বিপ্লবী থেকে ঋষি – শ্রীঅরবিন্দ – দীপক সাহা

বিপ্লবী থেকে ঋষি – শ্রীঅরবিন্দ – দীপক সাহা

শেয়ার করুন

উত্তরং যৎ সমুদ্রস্য হিমাদ্রেশ্চৈব দক্ষিণম।
বৰ্ষং তদ্ ভারতং নাম ভারতী যত্র সস্ততিঃ।

এক রাষ্ট্রবাদের চিন্তাধারা নিয়ে যখনই এই পুণ্যভূমি ভারতের কল্পনা করি তখনই এই সংস্কৃতের অনাদিকালের শ্লোকটির কথা মনে পড়ে যায়। যার অর্থ উত্তরের উপরিভাগ থেকে দক্ষিণের সমুদ্রের শেষ সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত যে ভূখণ্ড আছে তাহার নাম ভারত এবং এই ভূমিতে বসবাসকারী প্রত্যেক নাগরিক ভারতীয়। এই পুণ্যভূমিতে যুগে যুগে বিভিন্ন ক্রান্তিকারী, সাধক, মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁহাদের মধ্যেই একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন স্বাধীনতাসংগ্রামী নেতা এবং বিশিষ্ট তাত্ত্বিক, দার্শনিক, যুগপুরুষ অরবিন্দ ঘোষ। যিনি সকলের কাছে ঋষি অরবিন্দ ঘোষ নামে খ্যাত।

আজ তাঁর জীবনকথা:

ঠিক তিয়াত্তর (৭৩) বছর আগে ভারতবর্ষে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। লাখো লাখো বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিকদের বলিদানের পরে ১৯৪৭ সালের ১প৪-১৫ আগস্টের অর্ধরাত্রিতে আমাদের দেশ স্বাধীনতা পেয়েছিল। ১৫ আগস্টের ভোর ছিল এককভাবে দেশকে গড়ার স্বপ্ন। স্বাধীনভাবে চলার আনন্দ। আর তখন থেকে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করে আসছি আমরা। হতে পারে কাকতালীয় ঘটনা। কিন্তু ১৫ অগাস্ট শ্রীঅরবিন্দের আবির্ভাব দিবসও বটে। শ্রী অরবিন্দের ভক্তরা এর পিছনে দৈব ইশারা খুঁজে পান। বিপ্লবী, সাধক ঋষি অরবিন্দ নিজেও মনে করতেন এই দিনের তাৎপর্য আছে।

১৮৭২ সালের ১৫ আগস্ট ঋষি অরবিন্দ ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রখ্যাত চিকিৎসক কৃষ্ণধন ঘোষ, তিনি ডা. কে ডি ঘোষ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। মায়ের নাম ছিল স্বর্ণলতা দেবী। তিনি নানা গুনের অধিকারিণী ছিলেন। কবিতা লেখা, সামাজিক কাজকর্মের মধ্যে তিনি যুক্ত থাকতেন। ব্রাহ্ম আন্দোলনের নেতা রাজনারায়ণ বসু ছিলেন অরবিন্দের মাতামহ। তাঁর কাছ থেকেই সমাজসংস্কারের প্রাথমিক পাঠ পেয়েছিলেন অরবিন্দ। যার মূল ভিত্তি ছিল জাতপাত ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত এবং নারী-পুরুষ সমানাধিকার। অরবিন্দ কথার অর্থ হল পদ্ম ।

