অতিকথা – গৌতম চৌধুরী

মনস্থির করিয়া একই দিকে যাঁহারা উড়াল দেন, তাঁহারাই সাধক মনেপ্রাণে এই কথা বিশ্বাস করিয়া শূন্যে ডানা মেলিয়া দিয়াছিল মানস দীঘির হাঁস মাইলের পর মাইল উড়িয়া চলিয়া যে-পাহাড়ের ঝরনাজলে তাহাদের দিনকয়েক বিশ্রাম লইবার কথা সেইখানে পঁহুছিয়া প্রথম হোঁচট খাইল সে পাহাড় কই, ঝরনা কই পাদদেশ হইতে গলগল করিয়া পীতাভ ধোঁয়া বাহির হতেছে আর বুম বুম শব্দে…

ধুপ – কৌশিক বাজারী

একটা অদ্ভুত মনখারাপ করা ধুপ, অন্ধকারে পুড়ে পুড়ে নিভে গেল! ধুপ উপহার দেয় কেউ? এ সেই গিফট অফ দ্য মেজাই! তার গন্ধ, যা রয়ে গেছে সারা ঘরময়! আর আমি তার চলে যাওয়া দেখছি। হালকা ধুপের গন্ধ নিয়ে সে যাচ্ছে। বলছে, রাত্রেবেলা ঘুমিয়ে পড়ার আগে জ্বেলে নিও। স্বপ্নে পারিজাতের গন্ধ হবে! আমি আসব। চৌকাঠে বসব এসে।…

ভীতু – সংস্কৃতি ব্যানার্জী

তুমি পেরেছ, অজুহাতের ওপর ভর করে গড়ে তুলতে আরেক অজুহাত। ব্যর্থতাগুলো উঁকি দিচ্ছে এদিক-ওদিক থেকে… শিকড় গাড়ছে, প্রকান্ড একটা ভয় উপড়ে ফেলতে পারিনি ডানা ঝাপটে পারিনি উড়ে যেতে। তুমি চলে গেছ যেভাবে চলে যায় এক একটা ঋতু…

গন্ধ – পল্লব গোস্বামী

হ্লাদিনীদের বুকে একটা তীব্র গন্ধ থাকে … মায়ের বুকেও থাকতো | স্বকীয়া-পরকীয়া …সবার বুকেই থাকে | কিংবা,আমার বোনের বুকেও ছিল | তোমার বুকেও একটা গন্ধ আছে ; এক আকাশগঙ্গা – ইউটোপিয়ার মতো |

কলম কেন লিক করে – মলয় রায়চৌধুরী

যুদ্ধ চলতেই থাকে, ছোটো হোক বা বড়ো আমরা ভাবি কবিতা লিখে যুদ্ধ থামিয়ে দেবো কবিদের কেউই পাত্তা দেয় না পাত্তা দেয় বিজ্ঞানীদের, যাঁরা নতুন নতুন অস্ত্র আবিষ্কার করে চলেছেন তা প্রয়োগ হয়ে চলেছে ছোটো যুদ্ধগুলোয় বাড়ি ঘর শহর মনে হয় পাঁপড়ের তৈরি যুদ্ধ কখনও ফুরোবে না, আমরা ফুরোবো দেশে-দেশে সৈন্যদল থাকবে, আমরা হাত কামড়াবো একদল…

অপরিচিত – চন্দ্র

চিনতে পারছ আমায়? রোমকূপ মোর উল্লাসিত, জয়ের রক্ত জামায় উদ্দ্যত ওই তলোয়ার আজ কার সাধ্যি থামায়, চিনতে পারছ আমায়? আমাকে তোমরা লেলিয়ে দিয়েছ অস্ত্রকে করে বন্ধু আমি বয়ে গেছি নিলনদ থেকে নেভা নদী হয়ে সিন্ধু। আমার মৃত্যুতে বলিয়ান হয়ে সভ্যতা কর চাষ, আমিই কেড়েছি আমার আপন সিজারের নিশ্বাস। আমিই যদিও স্বাধীনতা আনি ধ্বংসের ফেরি করে…

আছি বেঁচে বেশ – সমীরজিৎ রায়

আছি বেঁচে বেশ – সমীরজিৎ রায়

ভিড়ের মধ্যে আছি বেঁচে বেশ। আমার বারান্দায় মাতাল রোদ এক উন্মত্ততায় ক্রমাগত মানুষ আর দানবের ভিড় আমি আঙুলের কড় গুনে যাই দিনের ওপর দিন। দেওয়াল জুড়ে দেওয়াল ভাঙার ডাক কাজে আর কথায় অনেক ফাঁক লেগে আছে কত আঁচড় এলোমেলো আমি দিন গুনে যাই। আমার বারান্দায় ভাঙা বেড়া দেখে যাই – লাশের ওপর লাশ চলে গুনীজনের…

অঘ্রাণে – জিললুর রহমান

অঘ্রাণে – জিললুর রহমান

ঘ্রাণ নেবো – নাসিকা উঁচিয়ে টানি; পৃথিবী কি চিরকাল অঘ্রাণেই থাকে? আমাকে তো অঘ্রাণের ধান ডেকে ফিরে শীতের আলস্য কিছুতে ছাড়ো না তুমি আমার সে শস্যদানা উঠে না দেউড়ি ঘরে সোমলতা জোছনায় গড়াগড়ি যায়, এভাবেই বুঝি পৌষমাসে সর্বনাশ আসে… দ্বিখন্ড পঞ্চমী চাঁদে ভেজা চুমু লেগে থাকে গায়ে সর্বনাশা অশ্রু জলে ভাসিয়ে দেয় ছাতার শরীর

পেট – সেলিম মন্ডল

পেট – সেলিম মন্ডল

এমনভাবে নখ খুঁটে খাচ্ছ মনে হচ্ছে, নেলকাটারের দোকানগুলো ধর্মঘট ডেকেছে তোমার ধর্মঘটে আপত্তি ছিল অথচ, আজ নখ চিবানো থামাচ্ছ না ডাক্তারবাবু বলেন, পেটের রোগের সঙ্গে নখের বিরাট সম্পর্ক তোমার কোনো ধরা ডাক্তার নেই কিন্তু পেটের জন্য চেরিনখ খোঁটো সরুগলির মাথায় গলিতে নীচুস্বরের মিছিল মিছিলে নখহীন নখমালিকদের অসামঞ্জস্য ভিড়

নীঃশব্দে প্রতিবাদ – শ্রী চৌধুরী

পেশিবলে গির্জা নিল লিখিয়ে গৃহবন্দী গালিলিওকে দিয়ে “পৃথিবী ঘুরছে না!” কিন্তু কি আর আসে যায় তাতে, পৃথিবী ঘুরত,  পৃথিবী ঘুরছে, পৃথিবী ঘুরবেও! সৌর ঔরস জারিত পৃথিবী, প্রত্যক্ষ করবে সৃষ্টি স্থিতি লয় ঘুরতে ঘুরতে, নিজের কক্ষ পথে।