|

জীবনের কথা বলিতে ব্যাকুল (গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের আত্মজীবনী) – অনুবাদ: অরুন্ধতী ভট্টাচার্য ( পর্ব ১০ )

শেয়ার করুন

মূল স্প্যানিশ থেকে অনুবাদ: অরুন্ধতী ভট্টাচার্য

পর্ব – ১০

পর্ব – দশ 

বাবা-মা’র জীবনের এইসব কাহিনি ঠিক কবে প্রথম শুনেছিলাম তা আর এখন আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে এটা মনে আছে যে পূর্বপুরুষের এই গোপন রোম্যান্সের গল্প তখন আমায় বিন্দুমাত্র আকর্ষণ করত না। বরং পরিবারের নামগুলোর প্রতি আমার অনেক বেশি আগ্রহ ছিল। সেগুলো সত্যিই খুব অন্যরকম। প্রথমে জেনেছি মায়ের দিকের নাম: ত্রাঙ্কিলিনা, ওয়েনেফ্রিদা, ফ্রান্সিসকা সিমোদোসেয়া। তার অনেক পরে জেনেছি বাবার তরফের নাম: ঠাকুমা আর্হেমিরা এবং তাঁর বাবা-মা লোসানা ও আমিনাদাব। সম্ভবত এই কারণেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে আমার উপন্যাসের চরিত্ররা ততক্ষণ পর্যন্ত নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না যতক্ষণ না তাদের নিজস্ব স্বভাব অনুযায়ী নামকরণ করতে পারছি।

যাই হোক, গাব্রিয়েল এলিহিয়োর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও ঘনীভূত হয়ে উঠল। কারণ তিনি ছিলেন রক্ষণশীল পার্টির সক্রিয় সদস্য। এই পার্টির বিরুদ্ধেই কর্নেল নিকোলাস মার্কেস সারা জীবন যুদ্ধ করেছেন। নেরলান্দিয়া ও উইসকন্সিন চুক্তির মাধ্যমে শান্তি শুধু খাতায়-কলমে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, বাস্তবে সদ্যোত্থিত কেন্দ্রাতিগ শক্তিই ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল এবং তখনও বহু সময় বাকি ছিল যখন গোদো বা রক্ষণশীল ও উদারপন্থীরা প্রকাশ্যে পরস্পরের বিরোধিতা করা থেকে বিরত হবে। তবে গাব্রিয়েল এলিহিয়োর রক্ষণশীলপন্থী হওয়াটা যত না বেশি মতাদর্শগত সমস্যা তার চেয়ে অনেক বেশি পারিবারিক পরিচিতির ব্যাপার। কিন্তু লুইসার পরিবার সেই পরিচিতিকেই বেশি জোর দিল, অথচ গাব্রিয়েলের স্বভাবে যে ভালো দিকগুলো আছে, যেমন তাঁর তীক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা ও সততা, তা একবারও বিচারের মধ্যে আনল না।

আমার বাবাকে বুঝতে পারা বা তাঁকে খুশি করতে পারা সহজ ব্যাপার ছিল না। তাঁকে দেখে যতটা গরিব বলে মনে হত সব সময়ই তার চেয়ে অনেক বেশি দরিদ্র ছিলেন তিনি। দারিদ্র্যকে মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন। কিন্তু তাকে গ্রহণ বা বর্জন কোনোটাই করতে পারেননি। একই রকম সাহস ও আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে তিনি লুইসা সান্তিয়াগার সঙ্গে প্রেমের সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। আর তা করেছেন আরাকাতাকার টেলিগ্রাফ অফিসের পেছনের দিকের একটা ঘর থেকে, যেখানে তিনি হ্যামক টাঙিয়ে একা একা ঘুমোতেন। অবশ্য এই হ্যামকের পাশেই ছিল তাঁর একার একটি খাট। খাটের স্প্রিংগুলোয় সবসময় ভালো করে তেল দিয়ে রাখতেন, বলা যায় না রাতে তাঁর জন্য কী অপেক্ষা করে আছে। একটা সময় ছিল যখন তাঁর এই গোপন শিকারি মনোভাবের প্রতি বেশ আকৃষ্ট ছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে জীবন আমাকে শিখিয়েছে যে সেটা আসলে একাকীত্বেরই নিষ্করুণ রূপ। আর তখন বাবার জন্য আমি গভীর সমবেদনাই শুধু অনুভব করেছি। 

বাবার মৃত্যুর সামান্য আগে পর্যন্তও তাঁকে বলতে শুনেছি যে সেই কঠিন সময়ে কোনো একদিন বন্ধুদের সঙ্গে যখন কর্নেলের বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেখানে অন্য সবাইকে বসতে বলা হলেও তাঁকে কেউ ডাকেনি। মায়ের পরিবার অবশ্য চিরকাল একথা অস্বীকার করে এসেছে। তাদের মতে এ হল বাবার সঞ্চিত রাগের বহিঃপ্রকাশ। আর তা নাহলে বিস্মৃতি। কিন্তু আমার দিদিমা যখন প্রায় শতবর্ষের কোঠায় পৌঁছেছেন, মনে হত যেন শেষ নয়, পুনর্জীবনের পথে হাঁটছেন আবার, তখন প্রলাপের ঘোরে একদিন তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল:

—‘বসার ঘরের দরজাতেই বেচারা ঠায় দাঁড়িয়ে রইল, নিকোলাসিতো ওকে বসতে পর্যন্ত বলল না।’

বেশ কষ্টের সঙ্গেই কথাগুলো বলেছিলেন দিদিমা। তাঁর এইসব গোপন প্রকাশের অভাবনীয় ঝলকের চির-প্রত্যাশী আমি সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসা করেছিলাম বেচারাটা কে এবং তিনি নির্দ্ধিধায় বলে দিলেন:

—‘গার্সিয়া, ওই যে বেহালা বাজায়।’

এতসব অযৌক্তিক ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটের মধ্যে আমার বাবা হঠাৎই একটা রিভলবার কিনে ফেললেন। এই ব্যাপারটা একেবারেই তাঁর চরিত্রের সঙ্গে খাপ খায় না। কিন্তু কর্নেলের মতো একজন পুরোনো যোদ্ধার সঙ্গে ব্যাপারটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কী কেউ বলতে পারে! রিভলবারটা বেশ ওজনদার ছিল– ০.৩৮ লম্বা, স্মিথ এন্ড ওয়েসনের। কে জানে এর আগে কত জন এটা ব্যবহার করেছে এবং এর দ্বারা কতজনের মৃত্যু হয়েছে! তবে রিভলবারটা সম্বন্ধে একটা কথাই নিশ্চিত করে বলা যায় যে বাবা কখনও সেটা ব্যবহার করেননি, ভয় দেখাতে বা নিছক কৌতূহলে, কোনো কারণেই নয়। বহু বছর পরে তাঁর বড়ো ছেলেমেয়েরা সেটা আবিষ্কার করবে একটা আজেবাজে জিনিস রাখার আলমারির মধ্যে, ঠিক তাঁর সান্ধ্যসঙ্গীতের বেহালাটার পাশে। তখনও তাতে প্রথম কেনা পাঁচটা গুলি ভরা ছিল।

গাব্রিয়েল এলিহিয়ো বা লুইসা সান্তিয়াগা কেউই কিন্তু পরিবারের তীব্র বিরোধিতায় ভয় পাননি। প্রথমদিকে বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে লুকিয়ে দেখা করতেন। কিন্তু লুইসার পক্ষের সকলেই যখন একে একে দরজা বন্ধ করে দিল, তখন যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম অবশিষ্ট রইল চিঠি। বিশেষ বিচক্ষণতার সঙ্গে তা আদান-প্রদান করা হত। যে অনুষ্ঠানে গাব্রিয়েল উপস্থিত আছে কিন্তু লুইসার যাওয়ার অনুমতি নেই, সেখানে তাঁরা দুজন দুজনকে দূর থেকে দেখতেন। কিন্তু এই নজরদারি এমন চরমে পৌঁছল যে কেউই ত্রাঙ্কিলিনা ইগুয়ারানের ভয়ানক ক্রোধের মোকাবিলা করার সাহস পেলেন না। তখন এই প্রেমিক-প্রেমিকা জনসাধারণের চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তারপর গোপনে চিঠি পাঠানোর আর কোনো উপায়ই যখন অবশিষ্ট রইল না, তখন তাঁরা ডুবোজাহাজের নাবিকদের মতো কৌশল উদ্ভাবন করতে লাগলেন। গাব্রিয়েল এলিহিয়োর জন্মদিনে কেউ হয়তো একটা কেক পাঠাচ্ছে, লুইসা কায়দা করে সেই কেকের মধ্যে লুকিয়ে নিজের শুভেচ্ছার কার্ড পাঠিয়ে দিলেন। গাব্রিয়েলও সুযোগ পেলেই তাঁকে টেলিগ্রাম পাঠাতেন। তা আপাতভাবে ভুল বা নির্দোষ মনে হলেও তার মধ্যে সাংকেতিক অক্ষরে অথবা অদৃশ্য কালিতে লেখা থাকত প্রকৃত বার্তা। এই প্রেমের সঙ্গে ফ্রান্সিসকা পিসির সংযোগ তখন একেবারে প্রকাশ্যে এসে গেল। তিনি অবশ্য সমস্ত দোষ অস্বীকার করলেন। কিন্তু এই ঘটনাতেই সর্বপ্রথম বাড়িতে তাঁর কর্তৃত্বের জায়গায় আঘাত আসল এবং শুধুমাত্র বাদাম গাছের নীচে বসে সেলাই করার সময় ছাড়া লুইসার সঙ্গে তাঁর থাকার অনুমতি রইল না। ওই সেলাই করার সময় গাব্রিয়েল এলিহিয়ো রাস্তার ঠিক উলটোদিকে ডাক্তার আলফ্রেদো বারবোসার বাড়ির জানলা দিয়ে লুইসার সঙ্গে কথা বলতেন–মূক-বধিরদের মতো হাত-পা নেড়ে, ইশারায়। লুইসা সেই ইশারার ভাষা এত ভালো করে শিখে নিলেন যে পিসি অন্যদিকে মন দিলেই গাব্রিয়েলের সঙ্গে গভীর প্রেমালাপে মত্ত হতেন। এটা ছিল আদ্রিয়ানা বেরদুগোর উদ্ভাবিত অসংখ্য কৌশলের একটি। তিনি ছিলেন লুইসার কোমাদ্রে ও সবচেয়ে উদ্ভাবনীশক্তি সম্পন্ন সাহসী দোসর। 

এইভাবে তাঁরা ভালোই দিন কাটাচ্ছিলেন, কিন্তু লুইসা সান্তিয়াগার একটি চিঠি গাব্রিয়েল এলিহিয়োকে চিন্তায় ফেলে দিল। বুঝতে পারলেন, তাঁকে এবার নির্দিষ্ট করে একটা কিছু ভাবতে হবে। লুইসা সে চিঠি লিখেছেন খুবই তাড়াহুড়োয়, টয়লেট পেপারে। যে খবর তাতে দিয়েছেন তা একেবারেই ভালো নয়। বাবা-মা তাঁকে নিয়ে যাবেন বাররানকাসে। পথে একটার পর একটা জায়গায় থামবেন। লুইসার প্রেমরোগ সারানোর জন্যই এই নিষ্ঠুর পদ্ধতি। আর সে যাত্রাও ছিল বড়ো কঠিন, কারণ রিয়োয়াচা দিয়ে পালতোলা নৌকা করে এক রাতের যাওয়া নয়, পাদিয়া জেলার মধ্যে দিয়ে সিয়েররা নেবাদার পাহাড়ের বন্ধুর পথে খচ্চরের পিঠে চেপে বা ঘোড়ার গাড়িতে করে বর্বরদের মতো এক যাত্রা। 

সেই বাড়ি বিক্রি করতে যাওয়ার দিন মা আমায় বলেছিলেন, ‘এর থেকে মরে যাওয়াও ভালো ছিল।’ এবং সত্যি সত্যি মরার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তিন দিন ধরে ঘরের দরজা বন্ধ করে শুধু পাউরুটি আর জল খেয়ে ছিলেন যতক্ষণ না নিজের বাবার প্রতি যে ভক্তিমিশ্রিত ভয় তাঁর ছিল তার থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেন। অন্যদিকে গাব্রিয়েল এলিহিয়ো বুঝতে পারলেন যে পরিস্থিতির চাপ শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। তাই তিনিও ভেবে নিলেন এক চরম সিদ্ধান্ত, তবে সাধ্যাতীত নয়। ডাক্তার বারবোসার বাড়ি থেকে লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেলেন উলটোদিকের বাদাম গাছের ছায়ায়। সেখানে দুজন নারী কোলের উপর সেলাই রেখে সভয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি তাঁদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ফ্রান্সিসকা পিসিকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

—‘দয়া করে আমাদের একটু একা থাকতে দিন, ওকে আমার একান্তে জরুরি কিছু কথা বলার আছে।’

—‘খবরদার,’ পিসি বললেন, ‘ওর এমন কিছু থাকতে পারে না যা আমি শুনতে পারব না।’

—‘তাহলে আমার কিছু বলার নেই’, গাব্রিয়েল বললেন, ‘তবে আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি, এর পরে যা ঘটবে তার জন্য কিন্তু আপনি দায়ী থাকবেন।’

লুইসা তাঁর পিসির কাছে কাতর মিনতি করলেন যাতে তাঁদেরকে একা ছেড়ে দেন এবং সব কিছুর দায়িত্ব নিজে নিলেন। তখন গাব্রিয়েল এলিহিয়ো লুইসাকে বললেন যে তিনি বাবা-মা’র সঙ্গে যেখানে খুশি যান এবং যত সময় লাগে লাগুক, কিন্তু তাঁকে একটা প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে তাঁর সঙ্গে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবেন না। লুইসা এত আনন্দিত হলেন যে তাতেই রাজি হয়ে গেলেন এবং আরও বললেন যে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আর কেউ তাঁদের বিয়ে আটকাতে পারবে না।

তারপর প্রায় এক বছর ধরে তাঁরা নিজেদের প্রতিজ্ঞায় অটল থাকার পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। কিন্তু দুজনের কেউই ভাবতে পারেননি এর জন্য কী মূল্য তাঁদের দিতে হবে। যাত্রার প্রথম পর্ব ছিল একদল খচ্চর-চালকের সঙ্গে খচ্চরের পিঠে চেপে সিয়েররা নেবাদার খাড়াই পথ ধরে দু’ সপ্তাহ ধরে যাওয়া। তাঁদের সঙ্গে ছিল চোন (এনকারনাসিয়োন নামকে ভালোবেসে ছোটো করে বলা)—ওয়েনেফ্রিদার পরিচারিকা। বাররানকাস থেকে চলে যাওয়ার সময় সে এই পরিবারে যোগ দেয়। সিয়েররা নেবাদার ওই রুক্ষ পথ কর্নেল ভালো করে চিনতেন। যুদ্ধের সময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাতগুলোতে এই পথেই তিনি রেখে গিয়েছিলেন তাঁর বেশ কয়েকজন সন্তানের চিহ্ন। তাঁর স্ত্রী অবশ্য ওই পথ চিনতেন না। তবুও নৌকাভ্রমণের তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্য এই পথকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু আমার মায়ের কাছে সেই ভ্রমণ ছিল এক দুঃস্বপ্ন। সেই প্রথম খচ্চরের পিঠে চেপেছিলেন বলে শুধু নয়, তার সঙ্গে ছিল প্রখর রৌদ্র আর অঝোর বৃষ্টিপাত। তাঁর তখন মনে হচ্ছিল গভীর গিরিখাত থেকে উঠে আসা ঘুম পাড়ানি কুয়াশার মধ্যে তাঁর মন যেন একটা সুতোয় ঝুলে আছে। এক অনিশ্চিত প্রেমিক, তার মাঝরাতের পোশাক আর ভোররাতের বেহালার সুর–এসব কথা ভাবতে গিয়ে মনে হল কল্পনা বুঝি তার সঙ্গে ছলনা করছে। চতুর্থ দিনের দিন আর সহ্য করতে না পেরে তিনি নিজের মাকে ভয় দেখালেন যে এবার বাড়ি ফিরে না গেলে ওই গিরিখাতে ঝাঁপ দেবেন। মিনা তখন মেয়ের চেয়েও বেশি ভয় পেয়ে গেলেন। ফিরতে রাজিও হলেন। কিন্তু খচ্চরের দলের যে মাথা সে তাঁর সামনে মানচিত্র খুলে ধরে দেখাল যে ওখান থেকে এগিয়ে যাওয়া আর বাড়ি ফিরে যাওয়া দুই-ই সমান দূরত্ব। তারপর এগারো দিনের মাথায় সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন যখন পথের শেষ বাঁকটা থেকে বাইয়েদুপুরের উজ্জ্বল সমভূমি দেখা গেল। 

এই যাত্রার প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার আগেই গাব্রিয়েল এলিহিয়ো তাঁর ঘুরে বেড়ানো প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগের একটা পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে ফেললেন। বাররানকাসে পৌঁছনোর আগে যে সাতটা শহরে লুইসা ও তাঁর মা ছিলেন সেখানকার টেলিগ্রাফ অপারেটরদের সহযোগেই তা সম্ভব হয়েছিল। লুইসা সান্তিয়াগাও অবশ্য নিজের ভূমিকাটি সফলভাবে পালন করেছিলেন। এই জেলায় প্রচুর ইগুয়ারান ও কোতেস পদবীর মানুষ বাস করত। স্ব-সম্প্রদায়ের প্রতি তারা অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিল। লুইসা তাদেরকে নিজের দলে টানতে সমর্থ হলেন। তার ফলে বাইয়েদুপুরে যখন তিন মাসের জন্য ছিলেন তখন গাব্রিয়েল এলিহিয়োর সঙ্গে টেলিগ্রাফ মারফত যোগাযোগ রাখতে পেরেছিলেন, যতদিন পর্যন্ত না, এক বছর পরে, এই যাত্রা শেষ হয়। প্রতিটি শহরের টেলিগ্রাফ অফিসের সামনে দিয়ে তিনি একবার চলে গেলেই কাজ হয়ে যেত। কেন-না তাঁর অল্প বয়সি ও অত্যুৎসাহী সহচরীরা তারপর সংবাদ আদান-প্রদানের কাজটা করে দিত। নিঃশব্দসঞ্চারী চোনও এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে নিঃশব্দে তার কাপড়ের ভাঁজে লুকিয়ে টেলিগ্রাফ নিয়ে এসে লুইসাকে দিত কিন্তু তাতে লুইসা বিব্রত হতেন না, কারণ চোন লিখতে-পড়তে জানত না আর সবচেয়ে বড়ো কথা গোপনীয়তা রক্ষার জন্য প্রয়োজন হলে সে খুন পর্যন্ত করতে পারত। 

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *