হাতকাটা কর্মসূচি – ইভান অনিরুদ্ধ

শেয়ার করুন

আজ বন্ধের দিন। অফিস যাবার তাড়া নেই, কিন্তু নিজের ভেতরে অন্য একটি বিষয়ে তাড়া আছে। রফিক কোনো মতে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় চেঞ্জ করে উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাবের মাঠের দিকে ছুটল। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল দশটা বেজে গেছে।
মাঠের মূল গেটের আশেপাশে ছোটোখাটো বারোয়ারি মেলা বসেছে। বাচ্চারা মা-বাবার হাত ধরে মেলার দোকানে দোকানে ঘুরছে। রফিকের কাছে ঈদ-ঈদ লাগছে যেন এই সকালটা। মাঠের ভেতরে একটা ছোটো মঞ্চ করা হয়েছে। সেখানে দুজন পুলিশ অফিসার চেয়ারে বসে আছে। একজন মাইকে ঘোষণা দিচ্ছে- ‘ভাইসব, আপনারা এলোমেলো ঘোরাফেরা না করে মাঠের ভেতর মঞ্চের কাছাকাছি গোল হয়ে দাঁড়িয়ে যান। অল্প কিছুক্ষণের ভেতর আমরা দুইজন নামকরা দুর্নীতিবাজের হাতকাটা অনুষ্ঠান শুরু করব। আজ আমাদের সবার জন্যই এটা আনন্দের দিন। এর আগে কখনও আমরা এই হাতকাটা কর্মসূচি চালু করিনি। যেভাবে আমাদের দেশে, সমাজে দুর্নীতি, লুটপাটের মচ্ছব শুরু হয়েছে তাতে আশা করি এই নতুন বিধান জনমনে স্বস্তি আনবে।’
রফিক রিকশাভাড়া মিটিয়ে সরাসরি মাঠের ভেতর ঢুকে গেল। মাঠভর্তি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের লোকজন তাদের যন্ত্রপাতি ঠিক করছে দুই দুর্নীতিবাজের হাতকাটা অনুষ্ঠানটি লাইভ দেখাতে। রফিক একজন পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞেস করল- ‘ভাই, এরা কোন সেক্টরের চোর?’  অফিসার গম্ভীর হয়ে উত্তর দিল- ‘একজন ব্যাংকের আরেকজন রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের।’  রফিকের মুখ খুশিতে চকচক করে উঠল- ‘সাউন্ডস গুড। হারামির বাচ্চাদের উচিত সাজাই হচ্ছে। আমার পকেটে মাস শেষে দশ টাকাও থাকে না। অথচ শুয়োরের বাচ্চারা কোটি কোটি টাকা চুরি করে কত আরামে জীবন কাটাচ্ছে। এইবার তোদের আরাম আয়েস পাছার তল দিয়ে বের হবে!’
কিছুক্ষণের ভেতর সাদা মাইক্রো থেকে দুইজন দুর্নীতিবাজকে হাঁটিয়ে মাঠের মাঝখানে নিয়ে আসা হল। তারপর একটা টেবিল আনা হল। এই টেবিলের উপর ডান হাত রেখে ঘ্যাচাং করে কেটে ফেলা হবে কবজি পর্যন্ত। শত শত মানুষ উৎসবের আমেজে এই শাস্তি দেখতে এসেছে। পাশ থেকে এক ভদ্রলোক বলল- ‘দারুণ! বেটার লেট দেন নেভার!’ এক রিকশাওয়ালা প্রায় চিৎকার করে উঠল- ‘ছিডাইয়ালা, চুতমারানির ফুতাইন আমার দেশটারে খাইয়ালতাছে!’ একজন মা তার ছয়-সাত বছরের বাচ্চাকে দুই চোরকে দেখিয়ে বলছে- ‘আমাদের দেশের খুব ক্ষতি করেছে এই দুইজন। তাই এদের হাত একটু পরেই কেটে ফেলবে পুলিশ। যারা দেশের টাকা, আমাদের টাকা চুরি করবে এখন থেকে এভাবে হাত কেটে দেয়া হবে। দারুণ না বিষয়টা!’ বাচ্চা ছেলেটিও খুব খুশি। সে তার মাকে বলল- ‘আমি হাতকাটা অনুষ্ঠান না দেখে কিন্তু বাড়ি যাব না!’

শেয়ার করুন

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *