ভূমিকা – শুভদীপ মৈত্র
ছবি, মানে, অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো৷ সেই আলোর সন্ধানী এক শিল্পী ভাস্কর প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। যখন পৃথিবী নাকি ক্রমশ বিশ্বায়িত হচ্ছিল আর ফাঁপিয়ে তোলাটাই রীতি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল, সেই সময়ের এক যুবক বেছে নিলেন ছবি আঁকার তন্ময়তা। গোটা পৃথিবীর শিল্পকে মেধা দিয়ে গ্রহণ করেও জীবনে ফেলে দিতে থাকলেন বাড়তি বোঝা। সময়কে ছোট করে এনে নিজেকে এবং নিজের চারপাশের আলো ও অন্ধকারকে ধরতে শুরু করলেন। একাডেমিক ছবি আঁকার শিক্ষা তাঁর ছিল, তা অস্বীকার না করেও কীভাবে যেন ওই সময়ে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র নিজস্ব আঞ্চলিকতাকে রঙে ও রেখায় এবং তার অনুপস্থিতি দিয়েও সবাক করে ফেললেন। হাতেগোনা যে কয়েকজন তাঁর ছবি আমরা দেখেছি তারা জানি কীভাবে ক্রমশ তা আচ্ছন্ন করে ফেলে, শুধুমাত্র প্রাথমিক কোনো চমকে নয়, আস্তে আস্তে মাথার ভিতর কাজ করতে থাকে।
ব্যক্তি ভাস্কর নির্লিপ্ত, খেয়ালি, তাই প্রচারহীন। নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে কাজ করতে করতে অসুস্থ এবং সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। নিজের জীবনকে নিঙড়ে কাজ বের করার চেষ্টা যা হয়তো সমস্ত প্রথাগত পরিচিতি নির্মাণের প্রয়াস ও প্রচারের মইয়ে নিজের মাথাকে অন্যদের থেকে তুলে দেখানোর এক বিপ্রতীপ অভিযান। বলা বাহুল্য, এতে ব্যক্তি ভাস্করের জীবন সুকঠিন ও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা যারা তাঁর ছবি দেখেছি তাদের একটা চেষ্টা তাঁর কাজ যদ্দুর সম্ভব ছবি-রসিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই প্রচেষ্টার কারণ শুধুমাত্র এক ব্যক্তির রোম্যান্টিক ব্যর্থতার চিরকেলে বাঙালি আবেগ থেকে নয়। বরং আমরা ভাস্করকে সার্থক বলছি, কারণ যতই তার ব্যক্তিগত অবস্থা নড়বড়ে হচ্ছে ততই তার কাজের মধ্যে আমরা পাচ্ছি সংহতি — এ এক অদ্ভুত শৈল্পিক ঘটনা যে ছবির রঙে-রেখায় ভাস্কর মানুষের বিপন্নতার সঙ্গে সঙ্গে শাশ্বত একটা সুষমা খুঁজে পাচ্ছেন। এবং সেটা দেশীয় একদম নিজস্ব কন্টেন্ট-এর ভিতর দিয়ে।
এসময়ের কিছু লেখক, ভাবুক, শিল্পীদের কাছে নিয়ে যেতে, তাদের কাছে তুলে ধরার কাজ করতে গিয়ে দেখা গেল যে তাঁর কাজ এঁদের ভাবাচ্ছে। সেই ভাবানোর একটা রূপরেখা আমরা ডকুমেন্ট করব ভাবি। এটা করতে গিয়ে দেখা গেল ছবির বিষয় বা কলাকারি নিয়ে ধুন্ধুমার আলোচনা ও বিশ্লেষণ নয় বরং অনেক বেশি নিজস্ব ভাবনার একটা চেহারা ফুটে উঠছে, একটা ডায়ালেক্টিকাল সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে ভাস্করের ছবিগুলোর সঙ্গে। এবং তৈরি হচ্ছে নিজস্ব লেখা। একটা মিশ্রমাধ্যমের কাজ তাই সম্ভব বলে মনে হল আমাদের যেখানে ভাস্করের কাজের সঙ্গে থাকবে এই লেখাগুলো। ভাস্কর চট্টোপাধ্যায়ের কাজ ও এই লেখাগুলো নিয়ে একটা অনলাইন সিরিজ আমাদের নিবেদন। সঙ্গে এখানে একটা ছোটো পরিচিতিও রইল শিল্পীর।
পরিচিতি –
নাম: ভাস্কর প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
জন্ম: 5th June, 1971
পড়াশোনা :
ডবল ডিপ্লোমা
- Academy of Fine Arts
- রাজ্য চারুকলা পর্ষদ
কলেজ: অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস
ছবি আঁকা শুরু ছোটোবেলা থেকেই। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী — বাবা আমার উপর রাগ করে একবার আয়না ভেঙে ফেলেছিল। আমি সেই ভাঙা কাচের টুকরোগুলো নিজের মতো সাজিয়ে নিয়ে ছিলাম।
Exhibition: Academy of fine arts 1988-1989, workshop (Salt Lake).
শিক্ষক: তারকনাথ মন্ডল, চিন্তামণি কর
Inspiration: রবি বর্মা, পল সেজান, মার্ক শাগাল। এছাড়া বিজন চৌধুরী, বরুণ হাজরা, প্রকাশ কর্মকার এবং মঞ্জিত বাওয়ার কাজও ভালো লাগে। শক্তি বর্মন এর ছবিও ভালো লাগে। B.R. Panesir এর কোলাজও ভালো লাগে। Johannes Vermeer প্রিয় শিল্পীদের একজন।
আলোকচিত্র: দেবাশীষ ঘোষ
খুব ভালো লাগল এটা জেনে যে আমাদের এই অঞ্চলে একজন এরকম শিল্পী রয়েছেন। সামনে পিছনে এক বৃহৎ শিল্পাঞ্চলের মাঝে পিষ্ট এখানকার জীবন। শিল্পাঞ্চলের অনেকাংশে বিশিল্পায়নের অন্ধকার। তার মাঝে ফুটে ওঠা এইসব ফুল।
এ নিয়ে আন্তরিক কিছু কাজের পরিকল্পনা। বেশ ভালো।