ফ্যান দে মা এট্টুস ফ্যান দে – সুতপা ভট্টাচার্য চক্রবর্তী
ফ্যান দে মা এট্টুস ফ্যান দে… এ আর্তনাদ কি আবার!!!
ঐতিহাসিকরা বহুদিন ধরেই যা বলে আসছেন, তা এবার প্রমাণ করল বিজ্ঞান। পুরোনো আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যের ওপর আধুনিক প্রযুক্তির প্রলেপ দিয়ে একদল ভারতীয় গবেষক প্রামাণ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে ১৯৪৩-৪৪ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষ (বা ‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’, যেহেতু ১৩৫০ বঙ্গাব্দ) আদৌ কৃৃৃৃষির ব্যর্থতা জনিত খরা ছিল না, ছিল মনুষ্যসৃষ্ট আকাল। আসলে মানুষই মানুষকে পদদলিত করতে চায়, মানুষই চায় মানুষকে ভিক্ষুক করে নিজে রাজা হতে। আর এই চাওয়ার ফল আগে একবার দেখেছে আমার দেশ। চতুর্দিকে কেবল আর্তনাদ—ফ্যান দে মা এট্টুস ফ্যান দে…। আবারও কি সেই পথেই এগোচ্ছে এ দেশ—প্রশ্নটা আমার আপনার সকলের। কৃষক আন্দোলন কি সেই পথেই নিয়ে চলেছে আমার দেশকে? চলতি কৃষক আন্দোলনকে ফিরে দেখলে দেখতে পাই—কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে চলতে থাকা শান্তিপূর্ণ ধর্না সমাবেশে হামলা হয় বলে বিক্ষোভকারী কৃষকদের দাবি। এর পরেই শুরু হয় পালটা হামলা। উত্তেজিত কৃষকরা তেড়ে যান। তার মধ্যে হামলাকারীদের তরফে শুরু হয় পাথর ছোঁড়া। আন্দোলনকারীদের হঠাতে পুলিশ লাঠি চালায়। কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। তাঁবু ভেঙে দেওয়ার জেরে হামলাকারীদের উপর চড়াও হয় কৃষকদের একাংশ। কয়েকজনকে দেখা যায় তলোয়ার নিয়ে তেড়ে যেতে। পরে পিছু হটে হামলাকারীরা। কৃষকদের অভিযোগ, বিজেপি ও আরএসএস সমর্থকরা গ্রামবাসীর ছদ্মবেশে আন্দোলন ভাঙার ষড়যন্ত্র করেছে। সিঙ্ঘু চেকপোস্টের উত্তেজনা, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের জেরে নতুন করে উত্তপ্ত কৃষক আন্দোলন। পার্শ্ববর্তী হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের গ্রামে গ্রামে চলছে বিক্ষোভ সমাবেশ। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েতের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি অবস্থান আন্দোলন চলবেই। ইচ্ছে করে আন্দোলনকে হিংসাত্মক চেহারা দিতে চাইছে কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশ সরকার। আমরা গুলিতে মরব কিন্তু কৃষি আইন বাতিল না করে ফিরব না। কৃষক নেতার এমন হুঁশিয়ারির পর থেকেই হরিয়ানার বিভিন্ন গ্রামে শুরু হয়েছে ক্ষোভ প্রকাশ। উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে মহাপঞ্চায়েত শুরু। এখান থেকেই আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েতের সমর্থনে বিরাট জনসভা ঘিরে চিন্তিত উত্তরপ্রদেশ সরকার। অন্যদিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও আম আদমি পার্টি সরাসরি পক্ষ নিয়েছেন কৃষকদের। রাজনৈতিক মহলের গুঞ্জন, আন্না হাজারে অনশনের কথা বলেছেন। এর ফলে বিপদ দেখেছেন একদা আন্না শিষ্য কেজরিওয়াল। যদিও কৃষক নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, আন্না আসলে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই আন্দোলনে নামছেন। কারণ, এতদিন তাঁর তেমন কোনও উপস্থিতি ছিল না। দিল্লির লাগোয়া গাজিপুর চেকপোস্টে থাকা পুলিশ বারবার কৃষক নেতাদের বুঝিয়ে এলাকা খালি করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু অনড় নেতারা জানান, কৃষি আইন বাতিল করতেই হবে সরকারকে। সিঙ্ঘু, টিকরি, গাজিপুর চেকপোস্টে লাখো কৃষক জমায়েত করে আছেন।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং বলেছেন, কিছু গুন্ডার কারণে কৃষকদের অপমান করা হয়েছে। আর কৃষক আন্দোলনের পাশে থেকে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাষ্ট্রীয় লোকদল নেতা জয়ন্ত চৌধুরী। আরএলডির বড়োসড়ো প্রভাব রয়েছে উত্তর প্রদেশের কৃষকদের মধ্যে। চৌধুরী চরণ সিং স্বল্পকালীন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর পৌত্র জয়ন্ত চৌধুরী। কৃষক আন্দোলনের পক্ষে সওয়াল করেছেন হরিয়ানায় এনডিএ শরিক দল জেজেপি নেতা দুষ্মন্ত সিং। হরিয়ানা জুড়ে ছড়িয়েছে ক্ষোভ। রাজস্থান, হিমাচলপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে চলেছে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন। কৃষক নেতা তথা বিকেইউ মুখপাত্র রাকেশ টিকাইতের কান্না, তাঁকে হটানোর চেষ্টা দেখে রাতারাতি কৃষক আন্দোলন ফের মোড় নিয়েছে। অভিযোগ, আরএসএস এই আন্দোলন ভাঙার জন্য ফের ছলাকলা করছে। এর জেরে শুক্রবার ভোর থেকে দিল্লির কাছে গাজিপুর চেকপোস্ট ফের সরগরম পরিস্থিতি।ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন নেতা রাকেশ টিকাইতের কান্নার ভিডিও দেখে উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানার গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়েছে ক্ষোভ। সকাল হতেই হরিয়ানার দিক থেকে দিল্লি আসার জন্য শুরু হয়েছে ট্রাকটর মিছিল। হাজার হাজার কৃষক গাজিপুর চেকপোস্টে অবস্থানকারী কৃষকদের সঙ্গে যোগ দিতে আসছেন।
এমনকি দিল্লির লাগোয়া এলাকা থেকে কৃষকরা ঢুকতে শুরু করেছেন গাজিপুরের আন্দোলনস্থলে। এখানে লক্ষাধিক কৃষক করছেন অবস্থান।
অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে আরও সরগরম পরিস্থিতি। এখানে ডাকা হয়েছে মহাপঞ্চায়েত। স্থানীয় পঞ্চায়েতগুলি এই মহাপঞ্চায়েত থেকেই আন্দোলনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। যদিও সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা, সারা ভারত কৃষকসভা, কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি, ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতৃত্ব আগেই জানান গত ২৬ জানুয়ারি যে বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে তা হল আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার কৌশল। সরকারের কাছে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লার, কৃষি আইন বাতিল না হলে আন্দোলন জারি থাকবে।
২৬ জানুয়ারি ঘটনার জেরে আন্দোলনকারী কৃষকদের উপর নতুন করে চাপ তৈরি করে কেন্দ্র সরকার। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ সরকার গাজিপুরে অবস্থানকারী কৃষক নেতাদের হটাতে পুলিশ পাঠায়। অভিযোগ, এখানে কৃষকরা যে লঙ্গর (সাধারণের জন্য খাবারের কেন্দ্র) চালাচ্ছেন তার জল সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। কেন লঙ্গর বন্ধ করছে উত্তরপ্রদেশ সরকার? সর্ব ধর্মের জন্য খাবারের কেন্দ্রে জল বন্ধের ফল পাবে যোগীর সরকার। হুঁশিয়ারি পাঞ্জাবের কৃষক নেতাদের।