর্থাৎ রবি ঠাকুরের প্রিয় নতুন দাদা ।
তাঁর জ্যোতি দাদা প্রসঙ্গে রবি ঠাকুর বলেছিলেন-
“জ্যোতি দাদা যাকে আমি খুব মানতুম,বাইরে থেকে তিনি আমাকে বাঁধন পরাননি,তিনি আমাকে খুব একটা বড় রকমের স্বাধীনতা দিয়াছিলেন,তাঁহার সংস্রবে আমার ভিতরকার সংকোচ ঘুচিয়া গিয়াছিল ” ।
শুধুই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নন,তাঁর স্ত্রী কাদম্বরী দেবীও কিশোর কবির সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন । এর পিতা শ্যামলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঠাকুরবাড়ীর যোগাযোগ অনেকদিন থেকেই ছিল,মাত্র আট বছর বয়সে কাদম্বরীর বিবাহ হয়,ইনি ছিলেন রোমান্টিক সৌন্দর্যবোধের উদ্দীপ্ত । বাগান করা,পশুপাখি পোষা,পোশাক পরিচ্ছেদ ও চলাফেরায় আধুনিকতার প্রবর্তনে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ঠাকুরবাড়ীর এক অনন্যসাধারণ বধূ , সেই নিঃসন্তানা নারীই তাঁর মর্মবেদনা সাহিত্য-সঙ্গীত-শিল্পজগতের মক্ষীরানী হয়ে নীরবে বহন করে গেছেন, প্রায় সমবয়সী মাতৃহীন দেবরের আদর -যত্নের ভার গ্ৰহণ করে তাঁর মায়ের স্থান পূর্ণ করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু শিশুকে খাইয়ে দাইয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে নারীমনের যে তৃপ্তি তা তাঁর দেবরকে দিয়ে পূর্ণ করা সম্ভব ছিলনা ।
রবির বিলেতযাত্রা এই শূন্যতা আরো বাড়িয়ে তুলেছিল আর তাই জানকীনাথ বিলেত যাত্রার আগে স্ত্রী স্বর্ণকুমারী ও তার চার পুত্র-কন্যাকে জোড়াসাঁকোতে রেখে গেলেন,তখন তাঁদের কনিষ্ঠা শিশুকন্যা ঊর্মিলাকে নিয়ে তাঁর নারীহৃদয়ের স্বাভাবিক আকাঙ্খাকে চরিতার্থ করেছিলেন ।
খুবই কম বয়সে হঠাৎই তিনি তাঁর জীবনে যতি টানলেন,একের পর এক আকস্মিক আঘাত, নিঃসঙ্গতা আর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া জীবনে তিনি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিলেন ,তাই তাঁর মৃত্যুর কারণও অজানা থেকে যায় ।
(সূত্র-রবিজীবনী(প্রশান্তকুমার পাল),বাবু শিবচন্দ্র সরকার পত্রসমূহের বতর্মান অংশিদার রাজীব চক্রবর্তী )