পল্লব গোস্বামীর গুচ্ছ কবিতা
একদিন সারাদিন
ছোটো ছোটো বদ্রী পাখির মতো
দিনগুলি ভাবি
দিনভর ওরা কোঠাঘরে কিচমিচ করে
ঠান্ডা লাগে, জ্বর আসে
যেমনভাবে জ্বরে কাবু সারা শহর
দানাপানির জন্য
ভিক্ষাপাত্র নিয়ে ঘুরি
বাগড়াইচণ্ডীতলায় বিশাল হাট
সেখানে
ফ্রীঞ্চ, ককাটেল, জাভা,
লাভ বার্ডের আসর
তবুও ভিক্ষা মেলে না
মাথার ভেতর
বুড়ো কাছিমের মতো হাঁটে
একেকটা দিন
সমুদ্র ফেনায় শুশ্রূষা কেটে যায়–
সারাদিন ভাবি ,
দিনগুলির পালক খসানো ব্যথা…
তিলবনি
আমরা পাহাড়কে আমাদের মা ভাবতে পারি
আমরা পাহাড়ের তলায় বসাতে পারি
চড়কের মেলা
ভক্তার পিঠে কাঁটা ফুটলে,
ভালোবেসে মুছিয়ে দিতে পারি,
রক্ত
আমরা পাহাড়কে আশ্রয় করে,
পাহাড়ের পা কে
সন্তানের পা ভাবতে পারি
গুটি গুটি পায়ে
বানাতে পারি শ্মশান
এসব সবই, ভাবতে পারি আমরা
শুধু ভাবতে পারি না,
যখন পুঁজির কাছে, বিক্রি হয়ে যায়–
আস্ত একটা পাহাড়।
বাঁশতলা
মামাবাড়ির বাঁশতলা দিয়ে যখনই যাই,
শুনতে পাই কিছু বেলোয়ারী চুড়ির শব্দ।
গাঁয়ের মেয়েরা বাঁশপালা দিয়ে, ধান সিদ্ধ করে–আগুন পোহায়,
আবার বাঁশের টুকরো দিয়েই
বানিয়ে ফেলে শ্মশানের খাট।
খামারে খামারে শুধু নীরব বাঁশবন
গ্রাম জীবনের মন্ত্র তোলে
এদিকে তেমন বাঁশবন নেই
থাকলে দেখাতাম,
কিছু কিছু ঘাস
কীভাবে আকাশ ছুঁয়ে যায়।
জল ছাঁকা ভাত
সমস্ত গ্রীষ্মের সন্ধ্যা জুড়ে, আমাদের জল ছাঁকা ভাত।
মনে পড়ে, বড় মা’র হাতের কুমড়ো ফুলের বড়া-পাতার মুকুট-সজনের ডাঁটা
এখন, জাগতিক রান্নাঘর জুড়ে শুধু
আমানির গন্ধ
দিনগুলো ফিরে গেছে, তালের গাড়ি করে অদূর দিনেই।
শিশুর ঝুমঝুমির মতো,
বড় মা’র রাখা আঢাকা ভাত
খেয়ে গেছে,
আমাদের পাশের বাড়ির অন্ধ বেড়াল।
বেনা গাছ
মানুষ মরে গেলে কোথাও যায় না
থেকে যায় কোথাও না কোথাও
যেভাবে, হরিধ্বনি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও
রয়ে যায় তার রেশ
মৃতদেহ পুড়ে যাওয়ার পরও
ঘুরতে থাকে শ্মশানের কুকুর
তেমনই,
পুকুর পাড়ে পোঁতা
কেবল বেনা গাছটিই জানে
প্রিয় জন
কতটা প্রিয় ছিল আমাদের।