অরবিন্দ বড় হয়েছেন একটি নির্দিষ্ট জীবনদর্শন নিয়ে। ভারত থেকে দূরে। ইউরোপীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। বাবা কৃষ্ণধন চেয়েছিলেন আদ্যোপান্ত সাহেব হয়ে উঠুক ছেলে। সাধারণ ভারতীয়ের মতো হতভাগ্যের শিকার যাতে না হয় তাঁর সন্তান তাই শিশুকাল থেকেই শ্রীঅরবিন্দকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এমন পরিবেশে যাতে ভারতীয়ত্বের ছোঁয়াচ না লাগে। বিশ্বাস করতেন “জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক সাহেবি।” বাবার এরকম ইচ্ছে এতটাই প্রবল ছিল যে শ্রীঅরবিন্দের মিডল নেম রেখেছিলেন অ্যাক্রয়েড। অরবিন্দের বাবা ছিলেন একজন সাহেবি কায়দার মানুষ। ১৮৭১ সালে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা শেষ করে তিনি সরকারি চিকিৎসক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ভারতীয় সমাজের রক্ষণশীলতা, সংস্কার, অভ্যাস, রীতিনীতি সমস্ত তিনি ত্যাগ করেছিলেন। তিনি এটি চাইতেন না যে তাঁর সন্তানেরা এদেশের মানুষের মতো হোক । তাই তিনি অরবিন্দ, মনমোহন ও বিনয়ভূষণ তিন ভাইকে দার্জিলিং-এর ‘লরেটো কনভেন্ট’ স্কুলে ভর্তি করে দেন। তখন অরবিন্দের বয়স পাঁচ বছর। বাল্যকাল থেকে অরবিন্দের ইংরেজি আদবকায়দা, খাদ্য, পোশাক সব ছিল সাহেবি ধরনের। তিনি এখানে দু-বছর পড়াশোনা করেন। নিজের ছেলেদের নিয়ে ডা. কে ডি ঘোষের অনেক উচ্চাশা ছিল। ডা. কে ডি ঘোষ ১৮৭৯ সালে আবার ইংল্যান্ডে যান, সেখানে ড্রইট পরিবারে তিনি তাঁর ছেলেদের রাখার ব্যবস্থা করেন। ম্যানচেস্টারে ড্রইট পরিবারে মি. রেভারেন্ড ড্রইট, তাঁর স্ত্রী ও তাঁর মায়ের কাছে অরবিন্দরা থাকতে লাগলেন। অরবিন্দ প্রায় ১৪ বছর ইংল্যান্ডে ছিলেন। প্রথম পাঁচ বছর ম্যানচেস্টারে, পরের ছয় বছর লন্ডনে, শেষ তিন বছর ছিলেন কেমব্রিজে ।

ম্যানচেস্টারে থাকার সময় ড্রইট সাহেব তাকে ল্যাটিন ও ইংরাজি, তাঁর স্ত্রী অঙ্ক, ভূগোল ও ফরাসি ভাষা শেখাতেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাঁর পাঠ্যসূচীর ভার বাড়তে লাগল। কাব্য, ইতিহাস, সাহিত্য, শেকসপিয়ার, শেলি ও বাইবেল তিনি পড়ে ফেলেন। প্রথম পাঁচ বছর এভাবে কাটলো। ১৮৮৪ সালে ড্রইট সাহেব অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেলে তাঁর মা অরবিন্দ ও তাঁর ভাইদের দেখাশোনার ভার নেন। এবার তাঁরা ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডনে চলে আসেন। ১৮৮৪ সালে অরবিন্দ ও তাঁর ভাইয়েরা সেন্ট পলস স্কুলে ভর্তি হন। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মি. ওয়াকার। তিনি অরবিন্দকে ব্যক্তিগতভাবে গ্রিক ও নানা বিষয় পাঠে সাহায্য করতেন । স্কুলের পড়া ছাড়াও অরবিন্দ ঘোষ ফরাসি কবিতা, উপন্যাস পাঠ করতেন, গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষায় কবিতা রচনা করেন ।

১৮৮৯ সালে অরবিন্দ সেন্ট পলস থেকে পাশ করেন। সেই বছর তিনি কিং কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষায় বসেন ও প্রথম হন। বাৎসরিক ৮০ পাউন্ডের ‘Senior Classical Scholarship’ লাভ করেন ১৮৯০ সালে। ICS প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। গ্রিক ও ল্যাটিনে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পাশ করেন। অশ্বারোহণ পরীক্ষা না দেওয়ার জন্য তিনি ICS পরীক্ষায় পাশ করতে পারলেন না। ICS পরীক্ষায় যোগ না দিয়ে তিনি মাতৃভূমির প্রতি তাঁর প্রেমের প্রকাশ ঘটালেন।

অরবিন্দ বিলেত ছেড়ে ভারত অভিমুখে যাত্রা করেন ১৮৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ভারতে অপেক্ষারত অরবিন্দর বাবা বোম্বের এজেন্টের কাছ থেকে ভুল সংবাদ পান, পর্তুগালের উপকূলে অরবিন্দর জাহাজডুবি ঘটেছে। ড ঘোষ আগেই অসুস্থ ছিলেন, এই দুঃসংবাদের ধাক্কা সামলাতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু, অরবিন্দ আসেন এস.এস কার্থেজ জাহাজে। এরপর অরবিন্দ বরোদার মহারাজা গাইকোয়াড়ের কাছে ২০০ টাকা মাসিক বেতনে কাজ শুরু করেন। চাকরিতে যোগদান করার পর তাকে জরিপের কাজে, পরে দেওয়ান-খানা বা মহাকরণে নিযুক্ত করা হয়। পরে বরোদা কলেজে ফরাসি ভাষার শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। পরে এই কলেজেই ১৯০৪ সালে ভাইস প্রিন্সিপাল হন। এখানেই বাংলা এবং সংস্কৃত শিখেছেন। সে-যুগের বিশিষ্ট সাহিত্যিক দীনেন্দ্রকুমার রায় তাঁকে বাংলা শেখান। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রেমে পড়েছেন এই বরোদাতেই। বরোদায় অরবিন্দ ভারতীয় সংস্কৃতির উপর গভীর অধ্যয়ন শুরু করেন। এখানে থাকার সময় তিনি ভারতবর্ষ সম্বন্ধে জানার জন্য রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, কালিদাস, সংস্কৃত ইত্যাদি পড়েন।

এরপর ধীরে ধীরে ভারতীয় স্বাধীনতাসংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বাংলা এবং মধ্যপ্রদেশের বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। লোকমান্য তিলক এবং ভগিনী নিবেদিতার সাথেও যোগাযোগ স্থাপিত হয়। বাঘা যতীন হিসেবে পরিচিত যতীন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর জন্য তিনি বরোদার সেনাবিভাগে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। উল্লেখ্য, লন্ডনে থাকার সময়েই অরবিন্দ গুপ্ত সমিতির সদস্য হয়েছিলেন। চিন্তা এবং চেতনায় তিনি চরমপন্থী মতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সেই সময় দুই সেরা বাঙালি মনীষী তাঁকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। তাঁরা হলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। স্বামীজির বাংলা ঐতিহ্য এবং আত্মনির্ভরশীলতার আদর্শ এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’-এর আদর্শ এবং উপন্যাস-বর্ণিত সন্ন্যাসীদের আত্মত্যাগের আদর্শ ও তাদের সংগ্রামের নিষ্ঠা ও সততা তাঁকে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। নিজেকে দেশসেবক সন্তান ভাবতে শুরু করেছিলেন।

পাঁচ বছর (১৯০৬-১৯১০) সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত থেকে তিনি কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী নেতা ও বিপ্লবী দলের নেপথ্য নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি দিনের-বেলা কলেজ এবং রাত্রিবেলা স্বদেশী আন্দোলনের পরিকল্পনা এবং ট্রেনিং দিয়ে চলেছিলেন। সঙ্গে নিয়মিত ‘ইন্দু’ পত্রিকা, যুগান্তর, বন্দেমাতরম, কর্মযোগ লিখে চলেছিলেন। ঋষি অরবিন্দ ঘোষ অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন। কিন্তু পরে অনুশীলন সমিতির সঙ্গে কিছু মতভেদ হওয়ায় তিনি ‘যুগান্তর’ দলে যোগ দেন, যেটা ছিল গুপ্ত বিপ্লববাদী সংগঠন। এই যুগান্তর দলের নেতৃত্বে ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ ।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে স্বদেশী আন্দোলন করেন। ১৯০৬ সালে কলকাতায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ বা জাতীয় বিদ্যালয় ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠিত হয় — এই কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ। অনুজ বারীন ঘোষের মাধ্যমে বাংলা বিপ্লবী দলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটে। ১৯০৭ সালে তিনি ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে রাজদ্রোহের অভিযোগে সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করার চেষ্টা করেন। সরকার এই পত্রিকার জনপ্রিয়তা দেখে ভয় পেলেন। ৩০শে জুলাই ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকার উপর পুলিশের আক্রমণ হয়। ১৪ আগস্ট অরবিন্দ ও বিপিনচন্দ্র পালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জেলে যাওয়ার আগে অরবিন্দ কলেজের অধ্যক্ষ পদ ত্যাগ করেন। ছাত্রদের অনুরোধে ২৩ আগস্ট তিনি একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন ইংরেজিতে। তার নির্যাস এখানে তুলে ধরছি— ‘আমার সমস্যায় তোমরা বিচলিত ও পাশে আছো জেনে আমি নিশ্চিন্ত নই এবং আমি নিশ্চিন্ত হব যদি জানি যে, যে কারণে আমি কারাবরণকে অনিবার্য বলে ধরে নিয়েছি সেই কারণের প্রতি তোমাদের সমর্থন আছে। … আমি চলে যাব তিলমাত্র দুঃখিত না হয়ে তোমাদের সমর্থন পেয়ে। আজ যে সম্মান তোমরা আমাকে জানিয়েছ, আমি এই বিশ্বাস নিয়ে বিদায় নিচ্ছি যে, সেই সম্মান তোমরা বিদায়ী অধ্যক্ষকে নয়, জানিয়েছ তোমাদের দেশকে, আমার ভেতরে যে দেশমাতৃকা আছেন, তাঁকে।’ ২৩শে সেপ্টেম্বর বিচারে রায় হয় – বন্দেমাতরম পত্রিকাকে রাজদ্রোহের জন্য দোষী করা হয়, বিপিনচন্দ্রের ছয়মাস জেল হয় এবং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অরবিন্দ মুক্তি পান। বারীন ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত প্রমুখ বিপ্লবীদের দ্বীপান্তর হয়।

এর পরে সেই রোমহর্ষক ঘটনা। ১৯০৮ সালের ৩০ শে এপ্রিল ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে লক্ষ্য করে গাড়িতে বোমা ছোঁড়া হয়েছিল। সে ইতিহাস পাঠকের জানা। এই ঘটনার ফলে সারাদেশে হইচই পড়ে যায়। ১৯০৮ সালে কলকাতার মানিকতলায় বিপ্লবীদের একটি বোমা কারখানা ছিল যেটি ফাঁস হয়ে যায়। বেশ কয়েকজন বিপ্লবী ধরা পড়েন। তাদের স্বীকারোক্তি থেকে ২ রা মে গ্রেফতার করা হয় অরবিন্দ ঘোষকে এবং সঙ্গে আলিপুর বোমা মামলায় জড়িয়ে পরেন। ৫মে তাঁদের আদালতে পেশ করা হয়। অরবিন্দ ও অপর বন্দিদের আলিপুর জেলে স্থানান্তর করে আনা হয়। বছর খানেক চলে সেই মামলার শুনানি। ১৯০৯ সালে বিচারের রায় প্রকাশিত হয়। এই মামলায় অরবিন্দদের আইনি সাহায্য করেন বিখ্যাত ব্যারিস্টার দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। অরবিন্দ কোর্টে বলেছিলেন, দেশপ্রেম কোনো অপরাধ নহে, দেশের স্বাধীনতা আমাদের ন্যায্য অধিকার, এটা চাওয়া অন্যায় নয়। অরবিন্দ ও বাকি নয় জনের বেকসুর খালাস হয়। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর ও কারাবাসের আদেশ দেওয়া হয়।

কারাগারে থাকার সময় তাঁর অপরিমেয় আধ্যাত্মিক উপলব্ধি ঘটে। আধ্যাত্মিক বিকাশ পূর্ণতার দিকে এগোতে থাকেন। তাঁর কথায়, কারাগারের মধ্যে তিনি অন্তরাত্মার ডাক শুনেছিলেন। বন্দিদশায় তিনি অনুভব করেছিলেন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন তাঁর জন্য নয়। তাঁকে খুঁজতে হবে জীবনের অন্য মার্গ। যখন তিনি কারাগার থেকে বেরোলেন তখন তিনি যেন এক আলাদা ব্যক্তি। তিনি রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়ে আধ্যাত্মিক সাধনায় নিজেকে নিমগ্ন করেন। বিপ্লবী অরবিন্দ ঋষি অরবিন্দে রূপান্তরিত হন।

অরবিন্দ আলিপুর জেল থেকে বের হয়ে উত্তরপাড়ায় সার্বজনীন ভাষণ দেন , উত্তরপাড়াতে ভাষণ দেওয়ার জন্য ইহা ‘ উত্তরপাড়া ভাষণ’ নামে বিখ্যাত। উত্তরপাড়া অভিভাষণে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। যেখানে একজন বিপ্লবী থেকে একজন আধ্যাত্মিক মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার প্রথম বার্তা দেন।

এরপরের ইতিহাস পণ্ডিচেরিতে, বর্তমান পুদুচেরিতে:

মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে বিবাহের মাত্র ৯ বছর পর ৩৮ বছর বয়সে ১৯১০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে চিরদিনের জন্য কলকাতা ত্যাগ করে তিনি ফরাসি অধিকৃত পণ্ডিচেরিতে চলে আসেন। স্ত্রীর সাথে অরবিন্দের আর দেখা হয়নি। যুগমানব ঋষি অরবিন্দের আধ্যাত্মিক মননশীলতার পরিচয় লাভ করে স্ত্রী মৃণালিনী দেবী তাঁর আনন্দের অংশভাগিনী হয়ে স্বামীর অনুগামিনী হতে সদা সচেষ্ট থাকতেন। ১৯১৮ সালে স্বামীর অনুমতি নিয়েই মৃণালিনী দেবী পণ্ডিচেরি যাত্রা করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন, হঠাৎ ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩১ বছর বয়সেই তাঁর মৃত্যু হয়।

১৯১১ সালে দ্বিতীয় স্বামী পল রিচার্ডকে নিয়ে পণ্ডিচেরিতে আসেন ফরাসি মহিলা মিরো রিচার্ড এবং সেখানেই তাঁদের সঙ্গে দেখা হয় ঋষি অরবিন্দের। শ্রীঅরবিন্দের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই তিনি বুঝতে পারেন যে ছোটোবেলায় স্বপ্নে তিনি এই মানুষটিকেই ঈশ্বররূপে দেখতেন। শ্রীমা পাকাপাকিভাবে পণ্ডিচেরিতে আসেন ১৯২০ সালে। ১৯২৬ সালের ২৪ নভেম্বর শ্রীঅরবিন্দ সিদ্ধিলাভ করেন। আর শ্রীঅরবিন্দ আশ্রম তৈরি হয় ১৯২৬ সালে। আশ্রম প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরেই শ্রীঅরবিন্দ শ্রীমাকে আদিশক্তির অবতার বলে ঘোষণা করেন এবং আশ্রমের সমস্ত কাজ থেকে নিজেকে বিযুক্ত করেন। পণ্ডিচেরির কাছে আন্তর্জাতিক টাউনশিপ ‘অরোভিল’ এবং দিল্লির অরবিন্দ আশ্রম স্থাপনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন শ্রীমা।

অরবিন্দ বাকি জীবন উৎসর্গ করেন শ্রীআশ্রমে। নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন যোগ সাধনায়। আশ্রমে থাকাকালীন অরবিন্দের দার্শনিক রচনার সম্ভার বাড়তে থাকে। এখানে থাকার সময় তিনি ধর্ম, দর্শন, ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থের সংখ্যা ৩৮। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ, ‘The Life Divine’, ‘Savitri’, ‘Mother lndia’, ‘Essays on Gita’, ‘ভারতের নবজন্ম’, ‘কারাকাহিনী’। তাঁর লেখা ‘সাবিত্রী’ কবিতায় মোট ২৪ হাজার লাইন আছে। তিনি তাঁর জীবনের ৪০ বছর পণ্ডিচেরিতে কাটান।

১৯২৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পণ্ডিচেরিতে শ্রীঅরবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। পরে কবি লিখেছিলেন, “অরবিন্দকে তাঁর যৌবনের মুখে ক্ষুব্ধ আন্দোলনের মধ্যে যে তপস্যার আসনে দেখেছিলুম সেখানে তাঁকে জানিয়েছি – অরবিন্দ, রবীন্দ্রের লহো নমস্কার। আজ তাঁকে দেখলুম তাঁর দ্বিতীয় তপস্যার আসনে, অপ্রগল্‌ভ স্তব্ধতায় – আজও তাঁকে মনে মনে বলে এলুম – অরবিন্দ, রবীন্দ্রের লহো নমস্কার।”

১৯৫০ সালের ৫ই ডিসেম্বর প্রয়াত হন ঋষি অরবিন্দ। পুদুচেরি আশ্রমে তাঁর সমাধিমন্দির নির্মাণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে একটি বিশেষ ঘটনা উল্লেখ করছি। নবদ্বীপের ‘বঙ্গবাণী আশ্রম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’-ই প্রথম স্থান যেখানে পুদুচেরির বাইরে শ্রীঅরবিন্দের দেহাবশেষ স্থাপিত হয়েছিল। সেটা ছিল ১৯৫৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। ১২ই ফেব্রুয়ারি দুপুরে পুদুচেরি আশ্রমে শ্রীমা স্বয়ং বঙ্গবাণীর ১২ জন কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন শ্রীঅরবিন্দের দেহাবশেষ।

অনুষ্ঠানের প্রত্যক্ষদর্শী, সে কালের হাসির গানের রাজা এবং শ্রীঅরবিন্দের অনুগামী নলিনীকান্ত সরকারের বর্ণনা থেকে জানা যায়, কীভাবে ওই চিতাভস্ম নিয়ে পরবর্তী ন-দিন ধরে কলকাতা সহ নবদ্বীপ জুড়ে বিপুল উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছিল। সে কালের মাদ্রাজ মেলের বিশেষভাবে সুসজ্জিত একটি কামরা এ জন্য রিজার্ভ করে সেটি কলকাতা হয়ে নবদ্বীপে আনা হয়েছিল। পথে মাদ্রাজ, ওঙ্গোল, বেজওয়ারা, ওয়ালটেয়ার, খুরদারোড, ভুবনেশ্বর, কটক, বালেশ্বর, ভদ্রক, খড়গপুর, বাগনান, সাঁতরাগাছি এবং রামরাজাতলা প্রভৃতি স্টেশনে মানুষের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য ট্রেন দাঁড়িয়েছিল। ট্রেন হাওড়ায় এসে পৌঁছায় ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টের পর। দেহাবশেষ গ্রহণ করার জন্য স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ত্রিগুণা সেন সহ অনেকে। এক-দিন কলকাতায় থাকার পর ১৬ই ফেব্রুয়ারি শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর হয়ে নবদ্বীপের পথে যাত্রা করে বিশেষ ট্রেনে নবদ্বীপে দেহাবশেষ এসে পৌঁছায়। ২১শে ফেব্রুয়ারি শ্রীমার জন্মতিথিতে শ্রীঅরবিন্দের পবিত্র দেহাবশেষ নবদ্বীপের প্রতাপনগর নিদয়া ঘাটে নির্মিত সমাধি মন্দিরে স্থাপন করেন শ্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন। তখন তিনি বঙ্গবাণীর সভাপতি। পরবর্তীতে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে শ্রীমার পবিত্র দেহাবশেষ এই মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখনও এই স্মৃতিমন্দিরে ভক্ত সমাগম হয়।

ঋষি অরবিন্দ সম্বন্ধে বিস্ময়কর যা তা হল বিপ্লবী থেকে আধ্যাত্মিক সাধকে রূপান্তর প্রসঙ্গটি l জীবন যতই সামনের দিকে এগিয়েছে, ততই তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছে, মানব জীবনের উদ্দেশ্য কী? কী আমাদের প্রকৃত কর্ম ? ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজ তাড়িয়ে স্বাধীনতা এলে মানবিকতা, প্রগতি এগুলোও আসবে তো? নাকি ব্রিটিশ রাজাদের হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে দেশি রাজাদের হাতে? আর আপামর জনগণের অবস্থা একই থাকবে? এই বোধ ভেতরে যত জেগেছে, ততই অরবিন্দ সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও কর্তব্য অন্বেষণে গভীর আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমজ্জিত হয়েছেন।

প্রসঙ্গক্রমে অন্য একটি দিক আলোকপাত করার চেষ্টা করছি। পণ্ডিচেরির দিনগুলিতে কেবল আধ্যাত্মিক বিকাশের দলিল রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, পণ্ডিচেরিতে যাওয়ার ফলে বাংলার বিপ্লবীদের সঙ্গে অরবিন্দ ঘোষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সব থেকে বড় কথা, বাংলা ছেড়ে যাওয়ার পর ৪/‌৫ বছর সাধারণ মানুষ অরবিন্দের কোনও খোঁজই পাননি।

কিন্তু শ্রীঅরবিন্দের ছোটোভাই বারীন্দ্র ঘোষের আপ্ত সহায়ক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করা স্বাধীনতাসংগ্রামী পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য ঋষি অরবিন্দের অন্য দিকটি তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে ব্রিটিশের নাগালের বাইরে যাওয়ার তাগিদ ছিল অরবিন্দের। সেই মতো ফরাসি ঘাঁটি হিসেবে পণ্ডিচেরিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। কারণ পণ্ডিচেরি এমন একটি জায়গা যেখানে বাঙালি বিপ্লবীরা প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলে স্থানীয় সাধারণ মানুষ তা সহজেই বুঝতে পারবে না। ফরাসি সরকারি সহযোগিতাও পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয় বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড রীতিমতো চলত পণ্ডিচেরি থেকেই। শ্রীঅরবিন্দের স্নেহধন্য বিপ্লবী পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন, গোপন ভাষায় চিঠি আদানপ্রদান যে হত পণ্ডিচেরির আশ্রম থেকে তারও অনেক নিদর্শন ইতিহাস আছে। ফলে আশ্রমকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক আশ্রয় স্থলও তৈরি হয়েছিল পণ্ডিচেরিতে।

এই সূত্র ধরে আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করছি। পণ্ডিচেরিতে গিয়ে মতিলাল রায়ের মাধ্যমেই তিনি বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের খুঁটিনাটি খোঁজখবর রাখতেন। কে এই মতিলাল রায়?‌ ১৯১০–এর ফেব্রুয়ারি মাসে রাতারাতি কলকাতা থেকে চন্দননগর চলে যান অরবিন্দ ঘোষ। আশ্রয় পান মতিলাল রায়ের বাড়িতে। যদিও মতিলালের সঙ্গে তাঁর তখনও কোনো পরিচয়ই ছিল না। চন্দননগরে যাঁর কাছে আশ্রয় নেওয়ার কথা ছিল অরবিন্দর, যে কোনো কারণেই হোক তিনি অরবিন্দকে আশ্রয় দিতে রাজি হন না। তখন আশ্রয়হীন অবস্থায় গঙ্গায় নৌকায় বসে থাকেন অরবিন্দ। ঠিক তখনই এই মতিলাল নিজের থেকে অরবিন্দকে ডেকে নিয়ে যান তাঁর বাড়িতে। আশ্রয় দেন। এক মাসেরও বেশি সময় তিনি ছিলেন চন্দননগরে। এই সময়েই মতিলালের সঙ্গে অরবিন্দের একটা দৃঢ় রসায়ন গড়ে ওঠে।

পণ্ডিচেরিতে যাওয়ার পর প্রথম ক‌য়েকটা বছর ভীষণই অর্থকষ্টে কাটিয়েছিলেন অরবিন্দ। এমনও চিঠি আছে যেখানে অরবিন্দ লিখছেন ‘আমার তহবিলে মাত্র ৫০টি পয়সা রয়েছে’‌। এরকমই একটা সময় মতিলাল চিত্তরঞ্জন দাশের কাছে অরবিন্দর জন্য অর্থসাহায্য চান। তখন চিত্তরঞ্জন বলেন, অরবিন্দ যদি তাঁর ‘‌সাগরসঙ্গীত’‌ কাব্যগ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেন তবে তিনি তাঁকে ১০০০ টাকা দেবেন। এর পেছনে চিত্তরঞ্জনের একটা সূক্ষ্ম আইনি বুদ্ধি কাজ করেছিল। তিনি ভেবেছিলেন, বই অনুবাদ বাবদ টাকা দিলে কখনওই ব্রিটিশ সরকার বিপ্লবীকে সরাসরি সাহায্য করার জন্য তাঁকে অভিযুক্ত করতে পারবে না। এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান অরবিন্দ। মিত্রাক্ষরে এবং অমিত্রাক্ষরে দু-‌প্রস্থ অনুবাদও করে দেন।

সেই সময় অরবিন্দ ও চিত্তরঞ্জন দাশের মধ্যে সাংকেতিক ভাষায় বই প্রকাশনা ও প্রুফ সংক্রান্ত বিষয়ে চিঠি আদানপ্রদান হত। চিঠি পড়লে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই লোকে ভাবছে যে, বই এবং তার প্রুফের কথাই লিখেছেন চিত্তরঞ্জন ও অরবিন্দ। কিন্তু আদৌ তা নয়। এটা বইও নয়। প্রুফও নয়। পুরো ব্যাপারটাই বিপ্লবী রাজনৈতিক। ‘‌যুগপুরুষ শ্রীঅরবিন্দ’‌ নামে মতিলাল রায়ের লেখা একটি বই আছে। সেখানে মতিলাল রায় লিখেছেন, পণ্ডিচেরি ছিল ফ্রি পোর্ট। সেখানে যাঁরা বসবাস করতেন, তাঁরা নির্দ্বিধায় ভিপির মাধ্যমে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারতেন। চন্দননগরের বিপ্লবীরা এই নিষেধহীন ব্যবস্থাটাকে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। মতিলাল রায় অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বইতে তার উল্লেখ করেছেন। লিখেছেন—‘আমার বিপ্লবী সহযোগীগণ ঠিক করিলেন, পণ্ডিচেরি হইতেই রিভলবার আনা হইবে। ইহার ব্যবস্থার ভার বন্ধুরা আমার উপর অর্পণ করিলেন। আমায় বাধ্য হইয়াই এই বিষয়টি শ্রীঅরবিন্দকে জানাইতে হইল। তাঁহাকে ৬টি রিভলবার ক্রয় করিবার জন্য নিবেদন করিলাম। অরবিন্দ আমার দাবী অপূর্ণ রাখিলেন না। কিন্তু স্বাভাবিক সতর্কতার বশে রিভলবারগুলি হস্তগত হইলে তাহা তিনি মাটিতে পুঁতিয়া রাখার ব্যবস্থা করিলেন। সেইগুলি আমাদের নিকট পাঠাইবার সুযোগ বহুদিন মিলিল না। প্রায় এক বৎসর পরে শচীন্দ্রনাথ সান্যালকে দিয়া ওই রিভলবারগুলি অতি সন্তর্পণে ও সুকৌশলে লইয়া আসা হয়‌।’‌

ঋষি অরবিন্দের যথাযথ মূল্যায়ন আমরা করতে পারিনি। এ প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ সুগত বসু ‘The Spirit and Form of an Ethical Polity: A Meditation of Aurobindo’s Thought’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, “অরবিন্দের রাজনৈতিক ভাবনা এবং তার নৈতিক ভিত্তিস্থল বিষয়ে অনেকেরই সম্যক ধারণার অভাব রয়েছে। ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। তার কারণ হল, অর্ধশতক ধরে রাষ্ট্রিক ধর্মনিরপেক্ষতার একরকম প্রথাগত অধ্যয়নের প্রভাব।”

ঋষি অরবিন্দের অন্তিম স্বপ্ন স্মরণ করে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে এই প্রতিবেদন শেষ করছি। পণ্ডিচেরিতে থাকাকালীনই আরও একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন শ্রীঅরবিন্দ এবং শ্রীমা। তা শুধু বৃহত্তর ভারতের স্বপ্ন নয়, সংঘবদ্ধ পৃথিবীর স্বপ্ন। এই প্রকল্পের নাম দিয়েছিলেন World Union। তারই প্রতীক ‘অরোভিল’। আজও সেই স্বপ্নের ধুনি জ্বালিয়ে রেখেছেন শ্রীঅরবিন্দ অনুগামীরা।

তথ্যসূত্র:
১- মহাবিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ, সমর বসু, বিপ্লবীদের কথা (২০১৪)।
২- অরবিন্দ ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী।
৩- ত্রয়ী, অরবিন্দ ঘোষ, সন্ধ্যা প্রকাশন।
৪- রানা চক্রবর্তী – বিপ্লবী ঋষি
৫- অরবিন্দ দত্ত – ঋষি অরবিন্দ ঘোষের জীবনী
৬ – The lives of Sri Aurobindo by Peter Heehs, Sri Aurobindo Ashram Publication Department, Pondicherry।
৭ – Sri Aurobindo a Biography and a History by K.R.Srinivasa Iyengar.
৮- বিভিন্ন পত্রপত্রিকা

ছবি ঋণ:
১। লিপিকা বিশ্বাস সাহা
২। আন্তর্জাল
৩। নিজস্ব সংগ্রহে

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২