জন্মদিন – বৈশালী সেন

শেয়ার করুন

কাক ভোরে ওঠার অভ্যেস কোনোকালেই নেই ইমনের । ইস্কুলে পড়ার সময় দাদি অনেকদিন ভোরে ঘুম থেকে তুলে দিয়েছেন । কিন্তু বই এর পাতা খোলার কিছু সময়ের মধ্যেই ইমনের চোখের পাতাও বুজে আসত ।

মন বলছে আজ যে তার জন্মদিন । ভোর থাকতে ইমন বেড়িয়ে পড়ে ।

ট্রেনের জানালা দিয়ে পেরিয়ে যাওয়া সবুজ মাঠ , মাটির বাড়ি , কাশফুল দেখতে দেখতে গতবছর পুজোয় পুরুলিয়া বেড়াতে যাওয়ার কথা মনে পড়ে তার । সেই ছিল মা-বাবার সাথে শেষ বারের মতো তার বেড়াতে যাওয়া । আর তার পরেই…সব কেমন এলোমেলো হয়ে যায় ।

বেহালার বাসে ইমন যখন উঠল তখন শহুরে জীবনের ভোরের ব্যস্ততা সবে শুরু হয়েছে । চায়ের দোকানে ধোঁয়া  ওঠা ভাড়ে চুমুক দিচ্ছে পথ চলতি মানুষজন । স্কুলের ব্যাগ কাঁধে ঘুম চোখে ছোট ছোট শিশুদের দেখে নিজের ছোট বেলার কথা মনে পড়ে তার ।

আজ কতদিন বাদে মা এর সাথে দেখা হবে ! ইমন যখন অতীতের পাতাগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে ব্যস্ত তখন কন্টাকটারের গলা কানে এলো , ‘চৌরাস্তা… চৌরাস্তা ।’

একমাত্র ছেলের জন্মদিন । তাই পায়েস রেঁধেছে অনুপমা । ধূপ-প্রদীপ , মিষ্টি-পায়েস সব সাজিয়ে দিয়েছে  । শুধু মালাটা পড়াতে পারেনি অনুপমা । তার যে দৃঢ় বিশ্বাস… সম্রাট আসবেই….

 

মা..মা..বাবা..দিদিভাই কোথায় তোমরা?

আমি এসে গেছি । লোহার গেট খুলে সোজা ঘরে ঢুকে পড়ে ইমন ।

সাত মাস আগে ডাক্তার যখন সম্রাটের ব্রেন ডেথ্ ডিক্লেয়ার করলেন তখন দাশগুপ্ত পরিবার অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেয় আর তাতে হার্টের অসুখে ভুগতে থাকা একটি মুসলিম ছেলে প্রাণে বেঁচে যায়….

 

অনুপমা ইমনের বুকের বাঁদিকে আলতো করে হাত রাখেন । ঠিক এখানেই রয়েছে তার আদরের সন্তান ।

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • সমব্যথী – সন্দীপ ভট্টাচার্য্য

    সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল ভীষণ। দরজায় দাঁড়িয়ে সোমা অপেক্ষা করছিল সুনীলের। ঘরে ছেলেটা ঘুমাচ্ছে অঘোরে। সোমার মনে পড়ে যাচ্ছিল বিয়ের প্রথম দিকের কথাগুলো। প্রথম প্রথম সোমা ফ্ল্যাটের বারান্দায় ঠায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতো সুনীলের। রাস্তায় সোডিয়াম ভেপারের আলোয় ভেজা সুনীলকে দেখতে পেলেই যেন একগাদা সোহাগ, আহ্লাদ জেগে উঠত তার মনে। ঘরে ফেরার পরে দুইয়ে মিলে কত খুনসুটি,…

  • বালিশ – প্রতিমা সেনগুপ্ত

    এখন রাত্রি সাড়ে বারোটা। লালবাজার সিকিউরিটি সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট থেকে, কয়েকজন সরকারী অফিসার এসেছিলেন। ওরা মা’র কলিগ। কিসব যেন সমস্যা হয়েছে। সামান্য কথাবার্তা হল নিচু গলায়। ওরা মা’কে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন। আমি – সিদ্ধার্থ রায়। দক্ষিণ কলকাতার একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ি। গল্ফগ্রিনের একটা বহুতলের চারতলার ফ্ল্যাটে মা’র সঙ্গে থাকি। আমার মা পেশায়…

  • ডিটেনশন-ক্যাম্প – ইভান অনিরুদ্ধ

    অবসরপ্রাপ্ত স্কুল মাস্টার আশরাফ জমাদার। বয়স ষাট পেরিয়েছে গতবছর। বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের ভিটে এই গ্রামেই। তার  দুই মেয়ে । সবার বিয়েশাদি হয়ে গেছে। এখন বাড়িতে তারা দুইজন কেবল। বড় মেয়েটার বিয়ে পাশের গ্রামেই দিয়েছেন। আর ছোট মেয়ে থাকে গুয়াহাটি।উঠানের পুবদিকে মাস্টারের বউ রাহেলা দেশি লাউয়ের চারা লাগিয়েছে। কী সুন্দর লকলকিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে আকাশের দিকে উঠে…

  • |

    ড্রোন – অরিজিৎ সেন

    আব্রাহাম জিজ্ঞেস করলেন, “প্রভু ঐ শহরে যদি পঞ্চাশ জনও নিরাপরাধ মানুষ থেকে থাকেন তাও কি আপনি পুরো শহরটাকে ধ্বংস করে ফেলবেন?” প্রভু বললেন, “পঞ্চাশজন নিরাপরাধ মানুষ থাকলে আমি সবাইকে ছেড়ে দেব।“ খানিকপরে আব্রাহাম বললেন, “অপরাধ নেবেন না যদি পঁয়তাল্লিশ থাকেন?” “তাহলেও শহর বেঁচে যাবে।“ প্রভু উত্তর দিলেন। “চল্লিশ” “তাহলেও কিছু করব না।’ “তিরিশ?….কুড়ি….দশ।” স্মিতহেসে প্রভু…

  • প্রতিশোধ – অম্লান চক্রবর্ত্তী

    মাংসের ঝোলে আর একটু বেশী গরম মশলা ও লঙ্কাবাটা দিয়ে নাড়তে লাগল শ্রেষ্ঠা। পাশের বাড়ির রবীনদার আজ আইবুড়ো ভাত খেতে আসা তাদের বাড়িতে। মাংস রান্নার দায়িত্ব নিয়েছে শ্রেষ্ঠা। কারণ, এই সুযোগ। তখন ষোল বছর বয়স শ্রেষ্ঠার। একদিন দুপুরে ফাঁকা বাড়িতে নতুন কম্পিউটার দেখানোর নাম করে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছিল বছর বাইশের রবীন। মফস্বল শহরে…

  • ক্রিসমাস – চিরঞ্জীত সাহা 

    কুয়াশার বিদিশা ভেদ করে , বুলেট বেগে সাইকেল ছুটিয়ে রাজ এসে থামল স্টেশন সংলগ্ন গ্যারেজে । কুকুরতাড়িত ব্যক্তির মতো প্রাণপণ দৌড়ে  টিকিট কাউন্টারে প্রবেশ করতেই শুনল , ট্রেন লেট । তিন বছর ধরে ভোর চারটের ট্রেনে হাওড়া পাড়ি দেওয়া , বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত উদ্যমী এই যুবকের কাছে পড়িমড়ি করে ভোরের ট্রেন ধরা আজ নতুন কিছু…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *