সার্কাস – সৌগত দত্ত

শেয়ার করুন
১ম দৃশ্য-
(স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এল ছেলে, বাবা চেয়ারে বসে পত্রিকায় মনোনিবেশ করে আছেন। ছেলে ব্যাগ কাঁধ থেকে নামিয়ে ছুঁড়ে ফেলে)
ছেলে- ড্যাড, ইউ নো কাল কি?
বাবা – তোকে বলেছি আমায় ওই বিলাতী কায়দায় ড্যাড বলবি না।
ছেলে- হোয়াটএভার, কাল ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে, স্কুলে সেলিব্রেশন হবে।
বাবা- তা বেশ, কিছু করবি কাল?
ছেলে- অবভিয়াসলি, আমি সি আর, করবো তো বটেই, রিসাইটেশন করবো। ওই শেক্সপিয়ার এর একটা পোয়েম।
বাবা- বাহ! এই তো মাতৃভাষারর প্রতি কি অপার শ্রদ্ধা!
(মা এর প্রবেশ)
মা- বাবু, তোর না সামনে ফাইনাল এক্সাম, ওসব করতে হবে না, স্টাডি কর। তোর সব প্রোজেক্ট কমপ্লিট?
ছেলে- ইয়েস মম, জাস্ট বেঙ্গলিটা বাকি, উফ জাস্ট ইরিটেটিং।
মা- ডোন্ট ওয়ারি মাই বয়, তোর বাবা করে দেবে ওটা, (মুখ বেঁকিয়ে) বঙ্গ সন্তান কিনা, ওসব তো বায়ে হাত কা খেল ওনার।
বাবা- তোমার বাবা তোমায় কোনো ফিরিঙ্গির সাথে বিয়ে দিলেই পারতেন, মিছেই আমায় ফাঁসিয়ে দিলেন।
মা- চুপ করো তো, ওসব বেঙ্গলি পড়ে হবে কি? ছেলে কি আমার কবি হবে? ওককে আমি ডক্টর বানাবো, এন আর আই হবে এন আর আই।
বাবা- বাহ! ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোরর বিদ্যেটা ভালোই দিচ্ছো।
ছেলে- জাস্ট শাট আপ ড্যাড, জানো তোমায় নিয়ে আমার ফ্রেন্ডস আমায় কত খিল্লি করে? তুমি আর তোমার এই বাংলা, আই জাস্ট হেট দিস অল।
(টিভিতে ভাষা আন্দোলনের শহিদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের বিজ্ঞাপন চলে, গান চলে ” আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙা একুশে ফেব্রুয়ারি”)
ছেলে- এসব ড্রামা, কি অড, কোথায় একটা ভালো কম্পানি তে জব করে গাড়ি বাড়ি করবে তা নয়, মরতে গেছে সব।
(বাবা রেগে উঠে চলে যান, ছেলে ইংরাজি চ্যানেলে মনোনিবেশ করেত )
২য় দৃশ্য-
(স্কুলে অনুষ্ঠান চলছে, শিক্ষিকা ইংরাজিতে সঞ্চালনা করছেন, হঠাৎ এক ছাত্রের প্রতিবাদ)
ছাত্র- আমরা বাঙালি, আজ এসব চলবে না, বাঙলা চাই। বাঙলা চাই।
(কিছু ছাত্রছাত্রী তাকে থামায়, আবার অনুষ্ঠান চলে, সেই ছেলেটি শেক্সপিয়রের একটি কবিতা পাঠ করে)
৩য় দৃশ্য-
(অনুষ্ঠান শেষে প্রিন্সিপাল এর কক্ষে ডাক পড়ে সেই প্রতিবাদী ছেলেটির, সাথে তার বাবারও)
প্রিন্সিপাল – সার, ইওর সান ইস নট সুইটেবল টু মেক স্টাডি ইন সাচ এ রিনোন্ড প্রেস্টিজিয়াস স্কুল, ইউ শুড অ্যাডমিট হিম ইন এ গভর্নমেন্ট স্কুল, আর এমনিতেও ওর কিছু হবে না, হি ইস ভেরী পোর ইন ইংলিশ,  সো প্লিজ ডোন্ট ওয়েস্ট ইওর মানি।
( কথামত ছেলেটি একটি সরকারি বাংলা মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি হয় ও সেখানেই বিদ্যালয় শিক্ষা সম্পন্ন করে)।
৪থ দৃশ্য-
দুজনের দেখা, সামনা সামনি নয় একজন  দূরদর্শনের পর্দায়, আর অন্যজন দূরদর্শনের সামনে। সেই ছেলেটি সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার গ্রহণ করছে। আর একজনের এন আর আই হওয়া হয়নি, সে এএকটি কম্পানির চাকুরি খুইয়ে ঘরে বসা। পাশের পাড়ার লোকটাও তার নাম জানে না।
পাশে বসে সেই “বঙ্গ সন্তান” বাবা হাসছেন।
(পেছনে গান বাজছে আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।)
শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *