বারীন ঘোষাল – সম্পাদকীয়
অমর্ত্যলোক থেকে ভেসে আসা — ৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৪
অমর্ত্যলোকে ভেসে যাওয়া — ২৯ অক্টোবর, ২০১৭
“আর হেসে উঠলো না চম্পকদানী
তার কী যেন একটা হয়েছে
খুন খুন করে কেঁদেই গেল আজকে”
[ বারীন ঘোষাল ]
কোনো কোনো মানুষের হারিয়ে যাওয়া যেন ঠিক হারিয়ে যাওয়া নয় বরং আরো নিবিড়ভাবে টের পাওয়া। যখন এমন এক পরিস্হিতির মুখোমুখি হতে হয় তখনই গোল বাধে মনটাকে নিয়ে। তাকে সামলে রাখা দুষ্কর হয়ে ওঠে। ঘরের ভিতর ঘর, তার ভিতরেও অন্তহীন সংখ্যক ঘর গড়ে উঠতে থাকে। কত তার বৈভব। কত তার বিচ্ছুরণ। জহুরীই পারেন সে বিচ্ছুরণ নির্বিঘ্নে পৌঁছে দিতে বিশ্বদরবারে। বারীন ঘোষাল – এক সদাজাগ্রত স্মৃতির নাম। এমন এক মশাল যার আলোয় পথ করে নিয়েছেন কত তরুণ অরুণ দল। কোনো থিয়োরি নয়, কাব্যিক বিশ্বাসে জড়িয়ে ধরেছেন নতুন কবিদের। কারো কবিত্বকে খর্ব বা ক্ষুন্ন করাতেই ছিল তাঁর অপরিসীম ঘৃণা। দুর্বিনয় নয়,গভীর সত্যের প্রকাশ একমাত্র বিনয়েই সম্ভব – এ তিনি বিশ্বাস করতেন মনেপ্রাণে । উজ্জীবনী শক্তির বিশেষ আধার বারীন ঘোষাল। রোদ ঝলমল রাজার আসনে তাই তাঁকেই মানায়। মননশীলতা ও মেধার এক অপূর্ব সহাবস্হান। বারীন ঘোষাল আমাদের মরপৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন এ আমরা মানিনা। তাই আমরা দাঁড়িয়ে থাকলাম পুলের ওপর। আঁকিবুকি কেটে দেখে নিতে চাইলাম জলের গভীরতা। দায়িত্ব সচেতন কবি ঠিক এসে দাঁড়াবেন আমাদের সামনে। হয়তো নিজ রূপেই। হয়তো ভোরবেলা সামনের উঠোনে এসে বসা পাখিদের দলে মিশে তাদের রূপেই। যে রূপেই তিনি আসুন দুর্নিবার আকর্ষণ অবশ্যম্ভাবী। তখন ছোট ছোট কথা থেকে আবার আমরা ফেঁদে ফেলবো বড় বড় গল্পের উপক্রমনিকা। ভ্রূকুঞ্চিত অহংকার নয়, যুগযুগান্তের আস্কারা হয়ে ফিরে আসুন আবার।
আমাদের নভেম্বর সংখ্যা সেজে উঠেছে শ্রদ্ধেয় বারীন ঘোষালের প্রতি তীব্র আবেগ সঞ্জাত ভালোবাসা দিয়ে। যার আওতায় ধরা পড়েছে বন্ধু এবং উত্তরসূরী কবিদের ব্যক্তিমনের প্রতিফলনে বারীন ঘোষাল। ভালোমন্দের যাচাই নয়, এক মনোজ্ঞ খোয়াই রচনার মাধ্যমে তাঁর অন্তরঙ্গতাকে আরো একবার ঘুরে দেখা। কোনো সুপরিকল্পিত তাত্বিক বিচার বিশ্লেষণ নয়, ব্যক্তি বারীন ঘোষালের আনন্দময় চিহ্ন আমরা খুঁজে নেওয়ার প্রয়াসে নভেম্বর সংখ্যাটি উৎসর্গ করেছি তাঁর নামেই।
আসুন আমরা বেঁচে থাকি দুই জগতের সাথে মিলেমিশে।