বাঙালির অহংকার মদনমোহন তর্কালঙ্কার বিস্মৃতির অতলে  – দীপক সাহা

শেয়ার করুন

[৩রা জানুয়ারি নিঃশব্দে পেরিয়ে গেল বাঙালির অহঙ্কার  মদনমোহন তর্কালঙ্কারের জন্মদিবস। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।]


স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের লেখাপড়ার সূত্রপাত হয়েছিল যাঁর বই পড়ে সেই ‘প্রভাত বর্ণন’-এর কবিকে বেমালুম ভুলেছে বাঙালি। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে গোটা বাঙালি সমাজে হৈচৈ পড়ে যায়, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। কিন্তু বিদ্যাসাগরের সমসাময়িক এবং তাঁর বন্ধু পণ্ডিতপ্রবর কবি, সমাজসংস্কারক মদনমোহন তর্কালঙ্কার সম্পর্কে বাঙালি সমাজ নিস্পৃহ, উদাসীন। তাই ২০১৭ সালে তাঁর জন্মের দ্বিশতবর্ষে বেসরকারি উদ্যোগে সামান্য দু’একটি অনুষ্ঠান ছাড়া প্রায় অন্ধকারেই থেকে গিয়েছিলেন বাংলার নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত ও বাংলার নারীশিক্ষার প্রচার ও প্রসারের অন্যতম পথিকৃৎ পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার।                                 
ছোটোবেলায় ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল/ কাননে কুসমকলি সকলি ফুটিল’ এ কবিতা ঠোঁটে নিয়ে পাঠশালার গণ্ডি পেরিয়েছি আমরা। কবিতার দু’এক ছত্র এখনও অনেকে মনে করতে পারেন। কিন্তু মজার কথা হল, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই বলতে পারবেন না বাংলা শিশু সাহিত্যের অতি প্রচলিত ওই কবিতার কবির নাম। এ-প্রজন্মের তো মুখের বুলি ফুটতেই বাবা-মা ঝাঁপিয়ে পড়েন বাচ্চার ঠোঁটে ইংরেজি রাইম গুঁজে দিতে।   

মদনমোহন তর্কালঙ্কার

    
১৮১৭ সালের ৩ জানুয়ারি নদিয়ার নাকাশিপাড়ার গঙ্গা সংলগ্ন বিল্বগ্রামে জন্ম মদনমোহনের। প্রসঙ্গত বলা যায়, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আদি পৈত্রিক বাড়ি ছিল বর্ধিঞ্চু গ্রাম, এই বিল্বগ্রাম। মদনমোহনের বাবা রামধন চট্টোপাধ্যায় এবং মা বিশ্বেশ্বরী দেবী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে মদনমোহন ছিলেন সবার বড়ো। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। সেখানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর সতীর্থ ও অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। তিনি জয়গোপাল তর্কালঙ্কার ও প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশের নিকট সাহিত্য, ব্যাকরণ, অলঙ্কারশাস্ত্র, জ্যোতিষ ও স্মৃতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি হিন্দু ল’ কমিটি থেকে জজ-পণ্ডিতের সার্টিফিকেট (১৮৪১) লাভ করেন। কবি-প্রতিভার জন্য  সংস্কৃত কলেজ থেকে তিনি ‘কাব্যরত্নাকর’ এবং পাণ্ডিত্যের জন্য ‘তর্কালঙ্কার’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর পারিবারিক উপাধি ‘চট্টোপাধ্যায়’ হলেও প্রাপ্ত উপাধি ‘তর্কালঙ্কার’ হিসেবেই তিনি সুপরিচিত।                  ইয়ং বেঙ্গলের প্রতিষ্ঠাতা ডিরোজিওর উদ্যোগে সে সময়ে দেশ জুড়ে চলছে কুসংস্কার ও নানা সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ইংরেজি ও  স্ত্রী-শিক্ষার প্রসারের জন্য আন্দোলন। ইয়ংবেঙ্গলের অন্যতম সদস্য রামতনু লাহিড়ীর বাড়িতে থাকার সুবাদে মদনমোহনও সেই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করেন। তারপর থেকে আমৃত্যু মদনমোহন শিক্ষা এবং সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।   


১৮৪২ সালে হিন্দু কলেজের পাঠশালার প্রধান শিক্ষক হিসাবে মদনমোহন কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর ১৮৪৬ সালে নদিয়ার রাজা শ্রীশচন্দ্র কৃষ্ণনগরে কলেজ স্থাপন করলে তিনি সেখানে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন। ১৮৪৬ থেকে ১৮৫০ পর্যন্ত তিনি সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৮৫০-৫৪ পর্যন্ত তিনি ছিলেন মুর্শিদাবাদের জজ পণ্ডিত। পরে তাঁর পদোন্নতি ঘটে। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে কান্দিতে যান। ১৮৫৩ সালে বহরমপুর কলেজ (যা পরে কৃষ্ণনাথ কলেজ হয়) স্থাপনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এ কাজের পরিকল্পনা ও অর্থ সংগ্রহে তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে। শোনা যায়, তাঁর বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে চুরাশিজন কৃষকও কলেজের অর্থসংগ্রহে এগিয়ে আসেন। 

তখন বাংলায় ছাপাখানা ছিল না। ১৮৪৭ সালে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে মিলিত হয়ে মদনমোহন “সংস্কৃত যন্ত্র” নামক ছাপাখানা স্থাপন করেন। এ সম্বন্ধে বিদ্যাসাগর জানাচ্ছেন, “আমি ও মদনমোহন তর্কালঙ্কার সংস্কৃত কলেজে নিযুক্ত ছিলাম, তর্কালঙ্কারের উদ্যোগে সংস্কৃত যন্ত্র নামে একটি ছাপাখানা সংস্থাপিত হয়।” এই ছাপাখানা  থেকেই  সর্বপ্রথম কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণকারের “অন্নদামঙ্গল কাব্য” বইয়ের আকারে প্রকাশিত হয়। স্কুলে পড়ার বইও তাঁরা এই ছাপাখানা থেকে প্রকাশনা করতেন। সেকালে শিক্ষা সংস্কারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। নারী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে তাঁর অবদান ভোলার নয়। নিজের সম্পাদিত পত্রিকা ‘শুভকরী’-র ২য় সংখ্যায় স্ত্রীশিক্ষা সমাজে কতটা জরুরি, তার জন্য বাংলায় প্রথম যুগান্তকারী ‘স্ত্রীশিক্ষা’ নামে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন। পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রামগোপাল ঘোষ, রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখার্জী প্রভৃতি আধুনিক মনস্ক মনীষীদের সাহায্যে ৭ মে ১৮৪৯-এ বেথুন সাহেব মেয়েদের জন্য ‘ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্কুলটির জন্য কলকাতার মির্জাপুরে জমি দান করেছিলেন রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখার্জী। ভারতবর্ষে এটিই মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল। এই স্কুলের সম্পাদক হয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। ওই সময় ভারতে মেয়েদের প্রকাশ্যে শিক্ষার সুযোগ ছিল না। তখনকার দিনের সমাজে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোকে ভালো চোখে দেখা হত না। মদনমোহন সেই স্কুলে তাঁর দুই মেয়ে ভুবনমালা ও কুন্দমালাকে পাঠালেন পড়ার জন্য। তিনি নিজে সেখানে অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবেও যোগ দিয়েছেন। জীবনের শেষ পর্বে প্রশাসক হিসেবেও তিনি বেশ কিছু সংস্কারে হাত দেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে মুর্শিদাবাদ এবং কান্দিতে থাকাকালীন দরিদ্র, অনাথ ও বিধবাদের জন্য এক দাতব্য সমিতি তিনি গড়ে তোলেন। এর পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধী ও কুষ্ঠরোগীদের জন্য অনাথ আশ্রম গড়েন। সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কান্দিতে মেয়েদের স্কুল, রাস্তাঘাট প্রভৃতি নির্মাণ করেন।


বিধবা বিবাহ আন্দোলনে মদনমোহন ছিলেন বিদ্যাসাগরের সবচেয়ে কাছের ও কাজের মানুষ। ১৮৫৬ সালে ঐতিহাসিক ‘বিধবাবিবাহ’ আইনে পরিণত হয়। এ বছরেই ৭ ডিসেম্বর তাঁর ভাইয়ের মতো শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সঙ্গে বাল্যবিধবা কালীমতি দেবীর বিবাহ দেন। মদনমোহনের ঘনিষ্ঠ ছিল এ দুটি পরিবার। মদনমোহনের উদ্যোগে ও ঘটকালিতে বাংলায় প্রথম হিন্দু বিধবা বিবাহ হয়। এজন্য তৎকালীন পণ্ডিত সমাজ ও অনেক আত্মীয় তাঁর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন। 
তিনি বাংলা ভাষায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য যথেষ্ট সচেষ্ট ছিলেন। বাংলা ভাষায় শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার উপযোগী পড়ার বই প্রথম রচনা করেন মদনমোহন তর্কালঙ্কার। খ্যাতিমান এ শিশু সাহিত্যিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য তিন খণ্ডে ‘শিশুশিক্ষা’ গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর ‘শিশুশিক্ষা’ গ্রন্থটি ঈশ্বরচন্দ্র কর্তৃক রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থটিরও পূর্বে প্রকাশিত। বলা হয় ‘শিশুশিক্ষা’ বইটি বাংলার প্রথম প্রাইমার। তিনি ‘শিশুশিক্ষা’ পুস্তকটির ‘প্রথমভাগ’ ১৮৪৯ সালে এবং ‘দ্বিতীয়ভাগ’ ১৮৫০ সালে প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে পুস্তকটির ‘তৃতীয়ভাগ’ এবং ‘বোধোদয়’ শিরোনামে ‘চতুর্থভাগ’ প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত ‘আমার পণ’ কবিতাটি শিশু মানস গঠনের জন্য চমৎকার দিক-নির্দেশনা। তাঁর বিখ্যাত কিছু পঙ্‌ক্তির মধ্যে রয়েছে: “পাখী সব করে রব, রাতি পোহাইল”, “সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি”, “লেখাপড়া করে যে/ গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে”। 

আবক্ষ মূর্তি, বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যের সামনে

‘শিশুশিক্ষা’ বই দিয়ে শৈশবে রবীন্দ্রনাথের লেখাপড়ার সূত্রপাত। রবিজীবনীতে তার উল্লেখ পাওয়া যায়। কবি মদনমোহনকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’-র শুরুতে এভাবে মনে রেখেছেন—“কেবল মনে পড়ে, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’। সেদিন পড়িতেছি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে।’ আমার জীবনে এইটেই আদি কবির প্রথম কবিতা। সেদিনের আনন্দ আজও যখন মনে পড়ে তখন বুঝিতে পারি, কবিতার মধ্যে মিল জিনিসটার এত আয়োজন কেন। মিল আছে বলিয়াই কথাটা শেষ হইয়াও শেষ হয় না—তাহার বক্তব্য যখন ফুরায় তখনো তাহার ঝংকারটা ফুরায় না।” 
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা আরম্ভ হয়েছিল মদনমোহনকৃত ‘শিশুশিক্ষা’ দিয়ে এবং তারপরে সম্ভবত ‘বর্ণপরিচয়’ বইয়ে তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি। ‘শিশুশিক্ষা’ লেখার  ঠিক পরেই মদনমোহন লেখেন ‘স্ত্রীশিক্ষা’ নামে একটি বই। যেখানে তিনিই প্রথম বলেছিলেন শিশুকে শিক্ষিত করতে গেলে মায়ের শিক্ষাই আগে দরকার। একবিংশ শতাব্দীতেও আমরা এই মর্মকথার বাস্তব চিত্র দেখতে পাচ্ছি না।         

তিনি ১৪টি সংস্কৃত বই সম্পাদনা করেন। ‘রসতরঙ্গিণী’ (১৮৩৪) ও ‘বাসবদত্তা’ (১৮৩৬) মদনমোহনের মৌলিক কাব্যগ্রন্থ। মদনমোহন সংস্কৃত ভাষায় রচিত বেশ কয়েকখানি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। সেগুলির মধ্যে ‘সংবাদতত্ত্ব কৌমুদী’, ‘চিন্তামণিদীধিতি’, ‘বেদান্তপরিভাষা’, ‘কাদম্বরী’, ‘কুমারসম্ভব’ ও ‘মেঘদূত’ প্রধান। 

কবি মদনমোহন একজন বাঙালি সাহিত্যিক। তিনিই ব্রিটিশ ভারতে প্রথম বাংলা ভাষায় শিশুদের উপযোগী পাঠ্য বই প্রচলন করেন। মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রণীত শিশুশিক্ষা ও নবধারাপাত সুদীর্ঘ প্রায় সওয়াশ বছর ধরে বাংলার ঘরে ঘরে শিশুদের জন্য পঠিত হয়েছে। এমন দীর্ঘায়ু জনপ্রিয় শিশুতোষ পুস্তক তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় আর ছিল না। মদনমোহন সংস্কৃতের পণ্ডিত  হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মদনমোহন তর্কালঙ্কার ও অক্ষয় কুমার দত্ত মিলে সে যুগে সাহিত্যের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন।

দুর্ভাগ্য বাঙালির। ৯ই মার্চ ১৮৫৮ সালে মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে সমাজ সংস্কারক, কবি এই মহৎপ্রাণ মহামানবটি কান্দিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। কবির জন্মভিটা বিল্বগ্রামে দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে “মদনমোহন তর্কালঙ্কার স্মৃতিরক্ষা কমিটি” প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যের সামনে রয়েছে তাঁর একটি আবক্ষ মূর্তি। ২০০৭ সালে নদিয়ার আসাননগরে মদনমোহন তর্কালঙ্কার নামাঙ্কিত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এত কৃতিত্বের অধিকারী হয়েও জন্মের দুশো বছর পরেও বঙ্গ সমাজে তিনি একপ্রকার বিস্মৃতই  রয়ে গেলেন।

বিল্বগ্রামে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের জন্মভিটা

চিত্রঋণ – আন্তর্জাল 
আবক্ষ মূর্তি, বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যের সামনে (ফটো–সুমন কবিরাজ) 
বিল্বগ্রামে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের জন্মভিটা (ছবি—সুমন কবিরাজ) 
তথ্য ঋণস্বীকার—প্রণব আচার্য  

শেয়ার করুন

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *