লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডলের দশটি কবিতা

শেয়ার করুন

নিষ্ক্রমণ ইচ্ছের উপর রাখে ভোরের বাঁশি

এই যে বাজনা বাজে আলো আঁধারের মিলিতরেখায় আর দূরে সরে যায় সমস্ত উপেক্ষা, আমার ভিতর ছড়িয়ে পড়ে নীল ধ্রুবতারা—ভাঙা ভাঙা বাদামি ত্বকের শ্যাওলা পরিত্রাণ চায়—সমস্ত নোটিফিকেশন ছাড়াই জ্যামিতিক বিন্দুরা নিষ্ক্রমণ ইচ্ছের উপর রাখে ভোরের বাঁশি 

সে এক অনন্ত পথের গ্রিনলাইট, ফ্লাইওভার ছিঁড়ে সাগরকোনণ থেকে উঠে আসে গুচ্ছ গুচ্ছ ফার্ন— অভয়ের বার্তা নিয়ে সুখ গল্প সাজায় পাথর ভূমির সূর্যকালে

খাদের দ্রিমি দ্রিমি দেহ-ভঙ্গিমায় থমকে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই 

বৃত্ত ভেঙে ছুটে যায় অপরা ব্যবচ্ছেদ

পাঁজর ডিঙানো রাস্তার ওপারে হারমোনিয়ামটি বেজে উঠতেই ভালোবাসতে শিখে যাই পথকে, সাদাকালো রিডের  কম্পাঙ্কে ভেঙে যায় শীতার্ত মাইলস্টোন— আলগোছে যে চলে গেছে বনের ভিতর—উপোষ কণ্ঠে সে-ও ধ্রুবতারার সাথে হাঁটে, বৃত্ত ভেঙে ছুটে যায় অপরা ব্যবচ্ছেদ 

উপেক্ষা করতে পারিনি নিঝুম উৎরাই—তারই ওম নিয়ে রাতের গভীরে সজোরে ব্রেক কষে মিলন, মেইন প্লটের বিভাজনে ঘন অন্ধকারে ধেয়ে আসছে স্রোতের অন্তরা 

আমাদের ভিতর রিপুরা অস্থির হয়ে পড়ে—ভাঙা পাথরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে উঁচিয়ে ধরে সেলফি স্টিক

জল আঁকড়ে ধরে ইতস্তত ভ্যাপার

পদ্মিনী সন্ধ্যার গা বেয়ে ম্রিয়মান সুন্দরীটি অনবরত আদিম–টগর গাছের নীচে হারিয়ে ফেলে অন্তর্দহনের নোটবুক, আশ্চর্য লিকলিকে মেঘে সিজন চেঞ্জের শ্বাস বাড়ে, ধ্বনি ভেসে থাকা জল আঁকড়ে ধরে ইতস্তত ভ্যাপার –মনখারাপ করা গাঢ় চুম্বনে পুকুরটির পাড়ে আলো কমে আসে ক্রমশ–পাতিহাঁস হেলে-দুলে এগিয়ে যায় কোক রঙের ভালোলাগায় 

সন্ধ্যার সপ্তর্ষির দিকে তাকাই, অল্প জ্বরের অমেয় পদধ্বনি জেগে আছে নিশ্বাসের কারুকাজে–অস্পষ্ট হয়ে আসছে হাত পা এবং অস্থি 

আমি নাতিশীতোষ্ণ, ধূপকাঠির ইতিহাসে এছাড়া কোনো পরিচিত শত্রু নেই 

কালসিটে মুখে দুপুর গড়িয়ে পদ্ম হয়ে যায়

তবুও পুকুর দুটোর মাঝখান দিয়েই চাকার দাগ–সমতল প্রতিকৃতিতে ভেঙে যায় সরলরেখা, চোখের সামনে পচনশীল খড়গাদায় কেন্নোরা আঁকড়ে ধরে নিকষ কামনা –শিরিষ গাছের ছাল-চামড়া আঁকে ক্ষুধিত মাকড়সার জাল; কোনো অনন্ত নেই, স্যাঁতস্যাঁতে ভাবের নির্জনতাকে আত্মরতির শব্দ দিয়ে শুরু করে অস্তিত্বের স্তব 

বকুল ফুটল না এখনও, অথবা সাদা ওড়নায় ভাসেনি কোনো এঞ্জেল–খুঁজে পায়নি গ্রীষ্মের রাত; ক্রমেই পাঁজর বেয়ে উড়ে বিন্দু বিন্দু চিল 

আমার অহমিকাময় কালসিটে মুখে দুপুর গড়িয়ে পদ্ম হয়ে যায় 

ঋকধ্বনির পাখিরা তৎসম হয়ে যায়

কিন্তু সেই ফুলদানিগুলি সমানুপাতিক বিকেলের আলোছায়া নিয়ে নিজের বুকেই সাজানো থাকে, গাঢ় বাদামিরেখায় ভাসে ত্রিকাল স্বরূপ–সেখানে আঁচল বিছিয়ে রাখে সন্ধ্যার ধুলোপড়া নদী, আগে দেখিনি কেউ–আহত অন্তরীক্ষে ভাসে সে কুয়াশার কথা, ঝরেপড়া পাপড়িরা নীলজলের নীচুস্বরে ভিজিয়ে দেয় নৈঃশব্দ্য–একে একে দুঃখ বদলে যায় 

কথা ছিল ফুলের ভাষান্তর শিখে নেব রেটিনার রোদ্দুরে, বৃন্তে লেগে আছে সমস্ত সূর্যাস্ত আর জাতিস্মর স্নায়ু 

তাকে কানে কানে বলি–বর্ণময় হও; ঋকধ্বনির পাখিরা তৎসম হয়ে যায় 

ত্বকে তখন ফোঁটা ফোঁটা শ্রমের নোটেশন 

তারাও মাটিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিপাত দেখছে আর সবুজ হয়ে যাচ্ছে খয়েরি রঙের দুপুর, বিকলাঙ্গ পাখিটিও উড়ছে নিঃস্ব শিমুলের উপর–শীত শীত অভ্যাসে ত্বকে তখন ফোঁটা ফোঁটা শ্রমের নোটেশন–অসমাপিকায় বিনীত হতে হতে জলে ভিজিয়ে নিচ্ছে লবণাক্ত ব্রহ্মতালু: ব্যর্থদিনের গরলপাত্রে  অপেক্ষা করে লাইভ বীজতলার অলংকরণ 

আমি কি সেই জন্মগত প্রিয়তম, নিজেকে সেঁকে নিতে নিতে চিরায়ত আগাছার বেগুনি ফুল দেখি 

অতএব ফোকাসহীন স্বাদকোরক ঝাপসা হয়ে যায়

হলদে নদীটি আজও জন্মদান ছড়ায় 

এবং দুটো স্তম্ভের মাঝে মুখোমুখি হচ্ছে নগ্নঘ্রাণের পঙ্‌ক্তিমালা আর শূন্যতার মেরুন ঠোঁট, সেখানে একাদশীর চাঁদ পৃষ্ঠা উল্টে দেখে নিচ্ছে ভাঙা বানানের ইকোসিস্টেম, ভেসে আসে কবিতার অনুনাদিত কণ্ঠধ্বনি–জন্মের ছবি এঁকে এঁকে হলদে নদীটি আজও জন্মদান ছড়ায়–ভবিষ্যৎ একটা সাদা ক্যানভাস জুড়ে আঁচড় কাটে রোদ 

নাকি ছায়া সরে যায়, একে অপরের অনাসক্ত সম্পর্কে নারকেল পাতা তরঙ্গহীন–মলয়ের গল্পে জল কেটে জেগে উঠছে গ্রিনহাউস 

ধাপ ধাপ শীততাপ পেরিয়ে আমি রোদধর্ম, চেয়ে নিই অবিনশ্বর রৌদ্রপলাশ 

সন্ধের জন্য ছত্রাক

ঘরের বেড়া ডিঙিয়ে আলো এসে পড়ছে রাস্তায়–এপার থেকে ওপারের কৌণিক দূরত্ব নিয়ে নরম স্বরগুলি বিলীন হতে হতে হয়ে যাচ্ছে উপসংহার 

কোনো আকার নেই ছায়ার–কোনো ইশারা নেই অন্ধকার আর অন্তিমকালের; লুটোপুটি খাচ্ছে জন্মান্ধ দেবতাদের সন্তান, শুধু একধারে জলের টানে খালে ভেসে যায় হৃদপিণ্ড 

তার কাছে বৃষ্টিরও কোনো দরজা নেই–যদিও ডানা ঝাপটানো পাখি দীর্ঘশ্বাস ঝরায় পালক থেকে  

অলংকারহীন ন্যাতানো পাতার এই পথ–এই কাঁটাঝোপ পেরিয়ে নীরব স্বর্গের দিকে তাকায়, মাইলস্টোনে লেখা দাহপর্ব নিয়ে শিশির জমা করে সিক্ত বাতাসে জেগে থাকা কৃষ্ণকায় বৃক্ষগুলি 

নিশ্চিত শিহরণ এলে

সেই শব্দগুলি লেপটে যেতে থাকে দ্বিপ্রহরের দেয়ালে 

নীল রঙে আঁকা শাঁখ অথবা বাঁশি ফ্যাকাসে হয়ে যায় 

আমার কখনও দেয়াল ভালো লাগেনি 

ফুল পাতা দিয়ে ঢাকা কাটফাটা ইজম এখন পথ খোঁজে 

এ কারণেই দেবদূত বিরূপ হতে হতে ভুল ধরিয়ে দেন পুরোনো প্রার্থনার 

বাগান পেরিয়ে রিফু করা জামায় কুণ্ডলী পাকায় ভাদরের রোদ-মেঘ 

কোনো ভূমিকায় আছো তুমি, নিঝুম মুদ্রা 

অনন্ত পর্যন্ত চলে যাওয়া আবছা নৌকা ক্রমাগত ডুবে যায় 

আড়াল ভেঙে যেতে যেতে লিখতে থাকে চেতনা 

কাঁপতে থাকে আলো 

বাতাসের বুকে তখন মৌনস্পর্শের অন্তরাশ্রম 

সবাক বন্দনায় পঙ্‌ক্তিরা

হিজল গাছটির বাকলের ভাঁজে ব্রাউন পোকার দুপুর, বন্দনার বাঁকে দাঁড়িয়ে থাকে ছায়া–কোনো বার্তা নেই নির্জন শব্দের; পেঁজা সুতোর টুকরো টুকরো স্পন্দন জুড়ে গেরুয়া মোহ–মেঘের বিকেলে হাতছানি দেওয়া মিউজিয়াম হৃদয় হয়ে যায়  

নিশ্বাসে ঠোঁট রাখে ফ্যাকাসে অক্ষয়: সেই-ই পঙ্‌ক্তির উৎস 

এই সব অপরিচিত রাস্তায় কোনো অন্ধকার নেই–স্থির জলে মরণের অরুচি লেখার পরও পৃথিবী ঘুরছে, মেতে ওঠে আলোকবর্ষ দূরের ফুলগাছ–এলোমেলো পাণ্ডুলিপিতে বাসা বাঁধে হলুদ মায়া উপেক্ষা 

ডুবে যাচ্ছি নিরন্তর তারপর ক্রমশ বিন্দু হয়ে যাই

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *